ভ্যালী অফ ফ্লাওয়ার্স (Valley of Flowers)পৃথিবীর বুকে আরেক ছোট্ট স্বর্গীয় ভুবন। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তকমা পেয়েছে উত্তরাখণ্ডের ভ্যালী অফ ফ্লাওয়ার্স ন্যাশনাল পার্ক। চামোলি জেলায় ৩৬৫৮ মিটার (১২০০১ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত এই ফুলের উপত্যকা আদতে স্বর্গোদ্যান। এটা হিমালয় রেঞ্জের টিপলা হিমবাহের পাদদেশে অবস্থিত। ৫০০ রকমের ফুল ফোটে এই উপত্যকায়। শুধু তা-ই নয়, মাস্ক ডিয়ার আর রেড ফক্স-সহ বেশ কিছু প্রাণী ও নানা ধরনের পাখির দেখা মেলে এই উপত্যকায়। হিমালয়ের তুষারমণ্ডিত পর্বতমালার কোলে অবস্থিত এই ফুলের উপত্যকায় যেতে পারলে স্বর্গ দর্শনের অনুভূতি হয়।

উপত্যাকায় প্রবেশের বেশ খানেক পথ আগের থেকে হিমালয়ের হিম বাতাস সাথে ফুলের গন্ধ যেকোনো ব্যক্তির মনকে চাঙা করে দিবে নিমিষেই। মনোবল বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। যা দিয়েই উচ্চতাকে জয় করে হেঁটে ঘুরে দেখতে পারবেন পুরো উপত্যাকাটি। রঙিন হাজারো ফুলের মাঝে দিয়ে উঁকি দেয় হিমালয় রেঞ্জের টিপলা হিমবাহ। 

নামকরণঃ   

ব্রিটিশ অভিযাত্রী ফ্রাঙ্ক স্মিথ ফিরছেন হিমালয়ের কামেট শৃঙ্গ জয় করে। হঠাৎ তুষারঝড়। হারিয়ে গেলেন স্মিথ। সঙ্গীহীন স্মিথ ঘুরতে ঘুরতে এসে পড়লেন এক আশ্চর্য উপত্যকায়। দেখলেন চারিদিকে শুধু ফুলের মেলা। মুগ্ধ হয়ে গেলেন স্মিথ। ফিরে গেলেন দেশে। কিন্তু ফুলের টানে ফিরে এলেন আবার ছ’বছর পর। গেলেন সেই উপত্যকায়। একটি শিবির স্থাপন করলেন। দিন রাত এক করে সংগ্রহ করলেন তিনশো প্রজাতির ফুল। দেশে ফিরে লিখলেন একখানি অসাধারণ বই- ‘The Valley of Flowers’। সাহিত্যিক রাসকিন বন্ড এই বই লেখার জন্য লেখককে জানিয়েছিলেন অভিনন্দন। সেই থেকে হিমালয়ের কোলে প্রকৃতির এই স্বর্গরাজ্যের নাম হয়ে গেল ‘ভ্যালী অফ ফ্লাওয়ার্স’। যেখানে এলে মন ভালো হয়ে যায়। হিন্দিতে ‘ফুলো কা ঘাঁটি’, বাংলায় ‘পুষ্প উপত্যকা’

বর্তমানে এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। চারপাশে শুধু ফুল আর ফুল। একেক ফুলের একেক রং। উপত্যকার মাঝে বয়ে চলেছে পুষ্পবতী নদী। উপত্যকায় অ্যালপাইন্স ফুলের সাথে দেখা মেলে ডেইজি, ক্যালেন্ডুলা, পপি, ডায়ানথাস, পটেনটিলা, জেরোলিয়াম, অ্যাস্টার সহ তিনশো প্রজাতির ফুল। বরফেমোড়া পাহাড়, নদীর কলতান, সবুজের গালিচায় হাজারো বাহারি ফুল দেখে মন আপনা থেকেই বলে উঠবে ‘পৃথিবীতে যদি স্বর্গ কোথাও থেকে থাকে তবে তা এখানেই।’ ১৩,০০০ ফুট উচ্চতায় এই ফুল বাগিচার প্রেমে পড়ে লন্ডন থেকে এসেছিলেন সুন্দরী মার্গারেট। এখানেই পা পিছলে পড়ে তিনি মারা যান। ১৯৩৯ এর ৪ জুলাই। প্রকৃতির কোলে ফুল বাগিচায় রয়েছে তাঁর ছোট্ট সমাধি। পাহাড়ি ফুল আজও তাকে ভালবাসা জানায়।

ভ্রমণের সেরা সময়ঃ

ভ্যালী অফ ফ্লাওয়ার্স নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত বরফের চাদরে ঢেকে থাকে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে সব চেয়ে বেশি ফুল দেখা যায়।

কীভাবে যাবেন

ট্রেনে হরিদ্বার বা দেরাদুন। কিংবা বিমানে দেরাদুন। হরিদ্বার বা দেরাদুন থেকে বাসে বা গাড়িতে গোবিন্দঘাট (দেরাদুন থেকে ৩০৮ কিমি, হরিদ্বার থেকে ২৯২ কিমি)। গোবিন্দঘাট থেকে জিপে পুলনা, ৪ কিমি। সেখান থেকে হাঁটা শুরু। পুলনা থেকে ঘাংগারিয়া ১০ কিমি। সেখান থেকে ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স ৪ কিমি। গোবিন্দঘাট পৌঁছোতে পৌঁছোতে সন্ধে হয়ে যাবে। তার পরের দিন ভোর ভোর বেরিয়ে পড়ুন। পুলনা থেকে হাঁটা শুরু করুন।

কোথায় থাকবেন

ঘাংগারিয়ায় থাকার জন্য এখন বেশ কিছু বেসরকারি ব্যবস্থা হয়েছে। রয়েছে গুরুদ্বারও। তা ছাড়া জিএমভিএন-এর টুরিস্ট কমপ্লেক্স তো আছেই। অনলাইন বুকিং গোবিন্দঘাটেও বেশ কিছু হোটেল আছে। আছে গুরুদ্বারও।

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ