তেওতা জমিদার বাড়ি
অবস্থানঃ
তেওতা জমিদার বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের প্রাচীন একটি জমিদার বাড়ি ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি উপজেলার তেওতা নামক গ্রামে অবস্থিত।মানিকগঞ্জে যে কয়টি জমিদার বাড়ী সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাথে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে, তেওতা জমিদার বাড়ী তার মধ্যে অন্যতম।।
ইতিহাসঃ
ইতিহাসবিদদের মতে, সতেরশ’ শতকে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি নির্মাণ করেছিলেন পঞ্চানন সেন নামক একজন জমিদার। জনশ্রুতি অনুসারে, পঞ্চানন সেন এক সময় খুবই দরিদ্র ছিলেন ও দিনাজপুর অঞ্চলে তিনি তামাক উৎপাদন করে প্রচুর ধনসম্পত্তির মালিক হওয়ার পর এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। পরবর্তিতে এখানে জমিদারি প্রতিষ্ঠিত করে জয়শংকর ও হেমশংকর নাম দুজন ব্যক্তি। ভারত বিভক্তির পর তারা দুজনেই ভারত চলে গেলে বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
বিবরনঃ
তেওতা জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। পদ্মা নদীর কোল ঘেষে কালের স্বাক্ষী বহন করে আসছে তেওতা জমিদার বাড়ী। এখানে বসবাস করতেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের ইসলামের সহধর্মীনি প্রমিলা দেবী। বহু ইতিহাস বহন করে আসছে এই জমিদার বাড়ী। এ প্রাসাদেই নজরুল, প্রমীলা দেবীর প্রেমে পড়েন ও লিখেছিলেন,
“তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সেকি মোর অপরাধ”
তেওতা জমিদার বাড়িটি মোট ৭.৩৮ একর জমি নিয়ে স্থাপিত। মূল প্রাসাদের চারপাশে রয়েছে আরও বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ও একটি বড় পুকুর। প্রাসাদের মূল ভবনটি লালদিঘী ভবন নামে পরিচিত। এখানে একটি নটমন্দিরও রয়েছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে নবরত্ন মঠ ও আর বেশ কয়েকটি মঠ। সবগুলো ভবন মিলিয়ে এখানে মোট কক্ষ রয়েছে ৫৫টি। রাজবাড়ি সংলগ্ন একটি স্থাপনা ‘নবরত্ন’ নামে পরিচিত ছিল যা পারিবারিক দেবতার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল। বসন্তকালীন দোলযাত্রা উৎসবের সময় এই মন্দিরটি ব্যবহার করা হত। এছাড়া নবরত্ন মঠে দুর্গাপূজার রঙিন উৎসবও উদযাপিত হত।
স্থাপত্যশৈলীঃ
কাচারি এবং দোলমঞ্চর মধ্যবর্তী পুকুরের পূর্বদিকের পাড়ে দোলমঞ্চটি স্থাপিত। এটি এখনও বেশ ভাল অবস্থায় টিকে আছে। নবরত্ন অংশটি ৫০×৫০ বর্গফুটের একটি বর্গাকার অট্টালিকা যা তিনটি ধাপে নির্মিত। প্রতিটি ধাপ মোট নয়টি ছোট কুটির সদৃশ ‘রত্ন’ দ্বারা শোভিত। রত্নগুলোয় অর্ধবৃত্তাকার তোরণসংযুক্ত প্রবেশমুখ আছে। এর একটি শিলালিপি থেকে জানা যায় এটি ১৮৫৮ সালে নির্মিত হয় এবং ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ১৯০৬ সালে এটি সংস্কার করা হয়। এর উচ্চতা ৭৫ ফুট।
যাতায়াত ব্যবস্থাঃ
মানিকগঞ্জ থেকে সড়ক পথে বাসযোগে শিবালয় যেতে হয়। দুরত্ব ২২ কি:মি:। বাসভাড়া ১৫/- টাকা। সেখান থেকে টেম্পু /রিক্সাযোগে যাওয়া যায়্। দূরত্ব ৬ কিঃমিঃ। টেম্পুভাড়া ১৫/- টাকা। রিক্সাভাড়া ৪০/- টাকা। রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা নেই।
কিভাবে যাওয়া যায়ঃ
ঢাকা থেকে বাসে আরিচা ঘাট এসে নামতে হবে। এরপর সি এন জি অথবা রিক্সা যোগে তেওতা যেতে হবে।এছাড়া নদী পথেও আসা যাবে। এজন্য নৌকায় আরিচাঘাটে এসে নামতে হবে। যমুনা নদী দিয়ে বাংলাদেশের যেকোন পয়েন্টে থেকে তেওতা জমিদারবাড়ী আসা যাবে।
কোথায় খাবেনঃ
ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় তেওতা জমিদার বাড়ি দেখে দিন দিনেই ফিরে আসা যায়।। খাবারের জন্য এখানে রয়েছে সাধারণ ও মাঝারি মানের হোটেল & রেষ্টুরেন্ট। তবে হাতে সময় থাকলে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী গ্রামের নিজামের মিষ্টির স্বাদ নিতে ভুল করবেন না।।
১৯৫৭ সাল থেকে এই বিস্তৃত জমিদারি বর্তমানে অযত্নে এবং পরিত্যাক্ত অবস্থায় টিকে আছে। যদিও প্রায় সম্পূর্ণ অংশই দখলদারীদের হাতে চলে গেছে। নির্মাণশৈলীর এবং কৌশলগত দিক থেকে তেওতার জমিদারদের অপূর্ব ভবনটিতে মুগল ও ইউরোপীয় স্থাপত্যের এক চমৎকার মিশ্রণ প্রতিফলিত হয়।
বি: দ্র: ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমাদের।।হ্যাপি_ট্রাভেলিং।।
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)