হাতিমাথা পাহাড় বা স্বর্গের সিঁড়িঃ

হাতিমাথা পাহাড় বা স্বর্গের সিঁড়ি খাগড়াছড়ির একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। স্বর্গের সিঁড়ি নামটি শুনলেই কল্পনারাজ্যে ভেসে ওঠে এমন একটি জায়গা যেখানে ধাপে ধাপে উপরে উঠতে হবে আর মুগ্ধতা বাড়তে থাকবে। তেমনি একটি জায়গা হল বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নের মায়ুং কপাল পাড়ায়। অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় এ জায়গাটি। তবে একবার যে গিয়েছে সারা জীবনে ভুলতে পারবে না। এটি ত্রিপুরা অধ্যুষিত এলাকা। খাড়া উঁচু পাহাড়ের সামনের দিকটা হাতির মাথার মত দেখতে হওয়ায় স্থানীয় অধিবাসীরা একে হাতিমাথা বা হাতিমুড়া বলে ডাকে। চাকমাদের কাছে এটি ‘এদো শিরে মোন’ এবং ত্রিপুরাদের কাছে ‘মাইয়োং কপা’ নামে পরিচিত। তবে দুটোর অর্থই হাতির মাথা পাহাড়। পাহাড় আর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে এই সিঁড়ি, তাই এক নিমিষে শুরু থেকে শেষটা দেখা ভার।

স্বর্গের সিঁড়িটা মর্ত্যভূমি থেকে উঠে গেছে সোজা উপরের দিকে। পাহাড় আর বনের ফাঁকে ফাঁকে চলা সেই সিঁড়ির শেষ দেখা যায় না। আনুমানিক ১২০ – ১১০° এ্যাঙ্গেলের খাড়া প্রায় ৩০০ সিঁড়ি বেয়ে হাতিমাথায় উঠতে হয়। হিমশীতল এই সিঁড়ি বেয়ে যখন পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে থাকবেন তখন নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আপনার চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ। বনের মাঝে এঁকেবেঁকে যাওয়া এই সিঁড়িটি দেখতে ভয়ংকর লাগলেও আসলে তেমনটা নয়। একটু সাবধানতা বজায় রেখে উঠলেই হবে। এই আঁকাবাঁকা সিঁড়ি দিয়ে পাহাড়ি পথে চলার সময় মনে হবে যেন স্বর্গের সৌন্দর্য ধরা দিয়েছে মর্ত্যলোকে। একটু ভিন্ন আমেজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পেতে তাই আপনাকে ঘুরে আসতে হবে এই স্বর্গের সিঁড়ি থেকে।

স্বর্গের সিঁড়ি স্থাপন করা হয় ২০১৫ সালে। শুধুমাত্র স্থানীয়দের চলাচলের জন্য ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে সিঁড়ি স্থাপন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। খাড়া পাহাড় বেয়ে ওঠা নান্দনিক সিঁড়ি স্থানীয়দের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। আনুমানিক ১১০ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলের তিনশ সিঁড়ি বেয়ে হাতি মাথায় উঠতে হবে।

হাতির মাথা পাহাড় চূড়া থেকে খাগড়াছড়ির সুউচ্চ পাহাড় সারির সৌন্দর্য বেশ উপভোগ্য। পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে পাখির চোখে দেখা যায় খাগড়াছড়ি শহর। পাহাড়ের চূড়ায় শীতল হাওয়া ও পাখির কলতান মন কেড়ে নেয় পর্যটকদের। ফলে দিনে দিনে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে হাতির মাথা পাহাড় চূড়া। প্রাকৃতিকভাবে আকর্ষণীয় হাতির মাথা পাহাড় ও চলাচলের জন্য বানানো স্বর্গের সিঁড়িকে খাগড়াছড়ির ভ্রমন পিয়াসুদের করেছে আরও আকর্ষনীয়।

কিভাবে যাবেন

খাগড়াছড়ি শহর থেকে ইজিবাইক ঠিক করে জামতলী যাত্রীছাউনির পাশের ইটের রাস্তা দিয়ে বেশ খানিক আগায় গেলে চেঙ্গী নদী পর্যন্ত যেতে হবে। প্রতি জনের ভাড়া নিবে ১৫ টাকা করে। তারপরে খরস্রোতা চেঙ্গী নদী পার হতে হবে। নদী পার হয়ে সোজা রাস্তায় হাঁটলে কিছু দোকান পাওয়া যায়। দোকান গুলা ছাড়িয়ে কিছুদূর আগালে একটা স্কুল,স্কুলের পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। সেখানে থেকে একঘণ্টার হাঁটাহাঁটির পরই চলে আসবে স্বর্গের সিঁড়ি। রাতে থাকার জায়গা নেই, তাই ফিরে আসুন খাগড়াছড়িতে। ট্রেকিং মোটামুটি কষ্টের, কারন ছোট খাটো পাহাড় পাড়ি দিতে হবে। সাথে করে অবশ্যই পানি এবং শুকনা খাবার নিয়ে যাবেন।

কোথায় খাবেন

খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর এবং বাস ট্যান্ড এলাকায় বেশ কিছু রেসটুরেন্ট আছে।। এছাড়া পানথাই পাড়ার সিস্টেম রেস্তোরাঁতে কফি,হাসের কালাভুনা,বাশকুড়ুল, এবং ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে পারেন।।

কোথায় থাকবেন

খাগড়াছড়িতে পর্যটন মোটেল সহ বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে হোটেল ইকো ছড়ি ইন, হোটেল শৈল সুবর্ণ, হোটেল জেরিন, হোটেল লবিয়ত, হোটেল শিল্পী ইত্যাদি। আপনার বাজেট ও পছন্দমত বাছাই করে নিতে পারেন এর যে কোনটিক।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ