জয়সলমের ভ্রমণ-
জয়সলমের (Jaisalmer) রাজস্থানের প্রসিদ্ধ একটি শহর। জয়সলমের হল ভারতের রাজস্থান রাজ্যের একটি জেলা ও পর্যটন কেন্দ্র। শহরটি গোল্ডেন সিটি বা স্বর্ণ শহর নামে পরিচিত। বিকেলের পড়ন্ত রোদে জয়সলমের শহরটি সত্যিই সোনার শহর বলে মনে হয়। জয়পুর বা যোধপুরের মত রং করা নয়। বাড়িঘর, অফিস, কাছা্রি থেকে মন্দির, দুর্গ — সবকিছুই স্থানীয় স্যান্ডস্টোন দিয়ে তৈরী। হালকা সোনালী-হলুদ পাথর বাড়িঘর বেশ ঠান্ডা রাখে। জয়সলমের শহরটা রাজস্থানের অন্য ট্যুরিস্ট শহরগুলি থেকে বেশ দূরে। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে ৫৭৫ কিলোমিটার পশ্চিমে মরু শহর জয়সলমের।। সীমান্তের এত কাছে বলে এখানে একটি বড়সড় মিলিটারী আবাস আছে। এই জন্যেই শহরটি বেশ ছিমছাম ও পরিচ্ছন্ন। উদয়পুর বা জয়পুরের তুলনায় ছোট্ট কিন্তু অনেক সুন্দর।
শহরটা ঠিক থর মরুভূমির মাঝখানে — পাকিস্তান সীমান্ত থেকে সত্তর মাইল দূর মাত্র। ১১৫৬ সালে রাওল জয়সল, এই শহরের পত্তন করেছিলেন। সেই সঙ্গে জয়সলমের দুর্গও। এই দুর্গই সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত ছবি “সোনার কেল্লা”-র দুর্গ। স্যান্ডস্টোন দিয়ে আগাগোড়া তৈরী দুর্গটি ঠিক সোনার দুর্গই বটে। বিকানের থেকে জয়সলমেরের পথে মরুভুমির সরূপ নজরে পড়বে। ৩৩০ কিমি দীর্ঘ পথ জুড়ে শুধু বালি। লোকালয় খুব কম। দু’পাশে রুক্ষ প্রান্তরে বাবলার ঝোপ। দিগন্ত জুড়ে শুধু হা হা নির্জনতা। বিস্তৃত মরুভূমি, ঝলমলে সাজানো উটের দল, বড়া বাগ-এর ছত্রী, দাল-বাটি-চুর্মা, কুইন হরিশ সব মিলিয়ে জয়সলমের।
জয়সলমের এর দর্শনীয় স্থান
জয়সলমের ফোর্ট
জয়সলমের ফোর্ট ‘সোনার কেল্লা’ নামেই বেশি পরিচিত। এই নামের পেছনে ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সত্যজিত রায়ের ছবির অবদান স্বীকার করতেই হবে। মরুভুমির মধ্যে জেগে ওঠা এ-এক চোখজুড়ানো স্থাপত্য। পড়ন্ত সূর্যের আলো দুর্গের গায়ে পড়লে যেন ম্যাজিক ঘটে। তখন আরও রহস্যময়ী হয়ে ওঠে পাহাড়ি উচ্চতায় শহরের এই মধ্যমণি। ১২ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রাজা রাওয়াল জয়শাল গুরুর উপদেশে ১৭ কিমি দূরের লোধুরবা থেকে রাজ্যপাট তুলে আনেন জয়সলমেরে। ৯৯টি বুরুজে কামান বসিয়ে দুর্গকে সুরক্ষিত করেন এবং প্রবেশ মুখে তৈরি করেন তোরণের পর তোরণ। আজও জীবন্ত এই দুর্গে ওঠার রাস্তা দিয়ে এগোতে গিয়ে দু’পাশে চোখে পড়ে অজস্র দোকান, স্কুল, মন্দির, হোটেল, মুদিখানা কিউরিও শপ, রেস্তোরাঁ কিংবা কানে আসে পথের ধারে রঙিন পোশাকের রাজপুত শিল্পীর মন খারাপ করা বাদন। দুর্গের ভেতরে ১২ ও ১৫ শতকের জৈন মন্দিরের কারুকাজ অপূর্ব। দেখে নিন জুনা মহল, রঙমহল, মোতিমহল কিংবা বাদলবিলাস প্যালেস। কেল্লার মাথায় উঠলে দেখবেন দৈর্ঘ্যে প্রস্থে শহর বেড়েছে অনেক, জেনে যাবেন ঊষর এক পাথুরে শহরের ইতিকথা।
গদিসর লেক
গদিসর লেকে জলের মাঝে ছোট্ট দ্বীপে মহারাজাদের গ্রীষ্মকালীন বিনোদনের স্থান। শুষ্ক জমিতে জলসেচের ব্যবস্থা করতে ১৪ শতকে এটি নির্মাণ করান মহারাওয়াল গদ্দি সিং। তার পরে একে একে এর চারদিকে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে এবং এটি একটি তীর্থস্থানে পরিণত হয়।
নাথমলজি কি হাভেলি, সালিম সিং কি হাভেলি
প্রথমটি ১৯ শতকে ও দ্বিতীয়টি ১৮ শতকে তৈরি হয়। অসাধারণ এই দুই হাভেলির পাথরের জাফরির কাজ দেখতেই হবে। এ-ছাড়াও দেখুন পাটোয়া কি হাভেলি।
গভর্নমেন্ট মিউজিয়াম
৭ম থেকে ৯ম শতাব্দীর ঐতিহ্যমণ্ডিত ঘরে ব্যবহৃত জিনিস, বাসনপাত্র, অলঙ্কার ইত্যাদি দেখুন। শুক্রে বাদে বেলা ১০টা-বিকেল ৪টে খোলা।
মন্দির প্যালেস
৫ তলা বাদল মহলকে আরও বাড়িয়ে প্যাগোডার মতো মহরমের তাজিয়া টাওয়ারে পরিণত করা হয়েছে। ইসলামিক স্থাপত্য শিল্পের এটি এক অসামান্য নমুনা।
স্যান্ড ডিউনস
জয়সলমেরের স্যান্ড ডিউনস বা বালিয়ারি এক অনবদ্য আকর্ষণ। উঁচুনিচু মরুর বুকে পিচ ঢালা রাস্তা ধরে স্যাম স্যান্ড ডিউনস দেখতে ভুলবেন না। পারলে ক্যামেল সাফারি-তে অংশ নিন। সে এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা। স্যাম বালিয়ারিতে সরকারী ব্যবস্থায় থাকতে পারেন রাজ্য পর্যটনের স্যাম ধানি-তে।
অন্যান্য
জয়সলমের থেকে ৪০ কিমি দূরে পাকিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন অংশে খুড়ি গ্রামও স্যান্ড ডিউনসের জন্য বিখ্যাত। গ্রামবাসীরা সূচীশিল্প ও মৃত্শিল্প পারদর্শী। বাস এলেও ভাড়া করা গাড়িতে আসা ভাল। বাড়মেরের পথে ১৪ কিমি দূরে উড ফসিল পার্ক। জুরাসিক যুগের গাছের পাথরে পরিবর্তিত হওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।
কেনাকাটা
সূচীশিল্প, কাচ বসানো কাপড় ও পাথরের জিনিস বিখ্যাত এখানে। সেন্ট্রাল মার্কেট ভাল। সবচেয়ে ভাল রাজস্থানী এম্পোরিয়ামে জিনিস কেনা।
কিভাবে যাবেন
জয়সলমীর শহরটা রাজস্থানের অন্য ট্যুরিস্ট শহরগুলি থেকে বেশ দূরে। প্লেনে অবশ্য দিল্লী থেকে সোজা পৌঁছানো যায়। ১২৪৬৮ লীলান এক্সপ্রেস রাত ১১.১৫ মিনিটে বিকানের ছেড়ে জয়সলমের পৌঁছে দেয় পরদিন ভোর ৪.৫০ মিনিটে। এছাড়া ৩ কিমি দূরের লালগড় জংশন থেকে বেলা ৭.২০ মিনিটে ছাড়া ১৪৭০৪ লালগড়-জয়শলমের এক্সপ্রেস গন্তব্য পৌঁছায় দুপুর ১.৪০ মিনিটে। হাওড়া থেকে সরাসরি জয়সলমের যেতে ১২৩৭১ জয়শলমের এক্সপ্রেস (সোম) ধরুন। তবে এই পথে প্রচুর ভাল বাস আছে। মরুভুমির দৃশ্য উপভোগ করতে দিনের ট্রেন বা বাসে যাওয়াই ভাল।
কোথায় থাকবেন
জয়সলমেরে হরেক দামের প্রচুর হোটেল। স্যাম রোডে রাজ্য পর্যটনের হোটেল মুমলের ভাড়া মরসুমে ভেদে আলাদা।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)