উদয়পুর ভ্রমণ-

উদয়পুর (Udaipur)এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর শহরের তালিকার সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে উদয়পুর। এই শহরকে বলা হয় হৃদ ও প্রাসাদের নগরী। উদয়পুর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের একটি শহর এবং পৌর কাউন্সিল। ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের জন্য এই শহর বিখ্যাত। উদয়পুরের মন্দিরগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ত্রিপুরা সুন্দরি মন্দির, যা ৫১ টি মহাপীঠগুলির মধ্যে একটি।

রাজস্থানের সবচেয়ে কম পরিচিত জায়গাগুলোর মধ্যে একটা, হৃদ ও প্রাসাদের নগরী উদয়পুর।।

মন্দিরের পাশে একটি বড় হ্রদ রয়েছে যা কল্যাণ সাগর নামে পরিচিত। ভুবনেশ্বরী মন্দির এখানে আরেকটি বিখ্যাত মন্দির। উদয়পুর “হ্রদ নগর” নামেও পরিচিত এবং অনেকগুলি সুন্দর হ্রদ রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে বিজয় সাগর, জগন্নাথ দিঘি, অমর সাগর এবং উপরে উল্লিখিত, কল্যাণ সাগর। এখানে একটি জাতীয় গ্রন্থাগার রয়েছে “নজরুল গ্রন্থগার”, যা কাজী নজরুল ইসলামের নামে রাখা হয়েছে।

উদয়পুর এর দর্শনীয় স্থান

উদয়পুর আগরতলা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রচুর কৃত্রিম হ্রদ রয়েছে এখানে(যেমন ধনী সাগর, বিজয় সাগর (মহাদেব দিঘি), জগন্নাথ দিঘি, অমর সাগর)। উদয়পুর ত্রিপুরার তৃতীয় বৃহওম শহর,এটি গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত। সিটি প্যালেস উদয়পুরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রাসাদ। এই প্রাসাদের কাঁচের কাজ থেকে শুরু করে পাথরের কাজ, মোটিফ কিংবা দেয়ালে ঝুলতে থাকা শত শত বছরের পুরনো পেইন্টিংস এবং পুরনো দিনের নানারকম জিনিসপত্রের সংগ্রহশালা মুগ্ধ করে রাখবে যেকোনো পর্যটককেই!

উদয়পুর থেকে ৯৩ কিলোমিটার দূরের রনকপুরে রয়েছে ২৯টি জৈন মন্দিরের কমপ্লেক্স নাম যার ‘দিলওয়ারাতুল্য’। রনকপুর থেকে ৩৩ কিমি দূরে আরাবল্লি পাহাড়ের ঢালে ৩ হাজার ৫৬৬ ফুট উঁচুতে রানা কুম্ভের তৈরি বিখ্যাত ‘কুম্ভলগড় দুর্গ’ অবস্থিত, যেটি কিনা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাচীরে ঘেরা দুর্গ। দুর্গের নানা মহলে রয়েছে ফ্রেস্কো চিত্র, সুশোভিত মন্দিরের প্রতিচ্ছবি। আরও রয়েছে র‍্যামপার্ট থেকে মাড়োয়ারের সমতল ও আরাবল্লির জঙ্গল-পাহাড় সুন্দর দৃশ্যমান।

উদয়পুর যেন এক স্বপ্ননগরী, যা বারবার পর্যটককে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে। একবার এই শহরে গেলে এর মোহে আটকে যাওয়া নতুন কিছু নয়। রাজস্থানী কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের আসল স্বাদ পেতে হলে আপনাকে উদয়পুর আসতেই হবে। পিছোলাকে কেন্দ্র করে নানান মর্মর প্রাসাদ, কারুকার্যময় হাভেলি, প্রাচীন মন্দির, মিউজিয়াম, ম্যানসন গড়ে উঠেছে, ‘ভ্যানিস অব দ্যা ইস্ট’ নামে খ্যাত রাজস্থানের ‘সিটি অব ডন’ উদয়পুরে।

সিটি প্যালেস

৪টি বড় ও ৭টি ছোট প্রাসাদ নিয়ে ১১ মহলের সিটি প্যালেস। রাজস্থানে এত বড় প্রাসাদ আর নেই। প্রাসাদের মূল অংশে সংগ্রহশালা।

পিছোলা লেক জগমন্দির প্যালেস

ছোট পাহাড়ে ঘেরা পিছলি গ্রামের নামে ১৪ শতকে তৈরি এই জলাশয়ের নাম পিছোলা লেক। লেকের মাঝে মাঝে দ্বীপ, আর সেখানে এক একটি মনোরম প্রাসাদ। যেমন, জগমন্দির প্যালেস। গ্রীষ্মে এখানে কাটাতেন রাজপরিবার। রাজকুমার খুররম্ বা শাহজাহান বাবা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তাঁকে এখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। পিছোলা লেকের দ্বীপে লেক প্যালেস আজ বিলাসবহুল হোটেল।

জগদীশ মন্দির

সিটি প্যালেসের উত্তরে চারশো বছরের পুরনো জগদীশ মন্দির। ইন্দো-আর্য স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি মন্দিরটির কারুকাজ দেখবার মতো।

ফতে সাগর লেক

এই অনবদ্য গন্তব্যটি একটি ক্যানেলের মাধ্যমে লেক পিছোলার সঙ্গে যুক্ত। লেকের মাঝে নেহরু দ্বীপ। আর সেখানে উদয়পুর সোলার অবজারভেটরি।

মনসুন প্যালেস

শহর থেকে ৫ কিমি দূরে বাঁশদারা পাহাড়ের মাথায় মনসুন প্যালেস এক অপূর্ব গন্তব্য।

অন্যান্য

ক্রিস্টাল গ্যালারিতে আছে বার্মিংহাম থেকে আনা কঠিন ক্রিস্টালের অসাধারণ আসবাবপত্র। এছাড়াও দেখুন সজ্জননিবাস বাগ, মাগরি পাহাড়ে রানা প্রতাপের স্মারক মূর্তি, ভারতীয় লোককলা মণ্ডল, ৭ কিমি পশ্চিমে ফতে সাগর লেকের কাছে শিল্পীগ্রাম।

উদয়পুর প্রায়ই ভারতে সবচেয়ে রোমান্টিক শহর বলে মনে করা হয়, এটি বিস্তৃত হ্রদ এবং পুরাতন প্রাসাদের ভরা হয় সুন্দর শহর প্রাসাদ কমপ্লেক্স , যা Lake Pichola এর পূর্ব তীর বরাবর প্রসারিত, শহর দখল এবং রাজকীয় পরিবার এখনও এটি অংশে। অনেক ব্যক্তিগত রাজকীয় হেরলুম, পারিবারিক ছবি এবং অন্যান্য স্মারকপত্র সিটি প্যালেস মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়, উদয়পুরকে একটি খুব আনন্দময় অনুভূতি প্রদান করে। আপনি এমনকি সিটি প্যালেসে থাকতে পারেন!

খাবার

রাজস্থানী খাবারের সুনাম তো সবখানেই! কিন্তু আপনি সব জায়গায় স্থানীয় খাবারের আসল স্বাদ পাবেন না। কারণ স্থানীয় লোকদের হাতের রান্না ছাড়া স্থানীয় খাবারের মজাটা আসবে কেমন করে! উদয়পুরে তাই সেই ব্যবস্থাও আছে। এখানে স্থানীয়রাই ছোট পরিসরে তাদের ঘরবাড়ির সামনে বসিয়েছেন একেকটা রেস্তোরাঁ। সেখান থেকে চাইলেই পেতে পারেনডাল বাটি চুর্মা অথবা গাট্টে কি সাবজি নামক নানা রকম মজাদার স্থানীয় খাবার।

ভ্রমণের সেরা সময়

উদয়পুরের আবহাওয়া বেশ উষ্ণ। তবে অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে গেলে অনেক ভালো একটা পরিবেশ পাবেন। তখন তাপমাত্রা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। শহরটিতে শীতকালও অনেক চমৎকার।

কীভাবে যাবেন

রাজধানী দিল্লী থেকে রাতে বাস বা ট্রেনে উঠে সকালেই পোঁছে যেতে পারবেন উদয়পুরে। ট্রেনে সময় লাগবে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা, বাসে করে গেলে আরো কম। শিয়ালদাহ থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার সরাসরি উদয়পুর যায় ১২৩১৫ অনন্যা একপ্রেস (ছাড়ে দুপুর ১.১০ পৌঁছায় তৃতীয়দিন ভোর ৩ টে)। শালিমার থেকে প্রতি রবিবার ১৯৬৫৯ উদয়পুর সিটি একপ্রেস (ছাড়ে রাত ৮.২২ পৌঁছায় তৃতীয়দিন সকাল ৮.৫৫)। তবে রাজস্থানের যেকোন অংশের সঙ্গে বাস যোগাযোগ রয়েছে উদয়পুরের। দিল্লী থেকে সরাসরী উদয়পুরের উদ্দেশ্যেও বাস ছেড়ে যায়।

থাকার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত সুব্যবস্থা

সাধারণ নানারকম হোটেলের মধ্য থেকে মনের মতো হোটেল বাছাইয়ের সুবিধা রয়েছে। একই সাথে ‘বুটিক হোটেল’ এরও খোঁজ পাওয়া যায় এখানে। বুটিক হোটেল হচ্ছে মূলত ছোট পরিসরে (১০০ রুমের মধ্যে) কিন্তু বেশ পরিপাটি হোটেল যেখানে স্থানীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতির ছাপে হোটেল সাজানো হয়ে থাকে।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ