মানালি ভ্রমণ-

মানালি(Manali) ভারতের হিমাচল প্রদেশের কুলু জেলায় এটির অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ২,০৫০ মিটার বা ৬,৭২৬ ফিট এবং হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলা থেকে এর দূরত্ব ২৭০ কি.মি. বা ১৬৮ মাইল। প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত মানালি। এখানে এলে দেখা যাবে উঁচু নিচু বরফ আর পাথুরে পাহাড়ের এক অপূর্ব সমাহার আর সাথে রয়েছে কূলকূল শব্দে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে আঁকাবাঁকা ভাবে বয়ে চলা বিপাশা/বিয়াস নদীর এক অপরূপ সৌন্দর্য। মানালিতে গেলে মনে হবে প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়। যারা পাহাড়-পর্বত আর নদী ভালোবাসেন তাদের জন্য মানালি বেড়ানোর একটি আদর্শ জায়গা হয়ে উঠতে পারে।

মানালির ইতিহাস

প্রাচীনকালে এই উপত্যকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ‘রাক্ষস’ নামে এক যাযাবর শিকারী সম্প্রদায়ের লোকের বাস ছিল। পরবর্তী কালে আগমন ঘটে কাংরা উপত্যকা থেকে আসা মেষপালকদের, এরা মানালিতে কৃষি কাজের জন্য বসতি স্থাপন করে।এ অঞ্চলের প্রাচীনতম বসবাসকারীদের অন্যতম ছিল ‘নৌর’ অথবা ‘নর’, কুলু উপত্যকায় এরা এক বিচিত্র প্রজাতি।এখনো অল্প কয়েক ঘর ‘নর’ পরিবার এখানে বর্তমান।মানালির পশ্চিম তীরে হরিপুরের কাছে সোয়াল গ্রামে এক ‘নৌর’ পরিবার ছিল।বস্তির জমির অধিকার বলে রাক্ষসদের শ্রমজীবী হিসেবে ব্যবহার করে বিখ্যাত হয়েছিল এই পরিবার।

ইংরেজরা আপেল আর ট্রাউট মাছের চাষ শুরু করে, মানালির উদ্ভিদ আর প্রাণীকুলের ইতিহাসে এদের অস্তিত্ব ছিল না। শোনা যায়, প্রথম যখন আপেল গাছ লাগানো হয় এতো বেশী ফলন হয় যে, তার ভার বইতে না পেরে প্রায়ই গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ত। এখনো আপেল আর প্লাম চাষ এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দাদের মুখ্য জীবিকা।

মানালি ভ্রমণের দর্শনীয় স্থানসমূহ

রোহতাং গিরিপথ। 

এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৯৭৮ মিটার বা ১৩,০৫০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। মানালি শহর থেকে এর দূরত্ব ৫১ কি.মি. বা ৩২ মাইল। এটি কুলু, লাহাল এবং স্পিতি উপত্যকার সাথে সংযুক্ত করে রেখেছে। পাহাড়ি রাস্তার আঁকাবাঁকা পথ আর প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে রোহতাং গিরিপথে যেতে হয়। এখানে শ্বেতশুভ্র সুবিশাল পাহাড়ের সারি আর বিশাল বিশাল প্রস্থর খন্ড চোখে পড়ে। এখানে আইস স্কেটিং, স্লেজগাড়ী ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে।

সোলাং উপত্যকা 

এটি রোহতাং গিরিপথ যাওয়ার পথে পড়ে এবং এর দূরত্ব মানালি শহর থেকে ১৪ কি.মি. উত্তরপশ্চিম দিকে অবস্থিত। এখানে প্যারাসুটিং, প্যারাগ্লাইডিং, স্কেটিং ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে। এখানে অনেক হোটেল মোটেল গড়ে উঠেছে।

রাহালা জলপ্রপাত

 এটি রোহতাং গিরিপথ থেকে ফেরার পথে পড়বে। এটি মানালির চমৎকার একটি জলপ্রপাত। এখানে গেলে দেখা যায় কিভাবে পাহাড়ের গা বেয়ে কূলকুল শব্দ করে জলরাশি নেমে বিপাশা/ বিয়াস নদীতে গিয়ে মিশছে।

ডেট গুলাবা

এখান থেকে চমৎকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। রেহালা জলপ্রপাত থেকে খানিকটা দূরে এর অবস্থান।

বিপাশা/বিয়াস নদ 

শহরের একদম গাঁ ঘেষে কূলকুল রবে আঁকাবাঁকা ভাবে বয়ে চলা বিপাশা/বিয়াস নদী আসলেই প্রকৃতির এক অপরূপ বিস্ময়। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪৭০ কি:মি: বা ২৯০ মাইল যা পাঞ্জাবের সুটলেজ নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এই নদীর পানি ভীষণ ঠাণ্ডা আর এর স্রোত বেশ বিপজ্জনক। যারা নদীতে ভেলায় ভাসতেভালোবাসেন তাদের জন্য এখানে ভেলায় করে যাওয়ার ভালো ব্যবস্থা আছে।

এখানে দেখার মত আরও আছে হাদিম্বা দেবীর মন্দির, গুম্ফা আশ্রম, মানালি ইকোপার্ক ইত্যাদি। এসব দর্শনীয় স্থানগুলোতে যেতে হলে গাড়ি ছাড়া কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই কারন গাড়ি ছাড়া আর কোন যানবাহন সেসব জায়গাগুলোতে যেতে পারে না। আর গাড়ি ভাড়া করতে হলে আপনাকে শুধুমাত্র মানালি শহর থেকে ভাড়া করতে হবে।

ভ্রমণের সেরা সময়

মানালির আবহাওয়া স্থিতিশিল নয়, তবে সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর এর মধ্যবর্তী সময় এই স্থান পরি দর্শনের শ্রেষ্ঠ সময় বলে বিবেচিত হয়। স্নোফল পেতে চাইলে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর যেতে হবে।।

মানালি ভ্রমণ খরচ

সীমিত অর্থ ব্যয়ে ঢাকা থেকে মানিলিত যেতে প্রায় ৩,০০০-৩,৫০০ টাকা খরচ হয়। মানালিতে খাওয়া দাওয়ার জন্য প্রতিদিন ২০০-২৫০ রুপি লাগে। সব মিলিয়ে মানালিতে যাওয়া, থাকা ও ঘোরাঘুরি সহ ৪ দিন ৩ রাত থাকতে জনপ্রতি ১৮,০০০-২০,০০০ টাকা খরচ হবে।

কিভাবে যাবেন                             

ঢাকা থেকে কলকাতায় বিমানে, বাসে ও ট্রেনে যাওয়া যায়। এরপর কলকাতা থেকে দিল্লি যেতে পারেন বিমান বা ট্রেনে। দিল্লী হলো কেন্দ্র বিন্দু যেখান থেকে বিভিন্ন রুটের বাস ছাড়ে। মানালি যাওয়ার বাস দিল্লীর কাশ্মীরি গেট বাস টার্মিনাল থেকে ছাড়ে। কাশ্মীরি গেট বাস টার্মিনাল দিল্লীর সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল। সকল রুটের বাস এখান থেকে ছাড়ে।.বাস বা জিপে যেতে পারেন দিল্লি থেকে মানালি।

কোথায় খাবেন

মানালিতে অনেক ভালো মানের খাবারের হোটেল আছে। যেমন: গুজরাটি, মাদ্রাজি, পাঞ্জাবি, বাঙালি ইত্যাদি। বাঙালি খাবার হোটেলের মধ্য আছে হোটের আদার্শা, নিউ আশাপুরি ভোজনালয়, আশাপুরি বাংলা রেস্তোরাঁ ইত্যাদি যেগুলো মল রোডে অবস্থিত। বাঙালি হোটেলের মধ্যে শান্তিনিকেতন হোটেল বেশ প্রসিদ্ধ।

কোথায় থাকবেন

বড় বড় পাহাড়ের মাঝখানে গড়ে উঠেছে ছোট শহর মানালি। এখানের মল রোড সুবিখ্যাত। মল রোডে অনেক হোটেল-মোটেল গড়ে উঠেছে। প্রকারভেদে হোটেলের ভাড়া ১৫০০-১৮০০ ভারতীয় রুপী হতে পারে। হোটেলগুলোতে গরমের ব্যবস্থা আছে। কেনাকাটার জন্য মল রোডে অনেক বিপণীবিতান আছে যেগুলো হোটেল থেকে একদম হেঁটে যাওয়া যায়।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ