সান্দাকফুফালটু, দার্জিলিং

অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভারতে দার্জিলিং এর সান্দাকফু (Sandakphu) অন্যতম সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর স্থান। যারা পাহাড় ভালবাসেন মেঘের নানা রং দেখতে আগ্রহী ও ভারী ব্যাগ কাধেঁ হাটতে সক্ষম তারা যেতে পারেন এই ট্রেকিং –এ।

সান্দাকাফু (Sandakphu)

সান্দাকফু পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম শৃঙ্গ যার অর্থ “Height of the Poison Pants”. সান্দাকফু এর চূড়ার কাছে বিষাক্ত গাছ জন্মায় আর তাই সেখান থেকে এই নাম এসেছে। চূড়াটি ৩৬৩৬ মিটার (১১৯৪১ ফুট উঁচু)। দার্জিলিং এর সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের ধারে পশ্চিমবঙ্গ-নেপাল সীমান্তের এই শৃঙ্গ সিঙ্গালিলা পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু বিন্দু। এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোত্‍সে এবং মাকালু – পৃথিবীর পাঁচটি সবচেয়ে উঁচু চূড়ার চারটিই সান্দাকফু থেকে দেখা যায়।

সান্দাকফু হলো তাদের জন্যে স্বর্গ যারা হয়ত খুব ভালো ট্রেকার না কিন্তু পাহাড় ভালোবাসে। সান্দাকফুকে এজন্যেই বলা হয়ে থাকে ট্রেকার্স প্যারাডাইস।

ফালটু (Phalut)

সান্দাকফু-ফালটু ট্রেকের শেষ গন্তব্য হচ্ছে ফালটু যা সান্দাকফু থেকে ২৩ কি.মি দূরে অবস্থিত। ফালটু টপের উচ্চতা ৩৬০০ মিটার যা পশ্চিম বঙ্গে দ্বিতীয়। হিমালয়ের অপরূপ সৌন্দর্য্যের জন্যই ফালটুর খ্যাতি। সান্দাকফু থেকে ফালটু পরযন্ত ট্রেকের পুরো পথ দর্শনীয়।। পোড়া রৌপ্য – ফার অরন্য সর্বাধিক সুন্দর দৃশ্য তৈরী করে যা চোখ জুড়িয়ে যায়।। ফালটুতে তুষারপাতের সীমার একটি দুর্দান্ত দৃশ্য পাওয়া গেছে যা সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ, এবং নেপালেরও ত্রিভুজ। কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জগুলি এবং এভারেস্ট এর দুই শৃঙ্গই এখান থেকে স্পট দেখা যায়।

সান্দাকফুফালটু

দার্জিলিং থেকে সান্দাকফু ৫৮ কিঃমিঃ আর ফালুট ৭৯ কিঃমিঃ দুরে। সান্দাকফু থেকে ফালুট ২১ কিঃমিঃ। প্রচলিত ৩টি ট্রেকিং রুট আছে এই পথে। সান্দাকফু থেকে ফালটু ট্রেকে সিজন ভেদে তাপমাত্রা দিনের বেলা ১২-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের বেলা মাইনাস ৫- ৫ ডিগ্রি পর্যন্ত থাকে। তাই জামাকাপড় দিক দিয়ে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত।

নং রুট : দার্জিলিং ২১৩৪ মি – মানেভনজং ২১৩৫ মি – টংল ৩০০০ মি- সান্দাকফু ৩৬৩৬ মি- ফালুট ৩৬০০ মি। এপথে দার্জিলিং থেকে সান্দাকফু পযন্ত যাতায়াতের দূরত্ব ১১৬ কিঃমিঃ। ৪ দিনের পযন্ত যাতায়াতের দূরত্ব আর ফালটু পযন্ত যাতায়াতের দূরত্ব ১৫৮ কিঃমিঃ সময় লাগবে ৫/৬ দিনের ট্রেকিং পথ।

নং রুট : ১নং রুটের ট্রেকিং পথে সান্দাকফু হয়ে ফালুট পযন্ত পৌছে একই পথে না ফিরে ফালুট থেকে রাম্মাম ২৫৬০ মি – রিমবিক ২২৮৬ মি ঝেপি – ১৬২৪ মি – বিজনবাড়ি ৭৬২ মি হয়ে দার্জিলিং। এপথে যাতায়াতের দূরত্ব ১৫৩ কিঃমিঃ সময় লাগবে ৬/৭ দিনের ট্রেকিং পথ।

নং রুট : এপথে ২নং রুটের ট্রেকিং পথে ফালুট থেকে রাম্মাম-রিমবিক পৌছে রিমবিক থেকে পালমজৌ ২২১৬ মি – বাতাসি ২০৯৪ মি হয়ে মানেভনজং পৌছে দার্জিলিং ফেরা যায়। এপথে যাতায়াতের দূরত্ব ১৭৮ কিঃমিঃ সময় লাগবে ৮/৯ দিনের ট্রেকিং পথ।

প্রতিটি পথই গেছে চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আসাধারন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে দিয়ে।

ট্রেকের সেরা সময়ঃ

ক্রিস্টাল ভিউ পেতে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস সব থেকে ভালো সময়। এ সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা ভালো করে দেখা যায়। তবে স্নোফল পেতে জানুয়ারি থেকে মার্চ বেস্ট টাইম।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • সিঙ্গালিলা পার্কের এন্ট্রি টিকেট মানেভঞ্জন থেকে নিতে হয়। সিঙ্গালিলা পার্কের টিকেট- ২০০ রুপি।
  • ক্যামেরা থাকলে -১০০ রুপি
  • গাইড কে প্রতিদিন -৮০০ রুপি
  • পাসপোর্ট এনং ভিসার ফোটোকপি- ২-৫ কপি
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি-৪ কপি সাথে রাখবেন

মোবাইল নেটওয়ার্ক

সান্দাকফু -ফালটু ট্রেকে বেশিরভাগ সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক এর কাভারেজ পাওয়া যায়না।

কিভাবে যাবেনঃ

সান্দাকফু গাড়ি করেও যাওয়া যায় আবার ট্রেকিং করেও যাওয়া যায়। যাত্রা শুরু করতে হয় মানেভঞ্জন থেকে যা দার্জিলিং থেকে ২৮ কি.মি দূরে অবস্থিত। মানেভঞ্জন থেকে আপনাকে গাইড নিতে হবে এবং প্রয়োজন মনে হলে এখান থেকে পোর্টার নিতে পারেন।সান্দাকফু পরিচিত ট্রেকিং এর স্বর্গ রাজ্য হিসাবে।তাই যারা সবে ট্রেকিং শুরু করেছেন তাদের কাছে পায়ে হাঁটার আদর্শ স্থান সান্দাকফু -ফালটু। ইচ্ছে হলে কেউ ১৯৫০ তৈরি ল্যান্ড রোভারে চড়ে সান্দাকফু ও ফালটু অবধি যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

সান্দাকফুতে সামান্য সংখ্যক হোটেল গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে শেরপা চ্যালেট লজ বেশ ভালো। এছাড়া আছে GTA Trekkers Hut.

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ