শান্তিপুর অরণ্য কুঠির-

শান্তিপুর অরণ্য কুঠির খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম সৌন্দর্য-মন্ডিত এলাকা পানছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। এই উপজেলার শান্তিপুর নামক স্থানে ইংরেজী ১৯৯৯ সনে শান্তিপুর অরণ্য কুটির স্থাপিত হয়েছিল। বিশাল এলাকাজুড়ে অরণ্যে আবৃত বলেই হয়তো এর নামকরণ হয়েছে অরণ্য কুটির। নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে ধ্যান সাধনার জন্য ভিক্ষুরা এই কুটিরটি ব্যবহার করেন বলে জনশ্রুতি আছে। এটি মূলত বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ হল এখানেই বাংলাদেশের তথা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তিটি রয়েছে। যার উচ্চতা ৪২ফুট। প্রতিদিন বহু পর্যটক মূর্তিটি দেখতে ভিড় জমান এই কুটিরে। ইহা একটি হিংসা-বিদ্বেষবিহীন মৈত্রীপূর্ণ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি দর্শন করার ক্ষেত্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের জন্য উন্মুক্ত। বর্তমানে ইহা একটি তীর্থস্থান এবং অন্যদিকে একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানে ২৫টিরও বেশী পর্ণ কুটির রয়েছে এবং উপ-কুটিরও রয়েছে। প্রত্যাকটি কুটিরে ও উপকুটিরে একজন করে ভিক্ষু ও শ্রামণ অবস্থান করে ভাবনা ও ধ্যানে মগ্ন থাকেন। বর্তমানে ভিক্ষু শ্রামণসহ ৪০জন অবস্থান করছেন।

শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলো হচ্ছে সাড়ে ৪৮ফুট উচ্চতার গৌতম বুদ্ধের মূর্তি, লাভীশ্রেষ্ঠ সিবলী মহাস্থবিরের মন্দিরসহ মূর্তি, মারবিজয়ী উপগুপ্ত মহাস্থবিরের মূর্তি, অধ্যক্ষ মহোদয়ের আবাসস্থল ‘‘মৈত্রী ভবন’’, ১০০ হাত দৈর্ঘ্যের ভিক্ষুশালা, ৬০ হাত দৈর্ঘ্যের দেশনাঘর, ৮০ হাত দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ভোজনশালা এবং বড় বুদ্ধ মূর্তির ছাদ। এ সমস্ত স্থাপনাগুলো বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তা, বিভিন্ন এলাকার ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দাতা ব্যক্তিদের আর্থিক সাহায্য এবং এলাকাবাসীর কায়িক, মানসিক ও আন্তরিক সহযোগিতার ফলে গড়ে উঠেছে।

একদিকে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা এবং অন্যদিকে কুটিরের আয়ের উৎস হিসেবে খালি জায়গায় চারা রোপণ করে বাগান সৃজন করা হয়েছে। এ পবিত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে সাম্য ও মৈত্রীর প্রভাবে এলাকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক পারস্পরিক সম্প্রীতি পোষণ করে শান্তিতে বসবাস করছেন এবং ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রতি বছর বৌদ্ধ ধর্মের শ্রেষ্ঠ দান কঠিন চীবর দান যথাযথভাবে উদ্যাপন করা হয় এবং উক্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে।

প্রতি বছর বৌদ্ধ পূর্ণিমা, আষাঢ়ি ও প্রবারণা পূর্ণিমাতে এখানে বুদ্ধপূজা বা উৎসব হয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় উৎসব কঠিন চীবর দান। এ উৎসবে এখানে ৫০ হাজারেরও বেশি ভক্ত-পূণ্যার্থীর আগমন ঘটে। একই দিনে বিভিন্ন ধাপ শেষ করে তুলা থেকে কাপড় বোনার কাজে অংশ নেন পাহাড়ি এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ।

সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তির পেছনের দিকটায় পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ। কারণ, ভেতরের ১৩টি সাধনা কুটিরে নির্জনে বসে দিনের পর দিন সাধনা করেন ভান্তেরা। তাদের সাধনায় বিঘ্ন না ঘটাতেই প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে। এখানে এসে পর্যটকরা প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি আগর গাছ, মেহগনি গাছ, রাবার গাছ, তেজপাতাসহ ৩৫ হাজার বনজ এবং ফলজ গাছ দেখতে পাবেন।

দেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দির বলতে অনেকে বোঝেন রামুর বৌদ্ধ মন্দিরকে। আসলে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার উল্টোছড়ার বৌদ্ধ মন্দিরটিই বাংলাদেশের বৃহত্তম ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি করে পানছড়ি যেতে হবে। তারপর পানছড়ি বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার রাস্তা দক্ষিণে গেলেই চোখে পড়বে প্রকৃতির বুকের এক অপরূপ শোভা শান্তিপুর অরণ্য কুটির।

কোথায় খাবেন

খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর এবং বাস ট্যান্ড এলাকায় বেশ কিছু রেসটুরেন্ট আছে।। এছাড়া পানথাই পাড়ার সিস্টেম রেস্তোরাঁতে কফি,হাসের কালাভুনা,বাশকুড়ুল, এবং ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে পারেন।।

কোথায় থাকবেন

খাগড়াছড়িতে বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে, হোটেল শৌল্য সুবর্ন, জিরান হোটেল, হোটেল লিবয়ত, চৌধুরী বাডিং, থ্রী স্টার, ফোর স্টার, উপহার, নিলয় হোটেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ