দুধসাগর জলপ্রপাত ভ্রমণ-

দুধসাগর জলপ্রপাত (Dudhsagar Waterfalls) পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত জলপ্রপাত গুলোর মধ্যে একটি। দুধসাগর নামটির অর্থ ‘দুধের সমুদ্র’। এ মহাকাব্যিক জলপ্রপাতটি পশ্চিম ভারতের কর্ণাটকের সীমান্ত গোয়াতে অবস্থিত। দুধসাগর প্রায় ১ হাজার ১৭ ফুট উঁচুতে এবং একশ ফুট প্রশস্ত। প্রায় ৩০ মিটার প্রস্থের সমগ্র মান্দভি বা মানদবী নদী ৩১০ মিটার উচ্চতা থেকে বিশাল জলরাশি নিয়ে এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। এই জলপ্রপাতটি “সি অফ মিল্ক” নামেও পরিচিত। উচ্চতায় এটি ভারতবর্ষের পঞ্চম। ভ্রমণকারীরা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে ট্র্যাকিং করে বা জিপে প্রায় ৪৫ মিনিটের ভেজা-পাথুরে পথ অতিক্রম করে ঝরনার গোড়ায় পৌঁছান। দুর্গম পথে গন্তব্যের এক কিলোমিটার আগেই জিপ চলাচলের অযোগ্য হতে পারে, তবে দুর্দান্ত জলপ্রপাতটিকে দেখার জন্যে আপনাকে সেটুকু পথ পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিতে হবে। সেখানে একটি প্রাকৃতিক শীতল পুল আছে যেখান থেকে ফেরার আগে সিক্ত হতে পারেন।

নাটকীয় দৃশ্যের কথা এলে দুধসাগর ঝরনার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিশ্বের যেকোনো জলপ্রপাতের টিকে থাকার সম্ভাবনা কম। সবুজ পর্বতের ওপারে আঙুলের মতো জলপ্রপাত কয়েকটি স্রোতে বিভক্ত। যেগুলো আবার একাধিক স্তরে বিভক্ত হয়ে ধোঁয়ার মতো একে অপরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে শ্যাওলা পাথরের ওপর দিয়ে নিচে প্রবাহিত হয়। এ দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে বাড়তি মাত্রা যুক্ত করছে ভগবান মহাবীর উপসনালয় এবং মোল্লেম জাতীয় উদ্যানের ছাউনিগুলো।

দুধসাগর জলপ্রপাত এর বৈশিষ্ট জলধারার স্বচ্ছতা। পাহাড়ি নদীর জল পাথরের উপর দিয়ে বসে আসার ফলে এর জল কর্দমাক্ত নয়, কিন্তু বারংবার পাথরে ধাক্কা খাবার ফলে ফেনিল। দেখে মনে হয় সত্যি যেন রাশি রাশি দুধ পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে। সেই অর্থে এই নামকরণ যথার্থ। সাগর ততটা নয়, যতটা দুধ। সত্যিই যেন উপুড় হয়ে পড়ে গেছে কোনও দুধের কলসী। অকৃপণ সেই পয়োধারা নেমে আসছে পাহাড়ি বনপথে।

এছড়া ব্যাঙ্গালোর থেকে যখন আপনি গোয়া যাবেন, তখন এ ঝরনার দেখা পাবেন। ধীরে ধীরে সেই ট্রেন পশ্চিমঘাট পর্বতের গা বেয়ে উঠবে এক মেঘমালাপুর। মাঝে মাঝে পশ্চিমঘাট পর্বতকে দেখে মনে হয় দার্জিলিংয়ের হারিয়ে যাওয়া ভাই। ঘনসবুজ গাছ যার দিকে তাকালেও নাকে আসে বৃষ্টির গন্ধ, তার মধ্যে খেলা করে মেঘ। মাঝে একবার হঠাৎ করে দেখা দেয় দুধসাগর ঝরনা। বিশাল সেই ঝরনা বর্ষাকালে বিরাট আকার ধারণ করে। অনেকেই বলেন, দুধসাগর ঝরনা না দেখলে জীবনটাই বৃথা!

প্রকৃতি উদার ও বিস্তৃত। মানুষের সঙ্গে তার পরম সম্পর্ক। প্রকৃতিকে জানার এবং নিজেক বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় ভ্রমণ। কিন্তু ভ্রমণ যদি হয় দুনিয়ার সেরা ঝরনাগুলোর একটিতে, তাহলে তো কথাই নেই! অনেকে ভারতের গোয়া সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণে যান। একটু প্ল্যান করে গেলেই কিন্তু ঘুরে আসতে পারেন দুধসাগর ঝরনা। ভারতের সবচেয়ে সুন্দর ঝরনা বলা হয় এটিকে।

ভ্রমণের সেরা সময়

দুধসাগর জলপ্রপাত দেখার উপযুক্ত সময় হলো বর্ষাকাল। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর।

কিভাবে যাবেন

দুধসাগর ঝর্ণা যাওয়ার জন্য অনেক উপায় আছে। পুনে বা বেলগাওঁ থেকে প্রতি শনিবার /রবিবার পূর্ণা এক্সপ্রেস যাওয়া যায়। এই ট্রেন রাতে পুনে থেকে ছাড়ে,৭-৩০ এ বেলগাওঁ ছাড়ে, সকাল ১১.০০ টায় দুধসাগর পৌঁছায়। দুধসাগরে কোন স্টেশন না থাকলেও সেখানে ভ্রমন পিপাসুদের জন্য ট্রেনটি থামে। এছাড়া কলকাতা থেকে সরাসরি গোয়া যেতে পারেন ১৮০৪৭ অমরাবতী এক্সপ্রেসে। ট্রেনটি হাওরা থেকে সোম,বৃহ,শনি রাত ১১.৩০ মিনিটে ছেড়ে ভাস্কো ডা গামা পৌঁছায় বেলা ৩.০৫ মিনিটে। গোয়া পৌঁছাতে ৩৫ ঘন্টা সময় লাগে কলকাতা থেকে।।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ