মালয়েশিয়া ভ্রমণ-

মালয়েশিয়া (Malaysia), ভৌগলিক সৌন্দর্যে বৈচিত্রপূর্ণ মালয়েশিয়ায় রয়েছে নানা সংস্কৃতি ও জীবনধারা। পেনাংয়ের অল্ড জর্জ টাউন, মালাক্কার ঐতিহাসিক অঞ্চল পরিদর্শন, বিচ্ছিন্ন দ্বীপসমূহে ভ্রমণ এবং বার্নোর ১৩০ মিলিয়ন বছর পুরনো বনে সময় কাটাতে ভ্রমণ পিপাসুরা মালয়েশিয়া পছন্দ করেন। নাতিশিতোষ্ণ আবহাওয়ার কারণেও অনেকে মালয়েশিয়ায় ছুটি কাটাতে যেতে চান। নানা বর্ণ, ধর্ম আর সংস্কৃতির দেশ মালয়েশিয়া। মিনি এশিয়াও বলা হয়ে থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রে দেশটির অবস্থান। প্রধানত দুটি খণ্ডে বিভক্ত দেশটি; পশ্চিম মালয়েশিয়া এবং পূর্ব মালয়েশিয়া।

প্রায় ৪০ মাইল বিস্তৃত সমুদ্র আলাদা করে রেখেছে দেশটির দুই অংশকে। মোট আয়তন ৩,২৯,৭৫৪ বর্গ কিলোমিটার। পূর্ব মালয়েশিয়ায় রয়েছে দু’টি বড় রাজ্য এবং একটি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত এলাকা। আর পশ্চিম মালয়েশিয়ায় রয়েছে ১১টি রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত এলাকা।

কুয়ালালাম পুর

কুয়ালালামপুর যেন এক উৎসব নগরী। এখানে খাবার এবং ভ্রমণ বিনোদনের নানা আয়োজন। এমনকি কেনাকাটার জন্যও ভালো। এখানে যেমন ব্রান্ডশপ ও দামী জিনিসের পসরা আছে। তেমনি আছে সস্তায় ভালো পন্য পাওয়ার সুবিধা। এখানে দেশী ভাইয়েরা সব রকমের খাবারের আয়োজন করে রেখেছে। সিঙ্গারা চমুচা জিলাপী কোনোটাই পেতে খুব বেগ পেতে হবেনা। যাতায়াতের জন্য টেক্সি, ট্যুরিস্ট বাসতো আছেই। আপনি চাইলে উবার ব্যবহার করতে পারবেন অনায়াসে। বাংলাদেশীদের জন্য আলফা জেনেসিস হোটেল বেশ ভালো, কারণ এই হোটেলের পাশে বাংলা রেস্টুরেন্ট আছে ২টা। পাশে ডর নামে একটা হোটেল আছে। এর দাম কম তবে রুমগুলো একটা ছোটো। বাংলাদেশী টাকায় ২ হাজার টাকা গুনলে মাই হোটেলে থাকতে পারবেন। দাম ও মানে এর সমন্বয় আছে। পাশে সুইস গার্ডেন হোটেল এখানে ৫ হাজার টাকার মধ্যে থাকা যায়। রাতে আশপাশের এলাকা গুলো গানে গানে জেগে ওঠে। জালানা রোড হচ্ছে স্ট্রিট ফুডের স্বর্গ। এখানে এমনকি এর পাশেপাশে রেস্টুরেন্টগুলোতেও খাবারের দাম বেশী নয়। আলবাইক ফাস্টফুডের খাবারের মান ঢাকার অনেক রেস্টুরেন্ট থেকে ভালো, দামও প্রায় অর্ধেক।

মালাক্কা সিটি, মালাক্কা

মালাক্কা প্রদেশের রাজধানী মালাক্কা সিটি ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে খুবই সমৃদ্ধ। এটি ২০০৮ সালে ইউনেস্কার কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষিত হয়। এক সময়ের এই উপনিবেশিক শহরের স্থাপত্য শৈলী, খাবার ও রাতের ফুটপাতের বাজারের জন্য ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণ করে। এই ঐতিহাসিক শহর শুধুমাত্র পর্তুগীজ ও ডাচদের উপনিবেশের জন্যই পরিচিত নয়, পঞ্চদশ শতকের সুলতানী আমলের সময়কার সংস্কৃতিকে মালয় সংস্কৃতির স্বর্ণযুগ বলা হয়। মালাক্কার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল সেইন্ট পল চার্চ নামের দূর্গ। যা ডাচ গভর্নরের বাসভূমিও ছিল।

বাটু কেভস

বাটু কেভস হল মালয়েশিয়ার সবচেয়ে এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটন আকর্ষণ বাটু কেভস ওরফে শ্রী শুব্রমানিয়ার মন্দির হল প্রভু মুরুগান-এর প্রতি উৎসর্গীকৃত হিন্দু মঠ। মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গোর রাজ্যে অবস্থিত মন্দিরটি একটি প্রতিকী পর্যটন গন্তব্যস্থল। গুহাগুলি সূঙ্গাই বাটু বা বাটু নদীর নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছিল। এটা নথিভুক্ত করা হয়েছে যে তেমূয়ান লোকেরা(ওরাং আসলি উপজাতি)শরণার্থী হিসাবে এই গুহার কিছু অংশ প্রবেশপথ হিসাবে ব্যবহার করত। বাটুর চুনাপাথরের গুহাগুলি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় 400 ফুট উচ্চে নির্ধারিত রয়েছে।

জর্জ টাউন, পেনাং

মালয়েশিয়ার প্রধান ও এশিয়ার বিখ্যাত দ্বীপ পেনাং। নীল জলরাশি, পাহাড় ও বিশাল সেতুর বন্ধনে আবদ্ধ পেনাং। গভীর সমুদ্রে বিশাল জেটি। এখানে আমদানি পণ্য খালাস করা হয়। গভীর সমুদ্র বন্দর থেকে জেটির মাধ্যমে পণ্য খালাসের জন্য মূল ভূখণ্ড থেকে গভীর সমুদ্রে নেয়ার জন্য আরেকটি সুন্দর সেতু আছে। সবই দেখার মতো। পেনাং এর রাষ্ট্রীয় মসজিদ গ্রীনলেন বন্দরের কাছেই। এটা মালয়েশিয়ার সবচেয়ে জমকালো মসজিদ হিসেবে পরিচিত। পুলাউ পেনাংয়ে ৬৪ তলা বিশাল একটি গোলাকার শপিং মল রয়েছে। এখানে পছন্দমতো পণ্য কেনা যাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৩০ মিটার উঁচু এই পাহাড়ে তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত নেমে আসে এবং এখান থেকে জর্জ টাউনের সুন্দর চলমান দৃশ্য ও মালয় উপদ্বীপের উপকূলভূমির দৃশ্য দেখা যায়। লংকাউই: কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় ২৫০ মাইল দূরে মালয়েশিয়ার পশ্চিমে এ দ্বীপটি অবস্থিত। বিদেশি পর্যটকের কাছে অন্যতম এবং মালয়েশিয়ার অসম্ভব সুন্দর এ দ্বীপটির নামকরণ করা হয়েছে ঈগল পাখির মালয় নাম অনুসারে। এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলো হলো ঈগল স্কোয়ার, লংকাউই কেবল কার, জিও ফরেস্ট পার্ক, তেলাগা তুজুহ ঝর্না, ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, চেনাং রাতের বাজার ইত্যাদি।

পেনাংকে দেশটির ভোজন রাজধানী বলা হয়। সেখানে বৈচিত্র্যময় খাদ্যের সম্ভার। আবার চীনা নববর্ষসহ বেশ কিছু জমকালো, রঙিন উৎসবও হয় সেখানে। পেনাং মালয়েশিয়ার আরেকটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। এটি কুয়ালালামপুর থেকে ৩৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মূলত পেনাং-এর মূল আকর্ষণ ট্রেন। প্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য ৮ রিঙ্গিত আর ছোট ও বৃদ্ধদের জন্য ৪ রিঙ্গিতের বিনিময়ে এই ট্রেনে চড়ে যেতে পারবেন পেনাং পর্বতে।

ছবিঃ পেনাং

মালয়েশিয়ায় ভ্রমণকারীদের কাছে পেনাং সবসময়ই আকর্ষণের শীর্ষে থাকে। পেনাং নামের একটি গাছ থেকে পেনাং শহরের নামকরণ করা হয়েছে। পিনাং গাছ পাম গাছের মতো দেখতে। এটি মূল ভূমি ও দ্বীপ এই দুই ভাগে বিভক্ত। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় জর্জ টাউন পড়েছে দ্বীপাঞ্চলে। জর্জ টাউন যেন এক উন্মুক্ত জাদুঘর। ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকা এ অঞ্চলে ব্রিটিশ আমলের অসংখ্য ভবন, চার্চ ও দুর্গ রয়েছে। এখানে পথে পথে ঘুরলে অনেক ঐতিহ্যবাহী দোকান চোখে পড়বে। যার প্রত্যেকটির রয়েছে নিজস্ব শৈলী ও নকশা। এছাড়া এখানে পথে পথে পথচিত্র ও দেয়ালে দেয়ালে দেয়ালচিত্র চোখে পড়ার মতো। ঐতিহাসিক নানা মন্দির, নামকরা ফুডকোর্ট, মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় কফিশপের কারণেও পেনাং পর্যটকদের পছন্দের বড় কারন।

লংকাবি

কুয়ালালামপুর থেকে ৪১৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকত অঞ্চল আন্দামান সমুদ্রের ১০৪টি দ্বীপের সমষ্টি। কেবল কার, অপরূপা ঝর্ণার কলকল সুরধনি, সমুদ্রের নিচ দিয়ে রাস্তা, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট আরও অনেক কিছুর দেখতে পাবেন এখানে। ইচ্ছা হলে ভিন্ন অভিজ্ঞতার জন্য একটি নৌকা ভাড়া করে চলে যেতে পারেন ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের ভেতর। সেখানেও আছে বাদুরের গুহা, ঈগলের গুহা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান।

ইগলের দ্বীপ লংকাবি

মালয়েশিয়ায় দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম ইগলের দ্বীপখ্যাত লংকাবি। দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ শ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপে বছরজুড়ে থাকে পর্যটকদের ভিড়।ফেকাহ প্রদেশের সম্পদ দ্বীপটি মূলত ইগলের জন্য বিখ্যাত। দ্বীপজুড়ে চোখে পড়বে উড়ন্ত ইগল। বন্দর দিয়ে শহরের প্রবেশমুখেই নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল আকৃতির ইগল মূর্তি; যা ইগল স্কয়ার নামে পরিচিত।

লংকাবির আনাচকানাচে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ফুলঝুরি। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে তার প্রিয়তমাকে। প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে দর্শনার্থীদের বাড়তি আকর্ষণ দিতে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কিছু প্রকল্প। যার মধ্যে অন্যতম কেব্‌ল কার ও স্কাই ব্রিজ।

দ্য পারহেন্তিয়ান্স, তারেংগানু

দক্ষিণ চীন সাগরের তারেংগানু উপকূলে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপমালা মালয়েশিয়ার পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এ প্রবাল ঘেরা দ্বীপপুঞ্জ ছোট ও বড় দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এ দ্বীপপুঞ্জব্যাপি সাদা বালি, স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ অগভীর পানি এই দ্বীপপুঞ্জকে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে। গ্রীষ্মন্ডলীয় স্বর্গ হিসেবে খ্যাত এই দ্বীপপুঞ্জে স্কুবা ডাইবিং, স্নোরকেল, ক্যানোয়িং এর মতো সামুদ্রিক বিনোদনের ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে যেতে চাইলে মার্চ-অক্টোবরের দিকে যাওয়া যাবে না। কারণ এসময় সব হোটেল কিংবা গেস্ট হাউজগুলো বন্ধ থাকে।

বুকিত বিনতাঙ্গ

বুকিত বিনতাঙ্গ, মালয়েশিয়া – বিশ্বের সবচেয়ে এক উত্তেজনাপূর্ণ কেনাকাটার তোরণ “গোল্ডেন ট্র্যাঙ্গেল” বা “স্বর্ণালী ত্রিভূজ” শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত বুকিত বিনতাঙ্গ, নিঃসন্দেহে বিশ্বের সবচেয়ে এক অন্যতম রোমাঞ্চকর কেনাকাটার স্হল। বিশ্বের সমস্ত অংশ থেকে আগত পর্যটকদের দ্বারা পরিদর্শিত এটি কুয়ালালামপুরের এক অন্যতম প্রধান আকর্ষণ কেন্দ্র।

দামুন ভ্যালি, সাবাহ

দামুন ভ্যালি ইকো-ট্যুরিজম ও বনভূমির জন্য মালয়েশিয়া ভ্রমণের সেরা জায়গা। এটি ১৩০ মিলিয়ন বছরের পুরনো নিম্নভূমিতে অবস্থিত। এ বনভূমিতে অবিশ্বাস্য রকমের জীব-বৈচিত্র রয়েছে। ৪৩৮ বর্গকিলোমিটারের এ বনাঞ্চলে ১০০ প্রজাতিরও বেশি বন্যপ্রাণী ও তারও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এটিকে বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের আভাসভূমিও বলা হয়। পর্যটকদের ভাগ্য ভালো হলে এখানে ওরাওওটাং, বেঁটে হাতি, ধূসর চিতার দেখা পেয়ে যেতে পারেন। তবে এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো জনবসতি না থাকায় এর পরিশুদ্ধ পরিবেশ। জঙ্গলে ঘোরাফেরা, নাইট সাফারি ও প্রত্নতাত্তিক কাদাজান-দাসুন সমাধিতে যাওয়ার জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞ ভ্রমণ গাইডের সহায়তা নিতে হবে।

দামুন ভ্যালি ইকো-ট্যুরিজম ও বনভূমির জন্য মালয়েশিয়ায় ভ্রমণের জন্য অন্যতম সেরা জায়গা। এটি ১৩০ মিলিয়ন বছরের পুরনো নিম্নভূমিতে অবস্থিত। এ বনভূমিতে অবিশ্বাস্য রকমের জীব-বৈচিত্র রয়েছে। ৪৩৮ বর্গকিলোমিটারের এ বনাঞ্চলে ১০০ প্রজাতিরও বেশি বন্য প্রাণী ও তারও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এটিকে বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের আভাসভূমিও বলা হয়। পর্যটকদের ভাগ্য ভাল হলে এখানে ওরাওওটাং, বেঁটে হাতি, ধুসর চিতার দেখা পেয়ে যেতে পারেন। তবে এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল জনবসতি না থাকায় এর পরিশুদ্ধ পরিবেশ। জঙ্গলে ঘোরাফেরা, নাইট সাফারি ও প্রত্নতাত্তিক কাদাজান-দাসুন সমাধিতে যাওয়ার জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞ ভ্রমণ গাইডের সহায়তা নিতে হবে।

কোটা কিনাবালু, সাবাহ্

কোটা কিনাবালু, মালয়েশিয়া সাবাহ্ প্রদেশের রাজধানী। এটি সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় না হলেও এর সব শপিং মল, কমলা রঙের বালু দিয়ে তৈরি বাড়ি, ১০ মিনিটের দূরত্বের দ্বীপ, ভাসমান মসজিদের কারণে পর্যটকরা এখানে ভ্রমণ করে থাকেন। এখানকার তেনজাং অরু বিচের সুর্যাস্ত খুবই দর্শনীয়। এছাড়া লিকাস উপসাগরের উপকূল ও দ্বীপের পাথরের উপর হাটাহাটিও পর্যটকরা উপভোগ করেন। এখানকার টেংকু আব্দুল রহমান মেরিন পার্কে সৈকত, স্নোরকেলিং ও অবকাশযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। শহর থেকে অল্প দূরত্বে বন ভ্রমণেও যেতে পারেন।

লেগোল্যান্ড

লেগো-থিমের ওয়্যাটার পার্ক ও হোটেল। শিশুদের কল্পনাকে একটি বাস্তবসম্মত রূপ দেয়া হয়েছে যোর নাম লেগোল্যান্ড। স্থানটিতে তাৎক্ষণিক প্রবেশের জন্য অর্থের নিবন্ধন এবং লেগো খেলনা বিক্রয়কারী বড় দোকান রয়েছে।

আইপোহ্, পেরাক

আইপোহ্, মালয়েশিয়ার পেরাক প্রদেশের রাজধানী। বাগান বিলাসের শহর খ্যাত আইপোহ্ শহরের চারদিকে ফুল দিয়ে সাজানো এবং এর চুনাপাথরের পাহাড়গুলো সত্যি আকর্ষণীয়। এ শহরজুড়ে রয়েছে উপনিবেশ আমলের ভবন, ঐতিহ্যবাহী দোকানপাট এবং অসংখ্য হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দির। শহরের অল্প দূরেই রয়েছে উপনিবেশ আমলের নির্মাণ অসম্পূর্ণ থাকা সুবিশাল অট্টালিকা। যা কেলির দুর্গ নামে নামে পরিচিত।

আলোরসেতার, কেদাহ্

যেসব পর্যটক মালয়েশিয়া কেদাহ্ প্রদেশে ভ্রমণ করেন তাদের অধিকাংশই মূলত লংকায়িততে তাদের সময় কাটান। কিন্তু সেখান থেকে মোটামুটি ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে খুবই আকর্ষণীয় দ্বীপ রয়েছে যা আলোর সেতার নামে পরিচিত। আলোর সেতারে আকর্ষণীয় বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে, জহির মসজিদ, বড় ঘড়িওয়ালা ভবন, রয়েল হল এবং সুলতান জাদুঘর। পর্যটকরা চাইলে এখানে ২৫০ মিলিয়ন বছরের পুরনো, ৭১৫ ফুট উচ্চতার চুনাপাথরের পাহাড়ও দেখতে পারবেন। এখানকার কুয়ালা কেদাহে্ পর্যটকরা ১৭ শতেকর ভগ্নপ্রায় দুর্গ দেখতে পারেন। যা উত্তর মালয়েশিয়ার সবেচেয়ে পুরনো দুর্গ।

ইশতানা বুদায়া

মালয়েশিয়ার জাতীয় থিয়েটার ইশতানা বুদায়া বা “সংস্কৃতির প্রাসাদ” হল এক অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থল। জাতীয় সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা এবং জাতীয় কয়ার্ বিভিন্ন সঙ্গীতানুষ্ঠান, ব্যালে, যাত্রা এবং ক্ষুদ্র গীতিনাট্য সংগঠিত করে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শিল্পী ও গায়কদল এখানে সরাসরি সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং প্রদর্শনী সঞ্চালিত করে। সঙ্গীত এবং শিল্প প্রেমীরা এই থিয়েটারে বারংবার আসেন। ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারির পরেই জালান তুন রাজাক-এর উপর অবস্থিত ইশতানা বুদায়া বিশ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দশটি অত্যাধুনিক থিয়েটারের মধ্যে তালিকাভূক্ত।

দ্য ক্যামেরুন হাইল্যান্ডস, পাহাং

১৯ শতকের শেষ দিক থেকেই দ্য ক্যামেরুন হাইল্যান্ডস মালয়েশিয়ার অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ ভূ-জরিপকারি উইলিয়াম ক্যামেরুন এটি আবিষ্কার করেন এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেন। এই উচ্চভূমির উচ্চতা আনুমানিক ৩৬০৯ ফুট থেকে ৫৯০৬ ফুটের মধ্যে। এটি ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও বিশুদ্ধ পরিবেশের জন্য প্রসিদ্ধ। অবাক করার বিষয় হল এই উচ্চভূমিই মালয়েশিয়ার সবচেয়ে উচু পাহাড়ি এলাকা। বর্তমানে এই আকাঁমছোয়া অঞ্চলে গ্রিন-টি, স্ট্রবেরি ও সবজির খামার গড়ে উঠছে।পর্যটকরা শীতল পরিবেশ ও পর্বতারোহণের জন্য এ অঞ্চলে ছুটে আসেন।

টাম্বুনের সানওয়ে লস্ট ওয়ার্ল্ড

টাম্বুনের লস্ট ওয়ার্ল্ড হল মালয়েশিয়ার এক জনপ্রিয় থিম পার্ক টাম্বুনের সানওয়ে লস্ট ওয়ার্ল্ড, মালয়েশিয়া শহরের পেরাকের ঘনবর্ষিত বনাঞ্চলের ভিতে অবস্থিত টাম্বুনের সানওয়ে লস্ট ওয়ার্ল্ড হল কৌতুক, রোমাঞ্চ ও পুনঃশক্তিসঞ্চারণের এক সম্পূর্ণ প্যাকেজ। উদ্যানটি বিভিন্ন কার্যক্রমের আধিক্যতা নিবেদন করে; যেমন জলের সিক্ততা, শুষ্ক জমির ওপর এক লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা, হিংস্র বাঘদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, পাখি ও জীবজন্তুদের তাদের নিজস্ব আবাসে পরিদর্শন এবং কার্যত টিনের খননের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।

সানওয়ে উপহ্রদ

এটি পুরনো খনি জমির উপর নির্মিত। এখানকার ওয়্যাটার পার্কে নিজেকে ভিজিয়ে নেয়ার সুযোগ বিনোদনমূলক পার্ক, বন্যপ্রাণী উদ্যানে জীবজন্তুদের সাথে সাক্ষাততো আছেই।

পাংকোর দ্বীপ, পেরাক

পেরোকের পাংকোর দ্বীপের নামটি এসেছি থাই শব্দ ‘প্যাং কো’ থেকে যার অর্থ সুন্দর দ্বীপ। এই ছোট্ট দ্বীপপুঞ্জ মালাক্কা প্রণালী অভিমুখে অবস্থিত। এক সময় এটি মাছ, জেলে ও জলদস্যুদের জন্য বিখ্যাত ছিল কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন এটি পর্যটকদের কাছে গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্বর্গে পরিণত হয়েছে।এখানে মাত্র ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করে তাই অনাসায়েই এখানকার সৈকতে অবকাশযাপন করা যায়, মোটরসাইকেল ভাড়া করে পুরো দ্বীপ ঘুরা যায়।এ দ্বীপে স্কুবা ডাইভিং ও স্নোরকেলিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে।

তমন নেগারা ন্যাশনাল পার্ক

মায়েশিয়ার টমন নেগারা জাতীয় উদ্যানে প্রবেশপথ তমন নেগারা ন্যাশনাল পার্ক-এর ছায়াচ্ছন্ন, দুর্ভেদ্য এবং কিঞ্চিৎ আর্দ্র অরণ্যের গোপন অন্বেষণ। প্রকৃতপক্ষে, এটি মালয়েশিয়ার প্রথম এবং প্রাচীনতম নির্ধারিত সুরক্ষিত এলাকা। উদ্যানটির প্রাথমিক নামকরণ করা হয়েছিল “কিং জর্জ পঞ্চম(V) জাতীয় উদ্যান”।

পুলাউ টিওম্যান, পাহাং

পুলাউ টিওম্যান ১৯৭০ সালে বিশ্বাখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বিশ্বের অন্যতম সেরা দ্বীপ হিসেবে নির্বাচিত হয়। এখন অনেকটাই বদলে গেছে তবুও চীন সাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এ দ্বীপ মালয়েশিয়ার অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এ দ্বীপের প্রবালের প্রাচুর্য, বৃষ্টি বেষ্টিত বনাঞ্চল, স্পর্শহীন সৈকত পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। পর্যটকরা এ দ্বীপে স্নোরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং, বনে ঘোরাঘুরি, মোটরসাইকেল কিংবা বাইসাইকেল ভাড়া করে দ্বীপ ঘুরে দেখতে পছন্দ করেন। অনেকেই আবারও জলপ্রপাত বা ঝর্ণা দেখতেও যান।

লেগোল্যান্ড

লেগো-থিমের ওয়্যাটার পার্ক ও হোটেল। শিশুদের কল্পনাকে একটি বাস্তবসম্মত রূপ দেয়া হয়েছে যোর নাম লেগোল্যান্ড। স্থানটিতে তাৎক্ষণিক প্রবেশের জন্য অর্থের নিবন্ধন এবং লেগো খেলনা বিক্রয়কারী বড় দোকান রয়েছে।

পেট্রোনাস যমজ টাওয়ার

১৯৯৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু টুইন টাওয়ার। দুই টাওয়ারের মাঝে আছে একটি ব্রিজ, মাঝের এই ব্রিজকে বলা হয় স্কাই ব্রিজ। ৫০ রিঙ্গিত (১২০০ টাকা) দর্শনার্থীরা উঠতে পারবেন স্কাই ব্রিজে। কুয়ালালামপুরের মধ্যেই আছে টুইন টাওয়ার নামে খ্যাত পেট্রোনাস টাওয়ার।

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার মালেশিয়ার সব থেকে জনপ্রিয় স্থান। রাতের টুইন টাওয়ারের সৌন্দর্য দিনের টুইন টাওয়ারের চেয়ে পুরো ব্যতিক্রম। সন্ধ্যার পর টুইন টাওয়ারের সামনে কেএলসিসি এলাকায় যাওয়াটাই উত্তম সময়। প্রতিদিনই সেখানে পর্যটকদের মিলনমেলা বসে।

পেট্রোনাস যমজ টাওয়ার
ছবিঃ পেট্রোনাস যমজ টাওয়ার

পেট্রোনাস যমজ টাওয়ার বা পেট্রোনাস ট্যুইন টাওয়ার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অবস্থিত এক অত্যাধুনিক নকশার সঙ্গে নির্মিত দ্বৈত আকাশচুম্বী স্তম্ভ। এই নকশাটি সেজার পেলি দ্বারা নকশায়িত, তিনি এটি ইসলমি প্রতীক রূব ঈল হিজাব-এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নকশায়িত করেছিলেন। রূব ঈল হিযব হল দুটি অধিক্রমিত বর্গ, আটটি-বিন্দুযুক্ত একটি তারকা নির্মাণের জন্য আবর্তিত হচ্ছে। পেট্রোনাস টাওয়ারগুলি, 1998 থেকে 2004 সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভবন ছিল।

কিভাবে যাবেন

বাংলাদেশি ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে মালয়েশিয়া অন্যতম পছন্দের জায়গা। মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের রেল ও সড়ক যোগাযোগ নেই। তাই মালয়েশিয়ায় যেতে চাইলে আপনাকে আকাশপথেই যেতে হবে।

ঢাকা থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য এয়ার এশিয়া, বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড এয়ার, ইউ এস বাংলা, রিজেন্ট এয়ার ওয়েজ ও মালয়েশিয়ান এয়ার লাইন্সের সরাসরি ফ্লাইট আছে. সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘন্টা।।

যেখানে থাকবেন

বেশিরভাগ পর্যটক মালয়েশিয়া আসার পর থাকার জন্য বুকিট বিনতাং এলাকার হোটেলগুলোই বেছে নেয়। হোটেলের ভাড়া দিনপ্রতি ৫০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত থেকে ৫০০ রিঙ্গিত পর্যন্ত। পছন্দ অনুযায়ী ঠিক করে নিন আপনি ৩ তারকা, ৪ তারকা নাকি ৫ তারকা হোটেলে থাকবেন।মালয়েশিয়ার সব হোটেলেই চেক-ইন করার সময় দুপুর ১২টা। তাই সকালে কুয়ালালামপুর পৌঁছে হোটেল খুঁজতে বেরিয়ে পড়তে পারেন।

বি: দ্র ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজেদের পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমাদের। হ্যাপি_ট্রাভেলিং।

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ