কালিম্পং ভ্রমণ-

কালিম্পং (Kalimpong) দার্জিলিং থেকে ৫০ কিলোমিটার পূর্বে  হিমালয়ের কোল ঘেঁষা শান্ত সুন্দর ও ঠান্ডা পরিবেশের ছোট্ট শহর কালিম্পং। এটি ১২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। একসময় এই শহর দিয়েই ভারত-তিব্বতের মধ্যে বাণিজ্য চলত। কালিম্পং-এর চমৎকার আবহাওয়া এবং এর কাছাকাছি অঞ্চলে আরও বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র থাকায় ভ্রমণ পিপাসু মানুষের অন্যতম ঠিকানা হয়ে উঠেছে এই শহর। কালিম্পং-এর ফুল চাষ উল্লেখযোগ্য। নানা ধরনের অর্কিডের জন্য এর ফুলের বাজারও বাণিজ্যিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শহরের অর্থনীতিতে নার্সারিগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এই শহর বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম কেন্দ্র। ঝাং ঢক পালরি ফোডাং নামে বিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দিরটি অন্যতম দর্শনীয় বস্তু। কালিম্পং থেকে মাত্র ৬ কিমি দূরে ডেলো পাহাড়ের শীর্ষ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা রূপটি ভারী সুন্দর।

কালিম্পং শব্দের মধ্যেই এর ইতিহাস লুকিয়ে আছে। এই শহরে এক সময় ভূটানের রাজ্যপালের কেন্দ্রীয় দফতর ছিল। ‘কালিম’ শব্দের অর্থ ‘রাজার মন্ত্রী’ এবং ‘পং’ শব্দের অর্থ ‘ক্ষমতার কেন্দ্র’। শৈবালদামের ওপর পা ফেলে সোনালি ওক গাছের ঘন অরণ্যের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া কালিম্পং-এর অন্যতম আকর্ষণ। প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করতেই পর্যটকরা কালিম্পং-এ যান।

কালিম্পং এর দর্শনীয় স্থান

গৌরিপুর হাউস

বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদচিহ্ন ধারন করা আছে গৌরিপুর হাউসে। চিত্রাভানু এটির স্থানীয় নাম। মংপু যাওয়া আসার পখে রবিন্দ্রনাথ প্রায় এখানে অবকাশ যাপন করতেন। পাহাড়ি শান্ত পরিবেশ অবস্থিত বাড়িটি খুবই অস্বধারণ।

ডেলো পার্ক

প্রকৃতির নিদারুন পরিবেশে পাহাড়ের এক অপরূপ সৌন্দর্যবর্ণিত জায়গায় এর অবস্থান। সুন্দর পরিপাটি করে পাথড়ের আস্তরনে বেস্টিত করা ডেলো পার্কের মূল ভবনটি। সামনে খোলা মাঠ ও চারপাশে ছোট বড় অনেক বেঞ্চ, চমৎকার ও বাহারি রঙ্গের ফুলগাছের সমারোহ পার্কের ভেতরের পরিবেশকে আরো মনোমুগ্ধ করে তুলেছে। একপাশে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট। দুর পাহাড়ের সবুজ ঘেষে যেন মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে স্বেত শুভ্র আরেকটি পাহাড়, হ্যা এটাই সেই কাঞ্চনজঙ্ঘা। সেখান থেকেই নিচের দিকে তাকালে দেখা যাবে, পাহাড়ের ফাকে ফাকে ছোট ছোট বিভিন্ন রঙ্গের বাড়ি ঘর, মনে হবে যেন প্রশান্তি এক টুকরো অংশ এখানেই। পার্কে চাইলে গ্রুপেও আসা যায়, ক্যাম্পিং অথবা কোন পিকনিকের আয়োজনে এখানে করা যাবে।

হনুমান মন্দির

ডেলো পার্ক থেকে একটু নিচে নেমে এলেই মিলবে হনুমান মন্দির আরেকটা ছোট্ট পাহাড়ের চূড়ায় মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে গণেশ প্রতিমা। দূর থেকে অনেক সুন্দর লাগে। রাস্তা থেকে কিছু উপরে উঠতে হবে সিঁড়ি বেয়ে, খুব পরিষ্কার সাজানো মন্দির। হনুমান মন্দির থেকে বের হলেই চোঁখে পরকে ছোট্ট একটা মনেস্ট্রী, চমৎকার রঙ্গিন মনেস্ট্রীতে ফটোগ্রাফী বেশ দারুন হয়। এবার আবার বেক করবো কালিম্পং শহরের দিকে।

ক্যাকটাস গার্ডেন

শহর থেকে খানিকটা দূর যেতে হবে ক্যাকটাস গার্ডেনের উদ্দেশ্য। ছোট্ট জনবসতির ভেতর দিয়ে পৌছালাম ক্যাকটাস গার্ডেনে। সাজানো পরিপাটি বড় বড় ৫ / ৬ টা ঘরে সাজানো ক্যাকটাসগুলো। অদ্ভুদ আকারের এই গাছগুলো দেখে মনে গেল কিছু মুভির কথা, যেসব মুভিতে মানুষখেকো গাছে এবং ভৌতিক কিছু গাছের বর্ণনা দেখানো আছে, সেই ধরনের গাছগুলো এখানে। অনেক গাছগুলোই প্রায় আমার থেকেও অনেক বড়। আবার কিছু কিছু ক্যাকটাসের অসাধারনে রঙ্গ বেরঙ্গের ফুল সত্যি মুগ্ধ করে ফেলেছে। এই গার্ডেটনটি এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাকটাস গার্ডেন বলা হয়। গার্ডেনে ক্যাকটাস ছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। গার্ডেটের একপান্তে রয়েছে ভিউ পয়েন্ট, এখান থেকে দেখা যায় সবুজ পাহাড়ের ববুকে ভেসে আছে পুরো কালিম্পং শহর।

মনেস্ট্রি ভ্রমণ

কালিম্পং থেকে ডেলো পার্ক যেতেই সাকা মনেস্ট্রি চোঁখে পরবে.. চমৎকার সুন্দর এই মনেট্রি মুলত একটা স্কুল। বৌদ্দ ধর্মের বাচ্চাদের স্কুল এটা। এবং সেখানকার নমকরা একটা বৌদ্দ স্কুল। এখানে গেলে দেখতে পারবেন, স্কুলের বিভিন্ন কার্যকলাপ। বাচ্চাদের সকালে প্যারেট করানো, বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানোর ধরন।

জনপ্রিয় আরেক মনেট্রি হল দূরপিন

কারিম্পং এ অনেকগুলো মনেস্ট্রি আছে, তারমধ্যে দূরপিন মনেস্ট্রি। পাহাড়ের চূড়ায় মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে ৪ তলা এই মনেট্রিটি। বাহারি রঙ্গে এবং দারুন সব সৌন্দর্যবর্ধন ছোট বৃক্ষে সাজানো এই মনেট্রি। এখানে ছোট বড় মিলিয়ে ২৫-৩০ টি স্মৃতিস্তম্ভ রেয়েছে। পার্কের মত সজ্জিত পুরো মনেস্ট্রিটি। প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন এখানে। পাশেই আছে সুবিশাল মাঠ। স্থানীয় কালচারাল অনুষ্ঠান এবং স্কুলের যাবতীয় খেলাধুলা পরিচালনার কর্যক্রম হয় এই মাঠটিতে। মনেট্রির আরেক পাশে রয়েছে দূরপিন ভিউ পয়েন্ট।

যেখান থেকে পুরো কালিম্পং এর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। দূরপিন দেখা শেষ কালিম্পং এর দিকে ফিরে আসার সময় দেখা মিলবে কালিম্পং আর্মি ক্যান্টনমেন্ট। বেশ চমৎকার দৃষ্টিনন্দন এড়িয়া। তবে সেখানে ছবি বা ভিডিও ধারনের নিষেধ আছে। শুধু ঘুরে দেখতে পারবেন। আরেকটু এগিয়ে দেখা মিলবে, সবুজ অরণ্যঘেরা পাহাড়ে মাঝে এক নিদারুন সৌন্দর্যমন্ডিত আর্মি গলফ মাঠ। পাহাড়ি ঢালের সাথে তাল মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাঠটি। মাঠের অপর প্রান্তেই রয়েছে মরগান হাউস। ব্রিটিশ সাশনামলে তৈরিকৃত এই ভবনটিতে বর্তমানে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ আছে। এটি অনেক পুরানো একটি বাংলো।

লোলেগ্রাম

ছোট্ট শান্ত একটি গ্রাম হল লোলেগ্রাম। সবুজ পাহাড়ি প্রকৃতি লোলেগ্রামকে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছে। কালিম্পং ও লাভা থেকে পাইনের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে লোলেগ্রাম যেতে এক থেকে দের ঘন্টা লাগে। কালিম্পং এ আরো অনেক কিছু আছে দেখার মতন, লেপচা মিউজিয়াম টসোঙ্গা আশ্রম রিশপ রিম্বিক ম্যাক ফারলেন চার্চ রোমান ক্যাথলিক চার্চ তিস্তা বাজার কালিম্পং আর্ট এন্ড ক্রাফ্ট সেন্টার ইত্যাদি। 

ভ্রমণের সময়

ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা এবং জুলাইয়ের বর্ষাকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় পৌঁছে যাওয়াই যায় কালিম্পংয়ে। একেক মরশুমে এই এলাকার সৌন্দর্য্য একেক রকম হয়ে থাকে।

কীভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে ট্রেন, বাস বা বিমানে প্রথমে পৌঁছতে হবে শিলিগুড়িতে। সেখান থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে পৌঁছে যাওয়া যায় কালিম্পং। যাত্রাপথের সময় তিন ঘণ্টার বেশি দীর্ঘ হওয়া উচিত নয়। তবে বর্ষাকালে শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পংয়ে পৌঁছতে আরও একটি ঘণ্টা বেশি সময় লাগতে পারে।

কোথায় থাকবেন

কালিম্পংয়ে থাকার জন্য আপার কার্ট রোডে অনেক হোটেল আছে। রিংকিংপং রোডে কিছু হোটেল মিলবে। এছাড়াও অনেক লজ/ কটেজ আছে থাকার জন্য।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ