পুরী ভ্রমণ-
পুরী (Puri) ভারতের ওড়িশা রাজ্যের পুরী জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা। এই শহর পুরী জেলার সদর শহর এবং বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। উড়িষ্যার রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে ৬০ কিমি দূরে অবস্থিত। উড়িষ্যার রাজধানী ভুবনেশ্বর হলেও অধিকাংশ পর্যটক ভ্রমণ শুরু করে পুরী দিয়ে, সাধারন পর্যটক, প্রকৃতিপ্রেমী এবং পুর্নাথীদের এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র পুরী। তীর্থযাত্রী ভ্রমণার্থী দুয়ের কাছেই পুরী আজও একই রকম আকর্ষণীয়।
পুরী বিখ্যাত উত্তাল মনোরম সমুদ্র সৈকত এবং জগন্নাথ দেবের মন্দিরের জন্য। পুরী হিন্দুদের চারধামের অন্যতম একটি ধাম হিসেবে বিখ্যাত। প্রাচীনকালে পুরী শ্রীক্ষেত্র এবং নীলাচল নামে পরিচিত ছিল। এই শহরে হিন্দুদের অনেক মন্দির ও মঠ আছে। এখানকার মূল কেন্দ্র বিন্দু স্বর্গদ্বার। এর চারপাশ দিয়েই সব দোকানপাট, শোপিস হোক বা শাড়ি, সুতোর কাজ বা পাথরের কাজ সব কিছুর জন্যই পুরী কেনাকাটার স্বর্গ এখানকার শিল্পীদের তৈরী শঙ্খের বিভিন্ন জিনিস দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়, এক ফাকে অটো নিয়ে চলে যেতে পারেন পটের গ্রাম রঘুরাজ পুরে, পুরী থেকে যাওয়া আসা ৪০০ টাকায় হয়ে যাবে। রঘুরাজ পুরের শিল্পীদের হাতের কাজ পৃথিবী বিখ্যাত। পুরীতে রয়েছে জগন্নাথ মন্দিরের পাশাপাশি বেশ কিছু বিখ্যাত মন্দির, মহাপ্রভুর গম্ভীরা মন্দির, যেখানে উনি শেষ জীবন কাটিয়েছেন , যবন হরিদাসের সমাধি মন্দির, ইস্কন মন্দির, সোনার গৌরাঙ্গ মন্দির, পুরীর সমুদ্র সৈকতেই কাটিয়ে দেওয়া যায় সারাদিন সমুদ্র স্নান করে।
পুরী ভ্রমণে উল্লেখ্যযোগ্য দর্শনীয়
সমুদ্র, পুরীর জগন্নাথ মন্দির, জগন্নাথ দেবের মাসী বাড়ি, ইস্কনের মন্দির ( কাকাতুয়া খাজার দোকানের কাছে)হরিদাস এর সমাধি আশ্রম( ইস্কনের মন্দির এর বিপরীতে) ভারত সেবাস্রম সঙ্ঘ ও তার মিউজিয়াম, শঙ্করাচার্জের মঠ (গোবর্ধন মঠ) গম্ভীরা বা শ্রী রাধাকান্ত মঠ (শ্রী চৈতন্য দেব এখানে থাকতেন)সিদ্ধ বকুল গৌরবিহার আশ্রম (মাতাজির আশ্রম) কুলদানন্দ ব্রমহচারির আশ্রম বিজয়কৃষ্ণ ব্রমহচারির সমাধি আশ্রম, চন্দন সরোবর (জগন্নাথ দেবের পিসি বাড়ি) লোকনাথ, ভার্গবি নদীর মোহোনা, সোনার গৌরাঙ্গ, তোতাপুরি আশ্রম, এ ছাড়াও পুরীর জগন্নাথ মন্দির এর চত্বরে অনেক কিছু দেখার আছে।
পুরীর সমুদ্র
বাঙালির কাাছে পুরীর সমুদ্রের কোনো তুলনা হয়না। এখানে ভোরের সূর্যোদয় এবং বিকেলের সূর্যাস্ত খুবই উপভোগ্য। সমুদ্রে স্নান করতে পারবেন প্রায় সকলেই স্নান করে।বেশীদূর না যাওয়াই ভালো পানির স্রোতে ভেসে যেতে পারেন।
জগন্নাথ মন্দির
জগন্নাথ মন্দিরকে পুরীর প্রধান আকর্ষণ বলা যায়। হিন্দুদের চারধামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র এই মন্দির।
বিমলা মন্দির
পুরীর জগ্ননাথ মন্দির চত্বরে অবস্থিত বিমলা একান্ন সতীপীঠের অন্যতম এবং চার আদি শক্তিপীঠের একটি।
স্বর্গদ্বার
স্বর্গদ্বার জায়গাটি একটি শ্মশান এবং তাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে পুরো অঞ্চল।যাকে সবাই স্বর্গদ্বার বলে।
লাইট হাউজ
পুরীর স্বর্গদ্বার থেকে মাত্র দেড় কি.মি দূরে নিউ মেরিন ড্রাইভ রোডের ওপর লাইট হাউজটি অবস্থিত।এখান থেকে পুরীর আর সমুদ্রের যে দৃশ্য দেখা যায়, তা অসাধারণ।
পুরী থেকে কাছাকাছি ঘুরার জায়গাগুলো হলো- কোনারকের মন্দির, রঘুরাজপুর গ্রাম, লিঙ্গরাজ মন্দির, চিল্কা,হ্রদ, বালেশ্বর সৈকত, চন্দ্রভাগা সৈকত ইত্যাদি জায়গা।
কোথায় খাবেন
পুরীতে ভাতের হোটেল পেয়ে যাবেন। খুব বেশী দাম নয়। তবে হোটেলে আগে জিজ্ঞেস করে অর্ডার দেবেন।
ভ্রমণের সেরা সময়
সারা বছর ধরেই এখানে যাওয়া যায়। তবে মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মনোরম পরিবেশ বিরাজ করে।
কিভাবে যাবেন
প্লেনে এলে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দরে নামতে হবে সেখান থেকে পুরি প্রায় ৫৫ কি.মি দূরে।ট্রেনে করে আসতে চাইলে সবথেকে ভালো হয় হাওরা বা শিয়ালদহ থেকে রাতের ট্রেনে পুরী স্টেশন। তারপর ট্যাক্সি বা হোটেলের গাড়ি করে সরাসরি হোটেলে যাওয়া যায়। এছাড়া কলকাতার দূর্গাপুর থেকে সরাসরি বাসেও পুরী যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
পুরীতে থাকার জন্য বহু হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউজ রয়েছে। এখানে হোটেলের ভাড়া ৫০০-১০০০০ পর্যন্ত রয়েছে। বেশ কিছু গেস্ট হাউজ গুলোতে নিজেদের রান্নার ও সুযোগ রয়েছে। স্বর্গদ্বারের পিছন দিকে সস্তার হোটেল পাবেন। একটু দু-একটা হোটেল ঘুরে নেবেন, ৩০০ টাকায় ৪ জনের ভালো হোটেল পেয়ে যাবেন।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)