ভ্রমণের খাদ্য-
আমরা সবাই এখন ভ্রমন করতে পছন্দ করি। দেশ থেকে বিদেশে ঘুরে বেড়াই। পৃথিবীর নিখুঁত বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য অবলোকন করতে চাইনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার।। ভ্রমণে যাওয়ার আগে এবং যেয়ে খাবার দাবারের বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত।। চলুন জেনে নেয়া যাক ভ্রমণের খাদ্য সম্পর্কিত কিছু টিপস –
ভ্রমণের আগে ও ভ্রমণ কালীন সময়ে যে খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয়
ভ্রমণ এর আগে পেট ভরে খাওয়া কিংবা ভ্রমণ চলাকালীন সময়ে টুকটাক কিছু খাওয়ার অভ্যাস আমাদের অনেকেরই আছে। বেশি বেশি পানি আর পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি এড়িয়ে চলতে হবে নানারকম খাবার। বেড়ানোর সময় শরীরের খাদ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকেনা তাই খাবারের পরিমান ও হজম সহায়ক খাবারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। সব বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখে দেখে নিন কোন কোন খাবার ভ্রমণ কালীন সময়ে বা ভ্রমণের আগে এড়িয়ে চলবেন।
গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার
পেটের ভেতর থেকে সমস্যা সৃষ্টি করে কিংবা আপনার যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকে তবে গ্যাস সৃষ্টি করে এমন খাবার ভ্রমণের আগে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। গ্যাস সাধারনত ফাস্ট ফুড আর তেলযুক্ত খাবার থেকেই তৈরি হয়। আর ভ্রমণের সময় গ্যাসের বেলুন হয়ে না উঠতে চাইলে পাশাপাশি বিরত থাকুন ফুলকপি, পেঁয়াজ, বাঁধাকপিসহ গ্যাস সমস্যার সৃষ্টি করে এমন সব ধরনের খাবার থেকে। কারণ, ভ্রমণের সময় গ্যাসজনিত সমস্যা কেবল আপনারই নয় যে কারোরই হতে পারে।
ফাস্ট ফুড
ভ্রমণের আগে ফাস্ট ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সাধারনত বাস, ট্রেন, বিমান- সবখানেই সাধারন ফাস্ট ফুড বেশি বিক্রি হয়। দেখতে ও খেতে ভালো হলেও এই খাবারগুলো আপনার শরীরকে অনেকাংশেই দূর্বল করে ফেলে। অতিরিক্ত পরিমাণ স্নেহ সেটাকে করো তোলে আরো অস্বাভাবিক, বিশেষ করে আকাশে ভ্রমণের সময় ফাস্ট ফূড রক্ত চলাচলকে বাঁধা দেয়। খাদ্যগ্রহন, পরিপাক আর রক্ত চলাচলে অসুবিধাসহ ভ্রমণের সময় সবকিছুতেই উটকো ঝামেলা সৃষ্টি করে ফাস্টফুড।
নেশাজাতীয় দ্রব্য
বিশেষ করে আকাশপথে ভ্রমণ কারী যাত্রীরা ভ্রমণের আগে ভয় দূর করতে অ্যালকোহল পান করে নেন। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, এমনিতে খুব একটা সমস্যা না হলেও রক্তে পানির পরিমাণ কম থাকলে অ্যালকোহল বিমানে ভ্রমণ কারীদের জন্যে হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক নেশার কিংবা মাথাব্যাথার কারণ। তাই যদি মনের ভয় দূর করতে খানিকটা অ্যালকোহল পান করতেও হয় আপনাকে তখন সাথে সাথে চেষ্টা করুন প্রচুর পানি পান করতে।
আইসক্রীম এবং ফল
আইসক্রীম বারবার গলে যাওয়া আবার জমাট বাধা এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় ফলে আইসক্রিনে অনেক বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে। এছাড়াও পাতলা খোসাযুক্ত ফল আপেল, জাম ইত্যাদিতে পরিহার করুন কারণ এই ফলগুলো হতে সহজেই ব্যাকটেরিয়া আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারবে। তাই শক্ত খোসাযুক্ত ফল আম, পেঁপে, কমলা ইত্যাদি গ্রহন করুন আর গরমের কষ্ট সহ্য করে হলেও আইসক্রীমকে না বলুন।
কার্বনেটেড খাবার ও পানীয়
ভ্রমণের আগে কার্বনেটেড পানীয় কোকা-কোলা,পেপসি ইত্যাদি পান করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এগুলো আপনার ভেতরে অস্বস্তিসহ উদ্বায়ী বায়ু তৈরি করতে পারে। আপনার নিশ্চয়ই একটু পরপর ঢেকুর তুলতে ভাল্লাগবে না! তাই ভ্রমণের সময় কার্বনেটেড খাবার ও পানীয় থেকে দূরে থাকুন।
শেষ কথা
নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি জার্নাল অনুসারে গবেষকেরা পরামর্শ দেন ভ্রমণের, বিশেষ করে বিমান ভ্রমণের পর জেট লেগের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে ভ্রমণের আগে ১৬ ঘন্টা ধরে সব ধরনের খাদ্যগ্রহন থেকে বিরত থাকতে। এতে করে জেট লেগের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে ধারণা করেন তারা।
ভ্রমণ প্লেসে খাওয়া দাওয়া নিয়ে কিছু টিপস
- টুরিস্ট রেস্টুরেন্টগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। যেখানে বেড়াতে গেছেন সেখানে আশপাশে ঘুরে, লোকাল বসবাসকারীরা যেখানে খান সেখানে খাওয়া-দাওয়া সারবেন। খরচটা কমবে উল্লেখযোগ্যভাবে। ভ্রমণের খাবার-দাবারের ব্যাপারে প্রথমে যে জিনিসটি মাথায় রাখা উচিত তা হল হাইজেনিক ফ্যাক্টর। আপনি যে খাবারটি খাচ্ছেন তা স্বাস্থ্যসম্মত কি না তা যাচাই করে নেয়া উচিত।
- সঙ্গে করে সবসময় কিছু শুকনো খাবার সাথে রাখতে পারেন।
- স্থানীয় কোন ঐতিহ্যবাহী খাবার থাকলে তা খেয়ে দেখতে পারেন।
- প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোড়কজাত খাবার কেনার বেলায় এক্সপায়ার ডেটের ব্যাপারে লক্ষ্য রাখবেন এবং সঙ্গে অবশ্যই মেনুফেচার।
- ভ্রমণে একবারে বেশি করে খাবার না গ্রহণ করাই উচিত। কারণ পুরো ভুঁড়িভোজন শরীরে আলস্য নিয়ে আসে, যা ভ্রমণে একান্তই কাম্য নয়।
- সকালের নাস্তায় আঁশযুক্ত এবং শর্করাসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। সঙ্গে লো-ফ্যাট দধি, ফলজাতীয় খাবার, সিদ্ধ ডিম, চা-কফি থাকতে পারে।
- লাঞ্চে আমরা ভারী খাবার খেতে অভ্যস্ত। তাই খাবার হওয়া উচিত কম মশলাদার, তেল পরিমিত রান্না করা, সহজে পরিপাক হয় এমন। এক্ষেত্রে ভাজা-পোড়া মেন্যু পরিহার করাই শ্রেয়।
- সারাদিনের ক্লান্তি শেষে দেহকে রিচার্জ করতে রাতের খাবার হওয়া উচিত উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং সহজপাচ্য।
- ভ্রমণের খাদ্য দ্রব্যে ফাস্টফুড আইটেম, বেভারেজ, ফ্লেভারড জুস, চিপস ইত্যাদি পরিহার করুন। এইসবের পরিবর্তে দেশীয় ফল খেতে পারেন।
- খাবারের তালিকায় বেশি তেলে ভাজা খাবারের পরিবর্তে স্বাভাবিক খাবার রাখুন।
সবসময় সঙ্গে রাখুন
• পানির বোতল রাখুন। রেস্টুরেন্ট বা হোটেল থেকে এই বোতলে পানি রিফিল করে নিন।
• জাতীয় পরিচয়পত্রের এক কপি অবশ্যই সাথে রাখবেন সবসময়।
• ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট এবং এমনকি ক্রেডিট কার্ডের মত গুরুত্বপূর্ণ কাগজের ফটোকপি করে সঙ্গে রাখুন।
• প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কিছু টাকা সাথে রাখুন।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং।।
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)