আউলি ভ্রমণ-

আউলি উত্তর ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের স্কি রিসোর্ট এবং হিল স্টেশন। এটি চারপাশে সরলবর্গীয় ওক বন, নন্দদেবি এবং নার পর্বত পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। আলপাইন উদ্ভিদ, তুষারচিতা এবং লাল শিয়ালের মতো বন্যজীবন রয়েছে এখানে। গ্রীষ্মের সময় ভারতের শীতলতম স্থান আউলি। একটি দীর্ঘ তারের রোপওয়ে আউলিকে জোশীমঠ শহরের সাথে যুক্ত করেছে। রোপওয়েতে জেশীমঠ ভ্রমনের সময় ওপর থেকে পাখির চোখ দিয়ে অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।।

আউলি থেকে উত্তরাখণ্ডের নীলকণ্ট, মানা পর্বত, নন্দা দেবীর ‘ধবল শিখর’-এর সৌন্দর্যে নিজেকে বুঁদ করে রাখতে পারবেন। ২৮০০ মিটার (৯১৮৬ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত এই হিলষ্টেশন। এর বরফ মোড়া পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের হাতছানি। সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা দিয়ে বরফের সময় আপনি স্কিইইং করতে পারবেন। আউলি ভ্রমনের আরেকটি সেরা আকর্ষন এখানকার ক্যাবল কার। আউলির রোপওয়ে হচ্ছে গিয়ে এশিয়ার দীর্ঘতম (৩.৭৫কিমি) তথা উচ্চতম আর গোটা পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় উচ্চতম। রোপওয়ে চেপে আউলি ভ্রমণ যেন একটা ম্যাজিক। ৫ নম্বর টাওয়ারের পর থেকে হিমালয় উন্মুক্ত হয়ে আছেন। আস্তে আস্তে টাওয়ার নম্বর যত বাড়বে ততই চোখের সামনে আসবেন নন্দাদেবী, দ্রোণাগিরি, ত্রিশূল, নন্দাকোট, পঞ্চচুল্লি।

চোখের সামনে একের পর এক পিক উন্মুক্ত হতে দেখে আছন্ন হয়ে পড়েতে হয়, এ যেন স্বপ্নের থেকেও অনেক সুন্দর। সকালে-বিকালে অলস পায়ে পাহাড়ি পথের আঁকেবাঁকে ঘুরে বেড়ানো, ভোরবেলা লজের বারান্দা থেকে দিনের প্রথম আলোয় পাহারচুড়ো র রংবদল আর সন্ধ্যায় সোনাঝরা সূর্যাস্তের মায়াবি আলোয় পাখিদের ঘরে ফেরা দেখতে দেখতে কেটে যাবে দুদিন। GMVN লজের পা শেই একটা হনুমানজির মন্দির আছে। চেয়ার লিফট পয়েন্টের সামনের গেট দিয়ে গেলে কম সিঁড়ি ভাঙতে হয়। এখান থেকে নন্দাদেবি, ত্রিশুল, কামেট, দুনাগিরি, গৌরি আর হাতি পর্বত, নিলকান্ত পিকগুলো দেখা যায়।

আউলি রোপওয়ে যাত্রায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল লাগেজ ম্যানেজমেন্ট। বেশি মালপত্র নিয়ে কেবল কারে যাতায়াত করা বেশ অসুবিধাজনক। সঙ্গে গাড়ি থাকলে বেশির ভাগ মালপত্র গাড়িতে রেখে যথাসম্ভব কম লাগেজ নিয়ে যাওয়া উচিত হবে। গাড়ি না থাকলে যোশিমঠের হোটেলের ক্লকরুমেও মালপত্র রাখা যেতে পারে। সমস্ত মালপত্র কখনোই নেবেন না। আউলি গেলে অনেকেই রোপওয়ে চেপে, ঘুরে ফিরে আসেন। কিন্তুযদি সম্ভব হয় এক রাত থাকুন। বরফ না পেলেও থাকুন, অন্য কোন অধরা রূপ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। বদ্রীনাথ যাওয়ার পথে অথবা হেমকুন্ড, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস যাওয়ার পথে আউলি দেখে নেওয়া যায়। কেবল কারে চেপে আকাশপথে আউলি ভ্রমণ চিরকাল মনে থেকে যাবে। ভ্রমণের সেরা সময় আউলি সাধারনত শীতকালীন এক্টিভিটির জন্যে সেরা গন্তব্য। শীতকালীন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস এবং বরফের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার জন্যে এখানে সাধারনত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ভ্রমণের সেরা সময় ধরা হয়।।

আউলি তে কি কি দেখবেন

  • আউলি কৃত্রিম হ্রদ  
  • চেনাব হ্রদ 
  • জোশীমঠ
  • ছত্রকুন্ড 
  • ত্রিশুল পর্বত 
  • রুদ্র প্রয়াগ 
  • নন্দাদেবী ন্যাশনাল পার্ক  
  • নরসিংহ মন্দির 
  • হেমকুন্ড 
  • আউলি স্কি রিসোর্ট 
  • নন্দাদেবী পর্বত 
  • বসুন্ধরা ফলস 
  • আউলি রোপওয়ে 
  • বৃদ্ধ বদ্রি মন্দির  ইত্যাদি।

শীতে বদ্রীনাথ বরফে বরফে অগম্য হয়ে ওঠে। এ সময় বদ্রীবিশাল পূজিত হন যোশীমঠের বাসুদেব মন্দিরে। আউলি যেতে হয় এই যোশীমঠ থেকেই । যোশীমঠের ৫৮ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে কিছুটা উপরে আরেকটি রাস্তা ধরে আউলি যেতে হয়। বছরের অন্যান্য সময়ে এ পথে গাড়ি চলে। শীতে জমে থাকা বরফের কারণে পথটি প্রায় অগম্য হয়ে পড়ে। রাস্তা খানিকটা পরিষ্কার থাকলে ট্যাক্সি চলে। যোশীমঠ থেকেই ট্যাক্সি পাওয়া যায়। দুরত্ব ১৪ কিলোমিটার।

আউলি তে কি কি অ্যাকটিভিটি রয়েছে  

স্কিঃ

নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি তুষারশুভ্র আউলি । এসময় আউলি বরফে আচ্ছাদিত হয়ে থাকে। তাপমাত্রা মাইনাস ৪ ডিগ্রিতে নেমে আসে। ঠান্ডায় খুব ভয় না থাকলে এই শীতের মরসুমেই চলুন উত্তরাখণ্ডের আউলি। শীতের আউলি স্কিয়িংয়ের জন্য খ্যাত। এখানকার পুরু বরফাচ্ছাদিত ঢালগুলি স্কিয়িংয়ের জন্য আদর্শ। একটি কৃত্রিম লেক রয়েছে আউলিতে। তা ওই স্কিয়িংয়ের স্বার্থেই কম ঠান্ডায় বরফ জমানোর জন্য। শীতে আউলিতে স্কিয়িং প্রতিযোগিতার আসর বসে। তীব্র ঠান্ডাতেও তখন আউলি জমজমাট। পর্যটকে গমগম করে। স্কিয়িংয়ে উৎসাহ থাকলে তো কথাই নেই। স্কিয়িংয়ের প্রাথমিক পাঠ নিতে চাইলে সে-ব্যবস্থাও আছে। ঘণ্টাপিছু জনপ্রতি খরচ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। যোশীমঠ থেকে বদ্রীনাথের দূরত্ব ৪৬ কিলোমিটার। তবে শীতে বদ্রীনাথ যাওয়া সম্ভব হবে না। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় নাগাদ মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ফের খোলে মে মাস নাগাদ।

গড়সন পয়েন্ট ট্রেকিং

শীতের আউলির রূপ আরো খুলে যাবে যদি আউলি থেকে গড়সন পর্যন্ত বরফে পা ডুবিয়ে হাঁটা যায়। ছোট ট্রেক-পথ। পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আউলি-গডসন ট্রেকিং শুরু হয় ৮ নম্বর টাওয়ারের কাছ থেকে। একজন গাইড নিতে হবে। বরফে মোড়া ওক গাছের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সে পথের সৌন্দর্য সারা জীবনে ভোলবার নয়। পথের মাঝামাঝি পড়বে একটি চাকচিক্যহীন কিন্তু পরিবেশের সঙ্গে মানানসই একটি মন্দির। স্থানীয়রা এই মন্দিরে পুজো দেন। গড়সন পয়েন্টের উচ্চতা ১১৮৮০ ফুট। অর্থাৎ পায়ে পায়ে অনেকটা উঁচুতে উঠে আসতে হবে। কমবেশি আড়াই ঘন্টায় আউলি থেকে গড়সন পৌঁছানো যায়। গড়সন পয়েন্ট থেকে পরিষ্কার দেখা যায় নন্দাদেবী, মানা পর্বত, দুনাগিরির শৃঙ্গগুলি।

রোপওয়ে

শীতে আউলি যাত্রার প্রধানতম উপায় রোপওয়ে। যোশীমঠ থেকে আউলি পর্যন্ত ৪:১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রোপওয়েটি এশিয়ার দীর্ঘতম রোপওয়ে। যোশীমঠ থেকে আউলি পৌঁছাতে ২৫ মিনিট সময় লাগে। কেবলকার একসঙ্গে ২৫ জন যাত্রী বহনে সক্ষম। যাতায়াত বাবদ জনপ্রতি ভাড়া ১০০০ টাকা। কেবলকারে চড়ে একেকটা পাহাড়-ঢাল পেরিয়ে যাওয়া, স্থিরচিত্রের মতো দূরের সব পাহাড়ি গ্রাম, বরফের ঢাল বেয়ে স্কিয়ারদের দ্রুতগতিতে নেমে যাওয়া, সবমিলিয়ে এক রোমাঞ্চকর যাত্রা। রোপওয়ে ব্যবস্থার আঞ্চলিক নাম গন্ডোলা। আরেকটি রোপওয়ে ব্যবস্থা আছে আউলিতে। চেয়ারলিফট। এই ব্যবস্থায় চারজন যাত্রী পাশাপাশি বসতে পারেন। চারিদিক খোলা। রেলিংয়ের ঘেরাটোপ যাত্রীদের সুরক্ষিত রাখে। চেয়ারলিফটে করে স্কিয়িংয়ের ঢালগুলোতে পৌঁছানো যায়। কৃত্রিম লেকটিও ভালো দেখা যায় চেয়ারলিফট থেকে। চেয়ারলিফটে জনপ্রতি ভাড়া ৩০০ টাকা।

হেলিকপ্টার থেকে হিমালয় দর্শন

১০ থেকে ১২ মিনিটের জন্য আপনাকে ৩০০০ টাকা দিতে হবে।

আউলি তে কখন যাবেন

আউলি তে যাওয়ার সবথেকে ভালো সময় হলো ১২ ই ডিসেম্বর থেকে ১৫ ই মার্চ পর্যন্ত। আপনি মনে করলে সারা বছর যেতে পারেন। তবে স্নো ফলস ও স্কি এবং রোপওয়ের মজা এবং বরফের মধ্যে এক রাত্রি কাটাতে গেলে এই সময় টা সবচেয়ে ভালো।

আপনি শীতে আউলি পৌঁছান, তাহলে আপনার পাওনা হবে তুষার বৃষ্টি। ঝিরিঝিরি বরফ পড়তে দেখবেন আপনার ঘরের জানলা দিয়ে। দেখতে পাবেন, একটু একটু করে আরও সাদা চাদরে নিজেকে ঢেকে নিচ্ছে উপত্যকা। চলতে-ফিরতে আচমকাই দেখতে পাবেন, বরফের বৃষ্টিতে সাদা হয়ে উঠল জ্যাকেটটা! কপাল আর একটু ভালো হলে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন তুষারঝড়ের ভয়ঙ্কর, সুন্দর চেহারাও! চিন্তার কিছু নেই, আউলি তুষারঝড়ে কাউকে বিপদে ফেলে না। বড় জোর একটা দিনের জন্য ঘরবন্দী করে রাখতে পারে!

কিভাবে যাবেন

প্রথমে পৌঁছাতে হবে হরিদ্বার। হাওড়া থেকে উপাসনা এক্সপ্রেস, কুম্ভ এক্সপ্রেস ,দুন এক্সপ্রেস পাওয়া যাবে। হরিদ্বার থেকে চলে আসুন হৃষিকেশ। দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। বাস, অটো পাবেন হরিদ্বার থেকে হৃষিকেশ যাওয়ার জন্য। হৃষিকেশের যাত্রা বাস টার্মিনাস থেকে যোশীমঠ যাওয়ার বাস পাওয়া যাবে। হৃষিকেশ-যোশীমঠ দূরত্ব ২৫০ কিলোমিটার। হৃষিকেশ থেকে শেয়ার ট্যাক্সির ব্যবস্থাও আছে। মাথাপিছু ভাড়া নেওয়া হয়।

এছাড়াও বিমানে গেলে আপনাকে যাতে হবে কোলকাতা বিমান বন্দর (CCU ) থেকে দেরাদুন বিমান বন্দর ( DED ) .দেরাদুন বিমান বন্দর থেকে  হরিদ্বার এর ক্যাব  ভাড়া ৮০০ টাকা। এছাড়া দিল্লী হয়ে হরিদ্বার  গেলে , প্রথমে বিমানে অথবা ট্রেনে আসতে হবে দিল্লী।  তারপর দিল্লী থেকে ক্যাব অথবা বাসে করে আস্তে হবে হরিদ্বার। এছাড়াও অনলাইনে থেকে আউট স্টেশন  OLA  অথবা Uber  পেয়ে যাবেন।

কোথায় থাকবেন

আউলিতে থাকার ব্যবস্থা আছে। থাকা যায় যোশীমঠেও। আউলিতে হোটেল ভাড়া বেশি। যোশীমঠে থাকার ব্যবস্থা বেশি। খরচও তুলনামূলক কম। তবে আউলিতে থাকার রোমাঞ্চ অবশ্যই বেশি। শীতে আউলিতে থাকা মানে বরফের মাঝে বাস করা।” Garhwal Mandal Vikas Nigam ” (GMVN ) এর ওয়েবসাইট থেকে ( গভর্মেন্টের  স্কি রিসোর্ট ) সরকারি আবাসন বুকিং করতে পারেন ।

এছাড়াও আউলি তে অনেক প্রাইভেট হোটোলে এবং আবাসন রয়েছে।

আউলি

হোটেল খরচ :- ২৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা।

  • Cliff Top Club ( 078951 40058 )
  • The Royal Village ( 096394 19882 )
  • The Snowcity Resort in Auli | Hotel in Auli | Skiing in Auli | Best Resort in Auli ( 094117 38388)
  • Chauhan Resort Auli Badrinath
  • Blue Poppy Resorts ( 078141 99093 )

নন্দাদেবী ইকো টুরিজম রিসর্ট (সরকারি)-(০১৩৮৯)২২৩২০৮, ৯৫৬৮০০৬৬০২।
স্কি রিসর্ট (সরকারি)-(০১৩৮৯)২২৩২০৮।
জি এম ভি এন স্কি রিসর্ট (সরকারি)- ৯৫৬৮০০৬৬০২।
নন্দাদেবী ইকো হাট (জি এম ভি এন) – ৯৫৬৮০০৬৬২৯।
মানিক রিসর্ট – ৯৪১২০৩০২৬২।
টুরিস্ট রিসর্ট – ৯৭৬০৪৪৪০৭০।
ক্লিফটপ ক্লাব রিসর্ট ৯৮১৮২০৬৬২৫।

যোশীমঠ

নরসিংহ টুরিস্ট কমপ্লেক্স (জি এম ভি এন) – (০১৩৮৯)২২২১১৮।
জ্যোতির ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স (জি এম ভি এন) – (০১৩৮৯)২২২২২৬, ৯৫৬৮০০৬৬৬৭।
(জি এম ভি এন) নিউ টি আর এইচ – ৯১১৩৫২৭৪০৮৯৬, ৯১১৩৫২৭৪৬৮১৭।
হোটেল দ্রোনাগিরি – (০১৩৮৯)২২২৬২২,৯৪১০১২৬৬০৯।
ড্রিম মাউন্টেন রিসর্ট – ৮৪৪৯০৬৩৬৫২, ৮৯৫৮২৯৮৫৮৫।
হোটেল তওভ – ৯১০৫০৫৫৫৮৮।
পঞ্চবটী ইন – ৯০৬৮০১৭১৪১/২।
হোটেল উদয় প্যালেস (০১৩৮৯)২২২০০৪।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ