সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ভ্রমণ গাইড-

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা (Songrampunji Waterfall) স্থানীয় নাম মায়াবী ঝর্ণা। ঘন সবুজ গাছপালা আর পাথুরে পাহাড়ের এর মাঝে বেড়ে ওঠা এক সৌন্দর্যের নাম মায়াবী ঝর্না। বিশেষ করে বর্ষায় এটি সাজে নবতর রূপে আর মাধুর্যে। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং অনেক দিন ধরেই পর্যটকের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। প্রতিদিন হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমী ছুটে আসেন সীমান্তের ওপারের পাহাড় থেকে নেমে আসা পিয়াইন নদীতে অবগাহন করতে। জাফলংয়ের প্রধান আকর্ষণ এখন যেন স্থানান্তরিত হয়েছে এই ঝর্ণায়।

জাফলং এর জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের রাস্তার দূরত্বে অবস্থিত এই সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা। জিরো পয়েন্ট থেকেই দেখা যায় সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা। সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে স্বচ্ছ জলরাশি। চারদিকে সবুজের মাঝে পাথরের বুকে কলকল শব্দে গড়িয়ে নামছে এই ধারা। দুই দেশের সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান হলেও সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণায় যেতে নেই কোনো বাধা। হেঁটেই তপ্ত বালু পার হয়ে আপনাকে পৌঁছাতে হবে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা। কাছে গিয়ে নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না এখানকার সৌন্দর্য। পাহাড়ের নিকটে গেলেই  এর আসল সৌন্দর্য সম্মুখে আসে৷ সবুজ গাছপালা আর পাথর ঢাকা এই ঝর্ণা৷ এই জলপ্রপাত কয়েকটি ধাপবিশিষ্ট। পাহাড় বেয়ে নেমে আসা জলপ্রপাতটির পানির গর্জন ভেসে আসে অনেক দূর থেকেই। আর একটু এগোলেই চোখে পড়ে গাছ, পাথর আর পানির অপূর্ব মেলবন্ধন। তাছাড়া পাহাড়ের গা-বেয়ে বেশ কয়েকটি ধারায় নেমে আসে স্বচ্ছ পানির স্রোত। একসময় সবুজ ঝোপের ভেতর দিয়ে, আবার কখনো উন্মুক্ত পাথরের বুক চিরে নেমে আসে ধারা। এর বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে এবং প্রায় সবগুলোই বিপজ্জনক এবং পিচ্ছিল৷ প্রথম দ্বিতীয় ধাপ পেরিয়ে তৃতীয় ধাপে উঠলেই দেখা পাওয়া যায় একটি সুড়ঙ্গের। এই সুড়ঙ্গের উৎস কিংবা ব্যাপ্তি সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা পাওয়া যায় না। অল্প কিছু দূর যাওয়ার পরই আর প্রবেশের উপযুক্ত থাকে না সুড়ঙ্গটি৷ এখানে জল দুভাগ হয়ে এক ভাগ সুড়ঙ্গের দিকে আরেকভাগ নিচে নামতে থাকে। পাহাড়ের গা বেয়ে কয়েকটি ধারায় নেমে আসে ঝর্ণার দুধ সাধা পানি৷ প্রথমে বড় পাথর দিয়ে আলাদা দুভাগ হয়ে যায় ঝর্ণার ধারা, পরে ৪ ভাগ এবং নিচে নামতে নামতে আরো বেশ কয়েকটি ধারা দিয়ে জল বইতে থাকে। পাথর এবং গাছপালা ঝর্ণাটিকে দিয়েছে আলাদা সৌন্দর্য। কখনো দেখবেন সবুজ গাছগাছালির মাঝ দিয়ে বেয়ে আসছে পানির স্রোত, কখনো বা পাথরের মাঝ দিয়ে৷ ঝর্ণার পানি পড়ে নিচে পুকুরের মতো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে৷ শীতল এই অমিয় ধারায় নিজেকে পবিত্র করে নিতে পারেন সহজেই৷ সব মিলিয়ে প্রকৃতির মায়াবী এক রূপ; এ জন্যই হয়তো নাম হয়েছে মায়াবী ঝর্ণা।

উপযুক্ত সময়ঃ

বর্ষাকাল ঝর্ণায় ঘোরার উপযুক্ত সময়। বর্ষাকালে প্রকৃতিপ্রেমীদের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে এই জলপ্রপাতটি। তবে এখনো মাধবকুণ্ড বা বিছনাকান্দির মতো পরিচিতি না পাওয়ায় অনেক পর্যটক এখানে না ঘুরেই চলে যান।  

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাসে কিংবা ট্রেনে সিলেট পৌঁছানো যায়। এছাড়া দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে পৌছাতে হবে সিলেটে। সিলেট থেকে লোকাল বাস কিংবা লেগুনায় করে জাফলং বাজারে পৌছাতে হবে ৷ জাফলং বাজার থেকে জাফলং জিরো পয়েন্টে কয়েক মিনিট হেঁটেই পৌছাতে পারবেন৷ জিরো পয়েন্ট পার হয়ে সোজা মিনিট বিশেক হাঁটলে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা দেখতে পাবেন। এই পথ শর্টকাট।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং]

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ