অনেকে পরিকল্পনা করছেন ঘুরতে যাওয়ার। একঘেয়েমি জীবন থেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে ‘ভ্রমণ’। তবে কোথাও যেতে হলে সবচেয়ে যেটা দরকার; তা হলো ভ্রমণ প্রস্তুতি। ভ্রমণ তখনই আনন্দের হবে, যখন আপনার প্রস্তুতি থাকবে সুন্দর ও গোছানো। প্রতিটি কাজের পেছনেই সঠিক পরিকল্পনা থাকা উচিত। ভ্রমণের ক্ষেত্রেও তাই। 

বেড়াতে যাওয়ার উত্তেজনায় আমরা অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বাড়িতেই ফেলে যাই। তাই কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগে থাকলে ভ্রমণটা আরও সুন্দর ও সহজ হবে। ঘুরতে যাবার আগে ভালো প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করবে ভ্রমণ কতটা আনন্দময় হবে। ভ্রমণ পূর্ববর্তী প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমণের সময় কি কি বিষয় আগে থেকে জানা দরকার, তা নিয়েও ভাবতে হবে। ঘুরতে যাওয়ার আগে আপনাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস জেনে নিন।

  • সঙ্গে কি কি নেবেন তা নির্ভর করবে আপনি কোথায় বেড়াতে যাচ্ছেন, কতদিন থাকবেন তার ওপর। যেমন পাহাড়ে বেড়াতে গেলে অবশ্যই ব্যাগের ওজন যত কম রাখা সম্ভব তার দিকে মন দিতে হবে।
  • তবে যেখানেই যান না কেন ব্যাগ ভর্তি জিনিস না নিয়ে দেখেশুনে দরকারি জিনিস নেওয়াই উত্তম। একটা ভারি ব্যাগপ্যাক আপনার ভ্রমণ আনন্দ মাটি করে দিতে পারে। তাই ব্যাগ গোছানোর সময় ভেবে দেখুন আপনার একান্ত কি কি জামাকাপড় লাগতে পারে?
  • যাওয়ার সময় ব্যাগ যতটা সম্ভব হালকা করুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস নেবেন না। তবে পরিধেয় কাপড়গুলো ভালোভাবে গুছিয়ে নিন। সঙ্গে রাখতে পারেন লোশন, ক্রিম, বডি স্প্রে, টুথব্রাশ, পেস্ট, শ্যাম্পু, চিরুনি, লিপজেল, ক্যাপ/হ্যাট, ছোট্ট ছাতা, রুমাল, ওয়েট টিস্যু, প্রয়োজন অনুযায়ী ইত্যাদি জিনিস ছোট কোনো পকেট থাকলে তাতে রাখতে পারেন অথবা অন্য কোনো পকেটে ভরে লাগেজে নিতে পারেন।পুরুষরা যাঁরা নিয়মিত সেভ করেন, তাঁরা রেজর-ফোম, এসব নিতে ভুলবেন না যেন।

  • টাকা পয়সা ছাড়া তো ভ্রমণের কথা চিন্তাই করা যায় না। যে দেশ বা স্থানে যাবেন সে অনুযায়ী কিছু পরিমাণ ভাংতি অবশ্যই সঙ্গে রাখুন এছাড়া প্রয়োজনীয় ডলারতো রাখবেনই। ডলার কেনার রশিদ সঙ্গেই রাখবেন। সঙ্গে অফিসের এনওসি কাগজটা সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না।
  • রাতে ঘুমানোর পোষাক, মোজা, অন্তর্বাস ইত্যাদি লাগেজের একপাশে রাখবেন। রাতের জন্য হালকা ও আরামদায়ক পোশাক নিন। বিশেষ করে যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার আবহাওয়া অনুযায়ী হলে ভাল। মোজা, অন্তর্বাস ইত্যাদি যে কদিন থাকবেন সেই হিসেবে নেবেন।
  • আগেভাগেই জেনে রাখুন এলাকার কোথায় কী পাওয়া যায়। না হলে বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন। ট্যুরিস্ট রেস্টুরেন্টগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। যেখানে বেড়াতে গিয়েছেন, সেখানে আশপাশে ঘুরে লোকাল বসবাসকারীরা যেখানে খাবার খায়, সেখানে খাওয়া-দাওয়া সারলে খরচটা অনেক কমে আসবে।
  • পকেট খরচ বাঁচিয়ে শিক্ষার্থীরা ভ্রমণে গেলে খরচ বেশি না কম হবে চিন্তায় পড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে একদম ভ্রমণ মৌসুমে না গিয়ে একটু আগে বা পরে যান। যেমন ঠিক এই সময়টাই এমন একটা সময়। ভ্রমণ মৌসুমে গেলে সব কিছুতেই একটু বেশি খরচ হয়। তবে একেবারে অফসিজনে যাওয়াটা একদমই উচিত নয়।
  • ঘুরতে গিয়ে কোনো রেস্টুরেন্টে খাওয়ার থেকে কোনো দর্শনীয় স্থানে পিকনিক করতে পারেন। এতে আপনি স্থানীয় সংস্কৃতি, রীতিনীতি খুব কাছে থেকে উপলব্ধি করতে পারবেন আর খরচটাও কমবে। হালকা শুকনো খাবার ও পানি রাখা অত্যন্ত জরুরি।
  • ভ্রমণ স্থানে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা ভালোভাবে জেনে নিন। ভ্রমণের স্থান সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকলে ট্যাক্সি বা রেন্ট-এ-কারে অনেক সময় অনেক হয়রানির স্বীকার হতে হয়।
  • আপনি যদি ভ্রমণে গিয়ে নিজেই গাড়ি চালান, তাহলে ওই এলাকার ট্রাফিক সম্পর্কে সচেতন থেকে ড্রাইভ করুন। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকুন।
  • সঙ্গে কিছু বাড়তি টাকা রাখুন। হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কাজে আসবে। আর সাগরপাড়ে একদমই অসতর্কতা নয়। একটু অসাবধানতার কারণে যেতে পারে আপনার ও আপনার প্রিয় মানুষটির প্রাণ।
  • ভ্রমণে নিজের কাছে বহন করবেন যে ব্যাগ, সেখানে আপনার দরকারি ছোটখাটো জিনিস রাখুন, এতে ঝামেলা অনেক কমে যাবে। অন্য সবকিছু একটা ব্যাগে নিন।
  • অনেক ব্যাগ হলে দেখা যাবে এগুলোর দিকেই আপনাকে বারবার খেয়াল রাখতে হচ্ছে। এ ছাড়া বাড়িতে যে কাপড় পরবেন, তা লাগেজের একপাশে রাখবেন। ইজি ও আরামদায়ক পোশাক নিন। বিশেষ করে সেখানকার আবহাওয়া অনুযায়ী তথ্য জেনে আপনি আপনার বাইরে পরার কাপড় গোছাতে পারেন।
  • ক্যামেরা কিন্তু ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এক্সট্রা ব্যাটারি, মেমোরি কার্ড, চার্জার নিয়েছেন কিনা চেক করুন। ল্যাপটপ নিলে অবশ্যই মনে করে তার চার্জারটি ব্যাগে রাখতে ভুল করবেন না।
  • মোবাইল চার্জারটি অবশ্যই নিতে ভুল করবেন না। একটা এক্সট্রা চার্জার নিতে পারেন যেটা লাগেজের ভেতরে রাখবেন। সবচেয়ে ভাল হয়, সব চার্জার এবং গ্যাজেট একটা ব্যাগে রাখবেন। তাহলে প্রয়োজনের সময় সহজে খুজে পাবেন।
  • বন্ধুরা কোথাও গেলে সে দেশে হোক আর বিদেশেই হোক সবাই মিলে মোবাইল ক্যামেরা চার্জ দিতে গেলে বিপাকে পরতে হয় যথেষ্ট সংখ্যক চার্জিং পয়েন্ট না থাকায়। এই সমস্যা এড়াতে একটা ছোট মাল্টিপ্লাগ, সাথে থ্রি-পিন থেকে টু-পিন কনভার্টার রাখা ভালো।
  • এ ছাড়া আপনি যে স্থানে যাবেন সেখানকার আবহাওয়ার তথ্য জেনে আপনি আপনার বাইরে পরার কাপড় গোছাতে পারেন। যেখানে যাবেন সেখানকার পরিবেশ রং এর ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে পারেন। একটু ইন্টারনেটে দেখলেই হবে।
  • আপনার স্যান্ডেল-জুতা পলিথিন বা কাগজে মুড়িয়ে লাগেজের একপাশে রাখতে পারেন। খেয়াল করবেন একেবারে নতুন কিংবা শক্ত জুতা হলে আপনি ভালোভাবে হাঁটতে পারবেন না বা হাঁটলে পায়ে ফোসকা পড়ে যাবে।
  • সঙ্গে খাতা-কলম নিতে পারেন। হঠাৎ কোনো জরুরি তথ্য পেলে নোট করা যাবে তাতে। তা ছাড়া বলা তো যায় না, কোনো সুন্দর স্থান দেখে আপনার ভেতর কবিত্বও চলে আসতে পারে। এছাড়া ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় কলম লাগবেই।
  • সঙ্গে দু-একটা বইও নিন। অবশ্যই বড় কোনো উপন্যাস নয়। হালকা ম্যাগাজিন বা বই হলে ভালো হয়। প্লেন বা ট্রেনে বসে পড়তে পারবেন।
  • ইয়ারফোন ভ্রমণের সময় নিয়ে যেতে পারেন। আর যাবার আগে অবশ্যই আপনার পছন্দসই গান নিয়ে নেবেন। গানে গানে পথ চললে ভ্রমণ আরও উপভোগ্য হবে। আর অব্যশই ফোনের জায়গা খালি করে নেবেন। নয়তো ওখানে গিয়ে বেশি ছবি তুলতে পারবেন না।
  • রোদ চশমা , রুমাল, ওয়েট টিস্যু খুবই কাজে লাগে, তাই সঙ্গে রাখুন। হালকা শুঁকনো খাবার ও পানি রাখা অত্যন্ত জরুরি।
  • প্রয়োজনীয় ওষুধ অবশ্যই সঙ্গে রাখুন।
  • আপনার ঠিকানা, যেখানে যাবেন তার ঠিকানা, নিকটতম কোনো বন্ধু অথবা আত্মীয়স্বজনের নম্বর আপনার পকেট বা মানিব্যাগে রাখতে পারেন।
  • চেষ্টা করুন এক দুদিন আগে সুটকেস গুছিয়ে ফেলার। তারপর সবকিছু গোছানো শেষ হলে এবার একটু মনে মনে চিন্তা করুন লাগেজে কী কী নিতে ভুলে গেছেন! দেখবেন কিছু না কিছু মনে পরবেই।

বি: দ্র : ঘুরতে গিয়ে দয়া করে পরিবেশ নষ্ট করবেন না,চিপস এর প্যাকেট, পানির বোতল এবং অপচনশীল দ্রব্য নির্ধারিত স্হানে ফেলুন।। এই পৃথিবী, এই দেশ আমার, আপনার সুতরাং নিজের দেশ এবং পৃথিবীকে সুন্দর রাখা এবং রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বও আমার এবং আপনার।। হ্যাপি_ট্রাভেলিং

ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য পেতে জয়েন করুন আমাদের ফেইসবুক গ্রুপ এবং ফলো করুন আমাদের পেইজ