রিছাং ঝর্ণা–
রিছাং ঝর্ণা খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে আলুটিলা পেরিয়ে সামান্য পশ্চিমে মূল রাস্তা থেকে উত্তর স্থানে অবস্থিত। জেলা সদর থেকে ঝর্ণার দূরত্ব সর্ব সাকুল্যে প্রায় ১১কিঃ মিঃ। ঝর্ণার সমগ্র যাত্রা পথটাই দারুণ রোমাঞ্চকর। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর নীলচে পাহাড় দেখা যায়। পাহাড়ের পায়ে পাখির কলকাকলি প্রতিফলিত হয়ে দারুণ এক আমেজের সৃষ্টি করে। সেই সঙ্গে একরাশ বাতাস এসে আপনার মনকে মাতোয়ারা করে দিয়ে যাবে। (এটা স্বাভাবিক সময়ের সৌন্দর্য বর্ণনা করে হয়েছে। মেঘ বৃষ্টি বাতাস মিলিয়ে দেখা যায় অন্য এক সৌন্দর্য। চারদিকে উঁচু-নীচু সবুজ পাহাড়, বুনোঝোঁপ, নামহীন রঙ্গীন বুনোফুলের নয়নাভিরাম অফুরন্ত সৌন্দর্য্য যে কাউকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যায়। পাহাড়ের বুক বেয়ে প্রায় ১০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ছে ঝর্ণার জলরাশি। পাহাড়ের ঢালু গড়িয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে স্বচ্ছ পানির প্রবাহ। আর হিমশীতল জলরাশির কাছে গেলে এক পবিত্র স্নিগ্ধতায় ভরে উঠবে দেহমন। বলছিলাম খাগড়াছড়ির অন্যতম আশ্চর্য ‘রিছাং ঝর্ণা’র কথা।
ঝর্ণার কাছে গেলে এক পবিত্র স্নিগ্ধতায় দেহমন ভরে উঠে। ২৫-৩০ হাত উঁচু পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে ঝর্ণার জলরাশি, ঢালু পাহাড় গড়িয়ে নীচে নেমে যাচ্ছে এই প্রবাহ। কাছাকাছি দুটো ঝর্ণা রয়েছে এস্থানে, প্রতিদিন বহু সংখ্যক পর্যটক এখানে এসে ভীড় জমান এবং ঝর্ণার শীতল পানিতে গা ভিজিয়ে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হন। মারমা ভাষায় এর নাম রিছাং ঝর্ণা, ‘রি’ শব্দের অর্থ পানি আর ‘ছাং’ শব্দের অর্থ গড়িয়ে পড়া। পাহাড় থেকে অবিরত পানি গড়িয়ে পড়ে বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে ‘রিছাং ঝর্ণা’। যার অন্য নাম ‘তেরাং তৈকালাই’।
ঝর্ণায় পৌঁছার একটু আগে শেষ একটা পাহাড় নামতে হয়। পাহাড়টা বেশ ঢালু। নামার সময় তেমন কোনো কষ্ট হবে না। তবে ঝর্ণা থেকে ফিরে উঠার সময় ঠিকই সেটা টের পাওয়া যায়। দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ সিঁড়ি। আনুমানিক দুই শতাধিক ধাপ শেষে নিচে নামতে নামতেই আপনার কানে বেজে উঠবে প্রকৃতির শন শন শব্দ। সিঁড়িটি শেষ হতে না হতেই আপনি দেখা পেয়ে যাবেন কাঙ্ক্ষিত ঝর্ণা।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে পাথরের ওপর দিয়ে পানি নিচে পড়ার ফলে একটি পিচ্ছিল পথের সৃষ্টি হয়েছে। আপনি একটু সাহসী হলেই সেই পানির স্রোতের সঙ্গে নিচে নেমে আসতে পারেন। মেতে উঠতে পারেন জলকেলিতে। ঝর্ণার বেশি কাছাকাছি গেলে খুব সাবধানে যেতে হবে, কারণ তা অত্যধিক পিচ্ছিল। পিচ্ছিলের কারণে প্রায় সময় পর্যটক পা পিছলে পড়ে গিয়ে আহত হয়ে ফিরে গেছেন। আশপাশে ভালো কোনো খাবারের দোকান কিংবা পানির ব্যবস্থা নেই। তাই খাবার এবং পানির ব্যবস্থা সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন।
ঝর্ণাতে পৌঁছানের জন্য পুরোটা পথ আপনি গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন না। ঝর্ণার কিছু আগে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে যেতে হবে। পাহাড়ি পথটা মোটেও আরামদায়ক নয়। আপনাকে একটি বাঁশের লাঠি নিয়ে নিতে হবে তাতে পরিশ্রম কম হবে। দৃষ্টিনন্দন সে ঝর্ণা। সত্যিই সৌন্দর্যের আধার এ ঝর্ণা যেন প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি। পাহাড়ের প্রায় ১০০ ফুট উপর থেকে ঝর্ণার পানি নিচে পড়ছে। নিচে পড়ার পর তা আবার আরো ১০০ ফুট পাথরের ওপর গড়িয়ে নেমে আসে সমতলে। ওপর থেকে নেমে আসা স্ফটিক-স্বচ্ছ জলরাশি নির্ঝরের স্বপ্নের মতো অবিরাম প্রবাহমান।
বর্তমানে রিছাং ঝর্ণা খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এই ঝর্ণার সার্বিক সংরক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো লোক নিয়োগ করা হয়নি এখনো। তবে এর উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদ থেকে সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে।
রিছাং ঝর্ণা থেকে মাত্র ২০০ গজ ভেতরে আরও একটি ঝর্না রয়েছে। যা রিছাং ঝর্ণা বা অপু ঝর্ণা নামেও পরিচিত।। ভ্রমণকারীরা যাতে সহজে ঝর্নায় পৌঁছাতে পারেন সেজন্য এখানে পাকা সিঁড়িপথ তৈরি করা হয়েছে।। প্রায় ৩০ মিটার উচ্চতায় পাহাড় থেকে পানি আছরে পড়ার মনোরম দৃশ্য ঘন্টার পর ঘন্টা উপভোগ করার মতো আর চাইলে ঝর্ণার শীতল জলে শরীর জুড়িয়ে নিতে পারেন অনায়াসেই।
কিভাবে যাবেন
খাগড়াছড়ি শহর থেকে চাঁদের গাড়ি (লোকাল নাম চান্দেরগাড়ি) বা পাবলিক বাসে করে যেতে হবে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে। সেখান থেকে হেঁটে কিংবা মোটরবাইকে করে যেতে হবে সরাসরি রিছাং ঝর্ণায়। হেঁটে ঝর্ণাতে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪৫/৫০ মিনিটের মতো। আর যদি চাঁদেরগাড়ি বা সিএনজি রিজার্ভ করে নিতে পারেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়। তাহলে বার বার গাড়ি ঠিক করা, কিছু রাস্তা হাঁটা, গাড়ির জন্য অপেক্ষা করার অনেক সময় বেঁচে যাবে। চাঁদের গাড়ি বা সিএনজি করে গেলে ঝর্ণা থেকে ৫০০ মিটার দূরে নামতে হবে, এবং বাকিটা পথ হেঁটে যেতে হবে।
কোথায় খাবেন
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে খাওয়া-দাওয়ার তেমন কোন ব্যবস্থা নাই। সামান্য চা-কফি ও হাল্কা স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার পাবেন এখানে । খাবার-দাবারের জন্য খাগড়াছড়ি শহরের বাসস্ট্যান্ড ও শাপলা চত্বর এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি সাধারণ মানের খাবার হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া খাগড়াছড়ি শহরের পান্থাই পাড়া এলাকায় ‘সিস্টেম’ ও ‘খান্ময়’ নামে দুটি বিশেষ রেস্তোরাঁ আছে। খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহি খাবারগুলো পরিবেশন করা হয় এখানে। পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে অবশ্যই একবার ঢুঁ মারবেন এখান এই রেস্তোরাঁতে।।
কোথায় থাকবেন
খাগড়াছড়িতে বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে, হোটেল শৌল্য সুবর্ন, জিরান হোটেল, হোটেল লিবয়ত,চৌধুরী বাডিং,থ্রী স্টার,ফোর স্টার, উপহার,নিলয় হোটেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)