কলকাতা ভ্রমণ-

কলকাতা (Kolkata) কে বলা হয় ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী। এটি দেশটির সবচেয়ে বড় শহর। তাই তো বাংলাদেশি পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের এ শহর। বর্তমান ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ, এই তিনের রাজধানী ছিল কলকাতা। তাই এর গুরুত্ব সহজেই অনুমান করা যেতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতা ও গুরুত্তের শীর্ষে অবস্থান করেছে এই শহর। হয়েছে অনেক ঘটনারই সাক্ষী। “আনন্দ নগরী” নামে পরিচিত কলকাতা- মাদার টেরেজা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিৎ রায় এবং সুভাষ চন্দ্র বোস এবং আরও অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তির পদচারনায় মুখরিত হয়েছে। কালজয়ী এই শহর ধীরে ধীরে পরিনত হয়েছে বাংলা সংস্কৃতির বিশিষ্ট প্রতিনিধি হিসেবে। এই শহর যদি ভ্রমণ না করা হয়, বাঙ্গালি হিসেবে আপনার জীবন কিছুটা না, অনেকটাই অপূর্ণ থেকে যাবে।

মহীনের ঘোড়াগুলি যেমন গেয়ে গেছেন, ‘…স্মৃতির ভেতর ট্রামের ধ্বনি বিবাগী সুর গড়ে….’’, কলকাতা ঠিক তেমন! চার অক্ষরের নামটা মনে আসলেই ভেসে ওঠে টানা রিকশা, ট্রামের শব্দ কিংবা হলদে ট্যাক্সি। দীর্ঘ দিনের পথচলায় এই শহরটা হয়ে যেন হয়ে উঠেছে একটা বিশেষ ঐতিহ্যের ধারক। বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু এই কলকাতা যেন শুধু একটা শহরই না, একটা জীবনধারা, একটা আবেগ যা প্রায় জীবন্তই বলা চলে! তাইতো কলকাতাকে বলা হয় উচ্ছ্বাসের শহর!

কলকাতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

সংক্ষিপ্ত বললেও কলকাতার ইতিহাস আসলে অনেক বিস্তারিত। শুরু হয় সেই ১৬৯০ সালে যখন তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এজেন্ট জব চারনক অনেক চিন্তা ভাবনার পর এই এলাকাটিকে তাদের ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু বানানোর কথা ভাবেন। এ লক্ষ্যে সুতানুটি, গোবিন্দপুর এবং কালিকাটা নামে তিনটি গ্রাম তাঁরা কিনে নেন স্থানীয় জমিদারদের কাছ থেকে।

মুঘলরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ব্যাবসা করার স্বাধীনতা দেন বাৎসরিক ৩০০০ রুপির বিনিময়ে। এরপর ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলকাতা দখল করে নেন। কিন্তু বেশিদিন তিনি তা ধরে রাখতে পারেননি। ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পর লর্ড ক্লাইভ কলকাতার দখল নিয়ে নেন। ১৭৭২ সালে কলকাতাকে ভারতবর্ষের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেষ্টীং সকল গুরুত্বপূর্ণ অফিস মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তর করেন। তখন থেকেই সমগ্র ভারতবর্ষে কলকাতার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। পরবর্তী প্রায় ১৩৯ বছর ভারতবর্ষের রাজধানী হিসেবে কলকাতা থেকে যায়।

কলকাতা ভ্রমণে দর্শনীয় স্থানসমূহ

কলকাতা বাসীদের কাছে শহরের রাণী নামে খ্যাত এই শহর আর সকলের কাছে পরিচিত “আনন্দ নগর” নামে। কলকাতা শহরটাই ঘুরে দেখার মতো। কখনো বাসে চড়ে কখনো পায়ে হেঁটে  কখনো বা মেট্রোরেলে চড়ে ঘুরে দেখতে পারবেন শহরের দর্শনীয় স্থান। কলকাতা গেলে বেশ কিছু স্থান দেখার মতো রয়েছে। এরমধ্যে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, সায়েন্স সিটি ও একুশে উদ্যান উল্লেখযোগ্য। এছাড়া মার্বেল প্যালেস, হাওড়া ব্রিজ, জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি, বোটানিক্যাল গার্ডেন, দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির, বেলুর মঠসহ বেশ কিছু জায়গা রয়েছে।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল

কলাকাতয় গিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল না দেখে ফেরে না বেশিরভাগ মানুষ। ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে তৈরি এই বিখ্যাত স্থাপনা নিঃসন্দেহে কলকাতার সেরা আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে প্রবেশ করতে বিদেশি পর্যটকদের ৫০০ রুপি খরচ করতে হয়। ইংরেজ শাসনামলে স্থাপিত এই বিশাল অট্টালিকাটি কলকাতার অন্যতম আকর্ষণীয় একটি জায়গা হচ্ছে ‘ফোর্ট উইলিয়াম’। বিনা খরচেই ঘোরা যায় জায়গাটিতে।এখানে ঘাট বাঁধানো পুকুর, সারি সারি গাছ, সবুজ মাঠের মাঝে বড় অট্টালিকা রয়েছে। মোঘল ও ব্রিটিশ স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন এটি। প্রাসাদের মত বিশাল অট্টালিকায় আছে ২৫টি গ্যালারি। যেখানে বিভিন্ন অ্যান্টিক নিদর্শন এবং হাতে নির্মিত শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে।

ফোর্ট উইলিয়াম

ইংরেজ শাসনামলে স্থাপিত এই বিশাল অট্টালিকাটি কলকাতার অন্যতম আকর্ষণীয় একটি জায়গা। এর অবস্থান হুগলী নদীর পূর্ব দিকে। শতবছরের বেশি পুরনো ভবনটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। বিনা খরচেই ঘোরা যায় জায়গাটিতে। এখানে ঘাট বাঁধানো পুকুর, সারি সারি গাছ, সবুজ মাঠের মাঝে বড় অট্টালিকা রয়েছে। মোঘল ও ব্রিটিশ স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন এটি। প্রাসাদের মত বিশাল অট্টালিকায় আছে ২৫টি গ্যালারি। যেখানে বিভিন্ন অ্যান্টিক নিদর্শন এবং হাতে নির্মিত শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। ইংরেজ আমলে অনেক সময় এটিকে ব্যবহার করা হত জেলখানা হিসেবে। বর্তমানে এটি ইস্টার্ন কমান্ডের হেড কোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এর ঠিকানা- ফোর্ট উইলিয়াম, হেস্টিংস, কলকাতা। ভ্রমণের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা। কোনো প্রবেশ মূল্য নেই।

একুশে উদ্যান

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে যাওয়ার পথেই একুশে উদ্যান। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’- অমর এ গানের থিমে উদ্যানটি তৈরি করা হয়েছে। শহরের বিড়লা প্লানেটোরিয়ামের পাশেই এটি অবস্থিত। যে উদ্যানে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

নন্দন

নন্দন একটি সরকারি প্রেক্ষাগৃহ ও চলচ্চিত্র উৎকর্ষ কেন্দ্র যা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ সাধনে গড়ে ওঠে নন্দন, যার মূল ভবনে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য মোট তিনটি অডিটোরিয়াম রয়েছে, সেমিনার ও সাংবাদিক সম্মেলনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় চার নম্বর অডিটোরিয়ামটি। নন্দন কলকাতার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান অনুষ্ঠানস্থল।

ঠাকুরবাড়ি

কলকাতার জোড়াসাঁকোয় অবস্থিত ঠাকুর পরিবারের প্রাচীন বাড়ি এটি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা বাড়িটি নির্মাণ করেন। স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি এখন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। এ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাড়ির একাংশে রয়েছে জাদুঘর। যেখানে ঠাকুর পরিবারের নানা ঐতিহ্য প্রদর্শনের জন্য রাখা রয়েছে।

মার্বেল প্যালেস

কলকাতার অন্যতম আকর্ষণীয় ভবনটি দেখতে প্রতিবছর লাখ লাখ লোক ভিড় জমায়। এর চমৎকার স্থাপত্যশৈলী, কারুকাজ ও অসংখ্য চমৎকার ভাস্কর্য আপনাকে বিমোহিত করবেই। এর ঠিকানা- ৪৬, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট, জোড়াসাঁকো, কলকাতা। ভ্রমণের সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৪টা। কোনো প্রবেশ মূল্য লাগে না।

হাওড়া ব্রিজ

বিশ্বের ষষ্ঠ দীর্ঘতম ক্যান্টিলিভার ব্রিজ এটি। ব্রিটিশ শাসনামলে হুগলি নদীর উপর এ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। যা কলকাতা ও হাওড়া শহরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। ব্রিজের পাশের লঞ্চঘাট থেকে নৌকায় ঘুরতে পারবেন নদীতে। উপভোগ করতে পারবেন ব্রিজের সৌন্দর্য।

সায়েন্স সিটি

একনজরে বিজ্ঞানের নানা দিক দেখে আসতে পারবেন সায়েন্স সিটি থেকে। এখানে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বর্তমান যুগের নানা জীব-জন্তুর মূর্তি পাবেন। যা জীবন্ত প্রাণির মতো নড়াচড়া এবং শব্দ করে। পাবেন বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ। ক্যাবল কার দিয়ে পুরো সায়েন্স সিটিও দেখতে পারবেন।

দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির

১৮৫৫ সালে রানি রাসমণি মহাদেবী কালীর প্রতি তার ভক্তির প্রতীক স্বরূপ মন্দিরটি তৈরি করেন। তখন থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অনেক জনপ্রিয় এই মন্দির। এর ঠিকানা- দক্ষিণেশ্বর, কলকাতা। ভ্রমণ সময় সকাল ৬টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা এবং দুপুর ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা। কোনো প্রবেশ মূল্য লাগে না।

বেলুর মঠ

বিখ্যাত রামকৃষ্ণ মিশন ও রামকৃষ্ণ মঠের কার্যক্রম প্রধানত এখান থেকেই পরিচালিত হয়। মঠের প্রাচীন দালান কোঠা আর সবুজ চারপাশ আপনার মনকে এক অপূর্ব শান্তি দিবে। এর ঠিকানা- বেলুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ। ভ্রমণের সময় ভোর ৬টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা এবং বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা। কোনো প্রবেশ মূল্য নেই।

হংসেশ্বরী মন্দির

কলকাতা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক তীর্থস্থান। হংসেশ্বরী মন্দির রাজকীয় আবহে গড়ে উঠা এক অপূর্ব সুন্দর মন্দির। এটি কলকাতা শহরের সবচেয়ে কাছের ও জনপ্রিয় মন্দির।

বোটানিক্যাল গার্ডেন

গঙ্গা নদীর পশ্চিম তীরে প্রায় ২৭৩ একর নিয়ে গড়ে উঠেছে কলকাতার বিখ্যাত বোটানিক্যাল গার্ডেন। এখানে আছে ১২ হাজারেরও বেশি ভিন্ন প্রজাতির গাছ। এর ঠিকানা- শিবপুর, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ। ভ্রমণের সময় সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা। প্রবেশ মূল্য ভারতীয়দের জন্য ১০ রুপি, পর্যটকদের জন্য ১০০ রুপি।

কফি হাউস

কলেজস্ট্রিটে প্রেসিডেন্সি কলেজের উল্টোদিকে কফি হাউস, কলকাতার প্রাচীনতম কফি হাউস বাঙালিদের আড্ডার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান, কলকাতার ভিন্টেজ ফিল কে ধরে রাখে এই স্থান। অন্যান্য  cafe র তুলনায় অনেক কম দামে কফি,কাটলেট স্যন্ডুইচ প্রভৃতি পাওয়া যায় । কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে টেবিলে বসে মান্না দের বিখ্যাত লাইন ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা’ অনুভব করতে চাইলে অবশ্যই যেতে হবে কফি হাউসে। 

প্রিন্সেপ ঘাট

জেমস প্রিন্সেপ এর স্মৃতিতে নির্মিত প্রিন্সেপ ঘাট কলকাতা সবচেয়ে পুরনো দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখান থেকে অনেকে নদীতে প্রমোদ ভ্রমণে যায়, ২০১২ সালে প্রিন্সেপ ঘাট থেকে কদমতলা ঘাট পর্যন্ত নদীতীরের উদ্বোধন করা হয়েছে, এই অংশটি আলোকমালা, বাগান, ফোয়ারা দিয়ে সাজানো হয়েছে। ঐতিহ্যময় ঘাট টি উনিশ শতকের নস্টালজিয়া কে ধরে রেখেছে।

কালীঘাট

কালীঘাট মন্দির কলকাতার প্রসিদ্ধ কালী মন্দির, একান্ন শক্তিপীঠের অন্যতম হিন্দু তীর্থক্ষেত্র এটি। পুরাণে বলা আছে এখানে সতীর অঙ্গচ্ছেদের পায়ের আঙ্গুল পড়েছিল

ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম 

প্রায় আট হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই জাদুঘর, সাতটি গ্যালারিতে মোট ৬ টি ভাগে শিল্পকলা, প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ব, ভূতত্ত্ব, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য সংগ্রহ গ্যালারিতে সুসজ্জিত রয়েছে।

ন্যাশনাল লাইব্রেরি

পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাগার ন্যাশনাল লাইব্রেরী অবস্থিত আলিপুরে। বর্তমানে এই গ্রন্থাগারে প্রায় কুড়ি লক্ষ বই এবং ৫ লক্ষ পান্ডুলিপি রয়েছে।

কলেজস্ট্রিট

মধ্য কলকাতায় অবস্থিত কলেজস্ট্রিট পৃথিবীর বৃহত্তম বাংলা বইয়ের বাজার এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পুরনো বইয়ের বাজার, যা বই পাড়া নামেও খ্যাত।

মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়াম

নিউ টাউন এ অবস্থিত এই মোম শিল্পকর্মের জাদুঘরটি ভারতের প্রথম এমন জাদুঘর। প্রায় পঞ্চাশটি মোমের মূর্তি সমৃদ্ধ এই জাদুঘরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, শাহরুখ খান, অমিতাভ বচ্চন, মহাত্মা গান্ধী, মাদার টেরিসা ছোটদের সুপারম্যান, মটু পাতলু সকলের মোমের মূর্তি বর্তমান।

আলিপুর চিড়িয়াখানা

কলকাতার একটি জনপ্রিয় ভ্রমন কেন্দ্র আলিপুর চিড়িয়াখানা, চিড়িয়াখানায় সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম দেখা যায় শীতের মরশুমে, ৪৫ একর আয়তনের এই পশুশালা টি ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। চিড়িয়াখানার উল্টো দিকে একটি অ্যকোয়ারিয়াম রয়েছে, সারা বিশ্বের বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ এবং জীবের সমাহার রয়েছে সেই অ্যাকোয়ারিয়ামে। 

কখন বেড়াতে যাবেন

কলকাতার আবহাওয়া বেশ গরমই বলা চলে। এখানে প্রধানত তিনটি ঋতু বিরাজ করে– গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শীত। গ্রীষ্মকাল শুরু হয় এপ্রিল এবং শেষ হয় জুন মাসে। তাপমাত্রা প্রায় ৩৫-৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি চলে যায়। তাই এ সময়ে ভ্রমণ করাটা বেশ কঠিন হয়ে যায়। কলকাতা ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো বর্ষাকাল (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এবং শীতকাল (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি)। বর্ষাকালে তাপমাত্রা থাকে ২০-২৫ ডিগ্রি যা খুবই আরামদায়ক। শীতকালে তাপমাত্রা নেমে যায় ৯-১১ ডিগ্রিতে। তার মানে একেবারে হাড়কাঁপানো শীতও পড়বে না। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে গেলে বেশ আরামদায়ক পরিবেশেই কলকাতা ভ্রমণ করতে পারবেন।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বেনাপোল বাসে এসে ইমিগ্রেশন শেষ করতে হবে। এর জন্য ভারতীয় যে কোনো পোর্টের ভিসা থাকলেই হবে। ইমিগ্রেশন সেরে ওপারে পেট্রাপোল থেকে সরাসরি কলকাতার বাস পাওয়া যায়। অথবা অটোতে করে বনগাঁ স্টেশনে গিয়ে কলকাতার ট্রেন ধরতে হবে। ফেরার পথেও একই রাস্তা। এছাড়া বিকল্প রাস্তা হিসেবে রয়েছে মৈত্রী এক্সপ্রেস, যা ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় কলকাতার উদ্দেশ্যে।

যদি একটু আরামের সাথে ভ্রমণ করতে চান তাহলে বিমানে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে কলকাতা রুটটি অনেক ব্যাস্ত একটি রুট। প্রতিদিন প্রচুর লোক যাওয়া আসা করে থাকেন। তাই ফ্লাইটের সংখ্যাও বেশী আবার প্রতিযোগিতাও বেশী। ভাল হয় যদি আপনি যাত্রার বেশ আগে থেকেই টিকিট বুকিং করে রাখেন। তাতে খরচ কিছু কম ও হতে পারে।

ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে পারবেন বাংলাদেশ বিমান, স্পাইস জেট, এয়ার ইন্ডিয়া অথবা জেট এয়ারওয়েজ এ। এছাড়া দেশী বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে আছে রিজেনট এয়ারওয়েজ, নভো এয়ার, ইউ এস বাংলা ইত্যাদি। এই বিমানগুলোতে কলকাতা গেলে খরচ অপেক্ষাকৃত কম হবে (বাংলাদেশী টাকায় ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা)। এছাড়া আরও বিমান সংস্থা যেমন থাই এয়ার, শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স, চায়না ইস্টার্ন, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ ইত্যাদিতেও কলকাতা যেতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে একটু বেশী টাকা গুনতে হবে আপনাকে।

খাওয়া দাওয়া

কলকাতা বাসীরা মিষ্টি খাবার পছন্দ করে। তাই শহরে দেখা মিলবে নানা ধরনের মিষ্টির তবে রসগোল্লা আর সন্দেশ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।।কলকাতার স্ট্রিট ফুড বিখ্যাত। স্ট্রিট ফুডের মধ্যে, মোমো,পানি পুরি,কাচুরি,চা সিঙারা, ,চীনা টাউনের চীনা খাবার উল্লখযোগ্য। হোটেলর মধ্যে কস্তুরি, ধানসিড়িঁর খাবার মজার।আর সকালের নাশতায় আলু পরোটা এবং মাটির ভারে চা নিঃসন্দেহে আপনার ভালো লাগবে।।

কোথায় থাকবেন

কলকাতায় থাকার জন্য অনেক হোটেল গেস্ট হাউজ রয়েছে। কলকাতার নিউমার্কেট, মারকুইস স্ট্রিট পার্ক, সদর স্ট্রিট, রফি আহমেদ রোডে রয়েছে অনেক হোটেল। আপনি আপনার বাজেট পছন্দ মতো কোনো হোটেলে উঠতে পারবেন। মোটামুটি মানের নন এসি রুম ৮০০-১২০০ টাকার মধ্যে এবং এসি রুম ১৭০০ রুপির মধ্যে পেয়ে যাবেন।তবে ঘোরাঘুরির সিজন বা বিশেষ উৎসবে পর্যটকদের চাপ বেশি থাকে বলে ভাড়াও বেশি হয়ে থাকে।।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ