দীঘা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ-
দীঘা সমুদ্র সৈকত (Digha Sea Beach) হলো পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ন ও বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র। দীঘাতে কলকাতা থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন। পর্যটন কেন্দ্রটি বঙ্গোপসাগরের তীরে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা সীমান্তের কাছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত। দীঘা, পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র সমুদ্র কেন্দ্রীক ভ্রমণ কেন্দ্র। কলকাতা থেকে মাত্র ১৮৭ কিলোমিটার দূরে মেদিনিপুর জেলায় সমুদ্র, বালিয়াড়ি, ঝাউ বন আর আপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলিয়ে অপেক্ষা করছে প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের জন্য। একটি অগভীর বেলাভূমি আছে যেখানে প্রায় ৭ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট ঢেউ বালুকাভূমিতে আছড়ে পড়তে দেখা যায়।
দীঘার প্রকৃত নাম বীরকুল যা অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে আবিষ্কৃত হয়। ভাইসরয় ওয়ারেন হেস্টিংস-এর লেখা একটি চিঠিতে এটিকে প্রাচ্যের ব্রাইটন বলে উল্লিখিত করতে দেখা যায়। ১৯২৩ সালে জন ফ্রাঙ্ক স্মিথ নামে এক ব্রিটিশ ভ্রমণকারী এখানকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দীঘায় বসবাস শুরু করেন। তাঁর লেখালেখির ফলে দীঘা সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। ভারতের স্বাধীনতার পর তিনি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ডঃ বিধানচন্দ্র রায়কে উৎসাহ দেন এখানে পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধি করতে।
সাত কিলোমিটার লম্বা সমুদ্রতট, একপাশে গভীর সমুদ্র অন্যপাশে ঝাউ গাছের অগভীর জঙ্গল। ভেঙে পড়া ঢেউয়ের পানিতে পা ভিজিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় দীর্ঘ পথ। দীঘায় দুটি সৈকত রয়েছে। একটি পুরোনো দীঘার সৈকত, অপরটি নতুন দীঘার সৈকত। বাঙালির এই পর্যটন কেন্দ্রের রয়েছে এক লম্বা ইতিহাস। দীঘার সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত নয়নাভিরাম দৃশ্য সকলের মনে এক স্বর্গীয় অনুভূতির সৃষ্টি করে। সমুদ্র পাড়েই ফেরি হয় মুক্তা কিংবা নানা রঙের সমুদ্রের পাথর। সন্ধ্যে বেলায় পুরানো দীঘার সমুদ্র তটের ধারে বসে হরেক রকমের দোকান। ঝিনুকের তৈরি গয়না, ঘর সাজাবার জিনিষ, নানা ধরনে শঙ্খ, শামুক, প্রবাল ইত্যাদি দিয়ে অপূর্ব সুন্দের সব জিনিষ। এছাড়াও আছে মেদেনিপুরের বিখ্যাত মাদুর এবং বাঁশের তৈরি নানা ধরনের শিল্প কর্ম।
সন্ধ্যে বেলায় সমুদ্রের পাড়ে বসলে দেখতে পাবেন সমুদ্রের আর এক রূপ। সমুদ্র তখন উত্তাল। কোটালের সময় হলে তো কথাই নেই। বিরাট বিরাট ঢেউ আছড়ে পড়ছে তটের উপর। সকালে পুরানো দীঘার যেসব জায়গা দিয়ে হেঁটেছেন দেখতে পাবেন সেই সব জায়গা জলের তলায়।
দীঘা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান সমূহ
দীঘার প্রধান আকর্ষণ এখানকার সমতল দৃঢ় বেলাভূমি যা পৃথিবীর অন্যতম প্রশস্ত বালুতট। একটার পর একটা, ক্লান্তিহীন, অবিরত সমুদ্রের বুকে তৈরি হওয়া বিরাট বিরাট ঢেউ আছড়ে পড়ছে সমুদ্রতটের বালিয়াড়িতে। যতদূর চোখ যায়, ঠিক যেখানে জল আর আকাশ একে অপরের সঙ্গে মিশে গেছে ঠিক সেই জায়গাটায় অন্ধকার সরিয়ে প্রথম ভোর হয়।
দিগন্ত পার থেকে গোটা আকাশে খুশির রক্তিম আবির ছড়িয়ে হয় সূর্যোদয়। রাতের গভীর অন্ধকার উত্তীর্ণ হয়ে গোটা চরাচর জুড়ে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকে ভৈরবী রাগ। সূর্যের প্রথম ছটা বিচ্ছুরিত হয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সমুদ্র। ঘুম থকে জেগে ওঠে সমুদ্র সুন্দরী ‘দীঘা’।
আপনার ভ্রমণের বাজেট যদি অল্প থাকে তাহলে আপনার জন্য দীঘা ভ্রমণ অসাধারণ চয়েস হবে। ৭ কিলোমিটার এই দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের এক পাশে জলরাশি আর অন্য পাশে ঝাউ বনের অসাধারণ সাদৃশ্য চোখে পড়ার মতো। দীঘায় দুই ধরণের সৈকত রয়ছে ওল্ড দীঘা, নিউ দীঘা। সমুদ্র মজা উপভোগ করার জন্য হাতের কাছে দীঘা একটি অসাধারণ জায়গা।
নিউ দীঘা সৈকত
এটি এই শহরের একটি নতুন মনোরম অংশ।
অমরাবতী লেক
এখানে লেকের সাথে ছোট একটি পার্ক ও একটি সর্প-উদ্যান আছে। নৌকা ভ্রমণের সুবিধাও বিদ্যমান।
দীঘা বিজ্ঞান কেন্দ্র পার্ক
জাতীয় বিজ্ঞান প্রত্নশালার উদ্যোগে নির্মিত একটি বিজ্ঞানকেন্দ্র।
মেরিন স্টেশন / ভারতের জুলজিকাল সার্ভের অ্যাকোয়ারিয়াম
সোমবার-শনিবার ০৯:৩০-১৮:০০। এটি সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে সুসজ্জিত সামুদ্রিক অ্যাকোয়ারিয়াম, তবে নমুনাগুলির সংগ্রহ খুব কম। কিছু সাধারণ স্থানীয় মাছ এই বিশাল অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখা হয়।
শঙ্করপুর সৈকত
শঙ্করপুর সড়ক পথে দিঘা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত
মন্দারমণি
কাথি থেকে ১২ কিমি দূরে অবস্থিত নির্জন বালুকাভূমিটির নাম স্থানীয় মন্দার ফুলের নামানুসারে রাখা হয়েছে। লাল কাকড়া অধ্যুষিত জায়গাটি এখন অন্যতম জনপ্রিয় অবকাশ যাপন কেন্দ্র।
তাজপুর
মন্দারমনি ও দীঘার নিকটে অপর একটি পর্যটনকেন্দ্র তৈরী হয়েছে। এখানে একটি সমুদ্রবন্দরের কাজ চলছে।
জুনপুট সৈকত
এখানে রাজ্য সরকারের মৎস্য দপ্তরের মৎস্যচাষ ও গবেষণাকেন্দ্র আছে।
উদয়পুর
নিউ দীঘার পাশে উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলা ও বাংলার সীমানায় উদয়পুর সমুদ্রতট।
চন্দনেশ্বরে মন্দির
ওড়িশার শিব মন্দির। আপনাকে দিঘা-চন্দনেশ্বর সীমান্তটি অতিক্রম করতে হবে এবং কয়েক কিলোমিটার যেতে হবে। দিঘা থেকেই, আপনি ক্যাব বা অটোরিকশা পাবেন, যা আপনাকে চন্দনেশ্বর মন্দিরে নিয়ে যাবে।
তালসারি সৈকত
তালাসারি সৈকতটি ওড়িশায় অবস্থিত। এটি দিঘা থেকে ৮- কিমি এবং চন্দনেশ্বরের মন্দির থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
কিভাবে যাবেন
কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে আছে সরকারি-বেসরকারি বাস এর ব্যবস্থা। বাসে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন দীঘা। মাঝ পথে থাকবে কিছুক্ষণের বিশ্রাম। কলকাতা থেকে রেলে চেপে পৌছনো যায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার মধ্যে।
সড়কপথে
কলকাতা থেকে প্রতি আধঘণ্টা অন্তর দীঘাগামী বাস সহজলভ্য। কলকাতা ময়দান ও হাওড়া বাস টারমিনাস থেকে বাস ছাড়ে। বাসে কলকাতা-দীঘা পাঁচ ঘণ্টার পথ।
ট্রেনে করে
ট্রেনের সময় ও নানা তথ্যের জন্য ভারতীয় রেলের ওবেসাইট দেখুন।
- হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতিদিন ০৬.৪০ (তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস), ১১: ১৫ (দুরন্ত এক্সপ্রেস) এবং ১৪:৪০ (কান্ডারী এক্সপ্রেস) য়ে তিনটি এক্সপ্রেস ট্রেন দীঘার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। কখনও কখনও বিশেষ ট্রেন বিশেষ অনুষ্ঠান এবং ছুটির দিনে ঘোষণা করা হয়। এই জাতীয় ট্রেনগুলির বিজ্ঞপ্তি বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রগুলিতে পাওয়া যায়। ট্রেনের ফিরে আসার সময় যথাক্রমে ১০:২৫, ১৩:৩৫ এবং ১৮:২০।
- হাওড়া-দীঘা দুরন্ত এক্সপ্রেস (১২৮৪৭) দীঘার জন্য সবচেয়ে বিলাসবহুল ট্রেন। এটি শীতাতাপনিয়ন্ত্রীত ব্যবস্থা, খাবার, কেটারিং, আরামদায়ক আসন ইত্যাদির জন্য নামমাত্র যাত্রী পিছু ৫০০ টাকা মূল্যে টিকিট সরবরাহ করে।
- শনিবার, পাহাড়ীয়া এক্সপ্রেস নতুন জলপাইগুড়ি থেকে আসে এবং হাওড়ায় থামে। এর পর ট্রেনটি দীঘার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এই ট্রেনটি প্রায়শই বেশ খালি থাকে এবং ভ্রমণে খুব আরামদায়ক হয়।
- সাঁতরাগাছি (হাওড়ার কাছে) থেকে দীঘা পর্যন্ত একটি লোকাল ট্রেন রয়েছে। এছাড়াও কিছু বিশেষ ট্রেন থাকতে পারে।
- ১ জুলাই ২০১১ সাল থেকে, ভারতীয় রেল দীঘার উদ্দেশ্যে পুরী (ডাব্লু ২৩:৩৫ এবং সা ২৩:৩৫), মালদা টাউন (সা ০৮:১০), বিশাখাপত্তনম (ম ১৭:৫০) থেকে ৪ টি বিশেষ ট্রেন চালু করেছে।
খাওয়া দাওয়া
ভোজন রসিক বাঙালি কথাটা দুই বাংলাতেই সমানভাবে প্রযোজ্য। হোটেলে পাবেন আপনার পছন্দ অনুযায়ী সব কিছু। নানা ধরনের মাছ থকে শুরু করে চাইনিজ, ,মোগলাই, থাই কিংবা ইতালিও খাবার দাবার। বাঙালি যেমন ভ্রমণপিপাসু, তেমনি খাদ্যরসিক। তাই বাঙালি কোথাও ভ্রমণে যাবে, আর সেখানকার আঞ্চলিক খাবার জিভে চেখে দেখবে না তা একপ্রকার অসম্ভব। বিকেলবেলা সমুদ্রের ধারে গেলে দেখা যাবে সারি সারি দোকান বেঁধে বিক্রি হচ্ছে টাটকা সব মাছ ভাজা। সেই মাছের স্বাদ একবার যে খেয়েছে, সে কখনো ভুলতে পারবে না।
কোথায় থাকবেন
পুরানো দীঘা এবং নতুন দীঘায় আছে অনেক হোটেল। রেল স্টেশনটি নতুন দীঘায়। বাস থামে পুরানো দীঘায়। হোটেল গুলিতে আছে আধুনিক সব ব্যবস্থা। পছন্দমত কোন একটা বেছে নিলেই হোল। তবে আগে থেকে “বুকিং” করে রাখলে সুবিধা হবে।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং।।
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)