লাদাখ ভ্রমণ-
লাদাখ (Ladhak) উত্তর ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লাদাখে সিন্ধু উপত্যকার কাছাকাছি অবস্থিত, এটি লেহের শহর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৫০৫ মিটার (১১,৫০০ফুট) এ অবস্থিত। এই দূরবর্তী স্থানটি একটি জনপ্রিয় পর্যটক গন্তব্য হয়ে উঠেছে, যেখান থেকে ১৯৭৪ সালে বিদেশিদের জন্য লাদাখে খোলা হয়েছিল। এটি লাদাখ অঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর এবং সবচেয়ে সাধারণ এন্ট্রি পয়েন্ট। পৃথিবীর বৃহত্তম পর্বতশ্রেণী এবং দুইটি আল্পাইন মরুভূমি দ্বারা বেষ্টিত, বৌদ্ধ ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মঠের পূর্ণ লেহের শুকনো বনের আড়াআড়ি এটি দেখতে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিশক্তি তৈরি করে।
লাদাখ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে নানা নামে পরিচিত হয়ে রয়েছে। যেমন, ‘দ্য লাস্ট শাঙ্গরী লা’, ‘লিটল টিবেট’, ‘দ্য মুন ল্যান্ড’ ও ‘দ্য ব্রোকেন মুন’, ইত্যাদি নামে একে ডাকেন স্থানীয় অধিবাসীরা। এখানকার সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি মনাস্ট্রি, গোম্ফাগুলিও আপনার মন ভরিয়ে দেবে। বরফের এই মরুভূমিতে প্রতিবছর হাজারে হাজারে পর্যটক আসেন ও লাদাখের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
লাদাখ এর দর্শনীয় স্থান
বাসগো শহর
১৫শ শতকে এই শহরটি গড়ে ওঠে। এখন এখানকার বাসগো মনাস্ট্রি ও দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দেখতে বহু মানুষ আসেন।
সে প্যালেস
সে প্যালেস এটি একসময় লাদাখের গীষ্মকালীন রাজধানী ছিলো। পুরো কমপ্লেক্স একটি ঢিবির উপর অবস্থিত।প্রতিবছর প্রচুর পর্যটক আসে এখানে। বাহির থেকে দেখতে অনেকটা সিরিয়ার বিদ্ধস্ত কোনো প্রাসাদের মতো মনে হলেও সে প্যালেস খুবই সুন্দর।।
লেহ প্যালেস
এটি লেহ শহরে এক পাহাড়ের উপরে অবস্তিত। এই ভবনটি এক সময় লাদাখের রয়েল প্যালেস ছিলো। ১৭শ শতকে এখানে রাজবংশের বাস ছিল। তবে এই জায়গাটিকে এখন হেরিটজ সাইট ও মিউজিয়াম বানানো হয়েছে। বর্তমানে এটি মিউজিয়াম এবং প্রবেশ ফি দিতে হয়। লেহ প্যালেসের উপর থেকে এখানকার উপত্যকার দৃশ্য সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যাবে। লেহ প্যালেসের ছাদ থেকে লেহ শহর এবং আশেপাশের এলাকার সুন্দর প্যানোরোমিক ভিউ পাওয়া যায়।।
থ্রি ইডিয়টস স্কুল
থ্রি ইডিয়টস মুভির কারনে এটা এখন জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট। স্কুল কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ট্যুরিস্টদের জন্য নির্ধারিত সময়ে মুভির শুটিং স্পট গুলো ভিজিট করা যায়।।
তুরতুক
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে একেবারে ভারতের উত্তরে এই তুরতুক গ্রামটি অবস্থিত। এই উপত্যকা সিয়াচেন হিমবাহে প্রবেশের পথ হিসাবে পরিচিত। লামায়ুরু মনাস্ট্রি লামায়ুরু মনাস্ট্রি বা য়ুরু মনাস্ট্রি তিব্বতীয় ভাবধারায় গড়ে উঠেছে। লাদাখের অন্যতম পুরনো মনাস্ট্রির একটি এটি।
সো মোরিরি
লেহ লাদাখে সো মোরিরি লেকের শোভা অবর্ণনীয়। দেশের অন্যতম উচ্চতম লেক এটি।
খারদাং লা পাস
নুব্রা ও শায়ক উপত্যকায় যাওয়ার গেটওয়ে হল এই খুরদাং লা পাস। মাউন্টেন বাইকিংয়ের জন্য এই জায়গাটি বিখ্যাত।
ম্যাগনেটিক হিল
ম্যাগনেটিক হিল জায়গাটি অসাধারণ। এই জায়গাটি চোখে ধাঁধার সৃষ্টি করে। পাহাড় থেকে গাড়ি নিয়ে নিচে নামতে থাকলেও মনে হবে যেন উপরে উঠছেন।
সঙ্গম পয়েন্ট
ম্যাগনেটিক হিল থেকে আরো প্রায় ৫ কি.মি সামনে এগিয়ে সঙ্গম পয়েন্ট। এখানে লাদাখের দুই নদী ইন্দুস আর জান্সকার এসে মিলিত হয়েছে। মূল জায়গাটি বেশ নিচুতে এবং চমৎকার জায়গা। নদীর জল ঘোলাটে এবং শীতল।এখানে রাফটিং করার ব্যবস্থা আছে।
উৎসব
লাদাখ উৎসব সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এটা রাস্তায় একটি দর্শনীয় মিছিল সঙ্গে লেহে প্রর্দশিত। ঐতিহ্যবাহী পোশাক নৃত্য পরিহিত গ্রামবাসীরা এবং একটি সুরক্ষিত সঙ্গীত গান, একটি অর্কেস্ট্রা দ্বারা সমর্থিত। এই উত্সবে বাদ্যযন্ত্র কনসার্ট রয়েছে, নির্বাচিত মঠগুলির মুখোশধারী ল্যামস দ্বারা সঞ্চালিত নাচ এবং ঐতিহ্যগত বিয়ে সংক্রান্ত অনুষ্ঠান।
তিব্বতে তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী গৌতমসাম্বাবের জন্মের স্মরণে হেমিস গোপ্পাতে জুন / জুলাই দুই-দিনের হেমিস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যগত সঙ্গীত, রঙিন মুখোশধারী নাচ, এবং সুন্দর হস্তশিল্প একটি ন্যায্য সম্পূর্ণ।
ভ্রমণের সেরা সময়
লেহ লাদাখ যাওয়ার সর্বোত্তম সময় মে এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি, যখন আবহাওয়া উষ্ণ হয়। লাদাখে ভারতের অন্যত্রের মতো বৃষ্টিপাতের অভিজ্ঞতা নেই, তাই বর্ষার ঋতুতে লেহের ভ্রমণের জন্য নিখুঁত সময়।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা-কলকাতা -দিল্লী (এয়ার)
দিল্লী -লেহ লাদাখ
অথবা ঢাকা -কলকাতা (বাস)
কলকাতা -দিল্লী (ট্রেন)
দিল্লী -লেহ(এয়ার)
এছাড়া আপনি দিল্লী টু মানালি গিয়ে ওখান থেকে লাদাখ যেতে পারেন রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে। আবার দিল্লী থেকে জুম্মু হয়ে শ্রীনগর যেতে পারেন।
লেহর হোটেল
শান্তি স্তূপের কাছে শান্তি গেস্ট হাউস, প্যানোরামা ইকো হোটেল, ওল্ড রোডে চোস্ পা হোটেল, এ ছাড়া দামি হোটেলের মধ্যে (১০০০০ টাকা) Gomang Boutique Hotel, The Druk Ladakh, Ladakh Sarai,
মাঝারিদের মধ্যে (২০০০ – ৫০০০) Hotel Nalanda Ladakh , khan manjil ,Hotel Chube,Yarab Tso, Hotel Caravan Centre, Ladakh Continental, নুব্রা উপত্যকার ডিসকিটে বা হুণ্ডারে – ৪০০০ থেকে ১০০০০ টাকা ২ জনের থাকা খাওয়া প্রতিদিন
সোমোরিরি হ্রদের একদম তীরে থাকার অনুমতি নেই তবে নিকটবর্তী কোরজোক গ্রামে থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত রয়েছে। দুজনের একদিনের সম্ভাব্য থাকা খাওয়ার খরচ ৩০০০ থেকে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)