খাগড়াছড়ি ভ্রমণ-
খাগড়াছড়ি (Khagrachari) প্রাকৃতিক নৈসর্গিক পরিবেশ আঁকাবাঁকা পাহাড়বেষ্টিত ছোট্ট নদী, ঝিরি আর ঝর্ণাময় সবুজ প্রকৃতি আর বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর এক অনিন্দ্য মেলবন্ধনের জনপদ পাহাড়ী জেলা খাগড়াছড়ি। পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় সবুজ অরণ্য দেশের যেকোনো অঞ্চল থেকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে এ জনপদকে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশের এ পাহাড়ি অঞ্চল পর্যটকদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। দিনের পর দিন পাহাড়ের রানি খ্যাত খাগড়াছড়িতে ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের। খাগড়াছড়ির আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ, জেলা পরিষদ পার্ক বা ঝুলন্ত ব্রিজ, তারেং, রিছাং ঝরনাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখতে সব সময় পর্যটকে মুখরিত হয় খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলো।
অসংখ্য ঝর্ণা আর বুনো পাহাড় মিলিয়ে এক জানা-অজানা রহস্যের নাম খাগড়াছড়ি। আমাদের পার্বত্য জেলাগুলোর মধ্যে পর্যটনের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে এই জেলাটিই যদিও অফুরন্ত পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছে খাগড়াছড়ি। প্রকৃতি অকৃপণভাবে সাজিয়েছে খাগড়াছড়িকে। স্বতন্ত্র করেছে বিভিন্ন অনন্য বৈশিষ্ট্যে। এখানে রয়েছে আকাশ-পাহাড়ের মিতালী, চেঙ্গী ও মাইনী উপত্যকার বিস্তীর্ণ সমতল ভূভাগ ও উপজাতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্যতা। মহালছড়ি, দীঘিনালা, পানছড়ি, রামগড়, লক্ষ্মীছড়ি, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা যেদিকেই চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ।
এ জনপদ পর্যটকদের কাছে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি স্থানীয়দের কাছে যেন ‘ভূস্বর্গ’। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আর রহস্যময়তায় ঘেরা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা প্রকৃতপ্রেমী ও ভ্রমণবিলাসীদের জন্য এক আদর্শ স্থান। প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে এ জেলার আনাচে-কানাচে। এ জেলার বৈচিত্র্যময় জীবনধারা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবাইকে করে বিমোহিত।
খাগড়াছড়ি ভ্রমণের দর্শনীয় স্থান
আলুটিলার রহস্যময় সুরঙ্গ’
আলুটিলার রহস্যময় সুরঙ্গ’। পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলেই সেই স্বপ্নীল সুরঙ্গমুখ। প্রায় ২৮২ ফুট দৈর্ঘের আলুটিলা সুরঙ্গ যেন বিধাতার অনন্য সৃষ্টি। অনবদ্য রহস্যের উৎস প্রাকৃতিক এ সুরঙ্গের ভেতরটা দেখলে অবিশ্বাস্য বিস্ময়ে হতবাক হতে হবে যে কাউকেই। এ গুহায় প্রবেশ করে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতায় আপনিও হতে পারবেন দুঃসাহসিক এক অভিযাত্রী।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র
অপূর্ব সৌন্দর্য দর্শনীয় স্থান খাগড়াছড়ি আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। ১০০০ ফুট উঁচু আলুটিলা পাহাড়ের ওপর এই পর্যটন কেন্দ্র থেকে পুরো খাগড়াছড়ি শহর দেখা যায়। পর্যটন কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে দেখবেন আকাশ পাহাড়ের গায়ে মিশে গেছে। পূর্ণিমার চাঁদ উঠার সময় এই পর্যটন কেন্দ্রে পূর্ব আকাশের দিকে তাকালে মনে হবে পাহাড় থেকেই জন্ম হচ্ছে চাঁদের। পর্যটন কেন্দ্রের পাশে চেঙ্গী নদী পর্যটকদের চোখ জুড়িয়ে দেয়। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে রয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বিশ্রামের জন্য পাকা ছাউনি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, সড়ক ও জনপথ বিভাগের রেস্ট হাউজ আর বৌদ্ধদের উপাসনালয় আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত বৌদ্ধবিহার।
রিছাং ঝরনা
আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র ও রহস্যময় গুহা থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছে প্রকৃতির আরেক সৃষ্টি ‘রিছাং ঝরনা’। বৃষ্টিহীন শীতের সকালে পাহাড়ের চূড়া থেকে স্বচ্ছ পানির অব্যাহত ঝরনাধারা নিঃসন্দেহে আপনাকে আন্দোলিত করবে। একজন ভ্রমণপিপাসু হিসেবে আপনিও হতে পারেন ‘রিছাং ঝরনা’র সাক্ষী।
দেবতা পুকুর/ মাতাই পুখিরি
এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১০০০ ফিট উপরে পাহাড়ের চুড়ার মধ্যে অবস্থিত একটি পুকুর যা স্থানীয় ভাবে দেবতা পুকুর নামে পরিচিত। পুকুরের আকার দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৫০০ ফুট এবং প্রস্থে প্রায় ৬০০ ফুট। এটি খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি রোডে নুনছড়ি ত্রিপুরা গ্রামে অবস্থিত। এই গ্রাম পর্যটন মোটেল থেকে ১২ কি.মি. এবং মাইছছড়ি থেকে ৪ কি.মি. দূরে অবস্থিত। খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটির লোকাল বাসে করে মাইছছড়ি পর্যন্ত যাওয়া যাবে বাকিটা পায়ে হেটে যেতে হবে। চাদের গাড়ি, সিএনজি ভাড়া করে বা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গেলে নুনছড়ি ত্রিপুরা গ্রাম পর্যন্ত যাওয়া যাবে। পাহাড়ের চুড়ায় উঠার জন্য প্রায় এক থেকে সোয়া এক ঘন্টা হাটতে হবে। খাগড়াছড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে চাঁদের গাড়ীতে নুনছড়ি ত্রিপুরা গ্রামে যেতে আসা-যাওয়া ভাড়া পড়বে প্রায় ১২০০-১৫০০ টাকা।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের মাইসছড়ি এলাকার নুনছড়ি মৌজায় সমতল ভূমি হতে প্রায় সাতশ ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় ‘দেবতা পুকুর’ রূপকথার দেবতার আশীর্বাদের মতোই সলিল বারির স্রোতহীন সঞ্চার।
নিউজিল্যান্ড পাড়া
খাগড়াছড়ি শহর থেকে ১.৫ কিঃ মিঃ দক্ষিনে পানখাই পাড়ার পাশে নিউজিল্যান্ড পাড়া অবস্থিত। পানখাইয়া পাড়া থেকে বেড়িয়ে আপার পেরাছড়া গ্রামের দিকে যাওয়ার রাস্তাটাকে বলে নিউজিল্যান্ড সড়ক। সড়কের দুইপাশে সবুজ ক্ষেত খামার, এটাই খাগড়াছড়ির একমাত্র সমতল ভূমি। সবুজ শস্যক্ষেত আর তার পিছনের পাহাড়ের মিতালি এক অসাধারণ নান্দনিক সৌন্দর্য এখানে ছড়িয়ে আছে।
মানিকছড়ি মং রাজবাড়ী
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার প্রবেশদ্বার মানিকছড়ি উপজেলা ঐতিহাসিক মং সার্কেলের চীফ মং রাজার পুরাতন আদিনিবাস। তার পাশে জেলার একমাত্র বিশ্ব শান্তি উদ্দেশ্যে স্থাপিত রাজ মহামূনি বৌদ্ধ চৈত্য। চৈত্য টিলায় অনেক শত বছরের বটবৃক্ষ এবং স্থাপত্য শৈলী কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। রাজ প্রাসাদের হাজারো স্মৃতি বুকে লালন করে, এলাকার পাহাড়ি ও পুরাতন বাংগালী প্রজারা এখনো কেঁদে উঠে ঠুকরে ঠুকরে ।
ঝুলন্ত সেতু
খাগড়াছড়ি জেলা শহরের খুব কাছাকাছি জিরো মাইল সংলগ্ন ২২ একর ভূমির উপর গড়ে ওঠা ‘জেলা পরিষদ পার্ক’। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এ পার্কের বিশেষ আকর্ষণ রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতুর আদলে তৈরি ‘ঝুলন্ত সেতু’।
হেরিটেজ পার্ক
খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদীর কোলে জেলা আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত ‘হেরিটেজ পার্ক’। পর্যটন পিপাসুদের কাছে ‘হেরিটেজ পার্ক’ হয়ে উঠেছে নতুন ঠিকানা। পর্যটন মোটেলের বিপরীতে সৌন্দর্য মণ্ডিত ও নান্দনিক হেরিটেজ পার্কটি পাহাড় ঘেরা প্রকৃতিতে বসে চাঁদনি রাতের দৃশ্যপটে দেখার সুযোগ করে দেবে।
রামগড় চা বাগান
খাগড়াছড়ি জেলার প্রবেশমুখে খাগড়াছড়ি-ফেনী আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’ধারে ঠাঁই করে নিয়েছে ‘রামগড় চা বাগান’। খাগড়াছড়িতে আসা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের স্বাগত জানাতে এটি সদা প্রস্তুত। ‘রামগড় চা বাগান’ আপনার ভ্রমণের সার্থকতা এনে দেবে।
হাতিমাথা পাহাড় বা স্বর্গের সিঁড়িঃ
খাড়া উচু পাহাড়ের সামনের দিক টা হাতির মাথার মত দেখতে হওয়ায় স্থানীয় অধিবাসীরা একে হাতিমাথা বা হাতিমুড়া বলে ডাকে। হাতিমাথা স্বর্গের সিঁড়ি খাগড়াছড়ি একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। স্বর্গের সিঁড়ি নামটি শুনলেই মনে হয় কেমন যেন হবে জয়গাটি। তবে কল্পনারাজ্যে ভেসে ওঠে এমন একটি জায়গা যেখানে ধাপে ধাপে উপড়ে উঠতে হবে আর মুগ্ধতা বাড়তে থাকবে।
জলপাহাড়
মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরে বিনোদনমূলক পার্ক ‘জলপাহাড়’ হতে পারে আপনার বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। নাগরদোলা ও ময়ূরপঙ্খী নৌকা হয়ে উঠবে আপনার বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। জলপাহাড়ের সুবিশাল লেক আপনাকে বাড়তি আনন্দ দিবে নিঃসন্দেহে।
শতবর্ষী পুরোনো বটবৃক্ষ
মাটিরাঙ্গা উপজেলার খেদাছড়ার কাছাকাছি এলাকায় এ প্রাচীন বটবৃক্ষ শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয় এ যেন দর্শনীয় আশ্চর্যের কোন উপাদান। এ গাছের বয়স নিরূপনের চেষ্টা একেবারেই বৃথা। পাঁচ একরের অধিক জমির উপরে এ গাছটি হাজারো পর্যটকের কাছে দারুণ আকর্ষণীয়। শতবর্ষী এই বৃক্ষ দেখতে হলে খাগড়াছড়ি শহড় থেকে বাসে করে মাটিরাঙ্গা বাজার আসতে হবে। সেখান থেকে ২.৫০ কি.মি. পায়ে হেটে অথবা মোটর বাইকে করে যেতে হবে। মোটর বাইকে ভাড়া নিবে জনপ্রতি প্রায় ১০০ টাকা।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরের খুব কাছাকাছি আলুটিলা-বটতলী এলাকায় এ প্রাচীন শতায়ুবর্ষী বটবৃক্ষটি শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয়, এ যেন দর্শনীয় আশ্চর্যের কোনো উপাদান। দুই একরের বেশি ভূমির উপরে এ গাছটি হাজারো পর্যটকের কাছে দারুণ আকর্ষণীয়। মূল বটগাছটি থেকে নেমে আসা প্রতিটি ডালপালা মাটিতে মিশে কালের পরিক্রমায় একেকটি নতুন বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে।
ঠান্ডাছড়া ঝর্ণা
দেয়ালঘেরা ঠান্ডা ছড়া খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার ধর্মঘর এলাকায় অবস্থিত একটি ঝর্ণা। দুই পাশে কালো পাথরের দেয়ালের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝর্ণা, তাই এর নামকরন করা হয়েছে ঠান্ডা ছড়া।
‘তৈদুছড়া ঝর্ণা’
খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় সবুজ পাহাড় আর বুনো জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত নয়নাভিরাম ‘তৈদুছড়া ঝরনা’। অসাধারণ সৌন্দর্য আর প্রাকৃতিক বৈচিত্রতা তৈদুছড়াকে এনে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। আশ্চর্যরকম আর অনিন্দ্য সুন্দর এক জলপ্রপাত বিধাতা যেন তার মহিমান্বিত হাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন গহীন অরণ্যে। যা একবার দেখলে বারবার ছুটে আসতে চাইবেন। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সদর থেকে যাওয়া যাবে তৈদুছড়া ঝরনায়। অপার সৌন্দর্যের আরেক নাম শিবছড়ি পাহাড়। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে দেওয়ানপাড়া এলাকায় অবস্থিত ‘শিবছড়ি পাহাড়’। পাহাড়ি ছড়া, নালা আর গভীর অরণ্য পেরিয়ে বোয়ালখালী নদীর পাশ ঘেঁষে সুউচ্চ পাহাড়ি ঝরনা ও সৌন্দর্যমণ্ডিত বিভিন্ন পাথরের রূপ পর্যটকদের আকৃষ্ট করবেই।
তৈলাফাং ঝর্ণা খাগড়াছড়ি
তৈলাফাং ঝর্ণাটি খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা সীমানার মধ্যবর্তী একটি গ্রামের কাতালমনি পাড়ায় অবস্থিত। ৫০ ফুট উঁচু ও ২০ ফুটের অধিক এই ঝর্ণার বিস্তৃতি। তৈলাফাং ঝর্ণার পাশেই ছোট-বড় আরও ২টি ঝিরি-ঝর্ণা রয়েছে। তৈলাফাং ঝর্ণার ঠিক বিপরীতে একটু উপরের রাস্তা পেরিয়ে পাথুরে জঙ্গলের শেষে দেখা মিলবে ছোট-বড় ঝর্ণা দুটির।
শান্তিপুর অরণ্য
পার্বত্য খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় দেখতে পাবেন দৃষ্টিনন্দন ‘শান্তিপুর অরণ্য কুটির’। পাহাড়ি গাছ-গাছড়ায় ঘেরা পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বুদ্ধ মূর্তি। ‘শান্তিপুর অরণ্য কুটির’ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান। ১৯৯৯ সালে নির্মিত ৫০ ফুট উচ্চতার এ বুদ্ধ মূর্তি আপনাকে আকৃষ্ট করবে।
রাজধানীর পান্থপথ বা কলাবাগান থেকে কয়েকটি বাস ছেড়ে যায় খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। তবে সময় বাঁচাতে রাতের বেলায় ভ্রমণ করাই উপযুক্ত। রাত ১০টায় বাস ছাড়লে ভোরের আলো ফুটতে ফুটতেই পৌঁছে যাবেন খাগড়াছড়ি বাসস্ট্যান্ডে। যাত্রাপথের শেষবেলায় পাহাড়ে বাঁকে বাসের এঁকেবেঁকে যাওয়ার চিত্র কিছুটা ঘাবড়ে দিতে পারে। তবে বাস থেকে নামতেই স্নিগ্ধ ভোরের পাহাড়ের ঠাণ্ডা বাতাস মন জুড়িয়ে দেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
মায়াবিনী লেক
পাহাড়ের উঁচু-নিচু ভাঁজে ভাঁজে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে লেক। স্বর্গময় লেকের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলছে হাঁস। স্বচ্ছ জলে খেলা করছে মাছ। প্রশ্বস্ত লেকের স্বচ্ছ পানিতে নৌকায় বসে প্রকৃতি উপভোগ করছে নানা বয়সী লোকজন। এমনই পরিবেশে খাগড়াছড়িতে আসা পর্যটকদের মায়া ছড়াচ্ছে ‘মায়াবিনী লেক’।
পানছড়ি অরন্য কুটির ও রাবার ড্যামঃ
খাগড়াছড়ি জেলা থেকে ২৫ কিমি উত্তরে, পানছড়ি সদর উপজেলা থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত শান্তিপুর অরন্য কুটির। এই কুটিরে প্রবেশ মুহুর্তে চোখে পড়বে নয়নাভিরাম ৪৮.৫ ফুট উচ্চতার বৃহৎ বৌদ্ধ মূর্তি। যা মুহুর্তেই অভিভুত করবে যে কাউকে। মূল মূর্তিটি ৪২ ফিট উচু এবং বেদিটি ৬.৫ ফিট উচু। সবনিয়ে মূর্তিটি ৪৮.৫ ফিট উচু। এই বৌদ্ধ মুর্তি দেখার জন্য প্রতিদিন এইখানে ভীড় করে শত শত পর্যটক। পানছড়ি অরন্য কুটির থেকে ৩ কি.মি. আগে রয়েছে একটি রাবার ড্যাম। এটি অরন্য কুটির যাওয়ার পথেই পড়বে। ২০০৪ সালে প্রায় ১.৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বৌদ্ধমূর্তি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৬৫ একর জায়গা নিয়ে শান্তিপুর অরণ্যকুটির অবস্থিত।
খাগড়াছড়ি শহড়ের চেঙ্গি স্কোয়ার থেকে সিএনজি নিয়ে সরাসরি অরণ্যকুটির যাওয়া যায়। আপ-ডাউন ভাড়া ৮০০ টাকা পড়বে। মেইন রোড থেকে ৩ কি.মি. ভিতরে পাহাড়ের উপর অরণ্যকুটির। যাওয়ার পথে চেঙ্গি নদীর উপর নির্মিত রাবার ড্যাম দেখা যাবে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির দূরত্ব ৩১৬ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম থেকে ১০৯ কিলোমিটার। ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, কলাবাগান থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে খাগড়াছড়িতে। এতে আপনাকে জনপ্রতি ৫২০-৫৫০ টাকা ভাড়া গুনতে হবে। আর এসি বাসে ভাড়া লাগবে ৮৫০-১০০০ টাকা।
কোথায় খাবেন
খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর এবং বাস ট্যান্ড এলাকায় বেশ কিছু রেসটুরেন্ট আছে।।এছাড়া পানথাই পাড়ার সিস্টেম রেস্তোরাঁতে কফি,হাসের কালাভুনা,বাশকুড়ুল, এবং ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে পারেন।।
কোথায় থাকবেন
খাগড়াছড়িতে বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে, হোটেল শৌল্য সুবর্ন, জিরান হোটেল, হোটেল লিবয়ত,চৌধুরী বাডিং,থ্রী স্টার,ফোর স্টার, উপহার,নিলয় হোটেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)