শিলিগুড়ি ভ্রমণ-

শিলিগুড়ি (Siliguri) হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের একটি শৈল শহর ও পর্যটন কেন্দ্র। এই শহরটি পর্বতের ঢালে গড়ে উঠেছে। শহরটি দার্জিলিং জেলার বৃহত্তম শহর। এখানে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে। শিলিগুড়ি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি প্রধান শহর এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে। যদি পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং এবং সিকিমের গ্যাংটক-এর মত শহরগুলিতে ভ্রমণ করতে হয় তাহলে এটি হল প্রতিটি স্থানের প্রবেশদ্বার।

শহরের ভিতরে প্রবাহিত মহানন্দা নদী শহরটিকে দুই ভাগে বিভিক্ত করেছে। প্রকৃতির অপরূপ বৈচিত্রের সঙ্গে এখানকার ঋতুবৈচিত্র্যও অসাধারণ। গ্রীষ্মে ৩৫ ডিগ্রি ও শীতে ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় এখানকার প্রকৃতি সেজে ওঠে। শীতের এ সময়ে হিমালয়ের পাশে ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা নেমে আসে। পর্যটন আকর্ষণের অন্যতম আর দ্রুত উন্নয়নশীল আধুনিক শহর, তাও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং এবং ডুয়ার্স অঞ্চল ছাড়াও গ্যাংটক ও সিকিমের মতো বিখ্যাত পর্যটনস্থানগুলো পাশাপাশি হওয়াতে ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ ভারতের শিলিগুড়ি।

শিলিগুড়ির দর্শনীয় স্থান

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার এই শিলিগুড়ি শহরটির দৈর্ঘ্য মাত্র ৪৮.৩ বর্গকিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে প্রাচীন বাষ্পীয় ইঞ্জিনে টানা দার্জিলিং পর্যন্ত চলাচলকারী “টয় ট্রেন”; পাহাড় বেয়ে খাড়া পথ ধরে চলাচল করে এটি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এছাড়া পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য, মিরিক, কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম, হংকংবাজার, জলদাপাড়া, গরুমারা, কোচবিহার, কালিঝোড়া, মহানন্দা, ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি, মহানন্দা নদীবক্ষস্হ সুকনা শিলিগুড়ির উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।

সালুগড় আশ্রম

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র তীর্থস্থান সালুগড় আশ্রম। এটি শিলিগুড়ির অন্যতম বিখ্যাত স্থান। আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন কালু ঋণপৌচ। দর্শনার্থীরা এখানে নির্ভেজাল সময় কাটাতে আসেন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছাড়াও সালুগড় আশ্রমে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীকেও ভ্রমণ করতে দেখা যায়।

বেঙ্গল সাফারি পার্ক

শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে নানা প্রজাতির পাখির সন্ধান মিলবে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, ঘড়িয়ালসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীও রয়েছে এখানে। সব বয়সের পর্যটকরা এই সাফারি পার্কে ভ্রমণ করেন।

দার্জিলিং হিমালয় রেলওয়ে

দুইশত বছরের পুরনো দার্জিলিং হিমালয় রেলওয়ে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত দর্শনীয় স্থান। এটি নতুন জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত বিস্তৃত। শিলিগুড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান দার্জিলিং হিমালয় রেলওয়ে।

ইসকন মন্দির

ভারতের সবচেয়ে বড় কৃষ্ণমন্দির ইসকন মন্দির। শিলিগুড়ির অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র স্থান। হায়দারপাড়ার ৪১ নং ওয়ার্ডের সড়কটির নাম মন্দিরটির নামেই রাখা হয়েছে।

মধুবন পার্ক

শিলিগুড়িতে অবস্থিত মধুবন পার্ক ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। শিলিগুড়ির অন্যতম মনোমুগ্ধকর জায়গা মধুবন পার্ক। এখানে বনভোজনের জন্য রয়েছে পিকনিক স্পট। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এখানে অনেক ভালো সময় কাটানো যায়।

শিলিগুড়িতে কেনাকাটা

শিলিগুড়ি শুধু একটি পর্যটন গন্তব্য নয়, কিন্তু একটি আধুনিক শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হওয়ায় শিলিগুড়িতে কেনাকাটার চমৎকার সুযোগ রয়েছে। একটি বিমানবন্দর, রেল স্টেশন এবং চমৎকার সড়ক পথ সহ এই শহর নেপাল, ভুটান ও তিব্বতের মত দেশগুলির ও উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলির জন্য একটি প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এই এলাকার প্রধান ব্যবসা হল ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প এবং শিলিগুড়িতে কেনাকাটার জন্য এইগুলি সেরা।

শিলিগুড়িতে কেনাকাটা করার জন্য দার্জিলিং চা হল সবচেয়ে জনপ্রিয় উপকরণ। দার্জিলিং চা তর্কসাপেক্ষ ভাবে বিশ্বের সেরা এবং তার চমৎকার সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। খাঁটি দার্জিলিং চা কেনার জন্য শিলিগুড়ি অবশ্যই একটি আদর্শ জায়গা। আপনি শিলিগুড়িতে কেনাকাটা করার সময় তিব্বত বা ভুটানের পশমী বস্ত্র কিনতে পারেন। আপনি এই শহরের যে কোন জায়গায় তিব্বত বা ভুটানের হরেক রকমের পশমী বস্ত্র পাবেন।

এছাড়াও শিলিগুড়িতে কেনাকাটা করার সময় আপনি সিকিমের কিছু হস্তশিল্প ও অলঙ্কৃত ক্ষুদ্র মূর্তি কিনতে পারেন, যা একটি উপহার হিসাবে বন্ধু এবং আত্মীয়দের দেওয়া যেতে পারে। উত্তর-পূর্ব হিমালয় অঞ্চলের সমৃদ্ধ বনাঞ্চল কাঠের জন্য একটি ভাল উৎস এবং ঐতিহ্যগতভাবে এই অঞ্চলের অধিবাসীরা কাষ্ঠ শিল্পে দক্ষ হয়। এছাড়াও আপনি শিলিগুড়িতে আসবাবপত্র, সামগ্রী,শিল্পজাত জিনিস কেনাকাটা করতে পারেন, যা এইসব জিনিসপত্র কেনাকাটার প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র।

কীভাবে যাবেন

শিলিগুড়ি পশ্চিমবঙ্গের প্রধান শহর। শিলিগুড়ি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয়ে থাকে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু শিলিগুড়ি। ট্রেনে,বাস ও বিমানে যেতে পারেন শিলিগুড়ি। ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি সরাসরি বিমানে করে যেতে পারবেন। শহর থেকে মাত্র ১৭ কি.মি. দূরত্বে রয়েছে বাগডোগরার বিমানবন্দর। এ ছাড়া শিলিগুড়িতে রেলযোগে পৌঁছানোর জন্য ঢাকা থেকে কলকাতার ট্রেন ধরতে হবে। কলকাতা জংশনে শিলিগুড়ি টাউন, শিলিগুড়ি জংশন এবং নিউ জলপাইগুড়ি জংশন নামের তিনটি ট্রেন পাবেন। শিলিগুড়ি সড়ক দ্বারা ভারতীয় রাজ্য গ্যাংটক ও নেপাল এবং ভুটান দেশের সঙ্গে সংযুক্ত। ঢাকা থেকে কলকাতাগামী বাসে করে কলকাতা হয়ে শিলিগুড়ি যেতে পারবেন।

থাকা খাওয়া

শিলিগুড়িতে পর্যটকদের জন্য রয়েছে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা। বিধান রোডে গোষ্ঠ পালের মূর্তির ঠিক নিচেই মিলবে ডিম-ঘুগনি, আর, পাশেই রোল ওভারে রকমারি রোল পাওয়া যায় – খরচ গড়ে তিরিশ থেকে একশো টাকা। হিলকার্ট রোডে দাওয়াত ও আহেলি রেস্তোরায় পাবেন বাংলা খাবার, আর, চাইনিজ খেতে চাইলে চলে যান তাইওয়া বা ইন্ডিয়ান প্যাগোডায়। বিরিয়ারি খেতে চাইলে ব্লু জিঞ্জার, জাইকা বা বেদুইন-এ যান। পাঞ্জাবি খানার জন্য যেতে পারেন সেবক রোডের পঞ্জাবি কড়াইতে। রুচী ও মান ভেদে খাওয়া বাবদ জনপ্রতি প্রতিদিন খরচ পড়বে ১০০/- – ৭০০/-।

কোথায় থাবেন

শিলিগুড়িতে পর্যটকদের জন্য রয়েছে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা। সাধারণ মান সম্মত আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টে প্রতিদিনের থাকা বাবদ খরচ হবে জনপ্রতি প্রায় ৪০০/- – ১,৫০০/-।

এখানকার কয়েকটি আবাসিক হোটেল হলোঃ

হোটেল স্নোভিউ – ব্রিজ সংলগ্ন, মৈনাক ট্যুরিস্ট লজ – পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন কতৃপক্ষের ব্যবস্থাধীন, পি ডব্লু ডি-র বাংলো, মিউনিসিপাল পান্থনিবাস, ইয়ুথ হোস্টেল।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ