রামগড় চা বাগান
খাগড়াছড়ির একটি উপজেলা রামগড়। অপরূপ খাগড়াছড়ির পার্বত্য সৌন্দর্য যেন তার পূর্ণরূপ পেয়েছে এই রামগড়ে এসে। রামগড়ে আছে দুর্গম পাহাড়, বুনো অরণ্য, সাজানো চা বাগান, গতিশীল ঝর্ণাধারা আর বৈচিত্র্যময় নৃতাত্ত্বিক সৌন্দর্যের হাতছানি।
এই সীমান্ত শহরে ঢুকতেই পাবেন ১,৪০০ একরের বিশাল রামগড় চা বাগান। পঞ্চাশের দশকে স্থাপিত এই চা বাগান থেকে প্রতিদিন ১৬ হাজার কেজি সবুজ পাতা উত্তোলন করা হয়। বাগানের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে প্রকাণ্ড লেক। পুনঃসংস্কারকৃত এই লেক শীতকালে ভরে যায় পাখির কলকাকলিতে। হাজার হাজার অতিথি পাখি আশ্রয় নেয় এই লেকে। দেশের অনেক পাখিপ্রেমী এই সময় ভিড় জমায় এখানে। আপনার পাখিপ্রেমী হওয়ার প্রয়োজন নেই, যদি ন্যূনতম প্রকৃতিপ্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে বিমোহিত হয়ে যাবেন এই সৌন্দর্যে। রামগড় বাগানের মধ্য দিয়ে চলে গেছে ফেনী-খাগড়াছড়ি সড়ক। এই পথে ছুটে চলা হাজারো যাত্রীর দেহ মন প্রাণ জুড়িয়ে দেয় রামগড় চা বাগান।
আর আদিবাসী মানুষদের জীবনযাত্রা- তাদের সরল অনাড়ম্বর জীবন, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক আপনাকে দান করবে অনাবিল মুগ্ধতা। সমস্ত খাগড়াছড়ি জুড়ে বসবাস করে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ আর কয়েকটি নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী। তাদের সম্মিলিত জীবনযাত্রার এক মহা মিলনক্ষেত্র যেন এই খাগড়াছড়ি।
রামগড় চা বাগানের কাছাকাছি ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের স্মৃতিসৌধ। টেরাকোটার ফলকে সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানান কাহিনী আর দৃশ্যাবলী। এর কাছেই রয়েছে আরেকটি দারুণ দর্শনীয় জায়গা- নাম কলসীমুখ। এটি পার্বত্য নদী ফেনীর অবদান। পাহাড়ি অঞ্চলে নদীগুলো এগিয়ে যায় এঁকেবেঁকে। সেই বাঁক এখানে রূপ নিয়েছে কলসীর মতো। তাই জায়গাটির নাম কলসীমুখ।
খাগড়াছড়ির সীমান্ত শহর রামগড়। তৎকালীন বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) জন্মস্থান রামগড়। এখানে রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত অনেক স্থান ও স্থাপনা। রয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিভাজনকারী ফেনী নদী। যা আপনাকে ইতিহাস জানারও সুযোগ করে দেবে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম থেকে আপনি যাত্রীবাহী কোচ কিংবা বাসে করে চলে যেতে পারবেন খাগড়াছড়িতে। আপনি যদি ঢাকা থেকে যেতে চান, তবে আপনার জন্য ঢাকার কমলাপুর, ফকিরাপুল, সায়দাবাদ প্রভৃতি স্থানে রয়েছে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি গামী পরিবহন গুলোর বাস কাউন্টার। যেসব পরিবহন এই রুটে যাতায়াত করে তাদের মধ্যে রয়েছে সৌদিয়া, শ্যামলী, এস আলম, শান্তি পরিবহন প্রভৃতি। এসব কোচে রামগড় আসা যায়। রামগড় ভ্রমণ শেষে এখান থেকে বাস ছাড়াও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা কিংবা চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ করে আলুটিলায় যাওয়া যায়। ফেনীর মহিপাল এবং চট্টগ্রামের অক্সিজেন বাস টার্মিনাল থেকে রামগড় ও খাগড়াছড়ির বাস আসে।
কোথায় থাকবেন
খাগড়াছড়ি, রামগড় কিংবা আলুটিলা সব জায়গায় থাকার সুবিধা পাবেন। খাগড়াছড়ি চেঙ্গি ব্রিজের পাশে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন হোটেল গ্রিন স্টার। রামগড়ে রয়েছে একটি সরকারি রেস্ট হাউস। অবশ্য এখানে থাকতে চাইলে লাগবে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি। এছাড়া আরো কয়েকটি হোটেল রয়েছে রামগড় বাজারে। আলুটিলায় আছে হোটেল জিরান, শৈল, সুবর্ণা প্রভৃতি।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)