তৈদুছড়া ঝর্ণা-
তৈদুছড়া ঝর্ণা খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার সবুজ পাহাড় আর বুনো জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত নয়নাভিরাম ঝর্ণা। ত্রিপুরা ভাষায় তৈদু মানে হল পানির দরজা এবং ছড়া মানে ঝর্ণা। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর তৈদুছড়া ঝর্ণাটি শিবছড়ি ঝর্ণা নামেও পরিচিত। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা খাগড়াছড়ির বৃহত্তম এই ঝর্ণাটিতে এসে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি এখানে ছবি তুলতে পারবেন এবং ট্রেকিং করতে পারবেন।
অসাধারণ সৌন্দর্য আর প্রাকৃতিক বৈচিত্রতা তৈদুছড়াকে এনে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। আশ্চর্যরকম আর অনিন্দ্য সুন্দর এক জলপ্রপাত বিধাতা যেন তার মহিমান্বিত হাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন গহীন অরণ্যে। যা একবার দেখলে বারবার ছুটে আসতে চাইবেন। পাহাড়ি ছড়া, নালা আর গভীর অরণ্য পেরিয়ে বোয়ালখালী নদীর পাশ ঘেঁষে সুউচ্চ পাহাড়ি ঝরনা ও সৌন্দর্যমণ্ডিত বিভিন্ন পাথরের রূপ পর্যটকদের আকৃষ্ট করবেই।
তৈদুছড়া ঝর্ণা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু। পাহাড়ের গায়ে অগণিত পাথরের ধাপ রয়েছে, আর এই ধাপগুলো বেয়ে জল গড়িয়ে নিচে পরে। এই প্রাকৃতিক বৈচিত্রতাই তৈদুছড়া ঝর্ণাকে ভিন্ন করেছে অন্য সব ঝর্ণা থেকে। তাই তৈদুছড়া ঝর্ণার পানির ধারা একটু অন্যরকম,পাহাড়ের গা বেয়েঁ সিঁড়ির মতো তৈরি হওয়া অসংখ্য পাথুরে ধাপ হতে জল গড়িয়ে একটা হ্রদের সাথে মিলিত হয়েছে। খাগড়াছড়িতে যেসকল দর্শনীয় স্থান রয়েছে তৈদুছড়া তার মধ্যে অন্যতম। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে আঁকা বাঁকা পাহাড়ের ভাঁজ ঘেঁষে বয়ে চলে তৈদুছড়া ঝর্ণার পানি। শীতল-স্বচ্ছ পানির কলকল করে ছুটে চলার শব্দে মুখোর হয় চারপাশ। ৩০০ ফুট উচু থেকে গড়িয়ে পড়া পানি এসে পরে একদম পাথুরে ভূমিতে। আর সব ঝর্ণার মত এর পানি সরাসরি উপর থেকে নিচে পড়ে না। পাহাড়ের গায়ে যে সিড়ির মত তৈরি হয়েছে সেই পাথুরে ধাপগুলো অতিক্রম করে নিচে এসে পড়ে তৈদুছড়া ঝর্ণার পানি।
কয়েকবছর আগে এখানে দুটি ঝর্ণা আবিষ্কৃত হয়। এই তৈদুছড়া ঝর্ণার ডানপাশ দিয়ে পাহাড়ের উপরে থাংঝাং ঝর্ণা নামে আরেকটি ঝর্ণা রয়েছে। থাংঝাং ঝর্ণার পানি থেকে একটা ঝিরি তৈরি হয়েছে, মূলত এই ঝিরির পানি থেকেই তৈদুছড়া ঝর্ণার সৃষ্টি হয়েছে। তৈদুছড়া ঝর্না থেকে আধা ঘণ্টা হাঁটলেই থাংঝাং ঝর্ণা৷ তবে এই পথ পাড়ি দিতে হবে পাহাড়ি উঁচু নিচু ঢাল,বুনো জঙল আবার কখনো হাঁটু বা বুক সমান পানি পার হতে হবে।।দীর্ঘ রোমাঞ্চকর এই পথের ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর হয়ে যায় ঝর্নার শীতল পানিতে নেমে।।ঝর্নার ধাপে ধাপে পাথুরে স্তর এই ঝর্না কে অন্য ঝর্না থেকে আলাদা করে তুলেছে।। এছাড়া পাহাড়ের গায়ে জুম চাষের ক্ষেত পর্যটকদের চোখ জুড়িয়ে দেয়। পাহাড়ের সবুজের মাঝে জুম ফসলের মাঠ যেনো যোগ করেছে ভিন্ন এক সবুজের। মনে হবে যেনো সবুজের গালিচা।
তৈদুছড়া ভ্রমনের জন্য ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির দিঘিনালায় যাবেন, এরপর দীঘিনালা হতে সব মিলিয়ে তৈদুছড়া পর্যন্ত পৌছতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লাগে। নির্ভর করে হাঁটার গতির উপর। সুতরাং সকালে রওয়ানা দিলে অনায়েসেই সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসা সম্ভব। এই আসা যাওয়ার পথটি মোটেও বিরক্তিকর নয়। হাঁটতে হাঁটতে যতটা না ক্লান্তি আপনাকে গ্রাস করবে তার চাইতেও বেশী গ্রাস করবে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নেশা। চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায় যে আপনি আসক্ত হবেনই।
দীঘিনালা থেকে তৈদুছড়া নয়, খাগড়াছড়ি প্রবেশের পর হতে আপনার জন্য কেবল বিস্ময় অপেক্ষা করবে। যে দিকেই চোখ যাবে কেবল সবুজ পাহাড়, নীল আকাশ আর সাদা কুয়াশার মত মেঘ আপনাকে মোহাবিষ্ট করে রাখবে। তৈদুছড়া যাওয়ার পথে ছোট বড় বেশকিছু ঝর্না ও পাহাড়ের স্বর্গীয় রূপ আপনাকে মুগ্ধ করবে। শুধু তাই নয় এখানকার আদিবাসীদের আথিতেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবে। জলপ্রপাত, ঝিরি,পাহাড়ি জীবন,আকাশ আর পাহাড়ের মিতালি,শিবছড়ি পাহাড়ের শিব মূর্তি, পাথরের হাতি,পাথরের সাপ,সব কিছু মিলিয়ে আপনার চোখ ভরে যাবে তৃপ্তিতে।।
কিভাবে যাবেন
তৈদুছড়া ঝর্ণা খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় অবস্থিত। খাগড়াছড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে সারাদিনের জন্য প্রায় ১৮০০/- টাকা থেকে ২৫০০/- টাকা ভাড়া দিয়ে একটি চান্দের গাড়ি নিয়ে দীঘিনালায় পৌছাতে পারবেন। এছাড়া আপনি বাসে করেও দীঘিনালায় যেতে পারবেন। দীঘিনালায় পৌঁছে থানা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে চলে যাবেন। থানা নির্বাহী কর্মকর্তা আপনাকে একজন গাইড দিয়ে সাহায্য করবেন। প্রথমবারের মত দীঘিনালায় গেলে একজন গাইড ছাড়া আপনার পক্ষে তৈদুছড়া ঝর্ণায় পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
আর যদি দীঘিনালা হয়ে যান তবে বাসে করে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা মোড় থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে দীঘিনালা বাস স্টপেজে যেতে হবে। সেখান থেকে দীঘিনালা বাজার গিয়ে গাইড ঠিক করতে হবে। তারপর জামতলি নামক জায়গা থেকে ট্র্যাকিং শুরু করতে হবে। ঝিরিপথ, উঁচু নিচু পাহাড় এসব পার করে প্রায় ৩ ঘণ্টা হাটার পর পাবেন তৈদুছড়া ঝর্ণা।
কোথায় থাকবেন
খাগড়াছড়িতে বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে, হোটেল শৌল্য সুবর্ন, জিরান হোটেল, হোটেল লিবয়ত,চৌধুরী বাডিং,থ্রী স্টার,ফোর স্টার, উপহার,নিলয় হোটেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)