সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ-

সোনাদিয়া দ্বীপ (Sonadia Island) দিগন্তজুড়ে নীল আকাশ, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ ঘন ঝাউবন, সবুজ তৃণভূমি বুকে জেগে থাকা সোনাঝরা বালুকাবেলা, ঝিনুক বাধানো সৈকত—সব মিলিয়েই সোনাদিয়া দ্বীপ। কক্সবাজারে দু-তিন দিন সময় নিয়ে এসে এই দ্বীপ না দেখে ফিরে গেলে তো ভ্রমণটাই ‘বৃথা’। আর যদি ক্যাম্পিং-এর পরিকল্পনা নিয়ে আসেন, তাহলে তো কথাই নেই! এই দ্বীপে পূর্ণিমা রাতে তাবুবাস যেন স্বপ্নের মতো।

ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় বনের সমন্বয়ে গঠিত সোনাদিয়া দ্বীপ।মহেশখালী থেকে সোনাদিয়া দ্বীপ যেতে পথের সবকিছুই মনে হবে শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোনো এক অকৃত্রিম ছবি চোখের সামনে ভাসছে। আপনার ভ্রমণ শেষে মনে থাকবে এ দৃশ্য, যে কোনো গল্পের আসরে সে পথের আলোচনা করতে ভুলবেন না মোটেও! এখানকার খালের পানি এতটাই স্বচ্ছ ও টলটলে, দেখে মনে হবে যেন কোনো কাঁচের ওপর দিয়ে স্পিড বোড বা ট্রলার এগিয়ে চলেছে। যা দেখলে দুঃখ-কষ্ট নিমেষেই মুছে যেতে বাধ্য যে কেউ। সমুদ্র থেকে সৃষ্টি হয়ে ভেতরের দিকে গিয়ে খালটি কয়েকটি শাখা প্রশাখায় ছড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে। খালের দু-পাশে সবুজ বন। এসব বনে রয়েছে কেওড়া, হারগোজা, উড়িঘাস এবং কালো ও সাদা বাইন বৃক্ষ।

সোনাদিয়া দ্বীপ

লাল কাকড়ার দ্বীপখ্যাত অসাধারন সুন্দর এই দ্বীপের আয়তন মাত্র ৯ বর্গ কিমি।। ”সোনাদিয়া” কক্সবাজার জেলার মহেশখালি উপজেলার একটি সুন্দর দ্বীপ।।কক্সবাজার জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিমি উত্তর-পশ্চিমে এবং মহেশখালি দ্বীপের দক্ষিনে সোনাদিয়া দ্বীপটি অবস্থিত। একটি খাল দ্বারা এটি মহেশখালি দ্বীপ থেকে বিছিন্ন হয়েছে। তিন দিকে সমুদ্র সৈকত, সাগর লতায় ঢাকা বালিয়াড়ি, কেয়া- নিশিন্দার ঝোপ, ছোট-বড় খাল বিশিষ্ট প্যারাবন এবং বিচিত্র প্রজাতির জলাচর পাখি দ্বীপটিকে করেছে অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এটি জীববৈচিত্রের দ্বীপ নামেও পরিচিতি এবং এ দ্বীপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য অন্যতম পর্যটন স্থান। তবে সরকার ইদানিং সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর সহ বড় বড় প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে, যা এখানকার জীব বৈচিত্রের জন্য হুমকী স্বরূপ।।সোনাদিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হল এখান থেকে আপনি সমুদ্র সৈকতের মজা উপভোগ করতে পারবেন। সমুদ্র বিলাস উপভোগ করার জন্য দ্বীপটি আদর্শ স্থান।বিচিত্র প্রজাতির সামুদ্রিক পাখি, লাল-কাকড়া, ছোট-বড় খাল, ম্যানগ্রোভ ঝোপ দ্বীপটিকে অনন্য করে তুলেছে

কিভাবে যাবেন

সোনাদিয়া দ্বীপে যেতে দেশের যেকোনো স্থান থেকে নিজের পছন্দমত যানবাহনে করে প্রথমে কক্সবাজার আসতে হবে। কক্সবাজার কস্তুরী ঘাট বা ৬ নং জেটি ঘাট থেকে জনপ্রতি ৮০ টাকা ভাড়ায় স্পিডবোট করে মহেশখালী যাওয়ার জন্যে স্পীড বোট পাবেন, মহশখালি পৌঁছাতে সময় লাগবে ২০-২৫ মিনিট। মহেশখালী ঘাট থেকে ২০ থেকে ২৫ টাকা ভাড়ায় রিক্সায় গোরকঘাটা বাজারে যেতে হবে আর সেখান থেকে যেতে হবে ঘটিভাঙ্গায়। গোরকঘাটা থেকে সিএনজিতে ২৪ কিলোমিটার দূরত্বের ঘটিভাঙায় যেতে ভাড়া লাগবে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা।ঘটিভাঙ্গা থেকে সোনাদ্বিয়া দ্বীপে যেতে হয় ইঞ্জিনচালিত নৌকায়। ঘটিভাঙা থেকে খেয়া নৌকায় সোনাদিয়া চ্যানেল পার হলেই সোনাদিয়া দ্বীপ। প্রতিদিন জোয়ারের সময় পশ্চিম সোনাদিয়া থেকে ঘটিভাঙা পর্যন্ত মাত্র একবার একটি ট্রলার ছেড়ে আসে। আর এই ট্রলারটিই কিছুক্ষণের মধ্যে যাত্রীদের তুলে নিয়ে আবার ফিরতি যাত্রা করে, প্রতিজন ভাড়া লাগে ২৫ টাকা।বিশেষ ভাবে মনে রাখবেন ঘটিভাঙ্গা থেকে সোনাদিয়া পশ্চিম পাড়ার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন শুধু একটি মাত্র বোট যায় আর সেটা জোয়ার ভাঁটার সময়ের উপর নির্ভর করে চলাচল করে। তবে এই সময় সকাল ১০ টা বা এর আশে পাশেই হয়।

কোথায় খাবেন/থাকবেন

পর্যটকদের থাকা খাওয়ার জন্য সোনাদিয়া দ্বীপে তেমন কোন ব্যবস্থাই নেই। এই দ্বীপে থাকা খাওয়ার জন্য তাই স্থানীয়দের উপর ভরসা করতে হয়। টাকার বিনিময়ে স্থানীয় বাসিন্দারা দ্বীপে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। চাইলে সেখানকার বন বিভাগের অফিসে রাত্রি যাপন করতে পারেন এজন্য কতৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।যদি ভাবেন সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে একদিনেই চলে আসবেন কিংবা রাত্রি যাপন করবেন না তবে সকালের কিছু অপূর্ব মুহূর্ত থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন। এখানের প্রকৃতি সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তকে সাজিয়েছে অকৃত্রিম ভালবাসায় যা বাংলাদেশের আর কোথাও আপনি পাবেন না।টিপস্ঃমনে রাখা ভালো ঘুরাঘুরি আর ক্যাম্পিং এর জন্য সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিম পাড়া সম্পূর্নই নিরাপদ। আর অযাচিত ঝামেলা এড়াতে দ্বীপের পূর্ব পাড়া এড়িয়ে চলুন।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার ।।হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ