ডিবির হাওর ভ্রমণ-

ডিবির হাওর বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, যা “লাল শাপলার” বিল নামে পরিচিত। লাল শাপলার বিল এর অবস্থান মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়ের পাদদেশ ঝর্ণা বেষ্টিত এলাকায়। রাম সিংহের বিল এখন রূপ নিয়েছে লাল শাপলার রাজ্যে। স্বচ্ছ পানির উপরে লাল শাপলা ফুলের বড় এক প্রাকৃতিক স্বর্গ সৃষ্টি করে দাঁড়িয়ে আছে। আর লাল শাপলা রাজ্যের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকসহ সিলেট থেকে প্রকাশিত সব কয়েটি দৈনিক পত্রিকা এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ধারাবাহিক কয়েকটি প্রামাণ্য অনুষ্ঠান সম্প্রচার করার পর থেকে ডিবির হাওর এলাকার ৪টি বিল বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য সিলেট। সিলেটের উত্তর পূর্বে অবস্থিত জৈন্তাপুর উপজেলা। এই উপজেলা প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর। বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী ঐতিহাসিক জৈন্তাপুর ছিল জৈন্তা রাজার আধিপত্য।

সিলেটের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত পান-পানি-নারী খ্যাত জৈন্তাপুর উপজেলা। সিলেটের বিলগুলোও কিন্তু বেশ নামকরা। জৈন্তাপুর উপজেলা সেরকমই একটি জায়গা। এ উপজেলায় প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর। জৈন্তিয়া রাজ্যের রাজা রাম সিংহের স্মৃতিবিজড়িত ডিবির হাওর, কেন্দ্রীয় বিলসহ রয়েছে চারটি বিল। এখানে রয়েছে ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল ও কেন্দ্রীবিল। বিল গুলোর প্রায় ৯০০ একর ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে লাল শাপলার জন্ম।  বিলগুলোকে কেন্দ্র করেই নাম করা হয়েছে ডিবির হাওর। প্রতিদিন একান্তেই ভোরে তার নিজ নিজ সৌন্দর্য্য নিয়ে ফুটে ওঠে অপূর্ব অগণিত ফুল, তাদের সাথে দেখা করতে প্রতিদিন ভোর হওয়ায় সাথে সাথেই দলবেধে নৌকায় ভেসে বেড়ান অগণিত ভ্রমণপিয়াসু। সাথে বাড়তি আকর্ষণ হলো হাওরের পারেই পাহাড়ের সারি। ভারতের মেঘালয়ের সেই পাহাড় যেন মনে হয় সৃষ্টির আরেক স্বর্গ।

যেহেতু শীতকাল তাই নানা ধরণের পাখির দেখাও পাবেন আপনি এখানে। প্রতিবছর অসংখ্য পরিযায়ী পাখি আসে এই ডিবির হাওরে। ডিবির হাওরের পরিযায়ী পাখির অবিরাম ছুটে চলা,খুনসুটি, জলকেলি আর ডুব সাঁতারের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখনো অনেকের অজানা। শীতের মৌসুমে অতিথিদের বরণ করে নিতে ডিবির হাওর ও যেনো সেজেছে অপরূপ সাজে। প্রাচীন রাজার মৃত্যু স্মৃতি বিজরিত এ হাওর এখন পাখিদের রাজত্ব। সেখানে নিশ্চিতে বিচরণ করছে শীতের হাজার হাজার পাখি।বিশাল হাওর শুকিয়ে যেটুকু জলাশয় তাট ওপরই পাখিদের বিচরন বেশি।

ভোরের লাল শাপলা,পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য্যে, সাথে পাখির কিচির মিচির এ যেন আসলেই এক প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য। ভোরে নৌকায় ভেসে ভেসে দেখবেন অপরূপ লাল শাপলা, দূরের পাহাড়, সোনালি আকাশ সাথে পাখির কিচির মিচির। এ যেন পৃথিবীর এক টুকরো স্বর্গ রাজ্য। শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করবেন, তবে চেষ্টা করবেন আপনার দ্বারা এ সৌন্দর্য্য যেন নষ্ট না হয়। আসার পথে সময় থাকলে বাড়তি হিসেবে আপনি দেখে আসতে পারেন জৈন্তাপুরের ঐতিহাসিক রাজবাড়ী ও সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র। এগুলো আপনার আসার পথেই পাবেন।

যা যা দেখবেনঃ

শাপলার বিলে পৌঁছে আপনাকে নৌকা ভাড়া করে পুরো বিলের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে হবে। হাওরের মাঝখান দিয়ে বহমান কাঁচা রাস্তা। রাস্তার বাম পাশে নৌকা নিয়ে ঘুরতে চাইলে ভাড়া নির্ধারিত করা ৪০০ টাকা আর ডান পাশে ঘুরতে চাইলে ভাড়া ৩৫০ টাকা।

বাম পাশ দিয়ে গেলে আপনি লাল শাপলার সাথে বাড়তি সোন্দর্য হিসেবে একটি পুরনো মন্দির পাবেন সেই সাথে খুব কাছ থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মিতালীর হাতছানিও পাচ্ছেন। মন্দিরে নেমে আপনি হাঁটতেও পারবেন কিছুক্ষণ। আর ডান পাশ দিয়ে গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে আপনি কেবল লাল শাপলার সৌন্দর্যটাই উপভোগ করতে পারবেন। তবে ডান পাশ দিয়ে গেলে বাম পাশের তুলনায় শাপলা বেশি পাচ্ছেন। কারণ মন্দির আর মেঘালয়ের দৃশ্যে দেখতে বাম পাশ দিয়ে পর্যটকদের আনাগুনা বেশি থাকায় ডান পাশের উদিয়মান শাপলাগুলো দীর্ঘক্ষণ অক্ষত থাকে।

ডিবির হাওর যাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ

ডিবির হাওরের লাল শাপলা ফুল সাধারণত সেপ্টেম্বর -ডিসেম্বর মাসে দেখতে পাওয়া যায়। নভেম্বর মাস সবচেয়ে ভাল সময়।আর শাপলার রুপ দেখতে হলে সূর্যের আলো ফোটার আগে পৌঁছাতে হবে।খুব ভোরে হাজার হাজার শাপলা বিলের জলে নিজেদের মেলে ধরে আপন সৌন্দর্যের ঝলকানিতে।

কিভাবে যাবেন ডিবির হাওরঃ

ডিবির হাওর যেতে হলে সর্ব প্রথম আপনাকে ঢাকা থেকে বাসে/ট্রেনে/ এয়ারে সিলেট যেতে হবে। সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট থেকে জাফলংগামী বাসে করে যাওয়া যাবে জৈন্তাপুর বাজারে। সেখান থেকে ব্যাটারিচালিত টমটম নিয়ে সরাসরি বিলে যাওয়া যায়। সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা। আর টমটম ১০ টাকা করে ভাড়া নিয়ে থাকে। এছাড়াও সিলেট নগরী থেকে সরাসরি সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা লেগুনা রিজার্ভ করেও যাওয়া যাবে ডিবির হাওরে। হাওরে নৌকা নিয়ে ঘুরতে হলে ৪০ মিনিটের জন্য খরচ করতে হবে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। 

কোথায় খাবেনঃ

পথে খাবারের প্রয়োজন হলে আপনাকে জৈন্তা বাজারে নামতে হবে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আপনাকে বাজারে থাকা টমটম যোগে চলে যেতে হবে ডিবির হাওরে। টমটম রিজার্ভ ভাড়া পড়বে ১৫০ টাকা। তবে সিলেট থেকে চাইলে সিএনজি রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১২০০ এর মধ্যে।

কোথায় থাকবেনঃ
তামাবিল জৈন্তাপুর রোডে বেশ কিছু রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, চাইলে সেইসব রিসোর্টে থাকতে পারবেন অথবা থাকার জন্য সিলেটে ফিরে আসতে পারেন। সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল পাওয়া যায়। হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা, হোটেল সুপ্রীম, কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী থাকতে পারবেন। এছাড়া শহরের লালবাজার এলাকায় বেশ কিছু মানসম্মত রেস্ট হাউজ আছে। এগুলোতে ৪০০ থেকে ৩০০০ টাকায় সহজেই রাত্রি যাপন করতে পারবেন।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং]

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ