শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ-

দক্ষিণ এশিয়ার বৈচিত্রময় ও অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka)। সরকারি নাম গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ১৯৭২ সালের আগে এই দ্বীপ সিলন নামেও পরিচিত ছিল। এর প্রশাসনিক রাজধানীর নাম শ্রী জয়াবর্ধেনেপুরা কোট্টে। এর প্রধান শহর কলম্বো।। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংবলিত সমুদ্র সৈকত, ভূ-দৃশ্য সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শ্রীলঙ্কাকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

ভারতের দক্ষিণ উপকূল হতে ৩১ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। প্রাচীনকাল থেকেই শ্রীলঙ্কা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। সিংহলি সম্প্রদায় এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। শ্রীলঙ্কা চা, কফি, নারিকেল, রাবার উৎপাদন ও রফতানিতে বিখ্যাত। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংবলিত সমুদ্রসৈকত, ভূদৃশ্য তদুপরী সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শ্রীলঙ্কাকে সারা পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পৃথিবীতে শ্রীলংকা একমাত্র অমুসলিম দেশ দেখানে রেডিও ও টেলিভিশনে পাঁচ ওয়াক্ত আযান দেয়া হয়।

রাজধানী কলোম্বোর একটু বাইরেই তাদের অন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। বন্দরনাইকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পরেই আসলে শ্রীলঙ্কা ভ্রমন শুরু হয়ে যায়। কলম্বো হলো শ্রীলঙ্কার রাজধানী এবং সবচাইতে বড় শহর। এর লোক সংখ্যা আনুমানিক ১ মিলিয়ন। শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করছেন এমন পর্যটকদের কাছে পশ্চিমের উপকুলটা বেশী জনপ্রিয়। পশ্চিম উপকুলেই দেশের সবচাইতে বেশি পরিমান হোটেল এবং রিসোর্ট আছে।

দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে

নেগম্ব,বেরুওলা,অনুরাধাপুর, ক্যান্ডি, পোলোন্নারুভা,এডামস পিক, সিগরিয়া রক ,শ্রীলঙ্কার জাতীয় জাদুঘর।। আপনি যদি ভিড় এড়িয়ে শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, সেক্ষেত্রে কলোম্বোর উত্তর দিকটা আপনার জন্য বেশী ভাল হবে। কাল্পিটিয়া হ্রদ এবং উইল্পাত্তু ন্যাশনাল পার্ক এর সৌন্দর্য আর বন্যপ্রাণীর সমারোহ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

সিগিরিয়া

শ্রীলঙ্কায় যারা বেড়াতে যান তাদের পছন্দের পর্যটন স্পট এর মধ্যে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃত সিগিরিয়া সবার শীর্ষে। সিগিরিয়া দুর্গের স্থাপত্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এটি একটি বর্গাকৃতির মডিউলের উপর ডিজাইন করা।।এখানে লাল পাথরের দুর্গ এবং প্রাচীন প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ আছে যা বাগান, জলাশয় ও অন্যান্য প্রাচীন কাঠামো দিয়ে ঘেরা।।তাছাড়া পুরো জায়গাটি প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে বেশ সমৃদ্ধ, দুর্গের পশ্চিম দিকে একটি রয়্যাল পার্ক আছে।।

ত্রিনকোমালি

সিডনির পর ত্রিনকোমালি হলো বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোত্তম প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়। এটা ইস্টার্ন প্রভিন্সের রাজধানীও। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার জন্য সাবেক এলটিটিই মুখ্যমন্ত্রী পিলায়ান এখন জেলে রয়েছেন।এখানে এলে অবশ্যই হারবার ক্রুইজ অবধারিত। আছে নেভি হাউজ, এলিফ্যান্ট পয়েন্ট। এলিফ্যান্ট পয়েন্টে ১২ ইঞ্চির ব্রিটিশ কামানগুলো শত বছরের বেশি সময় ধরে শত্রুদের দূরে রাখছে। ত্রিনকোর উত্তরে রয়েছে নিলাভেলি বিচ। এখানকার জায়গার দাম বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।

নুওয়ারা এলিয়া

রাজধানী কলম্বো থেকে ১৭৫ কি.মি দূরে অবস্থিত মিনি ইংল্যান্ড বা নুওয়ারা এলিয়া পর্যটকদের একটি পছন্দের জায়গা।।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নুওয়ারা এলিয়ার সবুজ চা বাগান,উঁচু নিচু পাহাড় যেকোনো পর্যটকদের মুগ্ধ করবে।। শহর থেকে একটু দূরে মনোরম নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে পর্যটকরা চায়ের দেশ খ্যাত এই শহরে ঘুরতে আসেন।

পোলোন্নারুভা

পোলোন্নারুভা পুরনো নগর কলম্বোর ২১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অবস্থিত। ১৯৮২ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখানকার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও পুরাকীর্তিতে সংস্কৃত ও সিংহলী ভাষার ব্যবহার লক্ষণীয়।

ক্যান্ডি

শ্রীলঙ্কার আরেকটি বিখ্যাত শহর হল ক্যান্ডি। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয় একে। এখানেই অনুষ্ঠিত হয় শ্রীলঙ্কার সবচাইতে বর্ণাঢ্য উৎসব ‘’এসালা পেরাহেরা’। ক্যান্ডিতে রয়েছে দ্যা টেম্পল অফ টুথ, দ্যা ওল্ড ওয়েল প্যালেস কম্পাউন্ড, লঙ্কাতিলকা মন্দির।। ক্যান্ডিকে শ্রীলঙ্কার সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়।।ক্যান্ডির দক্ষিণে আছে দেশের সবচাইতে উঁচু এলাকা ‘’নুয়ারা এলিয়া’’। একে দেশের প্রসিদ্ধ চা শিল্পের কেন্দ্র বিন্দু বলা চলে।

অনুরাধাপুর

‘অনুরাধাপুর’ শ্রীলংকার সবচে পুরনো শহর। এর ইতিহাস ২৫০০ বছরের পুরনো। খৃষ্টপূর্ব ৩৮০ সালে শ্রীলংকার রাজধানী ছিল এটি। এখানকার পুরনো রাজপ্রাসাদ ঊনবিংশ শতাব্দীতে আবিষ্কার করা হয় এবং পরে তা মেরামত করা হয়। প্রাসাদের দূর্গ-এলাকা পতুর্গালের ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত স্থাপত্য। বর্তমানে এখানে শ্রীলংকার জাতীয় সংসদ, সচিবালয়, ব্যাংক, দোকান, পর্যটন বিভাগ ও বিমান আর জাহাজ কোম্পানির অবস্থান। এ এলাকায় ঘন বন আছে, আছে সুন্দর রঙয়ের ফুল। এখানে গেলে আপনাদের চোখে পড়বে সারি সারি নারিকেল গাছ এবং প্রচুর কাক। এ এলাকার পাশেই সৈকত এলাকা। সৈকতে সমুদ্রের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন আপনারা।

ডামবুল গুহা মন্দির

এই জায়গার অপর নাম হল, “গোল্ডেন টেম্পলস ডামবুলের”। জায়গাটি কলম্বোর থেকে ১৪৮ কিঃমিঃ। ১৯৯১ সালে জায়গাটিকে World Heritage sight হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। Kandy-র থেকে ৭২ কিঃমিঃ উত্তরে। শ্রীলঙ্কার মধ্য ভাগে এই জায়গাটি। সমস্ত লঙ্কার মধ্যে এই মন্দিরগুলো ভীষণ ভালভাবে সংরক্ষিত। পাহাড়ের ১৬০-মিঃ ওপরে এই গুহা মন্দিরের অবস্থান। আজকে পর্যন্ত ৮০-টি গুহা মন্দির লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এখনকার সমস্ত মূর্তি ও দেয়ালে অঙ্কিত ছবি গৌতম বুদ্ধের জীবন এবং জীবনী অবলম্বনে। মোট ১৫৩-টি বুদ্ধের মূর্তি, ৩-টি শ্রীলংকার রাজাদের এবং ৪-টি ভাস্কর হিন্দু দেব-দেবীদের। এই সব ভাস্কর্য মোট ২,১০০ বর্গমিটার জায়গা নিয়ে ছড়ান। এখানকার গুহা চিত্রগুলিতে গৌতম বুদ্ধকে ডাকিনী “মারা” যে ছলনা ও ষড়রিপুর লোভ দেখিয়ে তাঁর বোধিত্ব নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল সেই চিত্র অঙ্কিত আছে। বুদ্ধের সর্ব প্রথম বাণীর চিত্রও আছে।

শ্রীলঙ্কার জাতীয় জাদুঘর

শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে গেলে অবশ্যই আপনাকে জাতীয় জাদুঘরে যেতে হবে। এটি না-দেখলে আপনার ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। জাদুঘরটি ১৮৭৭ সালে নির্মিত হয়। শ্রীলংকার ইতিহাসের বিভিন্ন সময়কালের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে রাখা হয়েছে। যেমন বিভিন্ন তাম্র পাত্র, খোদাই করা পাথর, জেড, চীনা মাটির পাত্র এবং চমত্কার সব হস্তশিল্পকর্ম। জাদুঘরটি ঘুরে দেখলে আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে শ্রীলংকার সুদীর্ঘকালের ইতিহাস। জাদুঘরে একটি পাথরের ভাস্কর্য আছে। কথিত আছে, ১৪০৯ সালে চীনের মিং রাজবংশ আমলের পর্যটক চেং হো শ্রীলংকা সফরকালে এ ভাস্কর্যটি তৈরি করা হয়। তা ছাড়া, জাদুঘরে বৌদ্ধ ধর্ম সংক্রান্ত চার হাজারেরও বেশি শাস্ত্র ও ঐতিহাসিক গ্রন্থ সংগৃহীত আছে।

বেরুয়েলা রিসোর্ট   

বেরুয়েলা রিসোর্ট কলম্বো থেকে 56 কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বিগত কয়েক বছর ধরে, এটির উপরে নতুন হোটেল তৈরি করা হয়েছে এবং পর্যটন অঞ্চলটির উন্নতি হয়েছে, যা দুর্ভাগ্যক্রমে, ২০০৪ সুনামির সময় অনেক ক্ষতি হয়েছিল। প্রাকৃতিক পরিস্থিতি হিসাবে, তারা যেমন ছিল, তারা এতটাই দুর্দান্ত ছিল: সমুদ্রের নিচু জল, সুন্দর বালুকাময় সৈকত এবং খেজুর গাছ।

নেগোম্বো

নেগোম্বো শ্রীলঙ্কার একটি জনপ্রিয় সৈকত শহর যা দর্শনার্থীদের বিশ্রাম এবং শিথিল করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দেয়। সুন্দর সৈকত, রিফ্রেশ বাতাস এবং প্রচুর হলিডে রিসর্ট আছে। এই সৈকত শহরটি কলম্বো শহরের তুলনায় অত্যান্ত নিরিবিলি এবং শান্ত।।

এডামস পিক

শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের শ্রীপাডা নামক প্রদেশের রত্নাপুরা জেলায় এডামস পিক অবস্থিত যা ২২৪৩ মিটার বা ৭ হাজার ৩৫৮ ফুট উঁচু এবং আকৃতিতে কোণের মত দেখতে। শুধু মুসলিম নন, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ – এই তিন ধর্মের অনুসারীদের কাছেও অতি পবিত্র এই চূড়াটি বা পাহাড়টি। সকলের ধারনা আদম পাহাড়েই আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আঃ) বেহেশত থেকে সরাসরি আগমণ বা পতিত হয়েছিলেন। চূড়াটির চারিদিকে সবুজের সমারোহ, মাঝে মধ্যে পাহাড়ি উঁচু নিচু টিলা। পাহাড় চূড়ার আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য নদী এবং পাহাড়ি ঝর্ণা। সব মিলিয়ে এক মায়াবী নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য মনকে প্রফুল্ল করে তোলে।।

শ্রীলঙ্কার আবহাওয়া

শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থান এর কারনে আবহাওয়া বেশ চমৎকার। চারদিকে সমুদ্র থাকার কারনে এর আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। এখানে অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। তাই পর্যটকদের এই সময়টা এড়িয়ে চলাই ভাল। শ্রীলঙ্কা ভ্রমন করার জন্য বছরের সবচেয়ে ভাল সময় হল ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস।

ভ্রমণ সময়

শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আবহাওয়া বেশ চমৎকার। চারিদিকে সমুদ্র থাকার কারনে এর আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। এখানে অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। তাই পর্যটকদের এই সময়টা এড়িয়ে চলা ভালো। শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করার জন্য বছরের সবচেয়ে ভালো সময় ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস।।

স্পেশাল খাবার

ঈদলি এবং দোসা/থোসা এখানে অহরহ পাওয়া য়ায় এছাড়া আছে কত্তুরোটি। শ্রীলঙ্কা গেলে একবার কত্তুরোটি খাওয়া উচিত।।

কিভাবে যাবেন শ্রীলঙ্কা

ঢাকা থেকে সরাসরি আকাশ পথে কলম্বো যাওয়ার মাধ্যমে আপনার শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ শুরু করতে পারেন। অথবা যদি কম খরচে যেতে চান তাহলে ভারত হয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে পাসপোর্টে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা লাগাতে হবে। ঢাকায় অবস্থিত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশন থেকে ভিসা নিতে হবে।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ