দেবতাখুম ভ্রমণ-
দেবতাখুম (Debotakhum) অপরূপ বান্দরবনের খুম এর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও বড় খুম হলো দেবতাখুম। খুমের স্বর্গরাজ্য হচ্ছে বান্দরবন। খুম অর্থ হলো জলাধার। বান্দরবনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় অনেক খুম। আর এই খুমেই লুকিয়ে আছে বিশালাকার ঘন ঘন জঙ্গল এবং এর খাড়া পাহাড়ের কারণে দিনের বেলায় ও ভিতরে সূর্যের আলো ঠিকমতো পৌঁছে না। ভেলা ভাসিয়ে যতই আপনি এর গভীরে যাবেন ততই পরিবেশ ঠান্ডা শীতল ও নিস্তব্দত হতে থাকবে। নিস্তব্দতা এতটাই থাকবে যে আপনি দূর থেকে পাতার গা ভেদ করে পানি পড়ার শব্দও স্পষ্ট শুনতে পারবেন। সুনসান নীরবতায় ঘেরা দেবতাখুম। পৃথিবীর সমস্ত নীরবতা যেন এখানে এসে জমা হয়েছে। প্রশান্তি নিয়ে ভেলায় শুয়ে তৃপ্তির ঘুম অসম্ভব কিছুই নয়। খুমের দুদিকে বেড়ে ওঠা দানবাকৃতির পাহাড় যেন খুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে দিয়েছে কয়েকগুণ।
সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক লীলা
দেবতাখুম ভ্রমণে শুরু থেকে রোমাঞ্চ হাতছানি দিয়ে যায়। বিশালাকার পাথরের ঢালের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝরনা নদীর দৃশ্য যেন এক কল্পনা। দেবতাখুমে যাওয়ার আগেই পড়বে ছোট্ট এক খুম। যার নাম ‘পং সু আং খুম’। এই খুমে সাতার কেটে বা এর সঙ্গে লাগোয়া গাছের শিকড় ধরে ঝুলে ঝুলে যেতে হয় দেবতাখুমে। এর পথ যেমন সুন্দর; তেমনই ভয়ংকর। ভেলা ছাড়া দেবতাখুমে যাওয়ার উপায় নেই। ভেলা নিয়ে যতোই এগিয়ে যাবেন; ততোই জায়গাটা সরু হবে! এমনো জায়গা ভেলা দিয়ে পাড় হবেন যেখানে সূর্যের আলো খুবই কমই ঢুকে চারপাশে সুনসান নীরবতা। একটু পরপর সেই নীরবতা ভাঙছে টুপটাপ পানি পড়ার শব্দ আর জলপথ ধরে চলা ভেলার আওয়াজে। বান্দরবানের দেবতাখুমের এই ভুতুড়ে পথ ধরে এগোতে এগোতে যে কারও মনে হতে পারে—সত্যিই বুঝি এখানে একদিন দেবতাদের আনাগোনা ছিল! বড় বড় দুই পাহাড়ের মাঝখানে এই খুম। খুমের ভেতরের দিকটা এতটাই অন্ধকার—সূর্যের আলোর দেখা মেলা বড় কঠিন। প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে উপভোগ করতে চাইলে এর চেয়ে ভালো কিছু হয় না। প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে উপভোগ করতে পারবেন এখানটায়। যেন মিশে যাবেন প্রকৃতির সাথে। যাওয়ার পথই আপনাকে বলে দিবে – স্বর্গের পথ কতটা সুন্দর হতে পারে। খুমের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০০ ফুট। পথিমধ্যে অসংখ্য পাথর গতিপথ পাল্টে দেয়। মূলত ভেলা ও পাথরের সংঘর্ষে এই ঘটনাটি ঘটে। বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার প্রমাণ দিয়ে নিজের ভেলাকে উদ্ধার করে নিতে হয়। ভেলা নিয়ে যতই ভেতরে প্রবেশ করবেন, ততই নিজেকে ভীষণ সুখী মানুষ মনে হবে। খুমের অপার্থিব মায়াবী দৃশ্যে মুগ্ধ হয়ে পর্যটকরা সামনে এগোতে থাকে। সামনে দেখা মেলে সরু পথের, তখন মোড় ঘুরিয়ে আবারও সোজা আকৃতিতে আনতে হয় ভেলা। আরও খানিকটা পথ সামনে এগোলেই খুমের শেষ প্রান্তের দেখা মিলবে। ৬০০ ফুটের এই পথ পাড়ি দিতে সময়ের প্রয়োজন হবে আনুমানিক ১ ঘণ্টা। যাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, তাদের সময় তুলনামূলক বেশি লাগবে। খুমের শেষ প্রান্তে পাথুরে পরিবেশে তীব্র স্রোতের দেখা মেলে। সামুদ্রিক স্রোতের খণ্ডচিত্র বলা চলে। ভেলা থেকে নেমে পাথরের বুকে পা রাখার পরক্ষণেই মনে হবে স্বপ্নরাজ্যে বিচরণ চলছে। রোদের ঝিলিক পাহাড় বেয়ে খুমের পানিতে পড়লে, প্রকৃতি হলুদাভ বর্ণে ফুটে ওঠে। শারীরিক কসরত বেশি হলেও খুমের অকল্পনীয় সৌন্দর্যের রূপ সকল ক্লান্তি মুছে দেবে। অসম্ভব রকমের এডভেঞ্চার, একেবারে মনকে ভয়ার্ত করে দেয়ার জন্যে পারফেক্ট দেবতাখুম। ট্রেকিং, এডভেঞ্চার, রিস্ক, ভেলার কায়াকিং সবকিছুর একটি কম্বো প্যাকেজ এই দেবতাখুম। একেবারে নেটওয়ার্ক এর বাইরে, ভিন্ন এক পরিবেশ। আশেপাশের সব সুনসান। শব্দ হিসেবে থাকবে উপর থেকে পানির ফোটা পরার শব্দ, নিজেদের ভেলার আওয়াজ এবং আপনার কথারই প্রতিধ্বনি! আশেপাশের পরিবেশটা এত ভুতুড়ে আর নিরবতার যে এটা আপনাকে সত্যি সত্যিই রিয়্যল এডভেঞ্চারের ফিল এনে দিবে। দেবতাখুম এর ট্রেইল যেমন সুন্দর তেমনি ভয়ংকর। বর্ষায় গেলে ট্রেইলের ঝিরি/পাহাড়ের রূপে যেমন আপনার চোখ আটকাবে তেমনি পিচ্ছিল পাথুরে পথে পা ফসকে বড় ধরনের বিপদে পড়ার আশঙ্কাও থাকে পদে পদে।
দেবতাখুম সম্পর্কেঃ
দেবতাখুম (Debotakhum) বান্দরবন জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। বান্দরবন এর উল্লেখযোগ্য খুম গুলর মধ্যে রয়েছে সাতভাই খুম, ভেলাখুম, আমিয়াখুম, শিয়াখাবা খুম, মাথভরা খুম, নাইয়াখাং খুম, নাফাখুম, দেবতাখুম। খুম মানে জলাধার, যেখানে জল আটকে থাকে। খুম গুলর মধ্যে দেবতাখুম নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সুন্দর এবং সহজে ভ্রমণযোগ্য। দেবতাখুম এর (Debotakhum) স্থানীয় নাম নাই আইং। দেবতাখুম এর অবয়ব দেখে সহজেই অনুমান করা যায় যে কাল ও প্রকৃতির বিবর্তনে পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাটলের কারনে দেবতাখুম সৃষ্টি হয়েছে। নির্জন ও কোলাহলহীন নীরব প্রকৃতির এলাকা হিসেবেই সকলের কাছে সুপরিচিত।
বান্দরবনের রোয়াংছড়ির দেবতাখুম এলাকাটি। দেবতাখুম নাম হলেও এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো দেবতা বা মূর্তি পাওয়া যায় না। নেটওয়ার্কের সম্পূর্ণ বাহিরে, নির্জন ও শব্দ বিহীন দেবতাখুম।
শিলবান্ধা পাড়াঃ
প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা ঝিরিপথ ধরে হাঁটার পর শিলবান্ধা পাড়া (Shilbandha Para)। পাহাড়ের বুকে মারমা উপজাতিদের বসবাস। তাদের আবাসভূমির উপর দিয়েই পর্যটকদের পদচারণা। শিলবান্ধা পাড়ার বেশিরভাগ ঘরগুলো মাটি থেকে দুই ফুট উপরে অবস্থিত। এটিই তাদের ঘর তৈরির নিয়ম। পর্যটকদের ক্যামেরায় হরহামেশাই বন্দি হয় এই ঘরগুলো। অথচ যাদের ঘর নিয়ে পর্যটকদের এত উন্মাদনা, তাদের নেই পর্যটকদের নিয়ে তেমন আগ্রহ। স্থানীয় মারমা সদস্যরা নিজেদের কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। প্রযুক্তি আর ইট পাথরের ভিড়ে আমাদের প্রকৃত গ্রামীণ জীবনধারা হারিয়ে যেতে বসলেও এই শিলবান্ধা পাড়ায় মাটি ও মানুষের অবিকৃত গ্রাম এখনো টিকে আছে। পাহাড়ি মানুষগুলোর বাড়ির উঠোন ধরে এগোলেই পাওয়া যায় গহীন অরণ্যে লুকিয়ে থাকা দেবতাখুম। মাঝে পর্যটকদের বসার ও হাল্কা নাস্তার জন্য দোকান আছে। এখানে ছোট্ট একটি ব্রেক নিয়ে নিতে পারেন প্রয়োজনে।
দেবতাখুম নাম করনের ইতিহাসঃ
এই দেবতাখুম নিয়ে নানা রূপকথা প্রচলিত আছে। এই খুমে বিরাট বড় একটা কচ্ছপ অথবা অন্য কোনো নাম না জানা একটি প্রাণী রয়েছিল। যার ওজন ছিল অন্তত ২ মনেরও বেশি। নাম না জানা বিশাল আকৃতির এই প্রাণীটিকে অনেকেই নিজ চোখে দেখেছে বলে তাদের মন্তব্য।
তারই একটি হলো, ঘটনাটি ১৯৮২ সালের। শীলবাঁধা গ্রামের হাতে গোনা ২/১ জনই এখানে মাছ ধরতে আসতো। ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ তারাছা খালের ঝিরিপথ ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আশা একটাই, যদি গভীর আর বুনো অরণ্যে ঘেরা এই খুম থেকে বেশি মাছ পাওয়া যায়। ঘুরতে ঘুরতে বৃদ্ধ কখন যে খুমের একদম গভীরে বিশাল এক পাথরের কাছে চলে এসেছেন, বলতেই পারেন না। মাছ ধরার ফাঁকে হঠাৎ করেই দৈত্যাকৃতির এক কচ্ছপ দেখে ভয়ে নিজের প্রাণ নিয়ে দৌড়ে পালান তিনি। শীলবাঁধা পাড়ায় ফিরে এসে বৃদ্ধের প্রচণ্ড জ্বর আসে রাতে। ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখেন সেই কচ্ছপ তাকে বলছে, ‘আমাকে ভয় পাসনে। বরং আমার কথা সবাইকে বলবি। আমি তোদের দেবতা। তোরা যখন মাছ ধরতে যাবি, তখন ওই রাজ পাথরের ওপর পুজোর থালি সাজিয়ে প্রার্থনা করে অনুমতি নিয়ে নিবি। আর খবরদার, আমার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করবি না। এর পরিণতি ভালো হবে না। যদিও এই গল্প নিয়ে ভিন্নমতও আছে। তখন থেকেই এর নাম দেবতাখুম। দেবতাখুমের পাশেই শীলবাধা বয়ে চলা ঝর্ণা। অদ্ভুত যার সৌন্দর্য। চাইলেই সেখানে যেয়ে গা ভিজিয়ে শিক্ত হয়ে আসতে পারেন। পথ দিয়ে চলতে চলতে পাবেন মেঘমালা। কি দারুন দেখতে!!!
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়ঃ
নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত দেবতাখুমে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। বৃষ্টির সময় খুম একদম পানি দিয়ে ভরা থাকে, তাই অনেকদূর পর্যন্ত ভেলা নিয়ে যাওয়া যায়। বর্ষায় খুমের পানি আরও বেড়ে যায়। তখন সেখানে যাওয়া বেশ কষ্টকর। পিচ্ছিল পাথুরে পথে পা ফসকে বড় ধরনের বিপদে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
কোথায় খাবেনঃ
সেনাবাহিনীর কাছে চেক ইন করার পর আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দুপুরের খাবার আপনি কচ্ছপতলী বাজারে খাবেন, নাকি দেবতাখুমের পথে পাহাড়িদের বাড়িতে। অনেকেই স্থানীয়দের হাতে তৈরি রান্না খেতে ভালোবাসেন। পাহাড়ি জুমের তৈরি চাল, লাল মুরগির সমন্বয়ে সুস্বাদু খাবারের আয়োজন থাকে সেখানে। এক্ষেত্রে গাইডের সঙ্গে আগে থেকেই আলোচনা করে রাখলে গাইডই সব ব্যবস্থা করে দেয়। গাইডের নির্দেশনানুযায়ী ভ্রমণ করলে দেবতাখুম সফর অনেকখানি সাবলীল হয়ে যায় পর্যটকদের জন্য।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে বান্দরবন-
দেবতাখুম যেতে হলে প্রথমে বান্দরবন যেতে হবে। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে হবে। ঢাকা থেকে এসি/নন এসি সব ধরনের বাসই বান্দরবন যায়।
বান্দরবন থেকে দেবতাখুম-
বান্দরবন শহর থেকে প্রথমেই রোয়াংছড়ি পৌঁছাতে হয়। সেখানে দর্শনার্থীদের পরিচয়পত্র রোয়াংছড়ি থানায় জমা দিতে হয়। সকলের জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ আবশ্যক। দেবতাখুম ভ্রমণে গাইড ছাড়া এক পা-ও এগোতে দেবে না স্থানীয় প্রশাসন। রোয়াংছড়ি থানায় নাম-ঠিকানা জমা দেওয়ার পর কচ্ছপতলী বাজারে লিরাগাঁও সেনাবাহিনী ক্যাম্পে আবারও জমা করতে হয় দর্শনার্থীদের নাম-ঠিকানা। কচ্ছপতলী বাজার থেকে দেবতাখুম পৌঁছানোর রাস্তা দুটি। একটি পাহাড়ি পথ, অপরটি ঝিরিপথ। যাওয়ার দুইটি রাস্তা আছে, একটি পাহাড়ি রাস্তা(একটু কষ্টকর) অন্যটি ঝিরি পথ। চাইলে কেউ এক রাস্তায় গিয়ে অন্য রাস্তায় ফেরত আসতে পারেন।
পাহাড়ি পথঃ
পাহাড়ি পথের যাত্রায় একে একে তিনটি পাহাড় মাড়াতে হবে। তিনটি পাহাড় পেরিয়ে আপনার উপলব্ধি হবে, পর্যটক ও স্থানীয় মারমা সম্প্রদায়ের কৃষিকাজ করা ব্যক্তিদের পদচারণায় পাহাড়ের বুকে মাটি অনেকখানি সিঁড়িতে রূপ নিয়েছে। পঞ্চাশ মিনিট এর পথ পেরিয়ে প্রথম দেখা পাবেন ঝিরিপথের। এবং আর একটু এগোলেই শীলবাধা পাড়া। এখান থেকেই দেবতাখুমের মূল আকর্ষণ শুরু। একটু সামনে এগোলেই ঝিরির পানি সবুজ হতে শুরু করে। বাকি পথটুকু পর্যটকদের দুবার নৌকায় পার করে দেয়। নৌকা সর্বদা প্রস্তুত সেখানে। লাইফ জ্যাকেট পরিধান বাধ্যতামূলক। দেবতাখুমের ভেতরে যাওয়ার জন্য বাকি দায়িত্ব আপনাকে পালন করতে হবে। আগে থেকে তৈরি ভেলায় বসে পথ পাড়ি দিতে হবে। কাঁচা বাঁশের শক্তপোক্ত ভেলা রূপকথার উড়ে যাওয়া চাদরের মতো লাগে। দেবতাখুমের পানি সবুজ ও ঠাণ্ডা। শীতের মৌসুমেও প্রশান্তির বার্তা দিয়ে যায়।
ঝিরিপথঃ
ঝিরিপথে নাম-পরিচয়হীন তিন থেকে চারটি ঝর্ণা রয়েছে। হেঁটে গেলে ১/১.৩০ ঘন্টার মত সময় লাগে। প্রতিটি ঝর্ণা শীতকালে মৃত থাকে, বর্ষায় জেগে ওঠে। আবেদনময়ী শীতকাল চিরকালই জীবনে অতীত ফেরত আনে। মানুষের ব্যস্ততম জীবনে একটুখানি প্রশান্তির আশ্রয় মেলে ভ্রমণের মাধ্যমে। জমে থাকা ভারী নিঃশ্বাস প্রকৃতির কোলে ছেড়ে দিয়েই শান্তি খোঁজার প্রয়াস থাকে সবার মাঝে। দেবতাখুম গহিন অরণ্যের মাঝে লুকিয়ে থেকেও দূর-দূরান্তের পর্যটকদের একটুখানি প্রশান্তির উপলক্ষ হয়ে আছে। খুমগুলো বান্দরবনের গহীন অরণ্যে অবস্থান করেও চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে যাচ্ছে বছরের পর বছর পর্যটকদের। তাই দেবতাখুমের সৌন্দর্য রক্ষার্থে পর্যটকদের ভূমিকাও কোনো অংশে কম নয়। সচেতনতা প্রতি পদেই জরুরি দেবতাখুম ভ্রমণে।
এ পথেই আবার ভেলা চালানো বন্ধ হয়ে যায় বর্ষাকালে। স্রোতের বিপরীতে ভেলা চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তখন স্থানীয় গাইডরাই নৌকা টেনে খুমের চমৎকার দৃশ্যে হারিয়ে যেতে সাহায্য করে দর্শনার্থীদের। স্রোতের বিপরীতে ঝিরিপথ দিয়ে সাধারণত বর্ষাকালে হেঁটে পার হওয়া যায় না। তখন পাহাড়ি পথ একমাত্র আশ্রয় দেবতাখুম যাওয়ার। শীতকালে গেলে আসা-যাওয়ার জন্য দুটো পথেই পা মাড়ানো যায়। একবেলা পাহাড় হলে অন্যবেলা ঝিরিপথ। সবকিছু দেখে, ছবি তুলে বিকেল ৫ টার মধ্যে আপনাকে আবার কচ্ছপ্তলি আর্মি ক্যাম্পে এসে রিপোর্ট করতে হবে।
সতর্কতা, প্রস্তুতি ও অন্যান্য তথ্যাদিঃ
• কচ্ছপ্তলি আর্মি ক্যাম্পে রিপোরটিং এর জন্য সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র রাখতে হবে।
• দেবতাখুম ভ্রমণের জন্য সাথে গাইড নিয়ে নিতে হবে।
• কচ্ছপ্তলির পরে ফোনে নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে না।
• দেবতাখুম বা শিলবান্ধা পাড়ায় ক্যাম্পিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
• ট্র্যাকিং এর জন্য সাথে ট্র্যাকিং ফ্রেন্ডলি জুতা বা স্যান্ডেল নিয়ে নিতে হবে।
• সাঁতার না জানলে পানিতে নামবেন না।
একঘেয়েমির জীবন আর কর্ম ব্যাস্ততাকে দুই দিনের ছুটি দিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দেবতাখুম থেকে। পাহাড়ের নিস্তব্ধতা, নির্জন সবুজ বনানী, পাখিদের কোলাহল আর স্বচ্ছ জলের আয়নায় একটু প্রাণশক্তি খুঁজে নেওয়ার আশায় চলে যেতে পারেন বান্দরবন। বান্দরবন আপনাকে কখনো নিরাশ করবেনা। সবসময়ই প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তির পাল্লা ভারি করেই ফিরেবেন বান্দরবন থেকে। আসলে শহরের ব্যস্তময় জীবনে ও ধুলোবালি, গাড়ির হর্ন, দূষিত পরিবেশ, রাস্তার যানজট, ঘনবসতি পেরিয়ে আমরা সবাই যখন অতিষ্ট। ঠিক তখনি আমরা শান্তি সহকারে বিশুদ্ধ শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য সবাই ব্যাকুল হয়ে উঠি।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)