বিলাইছড়ি ভ্রমণ-

বিলাইছড়ি (Belaichari) পুরো এলাকাটিই রূপলাবণ্যে অনন্য। রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা সদরের পুবদিকে দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছে ছবির মতো পাহাড় সারি বা রেঞ্জ।। সেসব পাহাড়ে বসবাস কারীরা গোত্র ধর্ম, জীবন জীবিকার এবং ঐতিহ্য গত দিক থেকে একে অন্যের চেয়ে বৈচিত্র‍্যপূর্ণ।। কাপ্তাই থেকে ইন্জিন চালিত নৌকাগুলো পাহাড়ের কোলঘেষেঁ লেক দিয়ে ভিতরের দিকে বয়ে চলে, তখন চোখ ঝলসে যায় ছবির মতো সুন্দর এই দৃশ্য দেখে।। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য্যে কাছ থেকে উপভোগ করা সৌভাগ্যের বিষয়।।

নামকরণঃ

বিলাইছড়ি চাকমা শব্দ থেকে উৎপত্তি। চাকমা উপজাতীয় অর্থে বিলাই এর অর্থ বিড়াল আর ছড়ি এর অর্থ পাহাড় হতে প্রাবাহিত ঝর্ণা বা ছড়া। বিলাইছড়ি নামের সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও এলাকার বয়ো বৃদ্ধদের মতে বহু বছর পূর্বে এ এলাকা অরণ্য ঘেরা ছিল। একদিন কিছু সংখ্যক পাহাড়ী লোক কাঠ কাটার উদ্দেশ্যে এ এলাকায় আসে এবং সে সময়ে এক বিরাট বন বিড়ালের মুখোমুখি হয়। বিড়ালের ভাবমূর্তি হিংস্র মনে করে তারা তাকে তাড়াবার চেষ্টা করলে বিড়ালটিও তাদেরকে আক্রমণ করে এবং উভয়ের মধ্যে ধস্তাধিস্ত শুরু হয়। শেষ পর্যায়ে বিড়ালটিকে মেরে ফেলা হয়। পরে এই বিড়ালটিকে পাড়ায় নিয়ে আসা হয়। পাড়া প্রতিবেশীরা এতবড় বন বিড়াল দেখে আশ্চর্য হয় এবং বিরাট সামাজিক অনুষ্ঠান করা হয়। এরপর থেকেই এলাকাটি বিলাইছড়ি নামে আখ্যায়িত হয়।

বিলাইছড়ি
ছবিঃ বিলাইছড়ি

বিলাইছড়ি ভ্রমণের দর্শনীয় স্থানঃ

ধুপপানি ঝর্ণা

ধুপপানি ঝর্ণা বড়থলি ইউনিয়নের ওড়াছড়ি নামক স্থানে অবস্থিত এ ঝর্ণাটিকে স্থানীয়রা দুপপানি ঝর্ণা নামেও ডেকে থাকে। স্থানীয় শব্দে ধুপ অর্থ সাদা আর পানি যুক্ত করে এটিকে সাদা পানির ঝর্ণাও বলা হয়।ধুপপানি ঝর্ণা বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার একটি ঝর্ণা যা ফারুয়া ইউনিয়নের ওড়াছড়ি নামক স্থানে অবস্থিত। স্থানীয়রা দুপপানি ঝর্ণা নামেও ডেকে থাকে। স্থানীয় শব্দে ধুপ অর্থ সাদা আর পানি যুক্ত করে এটিকে সাদা পানির ঝর্ণাও বলা হয়।ঝর্ণাটি লোক চক্ষুর অন্তরালে ছিলো। ২০০০ সালের দিকে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী গভীর অরণ্যে দুপপানি ঝর্ণার নিচে ধ্যান শুরু করেন। পরে স্থানীয় লোকজন জেনে ঐ বৌদ্ধ ধ্যান সন্ন্যাসীকে দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময় বা উপলক্ষ্যে সেবা করতে গেলে এই ঝরনাটি জন সম্মুখে পরিচিতি লাভ করে।

মুপ্পোছড়া ঝর্ণা

মুপ্পোছড়া ঝর্ণা অন্যতম বৃহত্তম ঝর্ণা। বাঙ্গালকাটায় বিলাইছড়ি থেকে শুধুমাত্র নৌপথেই যাওয়া সম্ভব। আর বাঙ্গালকাটা থেকে মুপ্পোছড়া ঝর্ণা শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব।মুপ্পোছড়া ঝর্ণা রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বাঙ্গালকাটা নামক জায়গায় অবস্থিত। মুপ্পোছড়া ঝর্ণাটিতে একটি মাত্র ঝরা থাকলেও প্রস্থের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় ঝর্ণা।

গাছকাটা ছড়া ঝর্ণা

কাপ্তাই থেকে বিলাইছড়ি যাওয়ার পথে গাছকাটা ছড়া আর্মি কাম্প পরবে। সেখানে নাম এন্ট্রি করে ট্রলারে ১০ মিনিট এগুলেই এই ট্রেইল শুরু হয় । অসাধারন একটি ঝর্ণা । পানির প্রবাহ একটু বেশি হলে অপরুপ সুন্দর লাগে । ট্রেইল টি শেষ করতে ৪ ঘণ্টা র মত সময় লাগে। মোটামুটি সহজ এই ট্রেইলের শুরুতে গ্রামের কাদা রাস্তা ধরে ১ ঘণ্টা হাটতে হয়। তারপর ঝিরিপথ ধরে এগুলে সেই কাঙ্ক্ষিত ঝর্ণা।

দুমলং

বাংলাদেশের একটি পর্বতশৃঙ্গ। বেসরকারিভাবে এটিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বলে দাবী করা হয়। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। এ পর্বতের উচ্চতা ৩,৩১৪ ফুট। এটি রাঙ্গামাটি জেলার সর্বোচ্চ পর্বত ও দেশের ১০০০ মিটারের অধিক উচ্চতার ৩ টি পর্বতের মধ্যে একটি।ন-কাবা ছড়া ঝর্ণাঃপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অনন্য মনভোলানো দর্শনীয় স্থান হলো ন-কাবা ছড়া ঝর্না। বিলাইছড়ি সদরে এর অবস্থান। পানি প্রবাহিত ছড়াটি পাহাড়ের উপর আকা-বাকা পাহাড় পথ হেটে এই ঝরনা দেখতে যাওয়া রোমাঞ্চকর। এই ঝরনার দৃষ্টি নন্দন শৈল্পিক সৌন্দর্য অবলোকন করে চারদিকে তাকালে প্রকৃতির বিচিত্র রূপ ও পাহাড়ি ঢেউ ছাড়া আর কিছুই নজরে পড়েনা।ন-কাবা ছড়া ঝর্ণা বিলাইছড়ি সদরস্থ লঞ্চঘাট নতুবা নলছড়ি নামক স্থান থেকে ইঞ্জিন বোটে করে বিলাইছড়ি ডেবার মাথায় এসে ওখান থেকে ন-কাবা ছড়া ঝর্ণায় যেতে হয়।

রাইংখ্যং পুকুর

রাইংখ্যং পুকুর এটি বিলাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত হলেও বিলাইছড়ি-ফারুয়া হয়ে এখানে যোগাযোগ করা অত্যন্ত কষ্টকর। কেউ চাইলেও পায়ে হাঁটা ছাড়া বিকল্প নেই। বিলাইছড়ি থেকে বড়থলি যেতে প্রায় ৭ দিন সময় লাগে। তাই এখানকার লোকজন বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা দিয়ে এখানে আসা যাওয়া করে।কাপ্তাই হ্রদঃকাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃত্রিম এ হ্রদ রাঙ্গামাটি জেলার রাঙ্গামাটি সদর, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়ি, লংগদু ও নানিয়ারচর উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত।

কাপ্তাই হ্রদ

কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের বৃহত্তম কৃত্রিম এ হ্রদ রাঙ্গামাটি জেলার রাঙ্গামাটি সদর, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়ি, লংগদু ও নানিয়ারচর উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে শ্যামলী, মডার্ন বা এস আলম বাসে করে কাপ্তাই এসে কাপ্তাই জেটিঘাটস্থ লঞ্চঘাট থেকে ইঞ্জিনবোটে করে বিলাইছড়ি আসবেন। রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে সড়কপথে বিলাইছড়ি উপজেলায় যোগাযোগের জন্য কোন সড়ক নেই,বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ৩/৪ ঘন্টার মধ্যে বিলাইছড়ি আসা যায়। কেউ চট্টগ্রাম থেকে বিলাইছড়ি আসলে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে প্রথমত কাপ্তাই জেটিঘাটে আসবেন। এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকেও ইঞ্জিনবোটে করে বিলাইছড়ি যাওয়া যায়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭ টায় রাঙ্গামাটির তবলছড়ি ঘাট থেকে ইঞ্জিনবোট যাত্রী নিয়ে সকাল ১০টার মধ্যে বিলাইছড়ি পৌঁছে। ওই বোটটি আবার বিলাইছড়ি থেকে দুপুর ২টার মধ্যে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ছাড়ে। তাছাড়া বিলাইছড়ি থেকে সকাল সাড়ে ৭টায় রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ইঞ্জিনবোট ছেড়ে ওইটি রাঙ্গামাটি তবলছড়ি ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে দুপুর ২টায় বিলাইছড়ির উদ্দেশ্যে ছাড়ে। বিলাইছড়ি থেকে অন্য একটি ইঞ্জিনবোট সকাল সাড়ে ৮টায় রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে ওইটি রাঙ্গামাটি রিজার্ভ বাজার মসজিদ ঘাট থেকে ৩টায় বিলাইছড়ির উদ্দেশ্যে ছাড়ে।

ট্রলারের জন্য যোগাযোগ

০১৮৬১৭৯২৪৫২(মাঝি)

বোটভাড়াঃ(১০০০-১৫০০) কাপ্তাই -বিলাইছড়ি..(৬০০-৮০০)বিলাইছড়ি – বাঙালকাটা

থাকার ব্যবস্থা

বিলাইছড়িতে রাত্রিযাপনের জন্য জেলা পরিষদ রেস্ট হাউস ছাড়াও বিলাইছড়ি বাজারস্থ নিরিবিলি বোডিং উল্লেখযোগ্য। বিলাইছড়ির নিরিবিলি বোর্ডিং এ থাকতে পারেন।এখানে সিঙ্গেল বেড ভাড়া ৩০০ এবং ডাবল বেড ভাড়া ৫০০টাকা।।যোগাযোগঃ ০১৫৫৩-১২৮৬৭৩, ০১৮২৭-৭২২৯০৫

খাওয়া দাওয়া

বিলাইছড়ি উপজেলা সদরে স্বল্পপরিসরে কয়েকটি খাবার হোটেল রয়েছে। খাবার হোটেল গুলো মাঝারি মানের। খুব বেশি কিছু আশা করা ভুল হবে। বিলাইছড়িতে বকুলের দোকানে খেতে পারেন

নোটঃ বিলাইছড়ি উপজেলাটি পার্বত্য অঞ্চলের অংশ হওয়ায় স্থানটিতে বাংলাদেশের অন্য অঞ্চলের মানুষ প্রবেশের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জাতীয় পরিচয়পত্র, কিংবা পাসপোর্টের ফটোকপি, কিংবা যে কোন পরিচয়পত্র সাথে থাকতে হয়, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রদর্শন সাপেক্ষে ওই সকল এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং।।

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন আমাদের করুন ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ