ভারত ভ্রমণ-
ভারত (India) বর্ষ সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্ম ও ভূসংস্থানের বৈচির্ত্র্যের সঙ্গে সমৃদ্ধময় এক ভূমি। ভারত বর্ষ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ গন্তব্যস্থল হিসাবে বিশিষ্ট স্থান অর্জন করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ভারত বর্ষ আকর্ষণীয় স্থানের প্রাচুর্য্যে পরিপূর্ণ রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের ঐতিহাসিক তাৎপর্যের সমন্বয় এবং ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী সম্পদগুলির মধ্যে রয়েছে আগ্রা ফোর্ট, অজন্তা গুহা, সাঁচির বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, গোয়ার গির্জা ও মঠ, এলিফ্যান্টা গুহা, ইলোরা গুহা, ফতেহপুর সিকরি, গ্রেট লিভিং চোলা মন্দির, হুমায়ুনের সমাধি, খাজুরাহোর মনুম্যান্টের সমষ্টি, বোধ গয়ার মহাবোধি মন্দির ভবন, কুতুব মিনার ও তার মনুম্যান্ট, লাল কেল্লা ভবন, ভীমবেতকার রক সেল্টার, সূর্য মন্দির, কোণার্ক, তাজ মহল এবং জন্তর মন্তর, লাদাখ, উটি, দার্জিলিং, মানালি ও নৈনিতাল হল দৃষ্টিনন্দন চমৎকার দৃশ্যের সঙ্গে পার্বত্য এলাকার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। কেরালার নিস্তরঙ্গ জলে হাউসবোট সফর, গোয়ার প্রাণবন্ত সমু্দ্রসৈকতে রোমাঞ্চকর ক্রিয়াকলাপ এবং কন্যাকুমারীর সূর্যাস্তের স্তম্ভিতকর দৃশ্য পরিদর্শন হল ভারতের বেশ কিছু অবিস্মরণীয় তাৎপর্য, যা কোনওদিনও ভুলে যাওয়ার নয়।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র ইন্ডিয়া তথা ভারত। প্রকৃতির অপার রূপে ভরপুর ভারত এর দর্শনীয় স্থানের সংখ্যা অসংখ্য। আমাদের পার্শবর্তী দেশ হওয়ায় এবং তুলনামূলক কম খরচে অনেক জায়গা ভ্রমণ করা যায় বলে অনেকেই এই দেশের দর্শনীয় জায়গায় ভ্রমণ করতে যান।
ভারত এর দর্শনীয় স্থানসমূহঃ
দিল্লি
ইতিহাসের হাজার ঐতিহ্য নিয়ে সেই সময়ের দিল্লি থেকে এখন নয়াদিল্লি। তাই ভ্রমণ পিপাসুদের আগ্রহের স্থান এটি। হিন্দু রাজপুত শাসক থেকে শুরু করে মুঘল আমল, এরপর ব্রিটিশ শাসন। সব মিলিয়ে সাতটি শহরের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে আজকের আধুনিক শহর দিল্লি।দিল্লী একটি সত্যিকারের বিশ্বজনীন শহর যা সমস্ত জাতিগত সমষ্টির মানুষের আলিঙ্গনের মধ্যে দিয়ে তা উপনীত হয়েছে এবং সেখানকার বৈচিত্র্যময় শিল্পকলা, চারুকলা, রন্ধনপ্রণালী ও জীবনধারার মধ্য দিয়ে তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয়।
তাজমহল
বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের তালিকায় তাজমহল অন্যতম। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত মুঘল আমলের এই স্থাপনায় রয়েছে ইসলামিক, ফারসি ও ভারতীয় স্থাপত্যের এক অপূর্ব মিশ্রণ। তাজমহল সম্রাট শাহজাহানের এক অমর সৃষ্টি। এটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম মমতাজকে ভালোবেসে। আর এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভালোবাসার নিদর্শন যা নির্মাণ করতে সুদক্ষ ২০ হাজার শ্রমিকের সময় লেগেছিল ২২ বছর।
মানালি
ভারতের হিমাচল প্রদেশের কুলু জেলায় এটির অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ২,০৫০ মিটার বা ৬,৭২৬ ফিট এবং হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলা থেকে এর দূরত্ব ২৭০ কি.মি. বা ১৬৮ মাইল। প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত মানালি। এখানে এলে দেখা যাবে উঁচু নিচু বরফ আর পাথুরে পাহাড়ের এক অপূর্ব সমাহার আর সাথে রয়েছে কূলকূল শব্দে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে আঁকাবাঁকা ভাবে বয়ে চলা বিপাশা/বিয়াস নদীর এক অপরূপ সৌন্দর্য। মানালিতে গেলে মনে হবে প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়। যারা পাহাড়-পর্বত আর নদী ভালোবাসেন তাদের জন্য মানালি বেড়ানোর একটি আদর্শ জায়গা হয়ে উঠতে পারে।
লাদাখ
উত্তরে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লাদাখে সিন্ধু উপত্যকার কাছাকাছি অবস্থিত, এটি লেহের শহর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 3,505 মিটার (11,500 ফুট) এ অবস্থিত। এই দূরবর্তী স্থানটি একটি জনপ্রিয় পর্যটক গন্তব্য হয়ে উঠেছে, যেখান থেকে 1974 সালে বিদেশিদের জন্য লাদাখে খোলা হয়েছিল। এটি লাদাখ অঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর এবং সবচেয়ে সাধারণ এন্ট্রি পয়েন্ট।পৃথিবীর বৃহত্তম পর্বতশ্রেণী এবং দুইটি আল্পাইন মরুভূমি দ্বারা বেষ্টিত, বৌদ্ধ ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মঠের পূর্ণ লেহের শুকনো বনের আড়াআড়ি এটি দেখতে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিশক্তি তৈরি করে।
শিমলা
ভারতের উত্তরীয় রাজ্য, হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত সিমলা হল একটি খুবই জনপ্রিয় শৈল শহর। সিমলার আকর্ষণ জাখু পাহাড় ও জাখু মন্দির : জাখু পাহাড় হল সিমলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং পারিপার্শ্বিক ভূ-প্রকৃতির এক অত্যাশ্চর্য নিদারুণ দৃ্শ্য পরিদর্শনেরও প্রস্তাব দেয়। পাহাড়ের চূড়ায় স্থিত জাখু মন্দির প্রভু হনুমানের প্রতি উৎসর্গীকৃত।
গোয়া
ভারত এর মধ্যে একটি ছোট্ট রাজ্য এই গোয়া, যা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা। নারকেল গাছের সারিযুক্ত সমুদ্র সৈকত, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং অক্লান্ত উৎসবের মেজাজ সহ গোয়া ভ্রমণ সারা বিশ্ব জুড়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করে।একদিকে সমুদ্রের নীরব হাতছানি, অন্যদিকে পাহাড়ের অপূর্ব শোভা উপভোগ করতে কয়েকটি দিন আপনাকে কাটিয়ে আসতেই হবে এই ছোট জায়গাটিতে। বছরের যেকোনো সময় আপনি গোয়া যেতে পারেন, তবে অক্টোবর থেকে মার্চ মাস হলো সবথেকে ভালো সময়। এ সময় সমুদ্রের ধারে আনন্দ যেমন উপভোগ করতে পারবেন তেমন পাহাড়ের ধারে ধারে কাজু গাছে কাজুবাদাম দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে।
দুধসাগর জলপ্রভাত
দুধসাগর জলপ্রপাত পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত জলপ্রপাত গুলোর মধ্যে একটি। দুধসাগর নামটির অর্থ ‘দুধের সমুদ্র’। এ মহাকাব্যিক জলপ্রপাতটি পশ্চিম ভারতের কর্ণাটকের সীমান্ত গোয়াতে অবস্থিত। দুধসাগর প্রায় ১ হাজার ১৭ ফুট উঁচুতে এবং একশ ফুট প্রশস্ত। প্রায় ৩০ মিটার প্রস্থের সমগ্র মান্দভি বা মানদবী নদী ৩১০ মিটার উচ্চতা থেকে বিশাল জলরাশি নিয়ে এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। এই জলপ্রপাতটি “সি অফ মিল্ক” নামেও পরিচিত।
কাশ্মির
কাশ্মীর। দুনিয়ার বেহেশত। নাম শুনলেই সবুজ প্রকৃতির দিকে মন চলে যায়। হৃদয়ে হিল্লোল তুলে মুগ্ধ করা আবেশের। প্রাণে প্রাণে বাজে প্রেরণার সুর। আহ্, কি সুন্দর করে সাজিয়েছেন এ প্রকৃতি। এ ধরা। এ জায়গা। যেন প্রভুর হাতে গড়া সুন্দর, মনোরম আর নয়নজুড়ানো ভুবন ভুলানো দৃশ্য
শ্রীনগর
শ্রীনগর শহরের ভিতর রয়েছে ডাল লেক,নাগিন লেক, বোটানিক্যাল গার্ডেন,ইন্দিরা গান্ধী টিউলিপ গার্ডেন, নিশাত বাগ, শালিমার বাগ, চাশমেশাহী বাগ,পারিমহল,হযরত বাল দরগাহ, শংকরাচার্যহিল। শহরের মধ্যে দেখার জায়গাগুলো একদিনেই ঘুরা সম্ভব।
পেহেলগাম
শ্রীনগর থেকে প্রায় ৯৭ কিমি দূরে অবস্থিত। অনন্তনাগ থেকে বাকি অংশটা গেলে শুধু রাস্তার দুপাশে পড়বে আপেলের বাগান। জুলাই থেকে অক্টোবর, এই সময়ের মধ্যে গেলে গাছে আপেল দেখা যায়। পাহেলগাম নেমে আবার ছোট গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে বেড়াতে হয়।
আরু ভ্যালি
ভূস্বর্গ কাশ্মীর সত্যিই স্বর্গ। ঈশ্বর কাশ্মীরকে তুলি দিয়ে সুন্দর করে একেঁছেন।। আরু ভ্যালি কাশ্মীরের পেহেলগাম থেকে ১২ কি.মি দূরের ছোট্ট একটি পাহাড়ি গ্রাম। লিডার নদী এর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।। এখান থেকে দেখতে পাবেন লিডার নদী উৎস কোলাহাই হিমবাহ।। পেহেলগাম এর তুলনায় আরুতে ঠান্ডা বেশি।। গরমকালে গেলে প্রকৃতির সবুজ৷ রুপ দেখা যায়।। আর শীতের সময় আরু ভ্যালিতে বরফের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য চোখে পড়ে, তখন স্কেটিং এর জন্য প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয় আরু ভ্যালিতে।।
কেরেলা
বিচিত্র সৌন্দর্যে ভরপুর কেরালা বেশ জনপ্রিয় এক টুরিস্ট ডেসটিনেশন। প্রশান্তিময় কেরালা আপনার ভ্রমণ জীবনের সুন্দর এক উপাখ্যান হয়ে থাকবে।কেরেলার পাহাড়, ব্যাকওয়াটার, বীচ, ঝরনা এবং বন্যজীবন যেকোন প্রকৃতি প্রেমীকে অবশ্যই মুগ্ধ করবে। এই রাজ্যের একটি মূল্যবান হেরিটেজ এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে, যেকোন ব্যক্তি এইরাজ্যের বিভিন্ন দুর্গ, প্রাসাদ, মিউজিয়াম, স্মারক স্তম্ভ এবং তীর্থস্থানগুলির মধ্যে সেগুলি খুঁজে পাবেন। প্রতিটি বাঁকে প্রাকৃতিক এবং মনুষকৃত উজ্জ্বল প্রভা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
মুন্নার
কেরালার পশ্চিমঘাট পর্বতমালার শৈল শহর হিসেবে পরিচিত মুন্নার এক জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে শুধু চা বাগানই নয় জলপ্রপাত, নদী, অরণ্য আর নান্দনিক পার্ক- সব মিলে শহরটি অসাধারণ সুন্দর। শান্ত, নির্মল ও নিরালা এই শহরের রাস্তাগুলোও দেখার মতো। মুথিরাপুরা, নল্লাথান্নি ও কুন্ডালা এই তিনটি পার্বত্য নদীর মিলনস্থলে শহরটি গড়ে উঠেছে।
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এক সময়ে ‘দ্বীপান্তর’-এ পাঠানো হত। ‘কালাপানি’ পেরিয়ে যেতে হত সেই দ্বীপে। সে ছিল এক বিভীষিকা। এখন সেই ‘দীপান্তর’-এর দ্বীপ ভারতের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনক্ষেত্র। বর্তমান সময়ের পর্যটকদের কাছে এটি নীলপানির দ্বীপ নামেই বেশি পরিচিত।। আন্দামান দীপপুঞ্জ যা ব্রিটিশদের কাছে কালাপানি নামে পরিচিত ছিলো। চারদিকে নীল জলরাশি। তার মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে স্থলভূমি। রয়েছে সবুজ পাহাড়ি অরন্য আর রুপালি বালুকাবেলা। নারকেল গাছের ছায়ায় ঘেরা নির্জন দ্বীপ পুঞ্জের কোথাও দেখা যাবে হরিণ এর দল। হাত বাড়ালেই সমুদ্রের জলে মিলবে বিবিধ রঙের প্রবাল ও রঙিন মাছ।। মনোরঞ্জনের জন্য সমুদ্রে রয়েছে ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা।।
দীঘা সমুদ্র সৈকত
দীঘা হল পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ন ও বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র। দীঘাতে কলকাতা থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন। পর্যটন কেন্দ্রটি বঙ্গোপসাগরের তীরে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা সীমান্তের কাছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত।দীঘা, পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র সমুদ্র কেন্দ্রীক ভ্রমণ কেন্দ্র। কলকাতা থেকে মাত্র ১৮৭ কিলোমিটার দূরে মেদিনিপুর জেলায় সমুদ্র, বালিয়াড়ি, ঝাউ বন আর আপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলিয়ে অপেক্ষা করছে প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের জন্য। একটি অগভীর বেলাভূমি আছে যেখানে প্রায় ৭ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট ঢেউ বালুকাভূমিতে আছড়ে পড়তে দেখা যায়।
সিকিম
সিকিম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় একটি প্রদেশ। এর উত্তরে রয়েছে তিব্বত, পূর্ব দিকে ভুটান, পশ্চিমে নেপাল এবং দক্ষিণ দিকে পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা শিলিগুড়ি থেকে এটি মাত্র ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সিকিম কম জনবসতি সম্পন্ন ও ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। শীতের তুষার সিকিমকে করে তুলেছে পর্যটকদের কাছে একটি স্বর্গরাজ্য। সিকিমের এই রুপ ঐশ্বর্যের জন্য একে “সুখী স্বদেশ” বলা হয়ে থাকে।
গ্যাংটক
গ্যাংটক হলো সিকিমের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। গ্যাংটক ও আশে পাশের অঞ্চল পুরোটাই সুবিশাল ও দৃষ্টি নন্দন পাহাড়ে ঘেরা। বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ, এবং বিচিত্র প্রানী কুল সব মিলিয়ে গ্যাংটক হয়ে উঠছে প্রকৃতি প্রেমীদের স্বর্গ রাজ্য। রডোডেন্ড্রেন,অর্কিডের ন্যায় ফুল, সাথে লাল পান্ডা, লাল রঙিন পাখি এগুলো গ্যাংটকের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
লাচুং
উত্তর সিকিমের তিব্বতয়ান বর্ডারের কাছে অবস্থিত লাচুং গ্রাম নদী দিয়ে বিভক্ত। গ্যাংটক থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই গ্রামে যেতে প্রায় ৫ ঘন্টার মতো সময় লাগে।। চারপাশে অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশে ও ইয়ামথাং ভ্যালি যাবার পথে তিস্তা নদীর স্বচ্ছ নীল পানি ও দুটি অসাধারণ ঝর্ণা মনকে প্রশান্তি এনে দেয়।
নাথাং
পূর্ব সিকিমে এর ছোট্ট একটা গ্রাম নাথাং যা ১৩৫০০ ফিট উঁচুতে অবস্থিত।। জুলুক থেকে লুংফুং হয়ে লক্ষীচকে কুলুপ যাওয়ার রাস্তার বাঁদিকে গেলে নাথাং ভ্যালি। একটি কথা প্রচলিত আছে তুমি যদি নাথাং ভ্যালি পছন্দ না করো তাহলে তুমি স্বর্গও পছন্দ করবেনা।নাথাং ভ্যালিতে সর্ব সাকুল্যে ৫০-৬০ টা বাড়ি, বাড়িগুলোর টিনের চালে ঝুরো ঝুরো বরফকুচি।নাথাং এর কাছেই চায়না বর্ডার, তাই প্রায় সবগুলো বাড়িতেই চাইনিজ মিনি মার্কেট সাজানো।।
নামচি
নামচি হল দক্ষিণ সিকিমের সদর শহর, ছোট্ট একটি জনপদ যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৪০০ ফুট (১৩১৫ মিটার) উচ্চতায় অবস্থিত। নামচি থেকে যেমন কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়, তেমনই চোখে পড়ে বিস্তীর্ণ সবুজ উপত্যকার এক সুন্দর দৃশ্য। নামচি ও তার আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলি দেখতে অন্তত একটা গোটা দিন সময় লাগবে।
ডুয়ার্স
ডুয়ার্স শব্দের অর্থ দরজা বা প্রবেশদ্বার। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার এবং অসমের ধুবড়ি, কোকড়াঝাড়, বরপেটা, গোয়ালপাড়া ও বঙাইগাঁও জেলা নিয়ে ডুয়ার্স অঞ্চল গঠিত। এক সময় ভুটানের অসংখ্য প্রবেশপথ ছড়িয়ে ছিল জলপাইগুড়ির জেলার উত্তরাঞ্চলে। অনেকের মতে দুয়ার থেকেই ডুয়ার্স শব্দের উৎপত্তি। পাহাড়, নদী, জঙ্গল– সব মিলিয়ে ‘প্রকৃতি’ বলতে যা বোঝায়, তার সব থেকে লাগসই উদাহরণ ডুয়ার্স।
দার্জিলিং
দার্জিলিং, সস্নেহে “শৈল শহরের রাণী”- হিসাবেও পরিচিত, হিমালয়ের কোলে অবস্থিত দার্জিলিং তার চা-উৎপাদন ও দার্জিলিং-হিমালয় রেলপথের জন্য সু-প্রসিদ্ধ; যেটি আবার ইউনেস্কো (ইউ.এন.ই.এস.সি.ও)-র একটি পৃথিবীর ঐতিহ্যগত স্থান। দার্জিলিং সর্বদাই তার নিদারুণ সৌন্দর্য্য ও মনোরম জলবায়ুর কারণে ভারতের এক জনপ্রিয় অবকাশ-যাপনের গন্তব্য। হিমালয়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ছবির মতো সুন্দর শহর এই দার্জিলিং।
মিরিক
মিরিক ভারত এর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত ছবির মত সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র।পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পাহাড়ের সবচেয়ে জনবহুল পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অন্যতম হল এই মিরিক লেক। পাহাড়, বনবীথি আর ঝিল – এই তিনের সঙ্গমে মিরিক হয়ে উঠেছে জমজমাট পর্যটন কেন্দ্র।রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এই পার্বত্য শহর মিরিক সৌন্দর্য্যের প্রেক্ষিতেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা চা বাগান, সবুজ বণানী এবং মেঘের স্পর্শ এই স্থানকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
কার্শিয়াং
কার্শিয়াং দার্জিলিং জেলার একটি শৈল শহর এবং মহকুমা। এটি ১৪৫৮ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। কার্শিয়াং দার্জিলিং থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে। এখানকার আবহাওয়া সারা বছরই আরামদায়ক, শীতকালের ঠান্ডা দার্জিলিঙের মতো তীব্র নয়। কার্শিয়াং -এর স্থানীয় নাম খার্সাং, লেপচা ভাষায় এই কথার অর্থ ‘সাদা অর্কিডের দেশ’। কার্শিয়াং শিলিগুড়ি থেকে ৪৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং এটি শিলিগুড়ির সঙ্গে সড়ক পথ ও হিমালয়ান রেলওয়ে দ্বারা যুক্ত। নিকটতম বিমানবন্দর বাগডোগরা। নিকটতম রেল স্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি, এটি কার্শিয়াং থেকে ৫৩ কিলোমিটার দূরে। কার্শিয়াং বেড়ানোর সেরা সময় মার্চ থেকে মে মাস এবং আগস্টের শেষ থেকে অক্টোবর।
লেপচাজগত
লেপচাজগত দার্জিলিং এর একটি পাহাড় ঘেরা গ্রাম, অফবীট লাভারদের জন্য বেশ জনপ্রিয় স্থান। দার্জিলিং থেকে ১৯ কি.মি দূরে এর অবস্থান। ওক,পাইন,রডোড্রোন মোড়া রাস্তার দু’ধার।।
লেপচাজগত দার্জিলিং এবং সুখিয়াপোখারির মধ্যে অবস্থিত। লেপচাজগত পাইন ফরেস্ট হোমস্টে মেন রাস্তার ঠিক সামনে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং দার্জিলিং শহরের দুর্দান্ত ভিউ পাওয়া যায় বলে লেপচাজগত গন্তব্য হিসাবে খুব জনপ্রিয়। আকাশ যদি পরিষ্কার থাকে, রাজকীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা আপনাকে নিরাশ করবেনা। পাঁচটি শিখরই দেখতে পাবেন।।
দাওয়াইপানি
দার্জিলিং এর কাছে অবস্থিত ছোট্ট সুন্দর অদ্ভুত গ্রাম দাওয়াইপানি, যেখানের প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি বাড়ি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার হাতছানি দেয়। দাওয়াই পানি থেকে দেখতে পাওয়া যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার সুস্পষ্ট রূপ।এছাড়া আরো কয়েকটি শৃঙ্গের অপার্থিব রূপ মন ভালো করে দিবে। নামচির চারধাম এবং সামদ্রুপসে মঠ ও স্পষ্ট দেখা যায় দাওয়াইপানি থেকে।। গ্রামটি থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য অসাধারণ। গ্রামের একপ্রান্ত থেকে দেখা যায় দার্জিলিং শহর। সূর্য ডুবলে আলোকিত দার্জিলিং এর দিকে তাকালে মুগ্ধ হবেনই।।
সান্দাকাফু
সান্দাকফু পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম শৃঙ্গ যার অর্থ “Height of the Poison Pants”. সান্দাকফু এর চূড়ার কাছে বিষাক্ত গাছ জন্মায় আর তাই সেখান থেকে এই নাম এসেছে। চূড়াটি ৩৬৩৬ মিটার (১১৯৪১ ফুট উঁচু)। দার্জিলিং এর সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের ধারে পশ্চিমবঙ্গ-নেপাল সীমান্তের এই শৃঙ্গ সিঙ্গালিলা পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু বিন্দু। এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোত্সে এবং মাকালু – পৃথিবীর পাঁচটি সবচেয়ে উঁচু চূড়ার চারটিই সান্দাকফু থেকে দেখা যায়। সান্দাকফু হলো তাদের জন্যে স্বর্গ যারা হয়ত খুব ভালো ট্রেকার না কিন্তু পাহাড় ভালোবাসে। সান্দাকফুকে এজন্যেই বলা হয়ে থাকে ট্রেকার্স প্যারাডাইস।
কালিম্পং
দার্জিলিয়ং থেকে ৫০ কিলোমিটার পূর্বে কালিম্পং একটি ছোট্ট শান্ত শহর। এটি ১২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। একসময় এই শহর দিয়েই ভারত-তিব্বতের মধ্যে বাণিজ্য চলত। কালিম্পং শব্দের মধ্যেই এর ইতিহাস লুকিয়ে আছে। এই শহরে এক সময় ভূটানের রাজ্যপালের কেন্দ্রীয় দফতর ছিল। ‘কালিম’ শব্দের অর্থ ‘রাজার মন্ত্রী’ এবং ‘পং’ শব্দের অর্থ ‘ক্ষমতার কেন্দ্র’। শৈবালদামের ওপর পা ফেলে সোনালি ওক গাছের ঘন অরণ্যের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া কালিম্পং-এর অন্যতম আকর্ষণ। প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করতেই পর্যটকরা কালিম্পং-এ যান।
ফালটু
সান্দাকফু-ফালটু ট্রেকের শেষ গন্তব্য হচ্ছে ফালটু যা সান্দাকফু থেকে ২৩ কি.মি দূরে অবস্থিত। ফালটু টপের উচ্চতা ৩৬০০ মিটার যা পশ্চিম বঙ্গে দ্বিতীয়। হিমালয়ের অপরূপ সৌন্দর্য্যের জন্যই ফালটুর খ্যাতি। সান্দাকফু থেকে ফালটু পরযন্ত ট্রেকের পুরো পথ দর্শনীয়।। পোড়া রৌপ্য – ফার অরন্য সর্বাধিক সুন্দর দৃশ্য তৈরী করে যা চোখ জুড়িয়ে যায়।। ফালটুতে তুষারপাতের সীমার একটি দুর্দান্ত দৃশ্য পাওয়া গেছে যা সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ, এবং নেপালেরও ত্রিভুজ। কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জগুলি এবং এভারেস্ট এর দুই শৃঙ্গই এখান থেকে স্পট দেখা যায়।
শিলিগুড়ি
শিলিগুড়ি হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের একটি শৈল শহর ও পর্যটন কেন্দ্র। এই শহরটি পর্বতের ঢালে গড়ে উঠেছে। শহরটি দার্জিলিং জেলার বৃহত্তম শহর। এখানে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে।শিলিগুড়ি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি প্রধান শহর এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে। যদি পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং এবং সিকিমের গ্যাংটক-এর মত শহরগুলিতে ভ্রমণ করতে হয় তাহলে এটি হল প্রতিটি স্থানের প্রবেশদ্বার।
মেঘালয়
মেঘ পাহাড় ও ঝর্ণার দেশ উত্তর ভারতের মেঘালয় রাজ্য। চারদিকে উঁচু উঁচু সব পাহাড়, হাত বাড়ালেই মেঘের স্পর্শ, পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা অসংখ্য ঝর্ণা, স্বচ্ছ পানির নদী,লেক ও ছবির মতো সুন্দর গ্রাম,এই সব কিছু মিলেমিশে প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য নিয়ে মেঘালয় হাতছানি দেয় ভ্রমন প্রেমিদের।।বাংলাদেশের সিলেট সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান ও কম খরচে সহজেই মেঘালয়ের জনপ্রিয় স্থান শিলং,চেরাপুঞ্জি, ও ডাউকির বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ানো যায় বলে পাহাড় ও ঝর্ণা প্রেমীদের কাছে পছন্দের এক জায়গা এই মেঘালয়।।
শিলং
শিলং উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা। এটি মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী। শিলং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে এবং ভুটান-ভারত সীমান্তের প্রায় ১০০ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত।মেঘালয় ও পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলার রাজধানী এই শিলং, যাকে বলা হয় হিল স্টেশন। মেঘের বাসা বলেও ডাকা হয় শিলংকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০০ ফুট উচ্চতায় এই শহর।
চেরাপুঞ্জি
মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে চেরাপুঞ্জির দূরত্ব প্রায় ৫৬ কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৪৮৬৯ ফুট। এটি পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার অংশ। চেরাপুঞ্জির আগের নাম ছিলো ‘সোহরা’। স্থানীয় ভাষায় সোহরা অর্থ চূড়া। কারণ এলাকাটির অবস্থান পাহাড়ের চূড়ায়। পরে নাম রাখা হয় চেরাপুঞ্জি। চেরাপুঞ্জি অর্থ কমলালেবুর দ্বীপ। কারণ এখানে কমলালেবুর চাষ বেশি হয়। কমলা ছাড়া এখানে পান-সুপারিও চাষ হয়। অবশ্য চেরাপুঞ্জি বেশি পরিচিত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের অঞ্চল হিসেবে।
সোনাংপেডেং
সোনাংপেডেং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জৈন্তা হিলস জেলার অন্তর্গত একটি পাহাড়ি অপরুপ গ্রাম। গ্রামটি বাংলাদেশের তামাবিল বর্ডার থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার এবং মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সোনাংপেডেং এর সৌন্দর্যের প্রধান আকর্ষন এই গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ, সবুজ জলের পাথুরে নদী “উমংগট”।
নাগাল্যান্ড
ভারতের এক বিখ্যাত রাজ্যের নাম নাগাল্যান্ড, এটি ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্য এর একটি। ভারতের উত্তরপূর্ব অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, এবং ত্রিপুরা কে সেভেন সিস্টার্স রাজ্য বা সাত বোন রাজ্য বলা হয়ে থাকে। শান্তি ও নির্মলতার জন্য নাগাল্যান্ড ভ্রমণ পর্যটন প্রেমীদের জন্য একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে। হিমালয়ের পাদদেশের অভ্যন্তরে প্রতিপালিত নাগাল্যান্ড ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এক সবচেয়ে সুন্দর রাজ্য। নাগাল্যান্ড পর্যটন বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যস্থল জুড়ে পর্যটকদের একটি বিস্ময়কর সফরের জন্য আহ্বান জানায়।
রোথাং পাস
সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩,৯৭৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত রোথাং পাস মানালি শহর থেকে ৫১ কি.মি দূরে অবস্থিত। মানালি থেকে আঁকা বাঁকা সুন্দর রাস্তা ধরে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে এখানে যেতে পারেন।এখানে সাদা বরফে ঢাকা বিশাল পাহাড়ের সারির মাঝে স্কেটিং ও টবগ্যানিং করার মজা নিতে পারবেন।।ডিসেম্বর থেকে জুন এর মাঝামাঝি সময় পরযন্ত এখানে ভারি তুষারপাতের জন্য যাতায়াত বন্ধ থাকে।।
রকি আইল্যান্ড
রকি আইল্যান্ড’ — মানে পাথুরে দ্বীপ, সামসিং থেকে ২ কি মি দুরে মূর্তি নদীর তীরে অবস্থিত এই রকি আইল্যান্ড।। রকি আইল্যান্ড হচ্ছে একটি পাহাড়ি ও বাহারি ছোট্ট গ্রাম। মূর্তি নদী পাহাড় থেকে যেখানে আছড়ে পড়েছে সেখানেই গড়ে উঠেছে পাহাড়ি এই ছোট্ট গ্রাম।
রাজস্থান
ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত রাজস্থান ‘বর্ণময় ভূমি’ হিসাবে পরিচিত। ভারতের রাজস্থান রাজ্যের হাজার হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। এটি সিন্ধু সভ্যতার স্থান ছিল। ভারতের প্রাচীনতম গিরিশ্রেণী আরাবল্লী দ্বারা বেষ্টিত, থর মরুভূমি অঞ্চলে ১৩২,১৪০ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে অবস্থিত, রাজস্থান ভারতের একটি বৃহত্তম রাজ্য।
কোদাইকানাল
কোদাইকানাল হল ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ডিন্ডিগুল জেলার একটি পাহাড়ী শহর। তামিল ভাষায় এই নামটির অর্থ “পাহাড়ের উপহার” আর এখানে এলে বুঝা যায় নামকরণ যথার্থ। দক্ষিণ ভারত যখন গরমে ত্রাহি ত্রাহি করে করে সেখানে কোদাইকানাল যেন এক ওয়েসিস, প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি এক শীতল জায়গা। গরম জায়গার নিয়মটিকে অমান্য করে আশ্চর্য এই ঠাণ্ডা জায়গা স্বভাবতই এখানের সবাইকে আকর্ষণ করে।
আউলি
আউলি উত্তর ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের স্কি রিসোর্ট এবং হিল স্টেশন। এটি চারপাশে সরলবর্গীয় ও ওক বন, নন্দদেবি এবং নার পর্বত পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। আলপাইন উদ্ভিদ, তুষারচিতা এবং লাল শিয়ালের মতো বন্যজীবন রয়েছে এখানে। গ্রীষ্মের সময় ভারতের শীতলতম স্থান আউলি। একটি দীর্ঘ তারের রোপওয়ে আউলিকে জোশীমঠ শহরের সাথে যুক্ত করেছে। রোপওয়েতে জেশীমঠ ভ্রমনের সময় ওপর থেকে পাখির চোখ দিয়ে অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।।
মান্ডি
সুকেট নদী এবং বিয়াস নদীর সঙ্গম স্থলেই গড়ে উঠেছে হিমাচল প্রদেশের মান্ডি শহর।মান্ডি থেকে কিছু দূরে পান্ডোহ্ ড্যাম। নদীতে বাঁধ দিয়ে দিয়ে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা। বিয়াস এখানে ভয়ংকর।পানির শব্দে কান ঝালাপালা। ফেনীল নিম্নভাগের দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকতে হয়। এখানে বিয়াসের কাছে যাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বাজে কিছু দূর্ঘটনার ইতিহাস আছে এখানটায়। ছবি তোলাও নিষেধ।
শান্তিনিকেতন
শান্তিনিকেতন নামের মধ্যেই রয়েছে শান্তি। শান্তির নীড় হলো শান্তি নিকেতন। এখানে আলাদা শান্তির পরশ পাওয়া যায় মনপ্রান জুড়িয়ে যায়।। পশ্চিম বঙ্গের বীরভূমের বোলপুর শহরের নিকট কোপাই নদী ও অজয় নদের তীরে অবস্থিত শান্তি নিকেতন।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজরিত শান্তি নিকেতন যেনো সাহিত্য এবং সংস্কৃতির মেলাবন্ধনের সাক্ষী। বর্তমানে শান্তিনিকেতনকে আরো সমৃদ্ধ করেছে পৌষ মেলা,বসন্ত উৎসব,জয়দেব কেঁদুলির মেলা,ছাতিমতলা,রবীন্দ্র মিউজিয়াম, বল্লভপুর ওয়াইল্ড লাইফ পার্ক, নন্দন আর্ট গ্যালারি, সোনাঝুরি এবং আমারকুটির। শান্তি নিকেতন প্রকৃতি, শিক্ষা এবং সংস্কৃতির সৌন্দর্যে ভ্রমণ পিপাসুদের হৃদয় তৃপ্ত করে চলেছে বছরের পর বছর।।
কলকাতা
কলকাতাকে বলা হয় ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী। এটি দেশটির সবচেয়ে বড় শহর। তাই তো বাংলাদেশি পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের এ শহর।বর্তমান ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ, এই তিনের রাজধানী ছিল কলকাতা। তাই এর গুরুত্ব সহজেই অনুমান করা যেতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতা ও গুরুত্তের শীর্ষে অবস্থান করেছে এই শহর। হয়েছে অনেক ঘটনারই সাক্ষী। “আনন্দ নগরী” নামে পরিচিত কলকাতা- মাদার টেরেজা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিৎ রায় এবং সুভাষ চন্দ্র বোস এবং আরও অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তির পদচারনায় মুখরিত হয়েছে। কালজয়ী এই শহর ধীরে ধীরে পরিনত হয়েছে বাংলা সংস্কৃতির বিশিষ্ট প্রতিনিধি হিসেবে। কলকাতা গেলে বেশ কিছু স্থান দেখার মতো রয়েছে। এরমধ্যে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, হাওড়া ব্রিজ, সায়েন্স সিটি ও একুশে উদ্যান উল্লেখযোগ্য।
উদয়পুর
এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর শহরের তালিকার সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে উদয়পুর। এই শহরকে বলা হয় হৃদ ও প্রাসাদের নগরী। উদয়পুরের আবহাওয়া বেশ উষ্ণ। তবে অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে গেলে অনেক ভালো একটা পরিবেশ পাবেন। তখন তাপমাত্রা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। শহরটিতে শীতকালও অনেক চমৎকার।উদয়পুর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের একটি শহর এবং পৌর কাউন্সিল। ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের জন্য এই শহর বিখ্যাত। উদয়পুরের মন্দিরগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ত্রিপুরা সুন্দরি মন্দির, যা ৫১ টি মহাপীঠগুলির মধ্যে একটি।
কন্যাকুমারী
ভারতীয় উপমহাদেশের দক্ষিণতম বিন্দু, কন্যাকুমারী৷ তামিল নাড়ু রাজ্যের এই শহরে মিলিত হয় আরব সাগর, ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর৷ ঐতিহ্যপূর্ণ ‘বিবেকানন্দ রক স্মৃতিসৌধ’ ছাড়াও এখানে রয়েছে স্থানীয় দেবী কুমারী আম্মানের মন্দির, যাঁর নামেই এই শহরের নামকরণ।
অজান্তা ও ইলোরা গুহা
অজান্তা ও ইলোরা গুহা, মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে হায়দ্রাবাদ জেলায় অবস্থিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম এই নিদর্শন। পাথর কেটে তৈরি করা এই অজান্তা ও ইলোরা গুহায় রয়েছে চোখ ধাঁধানো বিভিন্ন স্থাপনা! যার মধ্যে হিন্দু ধর্মের ১৭টি, বৌদ্ধ ধর্মের ১২টি এবং জৈন ধর্মের ৫টি প্রাচীন মন্দির রয়েছে। রাষ্ট্রকুট রাজবংশের সময়কালে নির্মাণ করা করেছিল এই স্থাপনাগুলো। সব ধর্মের উপাসনালয়ের এই সহাবস্থান সে যুগে ভারত বর্ষের ধর্মীয় সম্প্রীতির নিদর্শন বহন করে। এই স্থাপত্য শিল্পগুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। প্রাচীন ভারত বর্ষের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য্যের এই নিদর্শন দেখতে দেশ-বিদেশের বহু মানুষ ভিড় করেন সেখানে।
বেনারস–লখনৌ
পৌরাণিক মতে, বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন শহর বেনারস বা বারাণসী না দেখলে ভারত ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায় ৷ স্থানীয় মন্দির ও গঙ্গার ঘাট দেখা হয়ে গেলে দেখতে পারেন বৌদ্ধ ধর্মের জন্মস্থান সারনাথ। হাতে সময় থাকলে চলে যেতে পারেন পাশের শহর লখনৌ। সেখানে রয়েছে বিখ্যাত ইমামবড়া ও গোলকধাঁধা ‘ভুলভুলাইয়া’। লখনৌ শহরের খাবারও খুব জনপ্রিয়।।
ওড়িশা
ওড়িশা বহু ইতিহাস ও প্রাচু্র্য বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ওড়িশা ২০২১-এ ছিমছিম ভ্রমণের অন্যতম ঠিকানা হতে পারে। দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র, বালুকাবেলা এ রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণ। তারই পাশে পুরীর আঙিনায় জগন্নাথ মন্দির দেশের অন্যতম ভক্তিমূলক স্থান। কোনারকের সূর্য মন্দির, উদয়গিরি, খণ্ডগিরি, ধৌলি এ রাজ্যের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। গোপালপুর, চিলকা, তপ্তপানি, দারিংবাড়ি, সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান, হিরাকুঁদ বাঁধ, টিকারপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে জেগে রয়েছে সৌন্দর্য্য।
অন্ধ্রপ্রদেশ
অন্ধ্রপ্রদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, ইতিহাস ও ভক্তিমূলক আবেহ বেষ্টিত গোটা অন্ধ্রপ্রদেশ ভ্রমণে সময় লাগবে কমপক্ষে ১০ দিন। তিরুপতি, তিরুমালা, লেপাকসির ভক্তি, বিশাখাপত্তনম, আরাকু ভ্যালি, বোরা কেভস, হর্লসলে হিলস, পুলিক্যাট লেক, কোলেরু লেকের সৌন্দর্য্য পর্যটকদের আকর্ষিত করার জন্য যথেষ্ট।
তামিলনাড়ু
মন্দিরের রাজ্য তামিলনাড়ু পর্যটকদের দারুণ প্রিয় জায়গা। রামেশ্বরম, কাঞ্ছিপুরম, মাদুরাই, কোয়েম্বাতুর, থালঞ্জাভুর, তিরুনেলভেলি, তিরুভানামালাইয়ের মতো ধর্মীয় স্থানের পাশাপাশি ওটি, মধুমালাই জাতীয় উদ্যান, কন্যাকুমারী, চেন্নাই, মহাবলীপুরম, কোদাইকানালের প্রাকৃতিক শোভা এ রাজ্যকে গর্বিত করেছে।
কিভাবে যাবেন
বাংলাদেশ থেকে বাস, ট্রেন, বিমান সব মাধ্যমে ভারত যাতায়াত করতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
ভারত পর্যটন বান্ধব দেশ। সুতারাং টুরিস্টদের থাকার জন্য সব টুরিস্ট প্লেসে, আবাসিক হোটেল, সরকারি বেসরকারি লজ,এবং হলিডে হোম রয়েছে।।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)