রকি আইল্যান্ড সামসিং ডুয়ার্স-

রকি আইল্যান্ড (Rocky Island)— মানে পাথুরে দ্বীপ, সামসিং থেকে ২ কি মি দুরে মূর্তি নদীর তীরে অবস্থিত এই রকি আইল্যান্ড।। রকি আইল্যান্ড হচ্ছে একটি পাহাড়ি ও বাহারি ছোট্ট গ্রাম। মূর্তি নদী পাহাড় থেকে যেখানে আছড়ে পড়েছে সেখানেই গড়ে পাহাড়ি এই ছোট্ট গ্রাম।

রকি আইল্যান্ড নামটি শুনলে সাগর-পাহাড়ে ঘেরা আইল্যান্ড মনে হলেও এই রকি আইল্যান্ড মূলত ভারতের ডুয়ার্সের পাহাড়ের কোলঘেঁষা ছোট্ট এক গ্রাম। চঞ্চল মূর্তি নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই গ্রাম প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় স্থান। এই পাহাড়ি গ্রামটিতে টুরিস্টরা আসেন মূলত স্ফটিক স্বচ্ছ মূর্তি নদীর শোভা কাছ থেকে দেখতে কিংবা শহুরে কোলাহলমুক্ত কয়েকটা দিন উপভোগ করতে। তবে, হাতে চার থেকে পাঁচ দিন থাকলে আশেপাশে রকি আইল্যান্ড ছাড়াও দেখা যাবে সামসিং এবং সান্তালেখোলা। সামসিং থেকে সান্তালেখোলার দূরত্ব প্রায় নয় কিলোমিটার আর সামসিং থেকে রকি আইল্যান্ডের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। এর মধ্যে সামসিং বিখ্যাত চা বাগানের জন্য আর সান্তালেখোলার ছোট নদীর তীরে ক্যাম্প-ফায়ারও আয়োজন করে একবেলা ভোজন সেরে নিতে পারেন। এছাড়াও এখান থেকে শুরু হয়েছে নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান, যার বিস্তৃতি সমুদ্র থেকে প্রায় দশ হাজার ফুট পর্যন্ত। এই জাতীয় উদ্যানের মধ্যে ট্রেক রুটও রয়েছে তাই অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছেও পাঁচ দিনের এই ট্যুরপ্ল্যান হতে পারে বেশ উপভোগ্য।

রকি আইল্যান্ড এর দর্শনীয় স্থানসমূহঃ

মূর্তি নদী

রকি আইল্যান্ডের নিচের দিকে অবস্থিত মূর্তি নদীর দুই তীরে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রমাণ সাইজের বিশাল বিশাল পাথর। পাহাড়ের ওপর থেকে নেমে আসা মূর্তি বেশ খরস্রোতা নদী হলেও এখানে কায়াকিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে। মাথার ওপরে পাখির কলতান আর হরেক রকমের সবুজের মুগ্ধতায় আকৃষ্ট হবেন যে কেউ। পাহাড়ের ওপর থেকে নেমে আসছে মূর্তি নদী। নদীর বুকে রয়েছে অসংখ্য পাথর। ছোটোখাটো পাথর নয়, বড়ো বড়ো সব বোল্ডার। বোল্ডারগুলোর পাশ কাটিয়ে নেমে যাচ্ছে মূর্তি। এ এক অপরূপ শোভা।

সামসিং

মেটেলি পেরোতেই বদলে যায় প্রাকৃতিক চরিত্র। রাস্তার দু’ধারে চা-বাগান। সামসিং পৌঁছোতেই হঠাৎ করে কাছে চলে আসে পাহাড়। মূলত চা-বাগানের জন্যই বিখ্যাত এই সামসিং। প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য এখান থেকে চার কিমি দূরে, সান্তালেখোলা। এই সামসিং থেকেই শুরু হয় নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান, যার বিস্তৃতি সমুদ্রতল থেকে প্রায় দশ হাজার ফুট পর্যন্ত। জাতীয় উদ্যানের মধ্যে ট্রেক রুটও রয়েছে।  

সান্তালেখোলা

‘সান্তালে’ শব্দর অর্থ কমলা, ‘খোলা’ মানে ঝোরা। সমুদ্রতল থেকে হাজার তিনেক ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই সান্তালেখোলার নাম এসেছে এই খোলা বা ছোটো নদীটার জন্যই। নদীটার ওপর রয়েছে ঝুলন্ত সেতু। হাঁটা পথ চলে যায় পশ্চিমবঙ্গ বনোন্নয়ন নিগমের কটেজগুলির দিকে। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নদী।   পাহাড়ের ওপর থেকে এসে নেমে যাচ্ছে সমতলের দিকে। সান্তালখোলার মূল আকর্ষণ অপার নির্জনতা এবং সেই নির্জনতা চিরে ভেসে আসা পাখিদের কলতান। পাখিপ্রেমিকদের আদর্শ এই সান্তালেখোলা। বনোন্নয়ন নিগমের কটেজগুলিতে থাকলেই সান্তালেখোলার আসল রূপের পরিচয় পাওয়া যায়।  

অপরূপ শোভাময় এই নির্জন প্রকৃতির সান্নিধ্যে কয়েকটি দিন কাটানোর জন্য বেশ আদর্শ স্থান হতে পারে রকি আইল্যান্ড।

কীভাবে যাবেন             

কোলকাতা থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে প্রথমে পৌঁছতে হবে নিউ মাল জংশন। ১৩১৪৯ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস যাচ্ছে নিউ মাল জংশন। সেখান থেকে মেটেলি হয়ে সামসিং ৩০ কিলোমিটার। মেটেলি পেরোতেই দুইপাশের সবুজ স্বাগত জানাবে সামসিং এ। সামসিং পার হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার উঁচুনিচু পাথরে ঢাকা পাহাড়ি রাস্তা পার হয়ে যেতে হবে রকি আইল্যান্ডে। এছাড়া নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সান্তালেখোলার দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার।

কোথায় থাকবেন

রকি আইল্যান্ড একটি ছোট্ট গ্রাম। স্থানীয়ভাবে তিন থেকে চারটি হোমস্টের ব্যবস্থা রয়েছে যাতে দিনপ্রতি খরচ হতে পারে ৯০০-১,২০০টাকা। এছাড়া সান্তালেখোলায় থাকার জন্য রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বনোন্নয়ন নিগমের বেশ কিছু কটেজ। টুরিস্টদের জন্য হলেও এই কটেজ গুলোতে থাকতে হলে আগে থেকে বুক করে আসতে হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ‘নেচার রিসোর্ট’। এছাড়া সামসিং-এ থাকতে চাইলে পশ্চিমবঙ্গ বনোন্নয়ন সংস্থার মৌচুকি ক্যাম্পেও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এই কটেজগুলোর রয়েছে নিজস্ব গাড়ির সুবিধা।এ ছাড়া সামসিং, সান্তালেখোলা এবং রকি আইল্যান্ডে কিছু বেসরকারি হোম-স্টে রয়েছে।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ