ইন্দোনেশিয়া-

ইন্দোনেশিয়া (Indonesia) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এবং ওশেনিয়া মহাদেশ এর একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। প্রায় ৫,০০০ দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই দেশটি পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। ল্যাটিন ইন্ডাস থেকে ইন্দোনেশিয়া শব্দটি এসেছে। ল্যাটিন শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় দ্বীপ। ডাচ উপনিবেশের কারণে তাদের দেয়া নামটি ওই অঞ্চলের জন্য প্রচলিত হয়।

বালি দ্বীপ

ইন্দোনেশিয়ার জাভা শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বালি দ্বীপ। দ্বীপটিকে ‘দ্য লাস্ট প্যারাডাইস অন আর্থ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য প্রদেশের চেয়ে বালি দ্বীপ একটু স্বতন্ত্র। বালিতে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

বালি দ্বীপ
ছবিঃ বালি দ্বীপ

পৃথিবীর খুব কম জায়গাতেই একাধারে আধ্যাত্মিকতা পাশাপাশি ভোগ বিলাস ও আনন্দ ফুর্তির সুযোগ খুঁজে পাওয়া যায়। বালি সেই খুব কম জায়গার মধ্যে একটি। ধর্মভীরু তরুণদের দেখাও মিলবে এখানে আবার বেলা পড়লেই মদ হাতে নিয়ে মাতাল হওয়া মানুষও দেখবেন চোখের সামনেই। এই দ্বীপের সাংস্কৃতিক রাজধানী নামে পরিচিত উবুদে রাস্তার মোড়ে মোড়েই দেখতে পাবেন নাচ গানের আসর। পাশাপাশি দেখতে পাবেন কাঠের তৈরি জিনিস, রুপার তৈরি জিনিস, পোশাক, চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্যের দোকান। ধান ক্ষেতের পাশেই রয়েছে ট্রেকিং, শহরের উত্তরে রয়েছে আগুং বাটুর নামের দুইটি আগ্নেয়গিরি। বালি বারাট জাতীয় উদ্যান হল বন্য হরিণ, শুকর ও ম্যাকাক নামের বানরের জন্য অভয়ারণ্য। ডাইভ করতে চাইলে যেতে পারেন মেনজাঙ্গান দ্বীপে।

দু:সাহসিক সুমাত্রা

যারা বন্য পরিবেশে উপভোগ করেন তাদের জন্য জন মানবহীন সুমাত্রা হতে পারে ইন্দোনেশিয়ার প্রধান আকর্ষণ। বেশিরভাগ পর্যটকরা চলে যান বুকিত লুয়াং এর ওরাঙ্গুটাং অথবা উত্তর টাংকাহানের রেইনফরেস্ট দেখতে। যে বনের পাহারায় রয়েছে বিশাল হাতির দল। করা স্বাদের সুমাত্রান কফিতে চুমুক দিতে দিতে ভাবতে পারেন সারাদিন কি কি করার আছে এই বনে। কেরিঞ্চি সেলবাত ন্যাশনাল পার্কে দেখা মিলবে বাঘের সাথে। আর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে চোখে পড়তে পারে সুমাত্রান গন্ডার। বেরাস্তাগি আগ্নেয়গিরির আশেপাশে হাইকিং করতে পারেন। তাবু খাটিয়ে কিছু অলস সময় কাটাতে পারেন তোবা লেকের পাশে। পুলাউ ওয়ের তলদেশে ডাইভিং করতে পারেন। যেখানে দেখতে পাবেন বিশাল আকারের তিমি প্রজাতির হাঙ্গর। মেন্টওয়াই দ্বীপপুঞ্জ কিংবা পুলাউ নিয়াস হতে পারে আপনার সার্ফিং ঠিকানা।

জনপূর্ণ জাকার্তা

এক কোটি মানুষের ৬৬১ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এক শহর এই জাকার্তা। যার অলিতে গলিতে রন্ধন শিল্প আর সংস্কৃতি বিপুল সমাহার। ২০১৫ তে টেলিগ্রাফ ট্রাভেলের পাতায় লিখতে গিয়ে এভাবেই জাকার্তার বর্ণনা দিয়েছেন সিমন পার্কার।প্রাচীন বাতাভিয়ার পথ আপনাকে নিয়ে যাবে ইন্দোনেশিয়ার ডাচ ঔপনিবেশিক অতীতে। অন্যদিকে আধুনিক মেন্টাং জেলায় ঢুকলেই আপনার কানে ভেসে আসবে গানের আসরের মূর্ছনা। বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ আর হোটেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখানে সেখানে। আকাশচুম্বী একেকটা দালানের চূড়ায় চোখে পড়বে বিশ্বের প্রখ্যাত নানান রেস্টুরেন্ট, বার এবং নাইটক্লাব। শপাহলিকদের চাহিদা মেটাতে রয়েছে প্রকাণ্ড সব বিপণীবিতান।

লম্বক

কোটি কোটি মানুষ প্রতিবছর বালিতে যায় মনোরম সৈকত দেখতে। কিন্তু বালির ঠিক ৩০ মাইল পূর্বে রয়েছে স্বল্পপরিচিত লম্বক দ্বীপ। যেখানে আপনি পাবেন হুবহু বালির সৌন্দর্য। শুধু আপনাকে ভিড় ঠেলতে হবে না। প্রবালে আবৃত গিলি দ্বীপপুঞ্জ, পাহাড়, দর্শনীয় সৈকত আর সার্ফিং এর জন্য এটি বিখ্যাত। কিছুদিন আগে পর্যন্ত এখানে গুটিকয়েক পর্যটক যেত তাদের খরচ কমাতে। তবে ইদানীং লম্বকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে রিসোর্ট, লজ, স্পা ইত্যাদি। তবে এখনো এখানে গেলে ভবঘুরে একটা আমেজ পাবেন আপনি। বাই সাইকেল আর কিমোডোস নামের ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া অন্য কোন যানবাহনের দেখা মেলে না এখানে।

লম্বক
ছবিঃ লম্বক

লেক কাকো, জাম্বি

এই রহস্যময় হ্রদটি কিছুটা রূপকথার মতো হয়ে উঠেছে, যেহেতু অনেক পর্যটক হ্রদ এবং নিকটতম শহর জাম্বির মাঝখানে 500 কিলোমিটার জঙ্গলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। রাস্তাঘাটে কমপক্ষে 10 ঘন্টা সময় লাগে, তারপরে ঘন জঙ্গলে চার ঘন্টা হাঁটাচলা করে। লুমিনেসেন্ট হ্রদটি প্রায় 30 মিটার প্রশস্ত এবং চারপাশে চারিদিকের জঙ্গলে। যদিও সমৃদ্ধ নীল জল চিত্তাকর্ষক, যদিও জলের পৃষ্ঠটি আয়নার মতো চাঁদনি প্রতিবিম্বিত করে, রাতের বেলা কাকো লেক আরও বেশি রহস্যময় হয়। সাহসী অ্যাডভেঞ্চারাররা এই রহস্যময় লেকে সাঁতার কাটতে পারে তবে এর নীচটি দেখার আশা করবেন না।

বাটাম দ্বীপ

ইন্দোনেশিয়ার অষ্টম বৃহত্তম শহর বাটাম দ্বীপ।বালি এবং জাকার্তার পর বাটাম দ্বীপ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার ব্যস্ততম প্রবেশ পথ।। বাটামের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। ফলে ট্যাক্সি, মিনিবাস,কিংবা বাসে চড়ে একদিনেই দ্বীপের পুরোটা ঘুরে দেখা সম্ভব।। বাটামের দক্ষিন দিকে কয়েকটি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। সব গুলো সেতুকে একত্রে বেয়ারল্যাং ব্রিজ বলা হয়।এবং এই বেয়ারল্যাং ব্রিজ এলাকাটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়।। এছাড়া বাটাম দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা জাব্যাল আরাফা মসজিদ, মিনিয়েচার পার্ক, মহাবিহার দুতা বৌদ্ধ মন্দির, মসজিদ রায়া, টুয়া প্যাংক বৌদ্ধবিহার এবং নাগোয়া এলাকা ঘুরে দেখতে পারেন।।

জাভা দ্বীপের মন্দির পর্বতমালা

এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দ্বীপ বললেও মনে হয় ভুল হবে না। প্রায় ১৪ কোটি মানুষের বাসস্থান এই জাভা। তবে ভয়ের কোন কারণ নেই, এখানে ঢাকার মত মানুষ গিজগিজ করবে না। কারণ আয়তনের দিক থেকেও বিশাল এই জাভা দ্বীপ। ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত উজুন কুলন সহ ১২টি ন্যাশনাল পার্ক রয়েছে এখানে। হাইকিং করার জন্য ব্রোমো এবং মেরাপির মত আগ্নেয়গিরিও রয়েছে।

ডেরওয়ান দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর কালিমন্টন

ডেরওয়ান দ্বীপপুঞ্জটি কালিমন্তান (বোর্নিও) উপকূলে একটি 30-দ্বীপের দ্বীপপুঞ্জ। তাদের দূরবর্তী অবস্থান তাদের ব্যতিক্রমী কবজগুলি অনেক বেশি পর্যটক দ্বারা নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রেখেছে। কেবলমাত্র সত্য সাহসী এই ডাইভিং এবং উপকূলীয় স্বর্গের দীর্ঘ এবং ক্লান্তিকর যাত্রা সহ্য করতে সক্ষম হবেন। ডেরওয়ান দ্বীপপুঞ্জের একটি ট্রিপ উত্তর কালিমান্টনের তারাকান বা বেরাউ উভয়ের একটি ফ্লাইট থেকে শুরু হয়। এমনকি এই দুটি শহরে বিমানগুলি খুব কম এবং খুব দূরত্বের মধ্যেই হতে পারে, এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জাকার্তা বা সিঙ্গাপুর থেকে ছেড়ে যেতে হবে। বেরো থেকে দ্বীপগুলিতে নৌকা চালানোর আগে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে তিন ঘন্টা স্থল ভ্রমণ করুন। একবার আপনি সেখানে পৌঁছে গেলে সমুদ্রের গুহাগুলি, জেলিফিশ হ্রদ এবং ইডিলিক সৈকতগুলি নিশ্চিত করে ভ্রমণটি সার্থক করে তুলবে।

মাউন্ট লেউজার, আচেহ

জটিল এবং অপ্রত্যাশিত স্থল-ঘন অচেনা জঙ্গল, ছুটে আসা নদী, খাড়া পাথর দ্বারা এই পর্বতটিকে হাইকিং করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে আসল বিপদ ও চ্যালেঞ্জ বন্য জীবনে রয়েছে। এমনকি আপনি যদি ঠিক পথেই থাকেন তবে সাপ, ভালুক এমনকি বাঘেরও মুখোমুখি হওয়ার আসল সম্ভাবনা রয়েছে। মাউন্ট লুয়েজারের শীর্ষে পৌঁছনো প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে। এই পর্বতটি অপেক্ষাকৃত প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত এবং প্রারম্ভিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পর্যটকদের দেশের শরিয়া-নিয়ন্ত্রিত আচেহ প্রদেশে ফ্লাইট স্যুইচ করতে হবে।

গিলি দ্বীপপুঞ্জ

গিলিদ্বীপপুঞ্জ
ছবিঃ গিলি দ্বীপপুঞ্জ

বালি দীপপুঞ্জের পূর্বদিকে রয়েছে লম্বক দ্বীপপুঞ্জ।। লম্বকের সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা হলো গিলি দীপপুঞ্জ। গিলি দীপপুঞ্জ ইন্দোনেশিয়ার তিনটি ছোট ছোট সুন্দর দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত – গিলি ত্রাওয়াগন,গিলি মেনো,গিলি এয়ার।। ছবির মতো সুন্দর গিলিতে কোনো যানবাহন নেই। ঘোড়ার গাড়ি আর সাইকেল হচ্ছে বাহন।। ঘন্টা হিসেবে সাইকেল ভাড়া করে ঘুরতে পারনে এই দ্বীপটাতে।।

গিলি দ্বীপপুঞ্জটি ইন্দোনেশিয়ার লম্বোকের উত্তর-পশ্চিম উপকূলে তিনটি ছোট দ্বীপ বা গিলি দ্বীপপুঞ্জের তিনটি দ্বীপের দ্বীপপুঞ্জ। দ্বীপপুঞ্জ একটি পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিটি দ্বীপে বেশ কয়েকটি রিসর্ট রয়েছে, সাধারণত পর্যটকদের জন্য একটি ছোট্ট পুল এবং রেস্তোঁরা রয়েছে।

অল্প খরচে ভ্রমণ

সবশেষে বললেও বাংলাদেশের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল খরচ। দর্শনীয় স্থানের কথা মাথায় রেখে ভাবতে গেলে এই খরচে পৃথিবীর আর কোথাও ভ্রমণ সম্ভব নয়। এমনকি থাইল্যান্ড, মায়ানমার, কম্বোডিয়া, এবং ভিয়েতনামের থেকেও ইন্দোনেশিয়াতে থাকা খাওয়ার খরচ কম।

কিভাবে যাবেন

বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়েও বিশ্বের অনেকগুলো দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করা যায়। আর এর মধ্যে একটি দেশ হলো- দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। সম্ভবত ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশিরা ইন্দোনেশিয়ায় ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুবিধাটি ভোগ করে আসছেন। ভিসা ছাড়া ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণের সুযোগ নিতে হলে পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস থাকতে হবে। ভিসা ছাড়া ভ্রমণ মানে তো বুঝতেই পারছেন, টিকিট কাটলেন আর উড়াল দিলেন।

বাংলাদেশ থেকে ইন্দোনেশিয়া সরাসরি কোন ফ্লাইট নেই। ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে মালয়েশিয়া যেতে হবে। ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর এর টিকিট করে নিবেন এবং তারপর কুয়ালালামপুরে ৩-৪ ঘন্টা ট্রানজিট করার পর কুয়ালালামপুর– জাকার্তা বিমান টিকিট করে নিবেন। পুরো ভ্রমণটা ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা স্থায়ী হবে। চেষ্টা করবেন কমপক্ষে ১ মাস আগে বুকিং দিতে। যত আগে কাটবেন তত খরচ কম পড়বে। ভাড়া জনপ্রতি গড়ে ৩০০০০-৩৫০০০ টাকা (রাউন্ড ট্রিপ)।

বি: দ্র ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, আমার, আপনার সুতরাং নিজেদের পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমাদের। হ্যাপি_ট্রাভেলিং।

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ