শিমলা ভ্রমণ-

শিমলা(Shimla) ভারতের উত্তরীয় রাজ্য, হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত শিমলা হল একটি খুবই জনপ্রিয় শৈল শহর। উত্তরে মান্ডি এবং কুল্লু জেলা, পূর্বে কিন্নুর, দক্ষিণ-পশ্চিমে উত্তরখান্ড এবং সোলান-সিমুর জেলা দ্বারা পরিবেষ্টিত। ইংরেজ শাসনামলে শিমলাকে গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সময়টা ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দ। ১৮৭১ সাল থেকে শিমলা পাঞ্জাবের রাজধানী ছিল, পরে ১৯৭১ সালে হিমাচলের রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হয়। মাত্র দুই লক্ষ লোকের আবাস এই সিমলায়, যা ভারতের সবচেয়ে কম জনসংখ্যার প্রাদেশিক রাজধানীও বটে। রাজনৈতিক পটভূমিতে শিমলার রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস।। ১৮১৭ সালে শিমলা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। এখানকার আবহাওয়া এবং প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হয়ে ব্রিটিশরা এখানে হিমালয় রেঞ্জের বনভূমির নিকটে শহরের পত্তন করে।

শিমলা ভ্রমণের আকর্ষণ

ইংরেজ শাসনামলে ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল শিমলা। ব্রিটিশরা তাদের নিজস্বতার ছাপ এই শৈল শহরটির উপর বেশ ভালোভাবেই ছেড়ে গেছে, যা এখনো পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য বেশ পছন্দের একটি গন্তব্য শিমলা। 

জাখু পাহাড় জাখু মন্দির

জাখু পাহাড় হল পাহাড় হল শিমলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং পারিপার্শ্বিক ভূ-প্রকৃতির এক অত্যাশ্চর্য নিদারুণ দৃ্শ্য পরিদর্শনেরও প্রস্তাব দেয়। পাহাড়ের চূড়ায় স্থিত জাখু মন্দির প্রভু হনুমানের প্রতি উৎসর্গীকৃত। স্থানীয় কিংবদন্তিদের অনুমান অনুযায়ী, সঞ্জীবনী ঔষধি বিদ্যমান এই পাহাড়টিকে তুলে নিয়ে আসার সময় প্রভু হনুমান এখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এর ফলস্বরূপ, এই স্থানটি একইভাবে ভক্ত এবং ভ্রমণকারীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ভ্যাইসরিগেল লজ

অবসারভেটারী পাহাড়ের উপর অবস্থিত ভ্যাইসরিগেল লজ ১৯৮৮  সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি ভারতের ভাইসরয়, লর্ড ডাফরিনের সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হত। বর্তমানে এই স্থানটি হল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ আ্যডভান্স স্টাডিজ। লজটি শুধুমাত্র ভারতে ব্রিটিশ শাসনের মধ্যে একটি অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে না, বরঞ্চ সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের এক অত্যাশ্চর্য দৃ্শ্য পরিদর্শনেরও প্রস্তাব দেয়।

সামার হিল

বাণিজ্যিক শিমলার ব্যস্ততা থেকে দূরে কোনও স্থান অন্বেষণকারী পর্যটকদের মধ্যে সামার হিল হল খুবই জনপ্রিয়। এর পথের চারপাশে ওক, সেডার, রডোডেনড্রন এবং আরোও অনেক গাছপালা বেড়ে উঠেছে। এখানে অবস্থিত ম্যানরভিল্যে ম্যানশন হল এই এলাকার সবচেয়ে বিখ্যাত ভবন, কারণ এটিই সেই জায়গা যেখানে মহাত্মা গান্ধী সিমলা ভ্রমণের সময় ছিলেন।

দ্য রিজ্

এটি একটি উন্মুক্ত স্থান, যেটি শিমলার সবচেয়ে বেশি কার্যকলাপ কেন্দ্র রূপে পরিচিত। দ্য রিজ্ বা শৈলশ্রেণীতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক আছে এবং বেশ কিছু কার্যক্রম আয়োজনের পাশাপাশি এখান থেকে পার্শ্ববর্তী পর্বতগুলির এক সুন্দর দৃশ্য পরির্শনেরও প্রস্তাব দেয়। শহরের এই অংশটি সিমলার জনজীবনের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটির নীচের জলাশয় শহরের একটি প্রধান অংশে জল সরবরাহের দায়ভারে রয়েছে।

মল্ রোড

শিমলার বিপূল সংখ্যক ল্যান্ডমার্ক এখানে অবস্থিত হওয়ায়, মল রোড পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও এখানে বেশ কিছু রেস্তোঁরা, ক্লাব, বার ও দোকান অবস্থিত হওয়ায় এটি শিমলার বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসাবেও বিবেচিত হয়। যেকোনও ক্রেতাদের জন্য মল রোড স্বর্গোদ্যানের ন্যায়।

ক্রাইস্ট চার্চ

এটি ১৮৪৪ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি উত্তর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম গির্জা। ক্রাইস্ট চার্চটি রিজ্-এ অবস্থিত এবং এটি তার এলিজাবেথীয় স্থাপত্য ও তার নকশায়িত কাঁচের জানলার জন্য পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও গির্জাটিতে একটি পাইপ অর্গান রয়েছে, যেটি দেশের সবচেয়ে এক অন্যতম বৃহৎ হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি তাদের জন্যই আদর্শ যারা আধ্যাত্মিকতার সাথে সাথে ইতিহাসের এক নিদর্শনকে খুঁজে চলেছে।

সেন্ট মাইকেল চার্চ ১৮৫০ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটা শিমলার প্রথম ক্যাথলিক গির্জা। এটিতে পাঁচটি মার্বেলের বেদী আছে যেগুলি ১৮৫৫ সালে ইতালি থেকে আনা হয়েছিল। এছাড়াও গির্জাটিতে সুন্দর নকশায়িত কাঁচের জানলা রয়েছে, যেগুলি চোখদুটিকে উচ্ছাসিত করে তোলে।

গেইটি থিয়েটার

এই থিয়েটার বা নাট্যমঞ্চটি, শিমলায় ব্রিটিশ বাসিন্দাদের বিনোদনের সুযোগ প্রদানের জন্য ১৮৮৭ সালে নির্মিত হয়েছিল। ভবনটির নব্য-গোথিক স্থাপত্য লালিত নেত্রের জন্য এক সুন্দর দৃশ্য। এখানে একটি প্রদর্শনী সভা, একটি আ্যম্ফিথিয়েটার ও অন্যান্য বহু সুযোগ-সুবিধা সহ একটি শৈল্পিক গ্যালারি রয়েছে। যেকোনও সূক্ষ শিল্পপ্রেমীদের জন্য এটি একটি অবশ্যই দর্শনীয় স্থান।

কালকা-শিমলা রেলওয়ে

টয় ট্রেন যা ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শিমলাকে, কালকা শহরটির সঙ্গে সংযুক্ত রেখেছে এবং শহরটিতে পৌঁছানোর জন্য সবচেয়ে অন্যতম জনপ্রিয় রাস্তা তবে এটি খুবই ধীর। তবে, পারিপার্শ্বিক দৃশ্য পরিদর্শনের জন্য যে কারোও কাছে এই ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্র্যাকটি খুবই সুন্দর। রাস্তা বরাবর, ভ্রমণার্থীরা চারপাশের অঞ্চলের এক অত্যাশ্চর্য দৃ্শ্য পরিদর্শন করতে পায়। রেলটি ১০৩টি সুড়ঙ্গপথ ও ৮০৬ টি সেতুর মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করে।

তত্তপানি

শিমলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তত্তপানি-তে অবস্থিত সালফিউরাস উষ্ণ প্রসবণ অনেকের মতে ভেষজ উপকারিতা হিসাবে বিবেচিত হয় এবং সেই কারণেই চিকিৎসক পর্যটকদের জন্য তত্তপানি একটি খুবই জনপ্রিয় স্থান। উষ্ণ প্রসবণের পাশাপাশি, শতদ্রু নদীর ঠান্ডা জল রিভার রাফটিং-এর সুযোগ প্রদান করে।

কোটগড়

কোটগড়, শিমলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, প্রাচীন হিন্দুস্তান-তিব্বত সড়কের উপর অবস্থিত এবং এটি আপেল বাগানের জন্যও প্রসিদ্ধ। এটি এমন একটি স্থান যেখানে ১৯১৪ সালে হিমাচল প্রদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ফলের বাগান স্থাপিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে, কোটগড় প্রকৃতপক্ষে হিমাচল প্রদেশের এক অন্যতম প্রধান আপেল রপ্তানীকারক স্থান হয়ে ওঠে।

শিমলা কালীবাড়ি

ম্যাল থেকে চড়াই পথে বানটনি পাহাড়ে অবস্থিত এই মন্দির পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। ১৮৪৫ সালে তৈরি এই মন্দিরে বাঙালি পর্যটকদের বেশি দেখা যায়। মা কালী বা শ্যামলা দেবীর নামানুসারে এই শিমলা শহরের নামকরণ করা হয়েছে।

সিমলা জলঅববাহিকা অভয়ারণ্য

১০.২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই অভয়ারণ্যটি সরলবর্গীয় অরণ্য, খাড়াই ভূখণ্ড এবং ক্ষু্দ্র প্রবাহের গৃহস্থল। সিমলার ১২ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এই স্থানটি হল বাদামী ভালুক, কৃষ্ণকায় হরিণ, ভারতীয় লাল শেয়াল ও ডোরা-কাটা হায়নার নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

শহরে কোথায় কোথায় ঘুরবেন                      

শহরের মাঝে খোলা জায়গা দিয়ে দেখা যায় পাহাড়শ্রেনী। সকাল-সাঁঝে পায়ে পায়ে বেড়ানোর মনোরম জায়গা শিমলা। এর শেষ প্রান্তে ১৭৫ বছর আগে গড়া ‘নিও-গথিক’ স্থাপত্যশৈলীর নজির ‘ক্রাইস্ট চার্চ’ আর এরই লাগোয়া ‘নিও টিউডর’ স্থাপত্যশৈলীর নজির লাইব্রেরি ভবনে অবশ্যই যাবেন।

আবহাওয়া

শীতকালে হিমাঙ্কের নীচে চলে গেলেও, গরমকালে এখানে বেশ মনোরম আবহাওয়া থাকে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে হবে। এরপর কলকাতা থেকে ট্রেনে যেতে হবে কালকা। কলকাতা থেকে কালকা যাওয়ার ট্রেন হলো কালকা মেইল। হাওরা থেকে রাত ৭.৪০ এ ছেড়ে গিয়ে তৃতীয়দিন সকাল ৪.৩০ এ পৌঁছে। এছাড়া বাসে কলকাতা থেকে দিল্লী হয়ে বাইরোডে শিমলা যাওয়া যায়। HPTDC এর বাস ভাড়া এসি ভলভো ৯০০ রুপি নন-এসি ভলভো ৫৫০ রুপি।

কোথায় খাবেন

এখানে বাঙালির প্রথম পছন্দ শিমলা কালীবাড়ি।

কোথায় থাকবেন

শিমলার মল রোড,জাখু টেম্পলের কাছে থাকার জন্য বেশকিছু মানের হোটেল আছে। রাজ হোম স্টে, থিরাম শিমলা, নিউ সান্সর মল রোড, মেহদুদিয়া গেস্ট হাউজ, হোটেল ভাটিকা,ইত্যাদি। এসব হোটেলে এবং গেস্ট হাউজে একরাতের জন্য ৫৫০-১০০০ টাকা খরচ হবে।।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ