নীলাচল ভ্রমণ-

‘নীল’কে বলা হয় বিষাদের রঙ। মন খারাপ কিংবা বিষন্নতার রঙ। মনোবিজ্ঞানীদের মতে নীল অবসাদের রঙ হলেও, প্রকৃতি কিন্তু বলে অন্য কথা। প্রকৃতিকে সবচেয়ে সুন্দর ও মনোরম করতে নীল রঙের জুড়ি নেই। যেখানে নীল সেখানেই প্রকৃতির অপূর্ব মায়া হাতছানি দেয়। যে রঙ বিষন্নতার বাহক, সে রঙ কিন্তু বিষন্নতা দূর করার কারণও হতে পারে। নীল আকাশের কাছাকাছি চলে গেলে আপনার মন ভালো হতে বাধ্য। কিন্তু আকশের এতো কাছাকাছি কিভাবে যাবেন সেটা নিয়েই ভাবছেন তো? তাহলে আজকের কনটেন্টটি আপনার জন্যই। নীল আকাশ কিংবা সাদা মেঘ এর সবকটিই খুঁজে পাবেন বাংলাদেশের অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর একটি স্থান নীলাচলে। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং দূর সমুদ্রের হাতছানি থেকে শুরু করে গাছপালা ও পাখ-পাখালির কিচিরমিচির সবই আছে নীলাচলে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬শ’ ফুট উঁচু এই জায়গায় বর্ষা, শরৎ কি হেমন্ত— তিন ঋতুতে ছোঁয়া যায় মেঘ। এছাড়া এখানে দাঁড়িয়ে দূর থেকে দেখা যায় জেলা শহর আর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদী। শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে টাইগার পাড়ার পাহাড় চূড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে আকর্ষণীয় এই পর্যটন কেন্দ্র। নীলাচল থেকে পুরো বান্দরবান শহরকে দেখা যায়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের এক ঝলকও দেখতে পাওয়া যায়। নীলাচলে একটি সূর্যদ্বয় জীবনের অর্থ বদলে দিতে পারে। জীবনকে ভালোবাসতে শেখাতে পারে নতুন করে। প্রতিদিনের কোলাহলময় জঞ্জালের জীবন থেকে একটু অবসর নিতে যেতে পারেন পাহাড়ের রাজ্যে বান্দরবান। ভোরে নীলাচল আপনাকে উপহার দিবে জীবনের অভাবনীয়, অকল্পনীয় এক সৌন্দর্যের সম্ভারেপূর্ণ ভোর। জীবনে অনেক সূর্যদ্বয়ের মুহূর্তের সাথে এই সূর্যদ্বয় স্রষ্টার এক অনন্য সৃষ্টি হিসেবে হৃদয়ে গেঁথে থাকবে। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ দিয়ে নীলাচল যাওয়ার সময় পথের দুপাশে চোখে পড়বে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। নীলাচল থেকে দেখতে পাবেন পাহাড়ের নিচে এবং চূড়ায় আপনার গা ছুঁয়ে মেঘ ভেসে যাচ্ছে। সাদা তুলোর মত মেঘের স্পর্শে আপনার শরীর মন সিক্ত হয়ে উঠবে। মেঘের এই লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে কখন যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যাবে টেরই পাবেন না।

নীলাচলকে বাংলার দার্জিলিং বললে বোঝা যায় এর সৌন্দর্য। ২০০৬ সালের পহেলা জানুয়ারি এই প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়। এ প্রকল্পে রয়েছে শুভ্রনীলা,‘ঝুলন্ত নীলা’, ‘নীহারিকা’ এবং ‘ভ্যালেন্টাইন পয়েন্ট’ নামে পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় বিশ্রামাগার। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সাজানো হয়েছে এ জায়গাগুলো। একটি থেকে আরেকটি একেবারেই আলাদা। একেক জায়গা থেকে সামনের পাহাড়ের দৃশ্যও একেক রকম। তবে মূল নীলাচলের সৌন্দর্য অনেক বেশি। এখান থেকে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় আরও ভালোভাবে। কমপ্লেক্সের মাঝে বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা এবং বসার ব্যবস্থা রয়েছে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সাজানো হয়েছে এ জায়গাগুলো। ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে সামনের পাহাড়ের দৃশ্যও ভিন্ন ভিন্ন রকম। নীলাচলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরো কাছ থেকে উপভোগ করার জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসনের তত্ববধায়নে এখানেই তৈরী করা হয়েছে নীলাচল পর্যটন কমপ্লেক্স।

কিভাবে যাবেন: 

ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি পরিবহন সার্ভিসের বাস ছেড়ে যায়। যেমন হানিফ, ইউনিক, শ্যামলী, এস আলম, ডলফিন ইত্যাদি যেকোনো একটি বাসে চড়ে যেতে পারেন বান্দরবান। এরপর বান্দরবান বাস স্টেশন থেকে নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র যেতে অটো রিকশার ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর চাঁদের গাড়ি বা জিপ গাড়ির ভাড়া পড়বে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকা। (ক্ষেত্র বিশেষে ভাড়া কম বেশী হতে পারে)

কোথায় থাকবেন: 

নীলাচলে থাকতে চাইলে নীলাচল স্কেপ রিসোর্টের তিনটি কটেজের একটি বেছে নিতে পারেন আপনার জন্য। প্রতিটি কটেজে দুইটি করে রুম আছে। প্রতি রুমের ভাড়া পড়বে ৩০০০ টাকা। এখানে থাকতে চাইলে আগে থেকেই যোগাযোগ করে বুকিং দিয়ে রাখবেন।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং]

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ