সোনাইছড়ি ভ্রমণ-

সোনাইছড়ি (Sonaichori) ট্রেইলটি সীতাকুণ্ডের মীরসরাই পাহাড় রেঞ্জের হাদি ফকিরহাট বাজার এলাকায় অবস্থিত। বন্য পাথুরে সোনাইছড়ি ট্রেইল বারৈয়াঢালা অভয়ারণ্যের আওতাভুক্ত। ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ট্রেইলটি মীরসরাইয়ের অন্যান্য ট্রেইলগুলো থেকে একদম আলাদা এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য দুর্গম পাহাড়-পর্বতের বন্ধুর পথ পেরিয়ে গহীনের সৌন্দর্য আস্বাদনই চরম জয়ের অনুভূতি। অসংখ্য সৌন্দর্যের এক উপাখ্যান চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলা। সৌন্দর্যে মোড়ানো এই উপজেলায় প্রকৃতির সবকিছুই আছে। আর  যত পাহাড়ি ট্রেইল আছে তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম, রহস্যময় এবং সুন্দর ট্রেইল হলো সোনাইছড়ি ট্রেইল। অসংখ্য সৌন্দর্যের এক উপাখ্যান চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলা। সৌন্দর্যে মোড়ানো এই উপজেলায় প্রকৃতির সবকিছুই আছে। পাহাড়, পর্বত, ঝর্ণা, ট্রেইল, ইকো পার্ক কি নেই এখানে! সীতাকুণ্ডের গহীন পাহাড়ে কি পরিমাণ রহস্য আর সৌন্দর্য যে লুকিয়ে আছে তা সেখানে না গেলে বিশ্বাস হবে না। এখানে যত পাহাড়ি ট্রেইল আছে তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম, রহস্যময় এবং সুন্দর ট্রেইল হলো সোনাইছড়ি ট্রেইল। ভয়ংকর সুন্দর এই ট্রেইলের প্রতি পদক্ষেপেই পাবেন ভয় জড়ানো এডভেঞ্চারের স্বাদ।

বর্ষায় এর ভয়াবহতা বেড়ে যায় অনেকগুন। বৈচিত্র্যময় এই ট্রেইল পুরো মাত্রায় বুনো এবং পাথুরে। সোনাইছড়ি ট্রেইলের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য এর পাথুরে পথ আর বোল্ডার। কখনো বড় বড় বোল্ডার আর দুই পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া, আবার কখনো খাড়া কোনো পথ বেয়ে উপরে উঠা। কোথাও স্বল্প আলো আবার কোথাও সম্পূর্ণ উন্মুক্ত আকাশ। এ যেন ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়। এই ট্রেইলটি নানা রহস্যে আবৃত। এই ট্রেইলে তিন্দুর বড় পাথরের মত প্রচুর বড় বড় পাথর দেখতে পাবেন। পাথুরে এই ট্রেইলে বড় বড় পাথরের ঢল আর পাহাড়ি সৌন্দর্য আসলেই মনোমুগ্ধকর। আপনাকে নিয়ে যাবে এক অজানা রাজ্যে। বর্ষায় পিচ্ছিল হয়ে যায় পাথরের বড় বড় বোল্ডারগুলো। পুরো পথটাই বড় বড় পাহাড়, গভীর গিরিখাত, উঁচু নিচু ছড়া আর গভীর কুমে ভরা এবং ট্রেইলের শেষ মাথায় মনোমুগ্ধকর সোনাইছড়ি ঝর্ণা পাবেন। সম্পূর্ণ পথটাই আপনাকে দেবে এক ভয় মিশ্রিত শিহরণ। বর্ষায় যাওয়া খুবই বিপজ্জনক। তাই আপনাকে যেতে হবে শুকনো মৌসুমে।

এখানে রয়েছে বাদুইজ্জা কুম। কুম বা সুড়ঙ্গ যাই বলা হউক না কেন এটি একটি সংকীর্ণ অথচ বিস্তৃত গভীর কুম, যার দুপাশের পাথুরে দেয়াল খাড়া ১০০-১৫০ ফুট উঁচু। ভেতরে গহীন অন্ধকার। ভেতরে হাজার হাজার বাঁদুরের ডানা ঝাপটানো আর কিচ কিচ চিৎকারে কানে তালা লাগার অবস্থা হয়। যা সৃষ্টি করে রেখেছে এক ভয়াবহ ভুতুড়ে আবহ। এই রোমাঞ্চ আর ভয়াবহতা এক অমোঘ আকর্ষণে টেনে নিয়ে যায় এডভেঞ্চার প্রেমীদের সোনাইছড়ি ট্রেইলে। এই ট্রেইলটা এতটাই দুর্গম যে ভরা বর্ষায় এটাতে যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কেবলমাত্র শীতকালেই এটাতে যাওয়া সম্ভব হয়, তাও কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়। খাড়া সব গিরিখাত, গভীর সব কুম আর পিচ্ছিল রাস্তা, বিশাল আকারের সব পাথর, বাদুরের উৎপাত, জোঁকের ভয়, সব মিলিয়ে এটা যে একটা বেশ কষ্টকর আর এডভেঞ্চারাস জায়গা, তাতে কোন সন্দেহ নেই।যাবার পথে পাবেন হাজারো রকম বিভিন্ন রকম উদ্ভিদ, শয়ে শয়ে আমলকী গাছ, যতটা মনে চায় পেড়ে নিয়ে ব্যাগে ঢোকান, কেউ মানা করবে না। আছে অনেক বাঁদর, স্থানীয়রা বলে লেঙ্গুর। ভাগ্য ভাল হলে তারা কোনরকম বাঁদরামি করবে না। কারণ এরকম ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেইলে কোন কারণে আপনি বেখেয়াল হয়ে গেলেও বিপদে পড়তে পারেন।

ট্রেইলের প্রায় শেষের দিকে আছে ঝর্ণা, আছে বিচিত্র সব ক্যাসকেড, আছে বাদুর-কুম বা বাদুইজ্যাকুম। প্রচুর পরিমাণে বাদুরের কারণে এরকম নাম। অত্যন্ত গভীর এই কুমে পাওয়া যায় বিভিন্ন জাতের মাছ। স্থানীয়রা সেসব শিকার করেন বিভিন্ন সময়।বলা হয় মীরসরাই রেঞ্জ এর সবচেয়ে কঠিন ট্রেইল এটাই। বর্ষা হোক আর শীত, সাথে অবশ্যই রাখতে হবে লাইফ জ্যাকেট। বিশেষ করে বর্ষায় রাস্তা হয়ে যায় অত্যন্ত পিচ্ছিল, যে কোন মুহূর্তে পানিতে পড়ে যাবার আশঙ্কা থেকেই যায়।

কীভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে উঠে হাদি ফকিরহাট বাজারে নেমে যেতে হবে। ট্রেনে চড়ে সীতাকুণ্ড নেমে হাদি ফকিরহাট আসা যায়। সেখান থেকে হাদি ফকিরহাট জামে মসজিদ এর গলি ধরে হেঁটে অথবা সিএনজি নিয়ে বড়-পাথর যেতে হবে। সেখান থেকেই ট্রেইল শুরু। হাদি ফকিরহাট গ্রাম শেষে পাহাড়ের শুরু থেকে সোনাই-ছড়ি ট্রেইল এর শেষ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে ২-৩ ঘণ্টা। এক দিনেই এই এলাকা ঘুরে দেখা সম্ভব।  

কোথায় থাকবেনঃ

এই ভ্রমণ একদিনের তাই থাকার দরকার পড়বে না তবু নিতান্তই রাতে থাকতে চাইলে মীরসরাই বা সীতাকুন্ডে নিন্মমানের হোটেল পাবেন। সীতাকুণ্ড বাজার গেলে সেখানে হোটেল সাইমুন আছে। ভালো হোটেলে থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম চলে যেতে হবে।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ