কেদারনাথ (kedarnath) তীর্থস্হানের স্নিগ্ধ বাতাবরণে এক ঐশ্বরিক পরিবেশ, নিমগ্ন হিমালয়ের গাম্ভীর্য–সবমিলিয়ে কেদারনাথ এক বিস্ময়কর দেবভূমি। কেদারনাথ হল হিন্দুদের পবিত্রতম তীর্থস্থান এবং সর্বাধিক আধ্যাত্মিক স্থান। কেদারনাথ, শিবের নাম এবং পুরো উত্তরাখণ্ডের অন্যতম সুন্দর স্থান। কেদারনাথ চারধাম যাত্রার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধাম। কেদারনাথ একটি গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র মন্দির, যার চারপাশে হিমবাহ, পাহাড় এবং মন্দাকিনি নদী রয়েছে।

কেদারনাথ ট্যুর প্যাকেজটি ভক্তদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়, কারণ তারা এখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং শান্তি অনুভব করেছেন। গৌরীকুন্ড থেকে কেদারনাথ পৌঁছতে, আপনাকে প্রায় ২২ কিলোমিটারের উচু অঞ্চলে উঠতে হবে। যদি আপনি হাঁটাচলা করতে না পারেন তবে আপনি পনি বা পিট্টার বিকল্পও বেছে নিতে পারেন, বা হেলিকপ্টার দিয়ে কেদারনাথ যাত্রায় যেতে পারেন। ছোট চরধাম উত্তরাখণ্ড উপত্যকায় এবং সর্বাধিক সুন্দর দৃশ্য উপস্থাপন করেছে যা মহাত্মা গান্ধী সুইজারল্যান্ডের সাথে তুলনা করেছিলেন। এই তীর্থযাত্রা আপনাকে ভারতীয় ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করতে সহায়তা করবে।

শিবের বয়স যত, কেদারখণ্ড ততটাই প্রাচীন৷ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর ভীষণরকম অনুতাপে ভুগতে থাকেন পঞ্চপাণ্ডব৷ এই ধর্মযু‌গে আত্মীয়-পরিজনের নিধন করেছিলেন তাঁরা৷ সেই পাপক্ষালনের উদ্দেশ্যে পঞ্চপাণ্ডব মহর্ষি বেদব্যাসের পরামর্শে হিমালয়ে গেলেন মহাদেব দর্শনে, কেদারখণ্ডে৷ কিন্তু দেবাদিদেব পাণ্ডবদের দর্শন দিতে চান না, তাই তিনি পালিয়ে যান৷ পাণ্ডবরাও শিবের পিছু নেন৷ শেষে পথ না পেয়ে শিব মহিষের রূপধারণ করেন৷ সেই মহিষরূপী শিবকে জাপটে ধরেন ভীম৷ যখন তিনি জাপটে ধরেন মহিষের মুখ ছিল পৃথিবীর দিকে এবং পশ্চাদভাগ ছিল কেদারের দিকে৷ মহিষরূপী শিবের অঙ্গ টুকরো হয়ে পাঁচটি স্থানে ছিটকে পড়ে৷ কেদারে পশ্চাদ্ভাগ, মদমহেশ্বরে নাভি, তুঙ্গনাথে বাহু, রুদ্রনাথে মুখ, কল্পনাথ বা কল্পেশ্বরে জটা৷ হিমালয়ের এই পাঁচ পুণ্যভূমি ‘পঞ্চকেদার’ নামে পরিচিত৷ কথিত আছে, কেদারে এসে পঞ্চকেদার দর্শন না করলে নাকি কেদার-দর্শনের পুণ্য সম্পূর্ণ হয় না৷ একদা ভগবান নরনারায়ণ মাটি দিয়ে মূর্তি গড়ে পুজো করেন শিবের৷ ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন শিব এবং কেদারে বাস করতে শুরু করেন৷ সেই থেকে কেদারে বাস দেবা দেবীদের৷

কেদারনাথ, উত্তরাখণ্ড
কেদারনাথ, উত্তরাখণ্ড ভ্রমণ গাইড

কী দেখবেন

শীতকালে প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণে কেদারনাথের সব পথ বন্ধ হয়ে যায়৷ তাই মূল মন্দিরও মোটামুটি ছ’মাস বন্ধ থাকে৷ লোকালয় স্তব্ধ, ফাঁকা হয়ে যায়, পুরোহিতরা নেমে আসতে বাধ্য হন, কিন্তু দেবতার পুজো তো বন্ধ করা যায় না, তাই ভগবান কেদারনাথও নেমে আসেন ওইসময়৷ তখন তার অস্থায়ী ঠিকানা হয় উখিমঠ৷ এখানে কিছুদিন থেকে আবার শীত শেষে ছ’মাস পর তিনি ফিরে যান কেদারখণ্ডে৷ পালকিতে চড়ে শিবের এই অবরোহণ এবং আরোহণের নাম ‘ডোলিযাত্রা’৷ শিবের নামা এবং ওপরে ওঠাকে কেন্দ্র করে উৎসব পালিত হয় এখানে৷ তবে ডোলিযাত্রা দেখার ভাগ্য সবার থাকে না৷ ২০১৬-র মে মাসে খুলে গিয়েছে কেদারনাথ মন্দিরের দ্বার৷ উখিমঠ থেকে শিব ফিরে গিয়েছেন স্বস্থানে৷ তবে ২০১৩ সালের ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর কেদারনাথের ডোলিযাত্রার পথ পাল্টে গিয়েছে৷ ধ্বংসলীলা যতই হোক, কেদারনাথের মন্দিরটি অক্ষতই ছিল৷ বর্তমান কেদারনাথের এই মন্দিরটির নির্মাণকর্তা আদি শংকরাচার্য৷ আদিতে যে মন্দিরটি ছিল সেটি পাণ্ডবরা নির্মাণ করেছিলেন৷ পুরাণের নানা দেবদেবীর মূর্তি দিয়ে সাজানো মন্দির৷ মন্দিরের দরজায় নন্দীর বড় একটি মূর্তি রয়েছে৷ কথিত আছে, নন্দী নাকি শিবের রক্ষণাবেক্ষণ করেন৷ মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে বিশেষ পুজোর জন্য বুকিং নেওয়া হয়৷ এখন অনেক স্থানই আর আগের মতো নেই৷ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর অনেক কিছু চেনা যায় না৷ শোনপ্রয়াগে একটা চেকপোস্ট রয়েছে, যেখানে যাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড পরীক্ষা করা হয়৷ কার্ড ছাড়া পুণ্যার্থী বা ভ্রমণার্থীদের কেদার যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না৷ এটা উত্তরাখণ্ড সরকারের নতুন নিয়ম৷ বিনায়ক চতুর্থী এবং দিওয়ালি খুব জাঁকজমক উৎসব হয় এখানে৷ শ্রাবণ মাসে রাখিপূর্ণিমার ঠিক আগে অন্নকূট মেলা হয়৷

কীভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে ট্রেনে হরিদ্বার চলে আসুন৷ দুন এক্সপ্রেস, কুম্ভ এক্সপ্রেস, উপাসনা এক্সপ্রেস-এ যেতে পারেন হরিদ্বার৷ হরিদ্বার থেকে গাড়ি নিয়ে সীতাপুর, সেখান থেকে রাত্রিবাস করে শোনপ্রয়াগ পৌঁছন৷ শোনপ্রয়াগে চেকপোস্ট আছে৷ এখানে মেডিকেল চেক-আপ হয়৷ এরপর চার কিলোমিটার দূরে গৌরীকুণ্ডর যাত্রা শুরু৷ এই পথে সরকারি শেয়ার জিপের ব্যবস্থা আছে৷ হেঁটেও গৌরীকুণ্ড পৌঁছানো যায়৷ গৌরীকুণ্ড থেকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দূরে ভীমবলি৷ এখানে মন্দাকিনীর ওপর একটা ব্রিজ তৈরি হয়েছে৷ ব্রিজ পেরিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার গেলে লিঞ্চোলি৷ লিঞ্চোলি থেকে কেদার পাঁচ কিলোমিটার৷ হরিদ্বার থেকে কেদার যাওয়ার বাসও পাবেন৷ অপূর্ব এই বাসযাত্রা৷ বিমানে হরিদ্বারের কাছে জলিগ্রাণ্ট এয়ারপোর্টে নেমে আধঘণ্টা সফরে ঋষিকেশ পৌঁছতে পারেন, তারপর যোশিমঠ৷ উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন স্থান থেকে হেলিকপ্টারেও কেদার পৌঁছানো যায়৷

কেদারনাথ যাত্রা সহজ কাজ নয়, এর জন্য কিছু পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিও দরকার। ট্র্যাক এবং রাস্তাঘাট ক্লান্তিকর এবং সময় সাপেক্ষ বলে যাত্রার জন্য কিছু প্রস্তুতিমূলক অনুশীলন শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিরাপদ দিকের জন্য সর্বদা আপনার হোটেল রুমগুলি অগ্রিম বুক করুন এবং কেদারনাথ যাত্রা প্যাকেজটি অভিজ্ঞ ট্যুর এজেন্টদের মাধ্যমে বুক করুন কারণ তারা জায়গাটি সম্পর্কে খুব ভাল জানেন এবং আপনার প্রয়োজনীয়তা এবং আপনাকে সাশ্রয়ী ভ্রমণ করতে সাহায্য করতে পারে।

ভ্রমণের সেরা সময়

কেদারনাথ বেড়ানোর সবচেয়ে ভাল সময় হল গ্রীষ্মকাল৷ সাইট সিয়িং-এর জন্য আদর্শ সময়৷ বর্ষাকালে সাধারণত কেউ যায় না কেদারে এবং শীতকালে প্রায় ছ’মাসের কাছাকাছি কেদারনাথ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়৷ স্থানীয় লোকজনও থাকে না ওইসময়৷

কোথায় থাকবেন

নিউ হিমাচল হাউজ, শিবালিক ভ্যালি রির্সট, গুপ্তকাশী চারধাম ক্যাম্প, কেদারনাথ ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউজ৷ -গাড়োয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগমের ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে৷

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ