কোদাইকানাল ভ্রমণ-

কোদাইকানাল (Kodaikanal) হলো ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ডিন্ডিগুল জেলার একটি পাহাড়ী শহর। তামিল ভাষায় এই নামটির অর্থ “পাহাড়ের উপহার” আর এখানে এলে বুঝা যায় নামকরণ যথার্থ। দক্ষিণ ভারত যখন গরমে ত্রাহি ত্রাহি করে করে সেখানে কোদাইকানাল যেন এক ওয়েসিস, প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি এক শীতল জায়গা। গরম জায়গার নিয়মটিকে অমান্য করে আশ্চর্য এই ঠাণ্ডা জায়গা স্বভাবতই এখানের সবাইকে আকর্ষণ করে।

কোদাইকানালের প্রাকৃতিক সুন্দরতার সংযোজন হল নানা ধরনের বুনোফুল’। রাস্তার দুধারে কোদাইকানালের রূপমাধুরী দ্বিগুণ বেড়ে যায় ফুলের মাদকতা ও বৈভবে। প্রতি বারো বছর অন্তর এক অদ্ভুত নীল ফুল ‘কুরুঞ্জি ফুল’ ফোটে এই পাহাড়ের জঙ্গলে, পালনি পাহাড়শ্রেণীকে নীল কার্পেটের মতো ঢেকে দেয় এই অদ্ভুত নীল ফুল। তার মাতোয়ারা বুনো গন্ধে ঘোর লাগে  এই অঞ্চলের মানুষের। পালনি পাহাড়শ্রেণীর কোলে এই অদ্ভুত ফুলকে ঘিরে বহু গল্প ফেরে মানুষের মুখে। দাক্ষিণাত্যের সেই পাহাড়শ্রেণীর কোলে এক শীতল শৈল শহর কোদাইকানাল। কোদাইকানাল শব্দটির তামিল তর্জমা করলে ‘THE GIFT OF FOREST’।

ভারতবর্ষের গরমের হাত থেকে বাঁচার জন্যে ব্রিটিশরা নানা শৈল শহরকে নিজেদের উপযুক্ত বাসস্থান তৈরি করে নিয়েছিল- তাঁর ছাপ এই কোদাইকানালেও স্পষ্ট। কিন্তু, শৈল শহরের সেই নির্জনতা আর নেই। প্র্যতেকেই ভিড় করেছে শীতকালের একটু শীতের খোঁজে, একটু ঠাণ্ডার আশায়। তবে এক উৎসবের অদ্ভুত আমেজ এই শহরের ভিড়ে।

দল বেঁধে বিকেলের দিকে কোদাই লেকের পাশে হাঁটতে হাঁটতে মানুষ দেখতে দেখতে সময় কেটে যায়। কোদাই লেকের পাশে প্রচুর দোকান পসরা সাজিয়েছে – কোদাই চা, ঘরে তৈরি চকোলেট, শাল, সোয়েটার, টুপি, স্যুভেনির, কাঠের তৈরি হাতের কাজ সব নিয়ে এক জমজমাট ব্যাপার।

কোদাইকানাল এর দর্শনীয় স্থান

কোদাই লেক

এটি কোদাইকানাল এর মুখ্য টুরিস্ট স্পট। সুন্দর এই লেকে বোটিং এর ব্যবস্থা আছে।লেকের পাশে জঙ্গল এলাকা ধরে হেঁটে ঘুরে দেখা যায় আবার লেকের জলে প্যাডেল বোট ট্রিপ ও করা যায়। এক শান্ত পরিবেশ। কোদাই লেকে প্যাডেল বোট চালিয়ে মনে হবে বহু দূর চলে যাই। পড়ন্ত বেলার মিষ্টি রোদের নরম উত্তাপ অদ্ভুত এক ভালো লাগা বোধ সৃষ্টি করবে।

ব্রায়ান্ট পার্ক

লেকের থেকে খানিকটা এগোলেই খুব সুন্দর এই বোটানিক্যাল গার্ডেন। বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালায় সুসজ্জিত এই বাগান।প্রতি গ্রীষ্মে এখানে ফ্লাওয়ার শো হয়।

কোকার্স

এক কিলোমিটার হাঁটার পর পাহাড়ের গা বেয়ে তৈরি করা এই কোকার্স। এটি খুব প্রসিদ্ধ। এখানে হাঁটতে হাঁটতে পুরো উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

পিলার রকস

বাস স্ট্যান্ড থেকে ৮ কি.মি দূরে ৪০০ ফুট উচুঁ উচুঁ পাহাড়ের স্তম্ভ। নির্দিষ্ট ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখতে হয়।

বিয়ার শোলা ফলস

শোনা যায় ভাল্লুকেরা এখানে জল খেতে আসতো তাই এটার নামকরণ করা হয়েছে বিয়ার শালা ফলস।জায়গাটি ভীষণ শান্ত। সরু পায়ে হাঁটা পথ দিয়ে এই জলপ্রপাত এর কাছে যেতে হয়।

কুরিঞ্জি মন্দির

এই সুন্দর মন্দিরটি নীলগিরির বিখ্যাত ফুল কুরিঞ্জির থেকে নামকরণ করা হয়েছে। এটি কার্তিক ও গনেশ মন্দির।

ডলফিস নোস

এটি চ্যাপ্টা পাথরের স্তম্ভ।দেখতে ডল্ফিনের নাকের মতো তাই এই নামকরণ করা হয়েছে। এখান থেকে পাহাড় এবং উপত্যাকার দুর্দান্ত ভিউ পাওয়া যায়।

সুইসাইড পয়েন্ট

চারদিক ঘন সবুজ। সবুজের গা বেয়ে নেমে আসা মেঘ। পাহাড়ের মাথা থেকে যে দিকে চোখ যায়, শুধুই অপরূপ। কোথাও আবার খাড়া পাহাড়। সবুজের লেশমাত্র নেই। রয়েছে রুক্ষতা। আর সেই রুক্ষতাতেই সৌন্দর্য হয়ে উঠেছে ভয়ংকর। যেখান থেকে চোখ ফেরানো অসম্ভব।
গল্পকথাও আছে, ভালোবাসা না পেয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন অনেক প্রেমিক বা প্রেমিকা। আর তাই এমন অদ্ভুত নাম।কোদাই লেক থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে সুইসাইড পয়েন্টের নতুন নাম দিয়েছেন গ্রিন ভ্যালে ভিউ।

ভ্রমণের সেরা সময়

এখানে সারা বছরই পর্যটকরা ঘুরতে আসেন তবে  এপ্রিল থেকে জুন আদর্শ সময় । জুলাই সেপ্টেম্বর থেকে বর্ষা চলে আসে তাই এসময় ভিড় কম থাকে। তবে যারা পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখতে ভালবাসেন তাদের জন্য বর্ষাকাল সবচেয়ে ভালো সময়।

কিভাবে যাবেন

কোদাইকানাল থেকে সবচেয়ে কাছের এয়ারপোর্ট হলো- মাদুরাই, দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। অপর এয়ারপোর্ট কোয়েম্বাতুরের দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার। আর ট্রেনে সবচেয়ে কাছের স্টেশন কোদাইরোডের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী এক্স-১২৬৬৫ ট্রেনে করে কোদাইকানাল যাওয়া যায়। এছড়া বাসেও যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য কমবেশি সব দামে প্রচুর হোটেল ও লজ আছে। আগে থেকে অনলাইনে বুকিং দিয়ে যাওয়া যাবে। সেখানে গিয়ে বুক করতে পারবেন। তবে পিক সিজনে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখলে সুবিধা। সেখানে ৫ তারকা মানের হোটেলগুলো হলো- কোদাই রিসোর্ট হোটেল, হোটেল জয়, দি কার্লটন, কোদাই সানশাইন হোটেল ইত্যাদি।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ