ভুটান ভ্রমণ-

ভুটান( Bhutan) ভারত ও চীনের মধ্যবর্তী এক স্থানে ভুটানের অবস্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ দেশটিকে এশিয়ার সবচেয়ে সুখী রাষ্ট্র বলা হয়। বিশ্বের অন্যতম সুখী রাষ্ট্রের তালিকায় আছে ভুটানের নাম। মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, চমৎকার পর্বতমালা, প্রাচীন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা দেখতে গোটা বিশ্ব থেকে এখানে প্রতিবছর পর্যটকরা আসেন। আকর্ষণীয় এবং নান্দনিক সৌন্দর্যের দেশ ভুটান। সুন্দর পাহাড় আর পরিপাটি শহর দেখে আপনার মন ভরে যেতে পারে। তাই কোনো এক ঝলমলে রোদে আপনি সড়কপথে বেরিয়ে পড়তে পারেন ভুটানের উদ্দেশে। ভুটান বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ। এ কারণে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে ভুটানে। এ দেশে নেই কোনো দূষণ। কার্বন নেগেটিভ দেশগুলোর মধ্যে ভুটান অন্যতম।

ভুটানের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান-

থিম্পু ভ্যালিঃ

থিম্পু ভ্যালি
থিম্পু ভ্যালি, ছবিঃ সংগৃহীত

দেশটির রাজধানী থিম্পু হলেও জায়গাটি কিন্তু ‘থিম্পু ভ্যালি’ নামেই সমাধিক পরিচিত। পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রাজধানী শহর এটি। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত থিম্পু ভুটানের রাজধানী। উচ্চতা ২৩০০ মিটার, অর্থাৎ ৭০০০ ফুটেরও অধিক। একমাত্র রাজধানী শহর হিসেবে সেখানে গেলে অবাক হয়ে দেখবেন রাজপথে কোনো সিগন্যাল বাতি নেই। নেই শব্দটি সেখানে আরও দুটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেখানে কোনো ভিক্ষুক নেই এবং নেই কোনো গৃহহীন মানুষ।বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের রাজধানী থেকে থিম্পু আলাদা কারণ এখানে কোনো বিমানবন্দর নেই। এর জন্য প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পারোর ওপরই এ রাজধানী নির্ভরশীল। থিম্পু বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ রাজধানী শহর। এখানে অনেক রেস্তোরাঁ, নাইটক্লাব এবং শপিং সেন্টার রয়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়া থাকলেও এ শহরটি এখনও তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। থিম্পুর আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে চাঙ্গাংখা লখাং, জাতীয় লোকসাহিত্য জাদুঘর এবং সিমটোখা জজং উল্লেখযোগ্য।

ফুন্টসোলিংঃ

ভুটানের সবচেয়ে বেশি নগরায়ণ হয়েছে ফুন্টসোলিং শহরে। এ অঞ্চলটি দেশের আর্থিক, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রধান অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ফুন্টসোলিং সীমান্ত ভুটানকে ভারত থেকে পৃথক করেছে। এ পথ দিয়ে যেতে যেতে এখানকার সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য সহজেই মন কাড়ে পর্যটকদের। এ শহরটি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য ভুটানের প্রবেশদ্বার হিসেবেও পরিচিত।

পুনাখাঃ

১৬৩৭ থেকে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত পুনাখা ভুটানের রাজধানী ছিল। ঐতিহাসিভাবে এ স্থানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। ভুটানের দুটি প্রধান নদী ফু চু এবং মো চু এ উপত্যকায় এসে মিশেছে। পুনাখা প্রশাসনিক কেন্দ্র পুনাখ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১২ হাজার মিটার উচ্চতায় স্থাপিত।

তাশিকো দেজংঃ

১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত দালানটি দেশের প্রধান সচিবালয়। একইসঙ্গে এটি পার্লামেন্ট ভবন, রাজার কার্যালয় এবং দেশের ধর্মীয় প্রধানদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাসাদটি অনেক পুরনো না হলেও এর কারুকাজ আপনাকে মুগ্ধ করবে।

সিমতোখা দেজংঃ

এই প্রাসাদ দুর্গটি রাজধানী থেকে আট কি.মি. দূরে। এটি দেশের অন্যতম পুরনো প্রাসাদ। ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে এটি নির্মাণ করেন দেশের প্রথম রাজা সাবদ্রুং নাওয়াং ন্যামজেল। এখানকার দেয়ালে দেয়ালে যেন ছড়িয়ে আছে প্রাচীন দিনের রাজাদের জীবন যাপনের ইতিহাস।

হা ভ্যালিঃ

পারোর দক্ষিণ -পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত হা ভ্যালি ভূটানের ক্ষুদ্রতম ও প্রত্যন্ততম একটি জেলা। এখানে আছে প্রাচীন আল্পাইন বন, পাহাড়। এ উপত্যকায় ওই দেশের রানীর দাদির পৈতৃক বাড়ির অবস্থান ছিল। যারা পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এ স্থানটি খুবই আকর্ষনীয়।

জিগমে দর্জি ন্যাশনাল পার্কঃ

পারো ভ্যালিঃ

পারো ভ্যালি
পারো ভ্যালি, ছবিঃ সংগৃহীত

ভুটানের মধ্যে এই পার্ক দ্বিতীয় বৃহত্তম ও এখানে নানা ধরনের বিপন্ন প্রানির দেখা পাওয়া যায় যেমন- তুষার চিতাবাঘ, হিমালায়ান মাস্ক হরিন, এশিয়াটিক বন্য কুকুর, লাল পাণণ্ডাসহ আরও অনেক জীব বৈচিত্যের দেখা মিলবে এই পার্কে। বিরল প্রজাতির জন্য বেশ কিছু রিজার্ভ হাউস আছে। বিশেষ করে পাখী প্রেমীদের জন্য পাখীদের রিজার্ভ হাউজ নিঃসন্দেহে ভালো লাগবে।

ভুটানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এটি। দেশের একমাত্র বিমান বন্দরটি এখানে অবস্থিত। যা পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল অথচ নয়নাভিরাম বিমান বন্দর! চারদিকে পর্বত ঘেরা ভ্যালি আপন প্রাকৃতিক লীলার কারণে ভুটানের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় জায়গা। টাইগার নেস্ট নামক দৃষ্টিনন্দন ভবন দেখতে এখান থেকেই যেতে হয়। পৃথিবীর বিখ্যাত ট্র্যাকিং ট্রেইল দ্রুক পাথ ট্রেইলের শুরু এই পারো ভ্যালি থেকে। পারোতে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে।চু এবং ওয়াং চু নদীর মিলনস্থানের কাছে বিস্তৃত উপত্যকা অঞ্চলের নাম পারো। উপত্যকার নিচ দিয়ে প্রবাহিত নদী পর্যটকদের মন জুড়িয়ে দেয়। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কারণেও এটি পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত।

ট্রেকিং করার মতো পাহাড় বা উপাত্যকাঃ

পুনাখা ভ্যালীর আসে পাশে ট্রেকিং করার মতো বেশ কিছু পাহাড় আছে। যেমন- কামসুন ইউলি নামগেল চর্টেন, জানা গ্রাম (কিচু রিসোর্ট এর পাশে), দোচুলা থেকে থিনলেগাং ন এবং লাম্পেরি থেকে লুম্বিটসাওয়া।

ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময়ঃ

ভুটান বেড়ানোর উপযুক্ত সময় হল সেপ্টেম্বর-নভেম্বর। কেননা এই সময়ে বৃষ্টি হয় না, আকাশ পরিষ্কার থাকে, আবহাওয়া সুন্দর থাকে এবং খুব বেশী ঠাণ্ডা পড়ে না। শীতকালে ভুটানে প্রচুর ঠাণ্ডা পড়ে এমনকি বরফ জমে রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে যায়। যারা বরফ উপভোগ কিংবা স্নোফল দেখতে চান তারা চাইলে শীতেও ঘুরে আসতে পারেন। তবে বর্ষাকালে না যাওয়াই ভালো। কারণ বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তবে সেপ্টেম্বর-নভেম্বর ভুটানে পিক সিজন তাই সবকিছুর দাম বেশী থাকে, বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক পর্যটক ঘুরতে আসেন এই সময়ে।

কিভাবে ভুটান যাবেনঃ

ভ্রমন প্রিয় মানুষের প্রথম এবং প্রধান উদ্যেশ্য থাকে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্য উপভোগ করা। যতটুকু সম্ভব কাছে থেকে উপভোগ করা। এছাড়াও থাকে সেই ভৌগলিক এলাকার কালচার, আচার আচরন চলাফেরা ইত্যাদি। এসব দিক বিবেচনা করলে ভুটান ভ্রমন একজন পর্যটকের ভ্রমন তালিকায় উপরের দিকে থাকে। জেনে নিন কিভাবে ভুটান ভ্রমন করবেন। আমাদের বাংলাদেশ হতে সড়ক পথে এবং বিমান পথে এই দুই উপায়ে ভুটান যাওয়া যায়। বাংলাদেশীদের জন্য ভুটান যেতে কোন ভিসার প্রয়োজন হয় না। কিন্ত সড়ক পথে যেতে হলে ভারতের ট্রানজিট ভিসা নিতে হয়।

আকাশ পথে পাহাড়ের দেশ ভুটান ভ্রমণঃ

প্লেনে গেলে আগে থেকে ভিসার কোন ঝামেলা নেই কারণ ভুটানে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া হয়। তবে কোথায় কোন হোটেলে থাকবেন, হোটেল বুকিং এর কাগজ বা অনলাইন কপি রাখা ভালো। অনেকসময় দেখতে চায়। ভুটানের একটি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট যেটা পারোতে অবস্থিত। তাই আপনি ফ্লাইটে গেলে আগে পারোতে পৌঁছাবেন। চাইলে আগে পারো ঘুরে তারপর থিম্পু, পুনাখা ঐদিকে যেতে পারেন। অথবা যদি ফ্লাইটে ফেরেন তাহলে ফেরার পথে পারো ঘুরে যেতে পারেন।

বাই রোডে ভুটান যাওয়ার উপায়ঃ

বাই রোডে ভুটান যেতে হলে প্রথমেই দরকার হবে ভারতের ট্রানজিট ভিসা। কারন বাংলাদেশের সাথে ভুটানের কোন বর্ডার নেই। ঢাকা থেকে বুড়িমাড়ি/ চেংড়াবান্ধা বর্ডার দিয়ে সীমান্তে প্রবেশ করে সেখান থেকে বাস কিংবা ট্যাক্সি করে ভুটানের বর্ডার জয়গাঁ/ ফুন্টশোলিং দিয়ে ভুটানে প্রবেশ করা যায়। এক্ষেত্রে সময় লাগে প্রায় ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু সুবিধা হচ্ছে খরচ কম হয় এবং সারা পথের সুন্দর সব দৃশ্য উপভোগ করা যায় আর সময় থাকলে ফুন্টশোলিং এলাকাটাও একদিন থেকে ঘুরে দেখা যায়।

খাবারঃ

আপনার সামর্থ্য মত আপনি বিভিন্ন মানের খাবার খেতে পারেন। বাংলা খাবার পেলেও, আপনি বাংলাদেশের মত স্বাদ পাবেন না। সবজি খেতে পারেন এবং মুরগী খেতে পারেন। ভুটানে আপনি মাছ ও খেতে পারেন। খাবার জন্য আপনাকে অর্ডার করে কমপক্ষে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। আপনি চাইলে ভুটানি খাবার খেয়ে দেখতে পারেন। ভুটানি খাবার তেমন বেশী দামী হয় না। ভুটানে চা বা কফি খেতে ৩০/৪০ রুপি লাগে।আপনি ১০০/২০০ রুপিতে খাবার খেতে পারেন। তবে জায়াগা ভেদে বেশীও লাগতে পার ।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার, হ্যাপি_ট্রাভেলিং।

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ