তাজমহল ভ্রমণ –

তাজমহল (Taj Mahal) বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের তালিকায় তাজমহল অন্যতম। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত মুঘল আমলের এই স্থাপনায় রয়েছে ইসলামিক, ফারসি ও ভারতীয় স্থাপত্যের এক অপূর্ব মিশ্রণ। তাজমহলকে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়- যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।সমাধির ওপরের মার্বেল পাথরের গম্বুজই সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। গম্বুজের ওপরের দিক সাজানো হয়েছে একটি পদ্মফুল দিয়ে, যা তার উচ্চতাকে আরও দৃষ্টিগোচর করে। তাজমহল নির্মাণে সে সময়ে আনুমানিক ৩২ মিলিয়ন রুপি খরচ হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।   

তাজমহল সম্রাট শাহজাহানের এক অমর সৃষ্টি। এটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম মমতাজকে ভালোবেসে। আর এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভালোবাসার নিদর্শন যা নির্মাণ করতে সুদক্ষ ২০ হাজার শ্রমিকের সময় লেগেছিল ২২ বছর। সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রীকে এতটাই ভালোবাসতেন যে, সাম্রাজ্যের সব কাজের সঙ্গী করতেন তাঁকে। এমনকি সামরিক অভিযানের সময় পর্যন্ত বাদ পড়ত না। ১৬৩০ সালে এক সামরিক অভিযানের সময় শেষ সন্তানের আগমনবার্তা মমতাজকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়। আর সে সময়ই মমতাজ স্বামী শাহজাহানের কাছ থেকে যে চারটি প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হলো তিনি যেন স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার এমন এক নিদর্শণ নির্মাণ করেন যা পৃথিবীতে আর কেউ কোনোদিন করতে পারবে না। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থেই সম্রাট শাহজাহান ১৬৩১ সালে স্ত্রীর সমাধীতে এই সৌধ নির্মাণ শুরু করেন। দীর্ঘ ২২ বছরের দক্ষ কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ১৬৫৩ সালে এটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। আর এর নির্মাণের মধ্য দিয়ে স্ত্রীকে দেওয়া তার প্রতিশ্রুতিও রক্ষা হয়েছে। কারণ আজ পর্যন্ত ভালোবাসার এমন নিদর্শন যেমন কেউ তৈরি করতে পারেনি পৃথিবীতে তেমনি নিজের প্রেমিকাকে ভালোবাসতে শাহজাহান-মমতাজের ভালোবাসাকে একবার স্মরণ করতেও ভুল করেন না কোনো প্রেমিক।

তাজমহলে যা যা দেখবেন টিকেট 

তাজমহল হলো পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি আর ভারতের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র। মহা স্মৃতির এই নিদর্শন দেখতে তাই আপনাকে অবশ্যই কিছু অর্থ খরচ করতে হবে। মনে রাখবেন তাজমহল দেখতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে আপনার আইডি কার্ড। ভারতীয়দের ক্ষেত্রে এটি হলো তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আর অন্য দেশের দর্শনার্থীদের জন্য বৈধ পাসপোর্ট। টিকেট কেনার সময় আপনার পাসপোর্ট দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করেই তবে মিলবে সেই স্বপ্নের তাজমহলের প্রবেশাধিকার। তাজমহলে প্রবেশের টিকেট ভারতীয়দের জন্য ৫০ রুপি হলেও বাংলাদেশিদের প্রবেশ টিকেট ৫০০ রুপি আর এশিয়ার বাইরে থেকে আগত অতিথিদের গুনতে হবে এক হাজার রুপী

আগ্রা ফোর্ট ভ্রমণ –

তাজমহল থেকে আগ্রা ফোর্ট যেতে সময় লাগবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। প্রবেশ মূল ৮০ রুপি। তবে মূল গেইট থেকে ৫০ রুপির একটি টিকেটের সাথে পাশের আরেকটি বুথ থেকে ৩০ রুপির সংযুক্তি টিকেট নিয়ে নিতে হবে। তারপর এগিয়ে যান ফোর্টের ভিতরে। তাজমহল দেখতে এসে আগ্রা ফোর্ট দেখতে কেউই ভুল করেন না। কারণ এখানেই জড়িয়ে রয়েছে সম্রাট শাহজাহানের সেই দুঃখ গাঁথা। জীবনের শেষ আটটি বছর শাহজাহানকে এখানেই বন্দি থাকতে হয়েছে। আর সেই বন্দিদশা তাও আবার নিজেরই সন্তান আওরঙ্গজেবের হাতে। দীর্ঘ আটটি বছর শুধু প্রিয়তমার কররের দিকে তাকিয়ে থেকে কাঁদতে কাঁদতে এখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত হন শাহজাহান। আগ্রা ফোর্ট ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। এর নির্মাণশৈলী দেখার মতো। দুর্গের ভেতরে রয়েছে অনেক প্রাসাদ, মিনার ও মসজিদ। ষোড়শ শতাব্দীতে আকবরের শাসনামলে শুরু করে অষ্টাদশ শতাব্দীতে আওরঙ্গজেবের শাসনামলে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। দুর্গের ভেতরে খাস মহল, শীশ মহল, মুহাম্মান বুর্জ (একটি অষ্টভুজাকৃতির মিনার), মোতি মসজিদ এবং নাগিনা মসজিদ উল্লেখযোগ্য।

ভ্রমনের সেরা সময়

আগ্রাতে গরমে না যাওয়াই ভালো নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি আগ্রা ভ্রমনের উৎকৃষ্ট সময়।

কিভাবে যাবেন

বাস,ট্রেন, বিমান অনেক ভাবে দিল্লী যাওয়া যায়। সড়ক পথে যেতে ঢাকার কল্যাণপুর থেকে কেটে নিন বাসের টিকেট। কলকাতা পৌঁছে কেটে নিন সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেন রাজধানী এক্সপ্রেসের টিকিট, যা আপনাকে নামিয়ে দেবে নিউ দিল্লি রেলস্টেশনে। চাইলে অন্যান্য ট্রেনের টিকেটও কাটতে পারেন, যার মধ্যে রয়েছে ইউভা এক্সপ্রেস যেটি আপনাকে নিয়ে যাবে আনন বিহার রেলস্টেশন দিল্লি, কালকা মেল আপনাকে নামিয়ে দিবে পুরাতন দিল্লি রেলস্টেশনে। এ ছাড়া আরো অনেক ট্রেন রয়েছে যা কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত যাতায়াত করে। তারপর দিল্লির আনন্দবিহার ষ্টেশনে পৌঁছে ট্রেন বা বাসে করে আগ্রা যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

আগ্রাতে কম খরচের মধ্যে সাই প্যালেস, হোটেল সাফারি, ম্যাক্স গেস্ট হাউজ, দা আগ্রা গ্র‍্যান্ডে, ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউজ, রে অফ মায়া, থমাস হোম স্টে, সেভেন হিলস টাওয়ার এর মতো হোটেল এবং রেস্ট হাউজ ৬০০-১৫০০ এর মধ্যে পাবেন।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ