পান্তুমাই ঝর্ণা ভ্রমণ-
পান্তুমাই (Panthumai) বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম। পান্তুমাই এই নামের সঙ্গে নয়নাভিরাম, নান্দনিক, অপূর্ব, হৃদয়স্পর্শী সবগুলো শব্দই লাগালেও এর সৌন্দর্যের বিশ্লেষণ শেষ হবেনা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মৃদুমন্দ বাতাস, পাহাড় আর ঝর্ণা আপনাকে মুগ্ধ করবে। পান্তুমাই সিলেট জেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের একটি গ্রাম। ভারত সীমান্তে মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে এর অবস্থান। বাংলাদেশেই যে এত চমৎকার একটি গ্রাম আছে তা অনেকেরই অজানা । রূপের শহর, রূপের নগরী বলে অনেক শহরেরই খেতাব আছে । কিন্তু বাংলাদেশের মতো ছোট একটি দেশের ছোট্ট একটি অনিন্দ্য সুন্দর গ্রামের কোন খেতাব নেই। ভ্রমণপ্রিয় মানুষের অন্যতম পছন্দের জায়গা ‘পান্তুমাই’। পথের শেষ নেই, পাহাড় ঘেঁষা আঁকাবাঁকা রাস্তাই পান্তুমাই গ্রামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে সহজেই হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির মাঝে। গ্রামের শেষে পাহাড়ি গুহা থেকে হরিণীর মতোই লীলায়িত উচ্ছল ভঙ্গিমায় ছুটে চলেছে সঠিক নাম না জানা ঝরনার জলরাশি। ছিটকে পড়ে মেলে ধরেছে তার রূপের মাধুরী ।
বাংলাদেশের কোল ঘেঁষে প্রতিবেশী ভারতের মেঘালয়ের গহীন অরণ্যের কোলে বাংলাদেশের বুকে নেমে এসেছে অপরূপ এক ঝর্ণাধারা, যার কুল কুল ধ্বনি মনকে দুলিয়ে দিয়ে যায় । ঝর্ণাটির স্থানীয় নাম ফাটাছড়ির ঝর্ণা, কেউ কেউ একে ডাকেন বড়হিল ঝরনা বলে । ঝর্ণাটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মধ্যে পড়লেও পিয়াইন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে উপভোগ করা যায় ঝর্ণাটির অপূর্ব রূপ সুধা । বড় বড় পাথরের গা বেয়ে চলে আসা ঝর্ণাটি অনেকটা উঁচু থেকে দেখতে ইংরেজি এস অক্ষরের মতো। ঝর্ণার জলধারা দেখলে মনে হবে সবুজের বুকে কেউ হয়তো বিছিয়ে রেখেছে সাদা শাড়ি। পাশেই বিএসএফের ক্যাম্প, বরইগাছের সারি দিয়ে এখানে দুই দেশের সীমানা ভাগ করা । এখানে বিজিবির কোনো চৌকি নেই, তাই সীমানার কাছাকাছি যাওয়া বিপদজনক । কাছাকাছি না গিয়েও ঝর্ণাটির মোহনীয় সৌন্দর্য্য রস উপভোগ করতে পারবেন প্রাণভরে। অনেক আগে ঝর্ণার কাছে যাওয়া যেত, ঝর্ণার পানিতে নেমে গোসলও করা যেত, বিএসএফ এর ক্যাম্প ছিল না সেই সময়। কিন্তু বাঙালী আর খাসিয়া মারামারি হওয়ার কারণে এখন ঝর্ণার কাছাকাছি যাওয়া নিষেধ। তবে নিরাপদ দূরত্ব রেখে এর অপরূপ সৌন্দর্য্য অবলোকন করা যাবে । ঝর্না ভারতের হলেও পানি এসে পড়ছে আমাদের দেশে, রূপ নিয়েছে নদীর । শীতল আর কাঁচের মত পরিস্কার পানি সৃষ্টি করেছে একখণ্ড স্বর্গ টুকরো।
পান্তুমাই দুভাবে যাওয়া যায় । সুবিধাজনক হচ্ছে জাফলং রুট । জাফলং মামার বাজার হয়ে পিয়াইন নদী নৌকায় পার হয়ে যেতে হয় খাসিয়াদের বাজার সংগ্রাম পুঞ্জিতে। এই বাজার থেকে পান্তুমাই প্রায় ১০ কিলোমিটার । সংগ্রাম পুঞ্জি থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে হাজিপুর বাজার। সে পর্যন্তই যান বাহন চলে। পরের পথ টুকু হাঁটতে হবে । যান বাহন বলতে মোটরসাইকেল আর শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ভটভটি। সংগ্রামপুঞ্জির পরে নকশিয়ার পুঞ্জি, পুরো অঞ্চলটিই ঘন সুপারি বাগান আর পান গাছে ভরপুর । সরুপথের দু ধারে খাসিয়াদের সুন্দর বাড়ি ঘর।
পাহাড়ি স্বচ্ছ জলের ছড়া পাড়ি দিয়ে গাঁয়ের মেঠো পথ, বাঁশ বাগান, হাঁটু জলের নদী পার হয়ে প্রতাপ্পুর গ্রাম । এর পরের গ্রাম পান্তুমাই। প্রতাপ্পুর গ্রাম পাড়ি দিয়ে সামনে উঁচু পাহাড় ঘেঁষে বিশালাকার এক ফুটবল মাঠ পাওয়া যায়। মাঠ পেরিয়ে কিছুটা জঙ্গল। জঙ্গলের কিছুটা এগুলেই শোনা যায় জল গড়িয়ে পড়ার কল কল শব্দ । জঙ্গলের মাঝখানে উঁকি দিচ্ছে রূপবতী ঝরনা পান্তুমাই।
যা যা দেখবেন
পাহাড় ঘেঁষা আঁকাবাঁকা রাস্তা। পাহাড়ি গুহা থেকে হরিণীর মতোই লীলায়িত উচ্ছল ভঙ্গিমায় চলা ঝরনার জলরাশি। গাঁয়ের মেঠো পথ, বাঁশ বাগান, হাঁটু জলের নদী পার হয়ে প্রতাপ্পুর গ্রাম। এর পরের গ্রাম পান্তুমাই।
যাতায়াত ব্যবস্থা
ঢাকা থেকে সিলেট গিয়ে আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি ট্যাক্সি নিয়ে গোয়াইনঘাট বাজারে থানা সংলগ্ন বাজারে গিয়ে ট্যাক্সির সাহায্যে এখানে আসা যায়। পান্তুমাইয়ে যাওয়া যায় দুটি রাস্তায়। একটি হচ্ছে গোয়াইনঘাটের সালুটিকর হয়ে আর অন্যটি জাফলং রুট হয়ে।
কিভাবে যাবেন
সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি নিয়ে যাবেন গোয়াইনঘাট থানা সংলগ্ন বাজারে । ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা । সেখান থেকে আরেকটি সিএনজি-তে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পান্তুমাই যেতে ভাড়া লাগে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
কোথায় খাবেন
পান্তুমাই কোনো খাবার হোটেল বা থাকার ব্যবস্হা নেই সুতরাং শুকনা খাবার অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে।
কোথায় থাকবেন
পান্তুমাই রাতে থাকতে চাইলে স্থানীয়দের সহায়তা নিয়ে থাকতে পারবেন । এক্ষেত্রে আপনার ২০০-৩০০ টাকা ব্যয় হতে পারে।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং]
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)