আলীকদম ভ্রমণ-

আলীকদম (Alikadam) পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনাময় দর্শনীয় স্থান। সৃষ্টির এক অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান জেলা। ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে আলীকদম যেনো অন্য এক নাম। বান্দরবান জেলার দক্ষিণ প্রান্তে আলীকদম উপজেলা। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, ঢালু পথ দিয়ে যেতে যেতে হারিয়ে যাবেন একের পর এক সৌন্দর্যের ভরপুর দর্শনীয় স্থান দেখে। প্রতিবছরই দেশি বিদেশি পর্যটকরা ছুটে আসছেন আলীকদমে। পাহাড়ের বুকে বরাবরই ফুটে উঠেছে আলীকদম উপজেলার দর্শনীয় স্থানগুলো।তবে, যোগাযোগ সুবিধা না থাকায় এ উপজেলায় এ যাবত তেমন কোনো পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেনি।

নামকরণ

আলোহক্যডং থেকে আলীকদম নামের উৎপত্তি। বোমাং সার্কেল চীফের নথিকপত্র ও ১৯৬৩ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার কর্তৃক আঁকা মানচিত্রে আলোহক্যডং নামের সত্যতা পাওয়া যায়। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক আতিকুর রহমান এর মতে, আলী পাহাড়ের সাথে সঙ্গতিশীল নাম হল আলীকদম। তাছাড়া কথিত আছে যে, ৩৬০ আউলিয়া এ উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। তাদের মধ্যে আলী নামে কোন এক সাধক এ অঞ্চলে আসেন। ওনার পদধুলিতে ধন্য হয়ে এ এলাকার নাম করণ হয় আলীকদম। পূর্ববর্তী সময়ে এটি লামা উপজেলার একটি ইউনিয়ন ছিল। ১৯৭৬ সালে লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কিছু এলাকা নিয়ে আলীকদম থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের ফলে এটি উপজেলায় অধিষ্ঠিত হয়। এ উপজেলায় বর্তমানে ৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ আলীকদম উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম আলীকদম থানার আওতাধীন। আলীকদম উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মাতামুহুরী নদী। এছাড়া রয়েছে তৈন খাল এবং চৈক্ষ্যং খাল।

আলীকদম এর দর্শনীয় স্থান

মারাইংতং পাহাড়, আলীর সুড়ঙ্গ, ক্রিসতং পাহাড়, চাইম্প্রা ঝর্ণা, দামতুয়া ঝর্ণা, ডিম পাহাড়, তাংমাইনঝিড়ি ঝর্ণা, পালংখিয়ং ঝর্ণা, রুপমুহুরী ঝর্ণা, রংরাং পাহাড়, লাদ মেরাগ ঝর্ণা, শিলবুনিয়া ঝর্ণা ও রোয়াম্ভূ নোনার ঝিড়ি ঝর্ণা।

আলী সুড়ঙ্গ

আলীকদম উপজেলা সদর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরেই মাতামুহুরী-তৈন খাল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা দু‘পাহাড়ের চূঁড়ায় প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট আলীর গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গ। এ পাহাড়েই রহস্যজনক ০৪টি সুড়ঙ্গের অবস্থান। তবে, প্রকৃতির অপরূহ এই গুহাকে ঘিরে রহস্যের যেনো শেষ নেই।

মারাইনতং জাদি

আলীকদম উপজেলা সদর হতে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে আলীকদম-লামা উপজেলার সীমান্তবর্তী মিরিঞ্জা পাহাড়ে মারাইনতং নামের পাহাড় চূড়ার অবস্থান। এর উচ্চ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট। পাহাড় চূড়ায় ১৯৯২ সালে পূজনীয় ভিক্ষু সংঘের উদ্যোগে এবং স্থানীয় পুণ্যার্থীদের সহযোগিতায় বৌদ্ধমূর্তি প্রতিষ্ঠা, জাদী নির্মাণ করা হয়। স্থাপিত বৌদ্ধ জাদীকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর মারাইনতং মহা বৌদ্ধ মেলা ও বৌদ্ধ ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ উৎসবে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ থেকে অসংখ্য বৌদ্ধ ভিক্ষু, পুণ্যার্থী ও পযটকদের সমাগম ঘটে। আলীকদম উপজেলার আবাসিক এলাকা হয়ে এই পাহাড়ে যেতে হয়।

ডিম পাহাড়

আলীকদম-থানচি সড়কের ২৩ কিলোমিটার পয়েন্টে এ সড়কের পাশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,০০০ ফুট উঁচু পাহাড় অবস্থিত। ডিম্বাকৃতির ন্যায় এই পাহাড়কে ‘ডিম পাহাড়’ নামে অভিহিত করা হয়। অধিকাংশ সময় মেঘে ঢাকা ও আকাশছোঁয়া এ পাহাড় দেশী-বিদেশী পযটকদের আকৃষ্ট করেছে।

রূপমুহুরী ঝর্ণা

আলীকদম সদর হতে প্রায় ৫০ কিমি দূরে পোয়ামুহুরী নামক স্থানে এ ঝর্ণাটির অবস্থান ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে রয়েছে।

দামতুয়া ঝর্ণা

ঝর্ণাটি মুরং ভাষায়, যে ঝিরিতে অবস্থিত তাকে তুক অ বলে। তুক অর্থ ব্যাঙ এবং অ অর্থ ঝিরি। তুক অ অর্থ ব্যাঙ ঝিরি। ডামতুয়া অর্থ খাড়া আকৃতির দেয়াল যা বেয়ে ব্যাঙ বা মাছ উপরে উঠতে না পারে। ওয়াজ্ঞাপারাগ অর্থ পাহাড় বা উচুঁ স্থান থেকে পানি পড়া। তুক অ ডামতুয়া ওয়াজ্ঞাপারাগ সহ ঝর্ণাটিকে একাধিক নামে ডাকা হয়। আলীকদম থানচি রোডে ১৭ কিলোতে আদুপাড়া নামক স্থান থেকে যেতে হয়।

তাংমাইন ঝিড়ি ঝর্ণা ও পালঙকিয়ং ঝর্ণা

এই দুটি ঝর্ণা আলীকদম উপজেলার ৪ নং কুরুকপাতা ইউনিয়নের অন্তর্গত। মূলত তৈনখালে এই দুটি ঝর্ণা। আলীকদমের আমতলী লংঘাট নামক স্থান থেকে নৌকা/ইঞ্জিলচালিত বোট দিয়ে যেতে হয়।

রংরাং পাহাড়

স্থানীয় তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মানুষরা তাদের মাতৃভাষায় ধনেশ পাখিকে রংরাং/অরআঙ নামে ডাকে। একটা সময় এই পাহাড়ে প্রচুর পরিণাম ধনেশ পাখির ডাক শুনা যেতো। শিকার করার কারণে পাখিটি বিলুপ্তির পথে। এই পাখির নাম অনুসারে অরআঙ/ রংরাং পাহাড় ডাকা হয়। এই পাহাড়টি থানচি আলীকদম উপজেলার সিমান্তবর্তী এলাকায় পূর্বদিকে অবস্থিত। এই পাহাড়ে উঠলেই সূর্য অস্ত্র যাওয়া খুব সুন্দরভাবে দেখা যায়। চারপাশে পাহাড় আর পাহাড়, পাশে থানচি এবং আলীকদম উপজেলা। দক্ষিণদিকে তাকালে দেখতে পাবেন মিয়ানমারের সিমান্তবর্তী এলাকা। পাহাড়ের এই মনোরম পরিবেশ আপনাকে বরাবরই মুগ্ধ করে তুলবে। আলীকদম উপজেলা তৈনখালের দৌছড়ি বাজার হয়ে এই পাহাড়ে যেতে হয়।

ক্রিসতং পাহাড়

গভীর জঙ্গল আর পাহাড় হওয়ায় এই জায়গাটি পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান। মূলত পর্যটকরা এই পাহাড়টি ক্রিসতং নাম রেখেছে বলে ধারণা করা হয়। রংরাং পাহাড়ের পাশে রয়েছে ক্রিসতং পাহাড়। পাহাড়ের নিচের গভীর খাদ। আর এরি মাঝে লুকিয়ে রয়েছে তিনাম ঝর্ণা। পাহাড়ের এই জায়গাটি অধিকাংশ সময় মেঘে ডাকা থাকে।

আলিকদমে দর্শনীয় স্থান দেখার মতো আরো অনেক কিছু রয়েছে। এর মধ্যে তুলি গার্ডেন, শিলবুনিয়া ঝর্ণা, নোনারঝিড়ি ঝর্ণা, থানচি রোডসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমাদের।।#হ্যাপি_ট্রাভেলিং।

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ