নিকলী হাওর-
নিকলী হাওর (Nikli Haor) বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি হাওর। হাওরের সবটুকু সৌন্দর্য যেন নিকলীতে গেলেই দেখা যায়। চারপাশে জলরাশি তার মাঝখান দিয়ে পিচঢালা পথ। এই পথ ধরে যতই এগিয়ে যাবেন; ততই হাওরের সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে আপনাকে। বর্ষার এই মৌসুমে হাওরের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এখনই উত্তম সময় হাওরে ঘুরে বেড়ানোর। চাইলে সময় করে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন নিকলী হাওরে। বিশাল জলরাশির বুকে বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট গ্রাম। যেন একেকটা ছোট ছোট দ্বীপ। হাওরজুড়ে গলা ডুবিয়ে থাকা হিজল গাছের সারি বা পানির নিচ থেকে জেগে ওঠা করচের বন কিংবা শুশুকের লাফ-ঝাঁপ মুহূর্তেই আপনার মন ভালো করে দেবে। কিশোরগঞ্জ হাওর এমনই। নিকলী উপজেলা ছাড়াও এই হাওরের পরিধি পার্শ্ববর্তী মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও ইটনা উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির জলাভূমি ও জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। বাংলাদেশের বড় হাওর গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
নৌকা চলতে শুরু করা মাত্রই হারিয়ে যেতে হয় জলরাশির রাজ্যে। দূর থেকে আরো যত দূরে চোখ যাবে, স্নিগ্ধ গ্রামের মতোই শান্ত অথৈ পানি প্রাণ জুড়িয়ে দেবে। জলের সীমানা শেষ হতেই যেন বিস্তৃত আকাশ। তারই মাঝখানে কিছু ঘরবাড়ি। নৌকার চালকদেরই বসবাস এখানে। মাছ ধরার সঙ্গেও জড়িত এ অঞ্চল। বর্তমান সময়ে এদেশে যতগুলো হাওর বাওর আছে, তার মধ্যে নিকলী হাওরে ভ্রমন করাটা দেশি বিদেশী পর্যটকদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষনীয় হয়ে দাড়িয়েছে। চারদিকে অথৈ জল, সেই জলের মাঝে হাওর অন্ঞ্চলের মানুষের জনজীবন বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে নৌকায় করে তাদের যাতায়াত, মাঝিদের মাছ ধরার দৃশ্য, হাওরের মাছে দুপুরের খাবারের আয়োজন, কোথাও জেগে ওঠা চরে জলারবনের মাঝে যদি নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চান, তাহলে নিকলী হাওর ভ্রমন হতে পারে আপনার কাছে আর্দশ একটা স্হান। আর যারা একদিনের ট্যুর পছন্দ করেন তাদের জন্য বেস্ট একটা অপশন হতে পারে নিকলী হাওরে ভ্রমন।
হাতের কাছে আরেক রাতারগুল
হাওরে ঘুরতে ঘুরতে চলে যাবেন ছাতিরচরে। পানির নিচে ডুবন্ত এক সবুজ বন। লেয়ারে লেয়ারে সাজানো সুবজ গাছ। গাছের বুক বরাবর পানিতে ভাসতে থাকবেন আপনি। হুট করে দেখে আপনার কাছে মনে হতে পারে এটা আরেক রাতারগুল। নিকলী বেড়িবাঁধ থেকে নৌকায় সরাসরি ছাতিরচর যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। নৌকায় ৩ ঘণ্টা ঘুরলে মোটামুটি অনেকটা জায়গা ঘুরে আসতে পারবেন।
পানিতে দ্বীপের মত ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম, স্বচ্ছ জলের খেলা, মাছ ধরতে জেলেদের ব্যস্ততা, রাতারগুলের মত ছোট জলাবন ও খাওয়ার জন্যে হাওরের তরতাজা নানা মাছ। এই সব কিছুর অভিজ্ঞতা পেতে চাইলে নিকলীর অপরূপ হাওর ভ্রমণ আপনার জীবনে মনে রাখার মত একটি ভ্রমণ হিসেবে গেঁথে থাকবে।
হাওরে কিভাবে ঘুরবেন
হাওরে ঘুরে বেড়ানোর পূর্বেই দুপুরের খাবার খেয়ে নেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে। কারন নৌকায় করে ২-৩ ঘন্টা ঘুরাঘুরি করতে করতে অনেক বেলা হয়ে যাবে। তাছাড়া হাওরের মাঝে খাবারের ব্যবস্থাও পাবেন না। এছাড়া মিঠামইন গিয়ে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। এরপর দামাদামি করে একটা ভালো মানের নৌকা ভাড়া করুন । মুলত নিকলীতে দেখার মত ছাতির চর গ্রামটাই আছে। যেখানে পাবেন একটি জলারবন। এখানে কিছুক্ষণ থেকে গোসল করে নিতে পারেন। তাছাড়া উপভোগ করতে পারবেন সুনামগঞ্জের মত পানিতে অর্ধ নিম্মজিত হিজল গাছের দৃশ্য। যা সত্যিই চোখে পড়ার মত দৃশ্য। দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির মাঝে প্রকৃতির এ অপরূপ দৃশ্যে নিজেকে হারিয়ে নিতে পারেন কিছু সময়ের জন্য।
আশেপাশের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান
- মিঠামইন হাওর
- অষ্টগ্রাম হাওর
- ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রাম সড়ক
রাত কাটাতে পারেন নৌকায়
ভরপুর কোনো পূর্ণিমা রাতের গাঢ় নীল আকাশের নিচে নৌকার ছাদে কাটিয়ে দিতে পারেন পুরো একটি রাত। ওখানে রাতে থাকাটা মোটামুটি নিরাপদ। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে। তবে পুরোপুরি নিরাপত্তার জন্য নিকলী থানায় ইনফর্ম করে নিতে হবে। তাহলে চিন্তামুক্ত ও আরামদায়ক একটি রাত কাটাতে পারবেন আপনি। রাতে অবশ্যই বেড়িবাঁধের কাছাকাছি কোনো স্থানে অবস্থান করতে হবে। যদিও নিকলীতে ডাঙায় থাকার কোনো সুব্যবস্থা নেই, তবে ইমার্জেন্সি থাকার প্রয়োজন হলে নিকলী থানা পুলিশের আওতায় একটি ডাকবাংলো আছে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে সেখানে ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। এটাও যদি না হয়, তাহলে তো হাতের কাছে কিশোরগঞ্জ শহর আছেই।
নিকলী হাওরে ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
যদি হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাহলে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে বর্ষাকালের জন্য। সাধারনত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে গেলেই দেখা পাবেন দিগন্ত বিস্তৃত এই হাওরটিকে। তবে, বছরের অন্য সময়গুলোতে আসলে পাবেন ভিন্ন এক রূপ।
কীভাবে যাবেন
দেশের যেকোনো স্থান থেকেই আপনি গাড়ি কিংবা বাস অথবা ট্রেনে নিকলী হাওরে আসতে পারেন। বাসে ঢাকার মহাখালী কিংবা সায়দাবাদ থেকে ১৯০-২২০ টাকার ভেতর আসতে পারবেন। মহাখালী থেকে জলসিঁড়ি বাসের মাধ্যমে এবং সায়দাবাদ থেকে অনন্যা সুপার দিয়ে আপনি সরাসরি কটিয়াদি বাস স্ট্যান্ডে চলে আসবেন। কটিয়াদি থেকে নিকলী যেতে সময় লাগবে দেড় ঘন্টা।
কোথায় খাবেন
নিকলী বেড়িবাঁধ সংলগ্ন কিছু খাবার হোটেল পাবেন। যেখানে খুব কম খরচেই দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। ১২০ টাকা থেকে প্যাকেজ অনুযায়ী বিভিন্ন রেটের মধ্যে খাবার পেয়ে যাবেন। খাবারের আইটেমের মধ্যে মাছ রাখবেন। কারন, হাওরের মাছ খাওয়ার এমন সুযোগ আর কোথাও পাবেন না।
কোথায় থাকবেন
নিকলিতে থাকার মত ভালো কোন ব্যবস্থা নেই। কেউ চাইলে কিশোরগঞ্জ সদরে এসে কোন হোটেলে থাকতে পারেন।
ভ্রমণ সতর্কতা
- সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট সাথে করে নিয়ে যাবেন।
- নৌকার ওপর লাফালাফি করবেন না।
- সন্ধ্যার পর নৌকায় ভ্রমণ করবেন না।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং।।
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)