একা ভ্রমণ এর প্রয়োজনীয় টিপস-
একা ভ্রমণ নিজেকে জানার সবচেয়ে বড় মাধ্যম। কথায় আছে, “একা ভ্রমণ নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আবদ্ধ করার সুযোগ দেয়।”অবশ্যই, একা ভ্রমণে বিপদ রয়েছে – যেমন রয়েছে নিরাপত্তা উদ্বেগ, একাকীত্ব এবং ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হওয়ার সুযোগ। কিন্তু একটু প্রস্তুতি এবং সাধারণ জ্ঞান আপনাকে টাকা বাঁচাতে এবং এক ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতার সুযোগ করে দেবে।
দলবেঁধে ঘুরতে গেলে দলের সবার সময়, শরীরের অবস্থা, খাবার দাবার,পছন্দ অপছন্দ, ইত্যাদি অনেক কিছুই ভ্রমণের উপর প্রভাব ফেলে। একা ভ্রমণে আপনি ইচ্ছে করলেই ছকে বাধা কাজের বাইরে গিয়ে রিলাক্সেশনের পাশাপাশি অনেক কিছু আত্নস্থ করতে পারবেন। যা ছক বাধা ভ্রমণে সম্ভব না। তাছাড়া বন্ধুর সাথে পথে বেড়িয়ে পড়তে মন্দ লাগেনা কিন্তু জীবনে কোন না কোন সময় আসে যখন একা পথে চলতে হয়। আবার অনেক সময় সবার ব্যাস্ততার জন্য এক সাথে পথে বেরিয়ে পড়া হয়ে উঠেনা।।
একা ভ্রমণ করে অনেকের যেমন খুব মজার অভিজ্ঞতা রয়েছে আবার অনেকের খুব খারাপ অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তবে ভালো খারাপ অভিজ্ঞতা নির্ভর করে আপনার ভ্রমণ কৌশল ও পরিবেশের উপর।
কেন একা ভ্রমণ করবেন?
একাকী ভ্রমণে আপনি যখন ইচ্ছা তখন বিশ্রাম নেয়া থেকে শুরু করে কোথায় কতক্ষণ সময় নিয়ে ভ্রমণ করবেন, কোথায় খাবেন, কি খাবেন, কোথায় থাকবেন, কখন যাবেন ইত্যাদি সিদ্ধান্ত গুলো খুব সহজেই নিজের ইচ্ছেমত নিতে পারবেন। আরেকটি সুবিধা হল যে আপনার ভুলগুলি শুধুমাত্র আপনার। এর জন্য আপনাকে কারও কাছে কৈফিয়ত বা জবাবদিহি করতে হবে না। শহর থেকে গ্রাম যে স্থানেই ভ্রমণে যান না কেন, কোথা থেকে শুরু করে কোথায় গিয়ে শেষ করবেন এটার জন্য আপনাকে আপনার বন্ধু বা অন্য কারো কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে না। নিজের ইচ্ছে মত ঘুরতে পারবেন। আপনার যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন।
তাই কবি গুরু বলেছেন-
“যদি তোর ডাকা শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলোরে”
একা ভ্রমণের সহায়ক টিপসঃ
আত্নবিশ্বাস–সাহসঃ
একা ভ্রমণে সাহস এবং আত্নবিশ্বাস খুব দরকার। একা সাহস করে বেরিয়ে পড়লে আত্নবিশ্বাস এমনিতেই বেড়ে যায়। তাই মনস্থির করে সাহস আর আত্নবিশ্বাস নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন ভ্রমণে।।
গত্নব্য নির্বাচনঃ
একা ভ্রমণে বের হলে গন্তব্য নির্বাচন খুব জরুরি। অভিজ্ঞতা না থাকলে বিপদে পড়তে পারেন। তাই ট্রাভেল ফ্রেন্ডলি স্থান নির্বাচন করুন।।
বাজেটঃ
সাধারণত কোথাও ঘুরতে গেলে বাজেটের উপর ভ্রমণের অনেক কিছু নির্ভর করে তাই বাজেট উপর ভিত্তি করে প্লান করে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ুন।।
ব্যবহারঃ
ভালো ভদ্র বিনয়ী ব্যবহার অনেক অবাঞ্চিত ঝামেলা এড়াতে সাহায্য করে এবং অনেক ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। তাই বিনয়ী ভদ্র আচরণ করুন।
ভ্রমণ অন্বেষণঃ
একা ঘুরতে বেরিয়ে পড়লে নিজের প্লান অনুযায়ী ঘুরা যায়। ছক বাধা ভ্রমণের একঘেয়েমি দূর হয়।
খাপ খাওয়ানোঃ
যেখানে যাবেন সেখানের পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিবেন।। বহিরাগতদের মতো আচার-আচরণ না করলে একা চলাচলের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নিরাপদ থাকবেন। আপনি একা আছেন কখন কাউকে সেটা বুঝতে দিবেন না। “ভাই আমি এখানে নতুন এসেছি, ঐ লোকেশনে কীভাবে যাব?” এই টাইপের কথা বলা যাবে না।
যানবাহনঃ
লোকাল যানবাহনে যাতায়াতের চেষ্টা করবেন। এবং অবশ্যই আগে ভাড়া ঠিক করে নিন। একা ভ্রমণে কোথাও যাত্রার পূর্বে বাস, রিক্সা, সিএনজি, অটো রিক্সা বা ট্যাক্সির ভাড়া কত ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে ঠিক করে নিন।
নিরাপত্তাঃ
আপনার নিরাপত্তা আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে। তাই রাতের বেলা অপরিচিত বা দূর স্থানে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। রাতে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘোরাঘুরি বন্ধ করুন, পাবলিক প্লেসে থাকার চেষ্টা করুণ।
কাগজ পত্র গুছিয়ে রাখুনঃ
দরকারী সমস্ত কাগজপত্র কয়েপ কপি করে রাখুন এবং গুছিয়ে রাখুন।।
লোকেশন শেয়ারঃ
ইন্টারনে ব্যবহার করে আপনার লোকেশন গুগলের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখুন। অর্থাৎ আপনি কখন কোথায় রয়েছেন তা কাউকে না কাউকে জানিয়ে রাখুন। ভ্রমণে কোথায় যাচ্ছেন এই বিষয়ে আপনার বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের সাথে জানিয়ে যাবেন এবং ফোনে, ভিডিও চ্যাট বা ইমেলের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করবেন।
পোশাক নির্বাচনঃ
ভ্রমণে কোট-টাই, ফর্মাল ড্রেস পরিহার করে টিশার্ট বা খোলা জামাকাপড় পড়ার চেষ্টা করুণ। ক্যাজুয়াল আরামদায়ক জামা কাপড় পড়ে ঘুরতে যান। এতে পর্যটক হিসেবে আপনার প্রতি মনোযোগ কম আকৃষ্ট হবে এবং অযথা বিপদ থেকে রক্ষা পাবেন। আপনার হাঁটাচলা এবং তাকানোর স্টাইল লোকাল মানুষের মত রাখার চেষ্টা করুণ। যাতে অন্য কেউ সন্দেহ না করতে পারে।
নিজের তথ্যঃ
হোটেল বা ট্যুর এজেন্সিকে আপনার পরিচয় গোপন রাখবেন না। তবে রাস্তায় সল্প পরিচিত মানুষের কাছে নিজের সম্পর্কে সব আলোচনা করবেন না।
হোটেল বুকিংঃ
হোটেল বুক করার পূর্বে হোটেল সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন। হোটেল রিভিও, হোটেল এর মান ইত্যাদি সম্পর্কে যাচাই করে নিন। এগুলো আপনি ইন্টারনেট ঘেটেও জানতে পারবেন। ভ্রমণে আপনার সঠিক পরিচয় দিন, এবং সব জায়গায় একই পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করুণ। এটা আপনাকে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করবে।
সিদ্ধান্তহীনতাঃ
সব সময় নিজের সিদ্ধান্তের উপর আস্থা রেখে চলাচল করুন। কোন ব্যাপারে দ্বিধায় ভুগলে সেই কাজ থেকে বিরত থাকুন। নিজের সিদ্ধান্ত অন্যের উপর ছেড়ে দিবেন না। কোন বিষয়ে আস্থা না পেলে সেটা পরিহার করুণ।
প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে রাখুনঃ
যেখানে যাবেন সেখানের থানা হসপিটাল এর যোগাযোগের নাম্বার ইন্টারনেট বা লোকাল মানুষের থেকে জেনে নিন।।
নিয়ন্ত্রিত থাকুনঃ
বাইরে বের হলে দরকারী সকল কিছু যেমন ঔষুধ, শুকনো খাবার, পানি সব সময় সাথে রাখুন। ঝুঁকি এড়াতে অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত লোকদের সেবা নেয়া থেকে বিরত থাকুন।।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাঃ
যেখানে যান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। বেআইনি যেকোন কাজ থেকে বিরত থাকুন।।সবাইকে বিশ্বাস করুণ আবার কাউকে না।
একা ভ্রমণের সেরা কারণগুলির মধ্যে একটি হল নতুন লোক বা বন্ধুদের সাথে দেখা করা, কিন্তু এটি আপনাকে আরও বেশি ভয়ঙ্কর করে তুলতে পারে। কারন, অনেক বাটপার আছে যাদের কথা শুনে প্রথমে আপনার মনেই হবে না যে এরা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারে। মিষ্টি মধু মাখানো কথায় কখনো কান দেয়া যাবে না। নিজের উপর সব সময় আস্থা রাখতে হবে।
একা ভ্রমণ মোটেও অনিরাপদ নয় নিজের বুদ্ধি বিবেচনার উপর আস্থা রেখে পরিবেশ কে সামলে নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ানো যায়।। পৃথিবী জুড়ে হাজার হাজার মানুষ একা একা ভ্রমণ করছে,নিজেকে আবিষ্কার করছে অজানাকে জানার চেষ্টা করছে।আপনি ও এক বুক সাহস সঞ্চয় করে মস্থ বড় পৃথীবির অলিগলি ঘুরতে বেরিয়ে পড়ুন।।
বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং
ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ
Comment (0)